একজন পথশিশুর জীবন কাহিনী/পর্ব:--০১ [benificiary ১০% @shy-fox]🦊

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আজ - ১৭ জৈষ্ঠ্যমাস| ১৪২৯ বঙ্গাব্দ | মঙ্গলবার | গ্রীষ্মকাল |



আসসালামু ওয়ালাইকুম,আমি জীবন মাহমুদ, আমার ইউজার নাম @jibon47। বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি আপনাদের দোয়ায় ভালোই আছি মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।


আজ আমি আপনাদের মাঝে একজন পথশিশুর শৈশব থেকে কৈশোর কৈশোর থেকে যুবক, যুবক থেকে বৃদ্ধ হওয়া পর্যন্ত যেই দিনগুলো পার করে, কেমন ভাবে বেড়ে ওঠে, কেমন ভাবে কাটে তার পরিবারের দিনগুলো, এই সব বিষয়েই আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করব। । আশা করছি আপনাদের সবার ভালো লাগবে।



  • পথশিশুর জীবন কাহিনী
  • আজ ১৭ জৈষ্ঠ্য, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
  • মঙ্গলবার


তো চলুন শুরু করা যাক...!


শুভ বিকেল সবাইকে.....!!


পথশিশু বা টোকাই। আসলেই কি তারা টোকাই...?? আসলেই কি তারা টোকাই, নাকি আমাদের এই সুশীল সমাজ তাদেরকে টোকাই করে তুলেছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার যেটা মনে হয় আমাদের এই সুশীল সমাজ তাদেরকে টোকাই করে তুলেছে। পথশিশু হিসেবে আমরা তাদেরকে চিনি যারা রাস্তায় রাস্তায় বোতল কুড়িয়ে বেড়ায়। সারাদিন বোতল কুড়ানো থেকে শুরু করে ডাস্টবিনের খাবারে তাদের পেট ভরে। আবার হয়তোবা কোন দিন না খেয়েও দিন পার করতে হয়। সমাজের বুকে এরকম অনেক পথশিশু রয়েছে। এই পথ শিশুদের দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা আর কথাগুলো কেউ কখনো বুঝতে পারে না ।কেউ যদি বুঝেও তবে সে সেটা কখনোই তার মস্তিষ্কের মধ্যে রাখে না। আমাদের এই সমাজ শুধু বিত্তবানদের বেশি পছন্দ করে কখনোই তারা নিম্নমান বা নিম্ন মধ্যবিত্তের তেমন একটা বেশি পছন্দ করে না। আর সমাজের এই পথশিশু গুলোতো নিম্নমানের তাদের না আছে বাড়ি,না আছে গাড়ী, না আছে ভালো জামা কাপড়ের ব্যবস্থা। তাদের এরকম দুর্দশা সবসময় লেগেই থাকে। কখনো দামি বাড়ি, দামি গাড়ি, বা দামি কোন রেস্টুরেন্টে খাওয়ার অভিজ্ঞতা অথবা সুন্দর সুন্দর পোশাক পরিধানের আনন্দ এই সব কিছু থেকেই তারা বঞ্চিত। সমাজের বুকে পথশিশু মানে যেন এক অবহেলিত নাম। যে নামের সাথে মিশে রয়েছে সমাজের বুকে বেড়ে ওঠা বিত্তবানদের অবহেলা এবং নিন্দা।

kid-3722313_640.jpg

source

খুব ছোটবেলা থেকেই তাদের সংগ্রামের মাধ্যমে জীবন পার করতে হয় যে সংগ্রাম গুলো আমরা যুবক বয়সে করতে পারিনা। সংগ্রাম তা এমন এই সংগ্রামের কথা আমরা কখনো ভাবতেও পারিনা। পরিবারের সাথে সংগ্রাম, সমাজের সাথে সংগ্রাম, সর্বোপরি রাষ্ট্রের সাথে সংগ্রাম করেই তাদের বেঁচে থাকতে হয়। তাদের কাছে বেঁচে থাকা মানে প্রতিটা দিন নিপীড়িত-নির্যাতিত অবহেলিত। সমাজের বুকে তারা এক অবহেলিত নির্যাতিত হয়েই বেড়ে ওঠে। তাদের বেড়ে ওঠার জায়গায় স্থান সবটুকুই অন্যান্য ছেলেদের তুলনায় ভিন্ন। আমার আপনাদের মত সন্তানেরা বেড়ে ওঠে চার দেয়ালের মাঝে মা বাবার আদর স্নেহ ভালবাসায়। কিন্তু তাদের বেড়ে ওঠা টা হয়তো অন্যান্য ছেলে মেয়েদের মত হয়না। তাদের বেড়ে ওঠার মূল জায়গা হচ্ছে ফুটপাত অথবা স্টেশন। অন্যান্য ছেলেরা যখন লেখাপড়া নিয়ে খুব জ্ঞান চর্চা করতে থাকে অথবা তার মা-বাবা তাকে লেখাপড়া করানোর জন্য অনেক বেশি তাগিদ দেয়। সেই সময়টাতে একজন পথশিশু লেখাপড়া কি জিনিস সেটা বোঝেই না। এজন্যই তারা বোঝে না কারণ তার পরিবার তাকে দুবেলা দু'মুঠো খেতেই দিতে পারেনা তাহলে লেখাপড়ার খরচ বহন করবে কিভাবে...!! এখনকার সমাজ লেখাপড়ার মান সহজ করে দিয়েছে কিন্তু লেখাপড়া করাতে যেই খরচটা সেটা বৃদ্ধি করে দিয়েছে।যার কারণে সমাজের বুকে এখনো অনেক শ্রমজীবী মানুষ রা তাদের ছেলেমেয়েদের শুধুমাত্র টাকার অভাবে লেখাপড়া করাতে পারে না।

