ফিরে দেখা//স্মৃতিচারন মূলক পোস্ট//পর্বঃ--০২

in আমার বাংলা ব্লগ11 months ago

আজ - ২৮ ভাদ্র | ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | মঙ্গলবার | শরৎকাল |



আসসালামু ওয়ালাইকুম,আমি জীবন মাহমুদ, আমার ইউজার নাম @jibon47। বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি আপনাদের দোয়ায় ভালোই আছি মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।


আজ আমি আপনাদের মাঝে আমার ফেলে আসা দিনগুলোর কিছু স্মৃতি আছে যে স্মৃতিগুলো এখনো স্মৃতির পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। যে স্মৃতিগুলো আমি কখনোই ভুলে যেতে পারব না এমন অনেক স্মৃতি জমা আছে এই ছোট্ট স্মৃতির পাতায়। সেগুলোর মধ্যে আজ আমি আপনাদের মাঝে আমার সাথে ঘটে যাওয়া, বড় ধরনের একটা দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরার গল্প শেয়ার করব। আশা করছি,আমার এই পোস্ট আপনাদের সবার ভালো লাগবে।



  • প্রিয় কমিউনিটি,আমার বাংলা ব্লগ
  • স্মৃতিচারণ,পর্বঃ--০২
  • আজ ২৮ ভাদ্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  • মঙ্গলবার


তো চলুন শুরু করা যাক...!


শুভ দুপুর সবাইকে......!!


ছোটবেলাকে কেন্দ্র করে আমাদের সকলেরই অনেক অনেক স্মৃতি রয়েছে যে স্মৃতিগুলো হয়তো বা কখনোই ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। হয়তোবা একটা সময় পরে আমরা বৃদ্ধ হয়ে যাব আমাদেরও চামড়ায় টান পড়বে আমাদেরও চুল পেকে যাবে আমাদেরও দাড়ি সাদা হয়ে যাবে। কিন্তু কিছু কিছু স্মৃতি আছে যে স্মৃতিগুলো হয়তোবা হৃদয়ের গহীন থেকে কখনোই হারিয়ে যাবে না এগুলো বরাবরি থেকে যাবে আমাদের সাথে। হঠাৎ করে যখন সেই স্মৃতিগুলোর কথা মনে পড়বে তখন মনে হবে ইস কতই না ভালো ছিল সেই দিনগুলো কত সুন্দর মুহূর্ত অতিবাহিত করেছি সকলের সঙ্গে। যখন চোখের সামনে দেখতে পাবো যে ছোট ছোট বাচ্চারা আমাদের মতো করেই আনন্দ উল্লাস করছে তখন তাদেরকে হয়তো বা কাছে ডেকে নিয়ে বলবো একটা সময় তোমাদের মত আমরাও এরকম করেছি। এখন আর সেগুলো করার সাধ্য নেই সাধ্য থাকলেও প্রকৃতি আমাদেরকে তা কখনোই করতে দেবে না কারণ নির্দিষ্ট একটা সময়ের পর সকলেরই নিজ নিজ অবস্থান পরিবর্তন করতে হয়।ছোটগুলা এরকম অনেক অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে আমার সাথে। এই অনেক অনেক স্মৃতি এগুলো আমি আপনাদের মাঝে স্মৃতিচারণমূলক পোস্ট হিসেবে শেয়ার করতে চাই সে ধারণা থেকেই আমি আজ আপনাদের মাঝে একটি গল্প শেয়ার করব আশা করছি এই গল্পটি আপনাদের সকলের অনেক বেশি ভালো লাগবে।

তখন আমি ক্লাস থ্রি অথবা ফোর-এ পড়ি। আমাদের বাসার মধ্যে আমরা চাচাতো তিন ভাই ছিলাম। একজনের নাম রিপন একজনের নাম হাসান আর আমি নিজেই জীবন। আমরা এই তিনজন একজন স্যারের কাছেই প্রাইভেট পড়তাম। যদিও রিপন আমার থেকে এক বছরের সিনিয়র ছিল কিন্তু হাসান আর আমি একসঙ্গে ই একই ক্লাসে পড়তাম। বরাবরই হাসান অঙ্কে অনেক বেশি পারদর্শী ছিল আর আমি ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত অংক দেখলে একটু ভয় পাই। যাইহোক আমরা যে স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তাম সেই স্যারের বাসা আমাদের বাসা থেকে এক কিলোমিটার দূরে। আমরা প্রতিদিন বিকেল বেলা স্যারের কাছে পড়তে যেতাম। পড়তে যাওয়া অবস্থায় প্রায় প্রতিদিন বিকেল বেলায় বৃষ্টি হতো আমরা তিনজন ছাতা মাথায় দিয়ে চলে যেতাম স্যারের কাছে পড়তে।

