স্মৃতিচারণমূলক পোস্ট//রাতে নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া
আজ--২৫ চৈত্র| ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | সোমবার | বসন্তকাল |
আসসালামু ওয়ালাইকুম,আমি জীবন মাহমুদ, আমার ইউজার নাম @jibon47। বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি আপনাদের দোয়ায় ভালোই আছি মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।
- প্রিয় কমিউনিটি,আমার বাংলা ব্লগ
- স্মৃতিচারণমূলক পোস্ট
- আজ--২৫শচৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
- সোমবার
তো চলুন শুরু করা যাক...!
শুভ দুপুর সবাইকে......!!
যারা ছোটবেলা থেকেই গ্রামে বড় হয়েছে তারা নদীতে মাছ ধরতে যায়নি এরকম মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। জীবনে একবার হলেও রাতের বেলা নদীতে মাছ ধরতে গিয়েছে এরকম মানুষ অনেক আছে। যদিও আমি রাতের বেলা নদীতে মাছ ধরতে কয়েকবার গিয়েছি। আর প্রত্যেকবার মাছ ধরতে যাওয়া হয়েছে এলাকার ভাই ব্রাদার এর সাথে। একা একা কখনোই নদীতে মাছ ধরতে যাবার সাহস হয়নি। সত্যি বলতে প্রচুর মাছ পাব এটা ভেবে কখনোই নদীতে মাছ ধরতে যায়নি শুধুমাত্র নতুন নতুন অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্যই মাছ ধরতে গিয়েছি কয়েকবার। আমাদের বাসার পাশেই ছোট্ট একটা নদী রয়েছে যদিও চৈত্র মাসে সেখানে পানি থাকে না শুধুমাত্র বর্ষা মৌসুমে সেখানে পানি আসে। আর যখন বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি আসে তখন অনেকেই সন্ধ্যেবেলায় টস লাইট আর গ্রাম্য ভাষায় মাছ ধরার একটা অস্ত্র আছে তাকে বলা হয় টেটা। যদিও আমার টেটা নেই তবে আমি অন্যদের টেটা নিয়ে মাছ ধরতে গিয়েছি প্রত্যেকবারই। এবার আমি আপনাদেরকে বোঝাই টেটা আসলে কি, এটা হল এমন এক মাছ ধরার অস্ত্র যার সামনে খুবই সরু চিকন রডের ধারালো অস্ত্র। যেটা কিনা মাছের গায়ে ছুড়ে মারলে সরু অংশটুকু মাছের মধ্যে ঢুকে যায়। আর সেই রডের পেছনের অংশটুকু বাঁশের সঙ্গে বাধা থাকে।
যাইহোক তিন থেকে চার বছর আগে একবার হঠাৎ করেই আমরা কজন সিদ্ধান্ত নিলাম যে মাছ ধরতে যাব। যেমন ভাবা তেমনি কাজ আমরা রাতের বেলা খাওয়া-দাওয়া শেষ করে টস লাইট আর টেটা নিয়ে বের হয়ে পরি মাছ ধরার জন্য। এবার যাদের সঙ্গে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম তারা মাছ ধরায় অনভিজ্ঞ, আমিও খুব যে একটা ভালো মাছ ধরতে পারি তা কিন্তু নয় যাদের সঙ্গে গিয়েছিলাম তাদের থেকেও আমি অনভিজ্ঞ বলা চলে। যাইহোক নদীতে যেহেতু নতুন পানি এসেছে যার কারণে নদীর মধ্যে প্রবেশ করাতেই দেখেছিলাম চারিদিকে অনেক মানুষ লাইট জ্বালিয়ে মাছ ধরছে। নতুন পানি আসার কারণে পানি কিছুটা ঘোলাটে ছিল, আমি আর আমার সাথে থাকা এক বড় ভাই একদিকে চলে যাই মাছ ধরার