baloch-people-6702844_640.jpg

source

পথশিশুর বেঁচে থাকাটা একটা যুদ্ধ, আর এই বেঁচে থাকাটা যদি যুদ্ধ হয়ে থাকে তাহলে আমি মনে করি লেখাপড়াটা সেখানে বিলাসিতা মাত্র। তাদের বেঁচে থাকতে হলে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হচ্ছে। লেখাপড়া করার জন্য প্রয়োজন একটা ভালো থাকার জায়গা কিন্তু তাদের তো সেই সামর্থ্য নেই যে থাকার মত ভালো একটা ঘর বাড়ি করবে। তারা হয়তো কোন একটা রাস্তার পাশে গাছের পাতা দিয়ে তৈরি করেছে ছোট্ট একটি চারচালা গাছের পাতার ঘর। যেই ঘরে সূর্যের আলো প্রচন্ড বেগে প্রবেশ করে, আবার রাত্রেবেলা চাঁদনী রাতের আলোয় আলোকিত হয়ে যায়। কখনো কখনো বা বৃষ্টির পানিতে ভিজে তাদের ঘুমানোর জায়গাটা স্যাঁতসেতে হয়ে পড়ে। এরকম জায়গায় কি লেখাপড়া করা বা ঘুমানো যায়...?? পথশিশুরা সব সময় অপেক্ষা করে। তারা এক বেলা এক মুঠো ভাত খাওয়ার পরে আবার আরেক বেলা আর এক মুঠো ভাত খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে। তাদের এই অপেক্ষার যেন শেষ নেই তবে তাদের এই অপেক্ষা শেষ হবে তারা সেটা কখনোই জানেনা। অপেক্ষাটা সত্যিই অনেক বেশি কষ্টের কোন কিছুর জন্য অপেক্ষা করে থাকাটা অনেক বেশি দুঃখজনক কষ্টদায়ক । এই পথশিশু গুলোর মধ্যেও কিছু কিছু শিশু হয়ে ওঠে মাস্তান সন্ত্রাস। আবার এর মধ্যে থেকেই কিছু কিছু শিশু বড় হয়ে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে যায় রাষ্ট্রের বুকে তারা মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকে। কিন্তু আমার মনে হয় রাষ্ট্রের বুকে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকে গুটিকয়েক শিশু। আর প্রায় সকলেই গুন্ডা মাস্তান হয়েই শহরের অলিতে গলিতে ছিনতাই রাহাজানি এসব নিয়েই ব্যস্ত হয়ে থাকে। এরকমভাবে একটা সময় তারা সমাজের বুকে সন্ত্রাসের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে ফেলে। যার কারণে সমাজের বুকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সবসময় বেধেই থাকে। কিন্তু আমি মনে করি যে আমাদের সকলের তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। আমাদের এটা মনে রাখা উচিত যে তারাও মানুষ আমাদের মতই রক্তে মাংসে গড়া একটি শরীর। আমাদের চার দেয়ালের মাঝে থাকতে থাকতে শরীরের চামড়া টা কিছুটা ফর্সা হয়ে গিয়েছে আর তাদের না আছে মাথার উপরে কোন ছাদ, না আছে চারদিকে চারটে দেয়াল। যার কারণে তাদের চামড়াটা হয়তো সূর্যের আলোয় কিছুটা পুড়ে গিয়েছে। এটাই শুধু পার্থক্য। কিন্তু আমরা অনেকেই এই পার্থক্যটুকু বুঝি না ।এই পার্থক্যটুকু না বুঝে আমরা তাদের সঙ্গে অনেক সময় খারাপ ব্যবহার করি। যে খারাপ ব্যবহারটা সত্যিই আমাদের থেকে কখনো কাম্য নয়। তাদের পাশে থেকে সব সময় তাদের সাপোর্ট করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটা সমাজের দায়িত্ব এবং কর্তব্য বলে আমি মনে করি।