এরপরে পড়া শেষ করে আমরা আবার বিকেল বেলা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা করতাম এভাবেই আমাদের দিন কাটছিল প্রতিদিনের মতো সেদিনও পড়তে গিয়েছিলাম। আমাদের স্কুলের যে রাস্তা সেই রাস্তা দিয়েই আমরা প্রতিদিন স্যারের কাছে পড়তে যেতাম। স্কুলের পাশে পরিত্যক্ত একটা রুম ছিল যে রুমের মধ্যে শুধুমাত্র ইট পাথর আর কাঠ দিয়ে ভর্তি ছিল আর সেই রুমের ভেতরে কাঠ এবং চালের সাথে একত্রে ভ্রমর বাসা তৈরি করেছিল। ভ্রমরের বাসাটি দেখতে একদম বড় একটা কলসির মত এত সুন্দর করে সেটা বানিয়েছে দেখতে খুবই সুন্দর দেখাতো। স্কুলের এমন কোন শিক্ষার্থী নেই যে ভ্রমরের বাসা দেখতে যায়নি সেই রুমের পাশে।

আমরা প্রায় প্রতিদিন প্রাইভেট পড়ে আসার সময় সেই ভ্রমরের বাসায় ঢিল মারতাম। আশেপাশে থেকে বড় ইটের ঢিল নিয়ে এসেই ভ্রমরের বাসার দিকে ছুড়ে দিয়ে দৌড় দিতাম প্রত্যেকদিন আমাদের এই একটা কাজ নিয়মিতই করতাম। আর এই কাজটা করে আমরা অনেক বেশি মজা পেতাম ঢিল ছুঁড়ে দিয়েই যে যার মত দৌড় শুরু, অনেক বেশি হাসাহাসি করতাম আমরা এই ব্যাপারটা নিয়ে। বেশ মজা পেতাম আমরা।

puddle-2863648_1280.jpg

source


প্রতিদিনের মতো সেদিন অনেক বেশি বৃষ্টি হয়েছিল বৃষ্টির মধ্যে আমরা পড়তে গিয়েছিলাম যখন পড়া শেষ হয়ে যায় তখন অনেকটাই বৃষ্টি থেমে গিয়েছিল। এরপরে আমরা প্রতিদিনের কাজ করতে যাই চলে যাই স্কুলের পাশে এবং সকলের হাতে একটি করে ঢিল নেই এবং ভ্রমরের বাসাকে উদ্দেশ্য করে ঢিল ছুড়ে মারি। প্রথমে তারা দুজন ঢিল ছুড়ে মারে কিন্তু তেমন একটা লাগেনি সেই ভ্রমরের বাসায় আমি বড় একটা ঢিল নিয়ে ছুড়ে মারতে না মারতেই একদম মাছ বরাবর গিয়ে সেটা লাগে আর আমরা ততক্ষণে সেখান থেকে ভৌ-দৌড় দিয়ে চলে গিয়েছি। স্কুল গেট পার হওয়ার পরে আমরা যখন অপর পাশের একটি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম সেই রাস্তাটা আবার সেই ঘরের পাশেই তখন দেখি অনেক মানুষ সেখানে চিল্লাচিল্লি করছে আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তোবা কারো সাথে ঝগড়া হচ্ছে যার কারণে এমন চেঁচামেচি করছে। এরপরে আমরা আমাদের বাসার পাশের ছোট্ট একটি স্কুল মাঠ আছে সেখানে আমরা খেলাধুলা করছিলাম আমরা প্রতিদিন সেখানে সন্ধ্যা বেলা অব্দি খেলাধুলা পড়তাম।

হঠাৎ কে যেন এসে আমাদের তিনজনের কাছে বলছে যে তোরা প্রাইভেট পড়ে আসার সময় কি কাজ করছিস..? তখন আমরা বললাম আমরা তো কোন কিছু করিনি কেন কি হয়েছে..? বলল তোরা নাকি ভ্রমরের বাসায় ঢিল ছুড়ে মারছিস। এই কথা শুনে তো আমরা রীতিমতো অবাক হয়ে গেলাম এবং আমি একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি তখন বললাম তারপরে কি হয়েছে। বলল পাশেই বাধা ছিল একটা গরু, যখন তোরা ওই ভ্রমরের বাসায় ঢিল ছুড়ে মারছিস তখন ভ্রমর বের হয়ে এসে সেই গরুটাকে আচ্ছা মত কামড়ে দিয়েছে। গরুটা এখন বাঁচবে নাকি মরবে কেউ বলতে পারছে না।