আশায়। গিয়েছিলাম সাত থেকে আট জন তবে নির্দিষ্ট একটা সময় পড়ে যে যার মত চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। সকলকেই বলা হয়েছিল যে নির্দিষ্ট একটা টাইম এর মধ্যে নির্দিষ্ট একটা জায়গায় উপস্থিত থাকবে যাতে করে কাউকে আর খুঁজতে না হয়। এরপরে আমি আর এক বড় ভাই মাছ ধরতে ধরতে অনেকটাই দূরে চলে গিয়েছিলাম। মাছও পাচ্ছিলাম মোটামুটি অনেক ভালই, সেদিন বেশিরভাগ মাছ পাচ্ছিলাম টেংরা এবং টাকি।
এরপরে ঘটে গেল এক অন্যরকম ঘটনা। এই ঘটনাটা এখনো যখন মনে পড়ে তখন কিছুটা হাসি পায় তবে যখন আমাদের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছিল তখন খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আর ভয় পাওয়াটা এই স্বাভাবিক ছিল কারণ অত রাত্রে ওইরকম একটা পরিস্থিতির শিখার যদি কেউ হত তাহলে নিশ্চিত সে ভয় পেত। যাইহোক এখন পুরো ঘটনাটা আমি আপনাদের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করব।
পানিতে লাইট ধরে রাখার সময় আমরা দুজনই দেখতে পেলাম যে একটা জায়গার মধ্যে দুটো বড় ধরনের মাছ স্থির অবস্থায় রয়েছে। যদিও প্রথম অবস্থায় আমরা বুঝতে পারেনি এটা মাছ নাকি অন্য কিছু তবে লম্বায় প্রায় এক হাতের মত হবে দুটো লম্বা কৃতির মাছ দেখে আমরা ভেবেছিলাম এটা হয়তোবা বাইম মাছ। তখন পর্যন্ত আমরা এটা জানতাম না যে বাইম মাছের মাথা কিছুটা চিকন হয়, আর কুচে যেটা কিনা অনেকেই মাছ হিসেবে খায় এই কুচের মাথাটা কিছুটা মোটা হয়। তবে যেহেতু দুটো লম্বা আকৃতির মাছ একই জায়গায় স্থির অবস্থায় রয়েছে আমরা দুজনই ভেবে নিয়েছিলাম এটা হয়তোবা বাইম মাছ। এরপরে আমি লাইট সেই মাছের উপর ধরে রেখেছিলাম আর আমার সাথে থাকা সেই বড় ভাইকে বলেছিলাম যে মাছের উপরে টেটা ফেলতে। এরপরে খুবই আস্তে আস্তে কিছুটা সময় নিয়ে যখন সে সেই মাছের উপরে টেটা ছুড়ে মারল ঠিক তখনই পানি রক্তাক্ত লাল বর্ণ ধারণ করল। এটা দেখে আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমি এতটাই বেশি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যে আমি লাইট বন্ধ করে ভৌ-দৌড় দিয়ে সেখান থেকে চলে গিয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম এটা হয়তোবা ভূত যেটা কিনা মাছের বেশ ধরে পানির মধ্যে রয়েছে।
কারণ অনেকের মুখে শুনেছিলাম যে রাতের বেলা ভূতেরা নাকি অনেক রকম আকৃতি ধরে মানুষের সামনে আসে। আর মাথার মধ্যে তখন এটাই কাজ করছিল যে, মাছের গায়ে যখন টেটা বিধে যায় তখন এতটা বেশি রক্ত বের হয় না। যেহেতু অনেক বেশি রক্ত বের হয়েছে তার মানে এটা মাছ নয় এটা অন্য কিছু। এটা ভেবেই আমি লাইট বন্ধ করে সেখান থেকে দৌড় দিয়ে অনেকটাই দূরে চলে গিয়েছিলাম। সবথেকে মজার ব্যাপার হচ্ছে আমার দৌড় দেওয়া দেখে আমার সাথে থাকা বড় ভাই আমার পিছু পিছু