পথশিশুদের নিয়ে আমি আপনাদের মাঝে আজকে এই প্রথম পর্ব শেয়ার করলাম। যদিও প্রথম পর্বে আমি তেমন গল্প শেয়ার করে নি আজকে শুধু পথ শিশুদের নিয়ে কিছু কথা বললাম। পরবর্তী পোষ্টে আমি পর্ব আকারে আপনাদের মাঝে পথ শিশুদের নিয়ে কিছু সুন্দর সুন্দর পোষ্ট শেয়ার করব। যে পোস্ট গুলো আপনাদের কাছে অনেক বেশি ভালো লাগবে। একজন পথশিশু কিভাবে হতে পারে একজন সমাজের মহানায়ক, তাদেরকে কতটুকু পরিমান সমাজ থেকে সাপোর্ট করলে তারা সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারবে। নিজের দক্ষতা দিয়ে তারা কিভাবে সমাজের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে। একজন পথশিশুর নিজ উদ্যোগে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে কিভাবে আরো 5 থেকে 10 টা পথশিশুর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে পারবে। এমন সব কিছু বিষয় নিয়েই আমি আপনাদের মাঝে পরবর্তীতে পোস্ট শেয়ার করব। ততক্ষণ পর্যন্ত আপনারা সবাই অপেক্ষা করুন ধৈর্য ধারণ করুন।





আমার পোষ্ট দেখার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আমি আশা করিছি আপনারা সবাই আমার পোষ্ট উপভোগ করবেন এবং আপনারা সবাই আমাকে অনুপ্রাণিত করবেন

পোষ্টের বিবরণ
বিভাগএকজন পথশিশু ।
বিষয়একজন পথশিশুর জীবন কাহিনী
কারিগর@jibon47
অবস্থানসংযুক্তি

Sort:  
 2 years ago 

সবসময় আমাকে সাপোর্ট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

ভাই পথ শিশুদের শৈশব থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত তাদের জীবন যাপনের যে বর্ণনা দিয়েছেন সত্যিই আমার কাছে অনেক খারাপ লেগেছে ।আসলেই আমাদের সমাজ যাদেরকে টোকাই বলে চিহ্নিত করেছে এরা সঠিক শিক্ষা পেলে এরা সমাজের একজন দায়িত্ববান মানুষ হয়ে উঠতে পারতো। মাঝখানে বলেছেন যেখানে তারা প্রতিনিয়ত জীবিকার তাগিদে কাজ করে যাচ্ছে সেখানে তাদের জন্য পড়াশোনা বিলাসিতা মাত্র। আপনাকে ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোষ্ট উপহার দেওয়ার জন্য।

 2 years ago 

আপনার কথা শুনে আমি একমত পোষণ করছি। পথশিশুদের দিকে আমাদের হিংসার চোখে না তাকিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত তাদেরকে সবসময়ই সমাজের বুকে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে পারে সেই দায়িত্ব সকলের নেওয়া উচিত। গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

ভাই জাস্ট অসাধারণ। খুবই বাস্তববাদী কিছু কথা লিখেছেন একটা পরিবারের সম্পর্কে। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

আমি সবসময় চেষ্টা করি বাস্তববাদী কিছু কথা আপনাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই এই পোস্ট লিখেছিলাম আপনার কাছে ভালো লেগেছে এটা জেনে খুবই খুশি হলাম মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

তোমার বাস্তববাদী কথাগুলো এর জন্যই আমার কাছে খুবই ভালো লাগে সে জন্যই তোমার পোস্টগুলো প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমি পড়ার চেষ্টা করি।

 2 years ago 

অনেক ভাল লেখা লিখেছেন পথ শিশুদের নিয়ে। এর পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। সুন্দর পোস্টগুলো আশা করছি অতি শীঘ্রই আমাদের সাথে ভাগ করে নিবেন। আপনার জন্য অনেক ভালবাসা ও দোয়া থাকবে।

 2 years ago 

খুব শীঘ্রই আমি আপনাদের মাঝে দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে হাজির হব পথশিশুদের নিয়ে অনেক আগে থেকেই লেখার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু সময়ের অভাবে লেখা হয়ে উঠছিল না তাই হঠাৎ করে সেদিন সময় নিয়ে দেখা শুরু করলাম। আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম সবসময় সাপোর্ট করার জন্য ধন্যবাদ।

এরা সমাজের অবহেলিত দল বলে বিচক্ষণদের কাছে পরিচিত। আসলে এরাই সমাজের সবচেয়ে বিচক্ষণ ব্যক্তি বলে উল্লেখ করা দরকার। আমি ধিক্কার জানাই আধুনিক বিচক্ষণ ব্যক্তিদের।

 2 years ago 

খুবই সুন্দর মন্তব্য করেছেন ভাইয়া সত্যি বলতে আধুনিক বিচক্ষণ ব্যক্তিরা তাদেরকে কখনোই উঁচু চোখে দেখেনা সবসময় নীচু করে রাখতেই বেশি পছন্দ করে কিন্তু এটা আমাদের সমাজ ব্যবস্থার ধিক্কার। যদি শক্তি থাকতো ভেঙে দিতাম সেই হিংসার দেয়াল।

সময় আসলে হয়তো এ ব্যবস্থারও পরিবর্তন হবে ।অপেক্ষায় থাকতে হবে।

Coin Marketplace

STEEM 0.28
TRX 0.11
JST 0.031
BTC 68874.67
ETH 3743.28
USDT 1.00
SBD 3.72