এই কথা শুনে তো আমি ভয়ে একদম শেষ হয়ে গিয়েছি কারণ আমি জানি যে কাজ করেছি বাসায় গেলে নিশ্চিত মারই খেতে হবে। আর আমি সেই সময়টাতে আমার আম্মুকে দেখে অনেক বেশি ভয় পেতাম কারণ আমার আম্মু আমাকে এতটা বেশি মারত যে আমি আপনাদেরকে ভাষায় বলে প্রকাশ করতে পারবো না। সেদিন সন্ধ্যা হয়ে যাবার পরেও আমরা কেউ বাসায় যাচ্ছিলাম না। আমি তো বিশেষ করে বাসায় যাব না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি কারণ আমি জানি বাসায় গেলে আমার ওপর দিয়ে কি ঝড় উঠবে।

comic-1296117_1280.webp

source


এরপরে সুন্দর লাগার পরেও যখন আমরা বাসায় গেলাম না তখন আমাদের বাসা থেকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে দিয়েছে ততক্ষণে আব্বু আম্মু ওর ব্যাপারটা জেনে গিয়েছে। আমরা তিনজনেই গার্লস স্কুলের উপরে অনেকটা সময় বসে ছিলাম তারপরে আস্তে আস্তে বাসার দিকে রওনা হলাম কিন্তু বাসায় প্রবেশ করিনি। যেহেতু রাত হয়ে গিয়েছিল তাই আশেপাশে থেকে বোঝার চেষ্টা করছিলাম যে বাসার এখন কি অবস্থা সবাই কতটা রেগে আছে। এরপরে বড় কাকুর সঙ্গে আমাদের দেখা হয় তিনি আমাদের তিনজনকে বাসায় নিয়ে যান। আমার আম্মু তো আমাকে খুব মারা মারছিল সেই দিন। অনেক বেশি মাইর খেয়েছিলাম। এরপরে পরের দিন সকালে সেই গরুর মালিক এসে আমাদের বাড়িতে হাজির। সে তার গরুর ক্ষতিপূরণ চায়। যদিও তার গরুটা এখন পর্যন্ত বেঁচে আছে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা এখন নেই বললেই চলে তবে গা অনেকটাই ফুলে গিয়েছে।

এরপরে আমার দুই চাচা সহ আব্বু কিছু টাকা দিয়েছিল কিনা সেটা আমার এখন পর্যন্ত মনে নেই তবে মনে হয় ক্ষতিপূরণ হিসেবে কিছু টাকা দিয়েছিল। আর বাসা থেকে আমাদেরকে সাবধান করে দেওয়া হয়েছিল যে রাস্তার এক পাশ দিয়ে স্যারের বাড়িতে পড়তে যেতে হবে আর এক পাশ দিয়ে আসতে হবে কোনরকম ফাইজলামি বা বেয়াদবি করা চলবে না। এরপরে যদি এরকম কিছু হয় তাহলে লেখাপড়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। এই স্মৃতিটা আমার এখন পর্যন্ত মনে আছে যে আমাদের ছোট্ট একটা ভুলের জন্য আব্বু আম্মুর এবং কাকুদের অনেক কথা শুনতে হয়েছিল সেই সাথে গুনতে হয়েছিল জরিমানা।

এটাই ছিল আমার আজকের পোস্ট আশা করছি আমার এই পোস্ট আপনাদের সকলের কাছে অনেক বেশি ভালো লেগেছে। আজ আর নয় এখানেই শেষ করছি সকলেই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি পরিবারের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ সকলকে....!!



সমাপ্ত


আমার পোষ্ট দেখার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আশা করছি আপনাদের কাছে আমার এই পোস্ট খুবই ভালো লেগেছে। আমার এই পোস্ট পরে সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে আমাকে অনুপ্রাণিত করবেন বলে আশা রাখি। আপনার সুন্দর মন্তব্যই আমার কাজ করার অনুপ্রেরণা

বিবরণ
বিভাগজেনারেল রাইটিং
বিষয়স্মৃতিচারণ, পর্ব:--০২
পোস্ট এর কারিগর@jibon47
অবস্থান[সংযুক্তি]source

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 11 months ago 

আপনার স্মৃতি চারণ মূলক পোস্টের দ্বিতীয় পর্ব পড়ে ভালো লাগলো ভাই। আসলে সামান্য ভুলের জন্য জরিমানা দিতে হয়েছে জেনে খারাপ লাগলো। অনেক সময় দেখা যায় সামান্য ভুলের জন্য অনেক কথাই শুনতে হয়। বেশ চমৎকার অনুভূতি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন আপনার উপস্থাপন বেশ দুর্দান্ত হয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে।

 11 months ago 

সেই সময়টাতে খুবই ছোট ছিলাম যার কারণে এরকম ভুল করে ফেলেছিলাম তবে জরিমানাটা দেওয়া টা উচিত ছিল বলে আমি মনে করি। এখনো যদি মাঝে মাঝে সেই রাস্তা দিয়ে যায় প্রত্যেকবারই ওই ঘটনার কথা মনে পড়ে। মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59493.68
ETH 2649.33
USDT 1.00
SBD 2.45