দৌড়াতে শুরু করে। দৌড় দিয়ে আমরা অনেকটাই দূরে চলে যাই এবং কিছুটা হাপিয়ে উঠি। আমরা দুজনই ভেবেছিলাম এটা হয়তোবা মাছ নয় অন্য কিছু। দুজনে মিলে সেখানে গিয়ে যে দেখব সেই সাহসটুকু হচ্ছিল না যার কারণে আমরা পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একে অপরের সঙ্গে ওই ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলছিলাম। কথা বলার এক পর্যায়ে আমাদের বাসার পাশের এক চাচার সঙ্গে আমাদের দেখা হয় এবং চাচা আমাদেরকে জিজ্ঞেস করে মাছ পেয়েছি কিনা। যেহেতু চাচাকে পেয়েছি সেহেতু চাচাকে পুরো ঘটনাটা বলি আমাদের সঙ্গে যা যা ঘটেছে।
আমাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা শুনে চাচা এবার বলে ঠিক আছে তাহলে আমার সঙ্গে চলো সেখানে যাই দেখে আসি আসলে সেখানে কি ছিল। যদিও আমরা যেতে চাচ্ছিলাম না কিন্তু চাচা আমাদেরকে অভয় দিলো যার কারণে আমরা চাচাকে সামনে রেখে তার পিছু পিছু সেই জায়গাতে আবার যাচ্ছিলাম। এবার আমরা সেখানে গিয়ে দেখি যে দুটো মাছ একদম মাঝখান থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছে এবং সেখানেই তারা ভেসে আছে। এবার আমরা চাচাকে বলি এটাই সেই জিনিস যেটা দেখে আমরা ভয় পেয়েছিলাম। এরপরে চাচা খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে, তার হাসি দেখে আমরা কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি তার হাসির কারণ। এরপরে চাচা আমাদেরকে জানাই এটা দুটো কুচে, যেই দুটো কুচে-কে আমরা মাছ হিসেবে মেরেছি হাহাহা। এরপরও আমার কিছুটা সন্দেহ কাজ করছিল তারপর আমি চাচার কে জিজ্ঞেস করি তাহলে এত রক্ত বের হলো কেন।
একথা শোনার পরে চাচা আমাদেরকে জানায় যে কুচের শরীরে অনেক বেশি রক্ত থাকে যার কারণে যখনই তার শরীরের মধ্যে টেটা প্রবেশ করেছে আর অনেক বেশি রক্ত বের হয়ে গিয়েছে যেটা দেখে আমরা ভয় পেয়েছিলাম। সেদিন আর আমরা মাছ ধরিনি চাচার সাথেই আমরা বাসায় চলে এসেছিলাম বাসায় এসে আব্বুকে আর আম্মুকে এই ঘটনা শুনাই। এই ঘটনা শুনে তারা দুজন এতটা বেশি হেসেছিল যে আপনাদেরকে বলে বোঝাতে পারবো না। তারপর থেকে আর নদীতে মাছ ধরতে যাওয়ার সাহস হয়নি। এটা আমার কাছে একটা স্মৃতি হয়ে থাকবে সারা জীবন, বাইম মাছ হিসেবে আমরা কুচে-কে মেরে ভয় পেয়ে সেখান থেকে দৌড় দিয়ে পালিয়েছিলাম হাহাহা।
এটাই ছিল আমার আজকের সংক্ষিপ্ত পোস্ট, আশা করছি আমার এই স্মৃতিচারণ মূলক পোস্ট আপনাদের সকলের কাছে অনেক বেশি ভালো লেগেছে। নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে কেউ এরকম ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা অবশ্যই জানাবেন। আজ আর নয় এখানেই শেষ করছি, সকলেই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি পরিবারের সঙ্গেই থাকুন। ধন্যবাদ সকলকে...!!!
আমার পোষ্ট দেখার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আশা করছি আপনাদের কাছে আমার এই পোস্ট খুবই ভালো লেগেছে। আমার এই পোস্ট পরে সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে আমাকে অনুপ্রাণিত করবেন বলে আশা রাখি। আপনার সুন্দর মন্তব্যই আমার কাজ করার অনুপ্রেরণা
বিভাগ | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
বিষয় | স্মৃতিচারণমূলক পোস্ট |
পোস্ট এর কারিগর | @jibon47 |
অবস্থান | [সংযুক্তি]source |
আমি জীবন মাহমুদ, আমার ইউজার নেম @jibon47। আমি মাতৃভাষা এবং মাতৃভূমিকে অনেক বেশি ভালোবাসি। আব্বু আম্মু আর ছোট বোনকে নিয়েই আমার পরিবার। এই তিনজন মানুষকে কেন্দ্র করেই আমার পৃথিবী।একসাথে সবাইকে খুশি করা তো সম্ভব নয়, তারপরও আমি চেষ্টা করি পরিবারের সবাইকে খুশি রাখার। আমি হৃদয় থেকে ভালবাসি সৃষ্টিকর্তা ও তার সকল সৃষ্টিকে।আমি বর্তমানে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটিতে মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্ট থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং লেখাপড়া করছি। আমি গান গাইতে, কবিতা লিখতে, এবং ভাই ব্রাদারের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করতে অনেক বেশি ভালোবাসি। সত্যি বলতে আমি প্রচন্ড রকমের অভিমানী, হতে পারে এটা আমার একটা বদ অভ্যাস। "আমার বাংলা ব্লগ" আমার গর্ব,"আমার বাংলা ব্লগ" আমার ভালোবাসা। আমার নিজের ভেতরে লুকায়িত সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করার লক্ষ্যে "আমার বাংলা ব্লগে" আমার আগমন। এই স্বল্প মানব জীবনের প্রতিটা ক্ষণ আমার কাছে উপভোগ্য। আমি মনে করি, পরিশ্রম সফলতার চাবিকাঠি।
@jibon47
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আমাদের বাড়ির পাশে কোন নদী নেই তবে বর্ষায় খাল বিল যখন জলে টইটুম্বুর হয় তখন দেখি অনেকেই সারারাত জেগে মাছ মারে টেটা দিয়ে। অনেক দেখেছি টেটা।আপনার মাছ মারার অনুভূতি অনেক ভালো লাগলো।খুব হাসলাম আপনার দৌড় দেখে আপনার পিছু পিছু ওই বড়ো ভাইয়ে দৌড়ের কথা শুনে।ভীষণ ভালো লাগলে পোস্ট টি।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য।
আসলেই সেদিন অনেকটাই বেশি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ভেবেছিলাম ওটা হয়তোবা কোন ভূত। যার কারনেই সবকিছু ফেলে দৌ ড় শুরু করে দিয়েছিলাম। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
রাতে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে মাছ ধরার অনুভূতি আমারও রয়েছে। আমরা বেশ কয়েকজন বন্ধু মিলে এমন কাজে অংশগ্রহণ করেছিলাম। তবে যাই হোক খুব সুন্দর একটি গল্প জানতে পারলাম আপনার মাধ্যমে। খুবই ভালো লাগলো আপনার গল্প পড়ে।
ধন্যবাদ।
প্রথমেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি অনেক সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। রাতে নদীতে মাছ দেওয়ার মজাই আলাদা। ছোটবেলায় বৃষ্টিতে ভিজে রাত্রে অনেক মাল ধরেছি। আমাদের বাড়ির পাশে খাল ছিল। বর্ষার সময় আমাদের গ্রামের মানুষ সারা রাত জেগে মাছ ধরতো। টেটা ছুরি মারার পর রক্তে পানি লাল হয়ে যাওয়াতে আপনি ভয় পেয়েছেন এ বিষয়টা জেনে খুবই মজা পেয়েছি ভাই। আসলে রাত্রে বেলায় আমাদের মন এমনিতে ভয় ভয় থাকে যার কারনে এমনটা হয়েছে। ধন্যবাদ অনেক সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
আমার এই গল্প করে আপনি মজা পেয়েছেন জেনে খুবই খুশি হলাম। যদিও প্রথম অবস্থায় আমি অনেক বেশি ভয় পেয়েছিলাম তবে পরবর্তীতে অনেকটাই হাসাহাসি করেছিলাম এই ব্যাপারটা নিয়ে। প্রথমবারের মতো নদীতে গিয়ে এরকম ভয় পেয়েছিলাম। গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
সু স্বাগতম ভাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। ঈদের শুভেচ্ছা