হাত থেকে মাছ পড়ে যাওয়ার গল্প

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago


আসসালামু আলাইকুম
আমার বাংলা ব্লগে সকলকে স্বাগতম


IMG_20240715_141100.jpg

Photography device: Huawei P30 Pro-40mp


মাছের গল্প


অনেক বছর আগের কথা। আমি তখন হাই স্কুলে পড়ি। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতে লক্ষ্য করে দেখলাম বড় ভাই খালের মধ্যে মাছ ধরছেন। খালটা আমাদের বাড়ি থেকে কিছুটা নিকটে। ভাইয়ার সাথে আমাদের অন্যান্য চাচাতো ভাই চাচারাও ধরেছিলেন আলাদা আলাদা ভাবে। অর্থাৎ যার জমির সোজা খাল বয়ে গেছে সেই সেই ব্যক্তি তার নিজ জমি সুজা খালের অংশটুকু থেকে মাছ ধরে। সকাল থেকে তারা পানির ছেঁকে মাছ ধরার কাজ করছিলেন। খালের মাঝখানে মাটি দিয়ে বেঁধে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পানি নিষ্কাশন করছিলাম। আর এভাবেই তাদের দীর্ঘ সময় পার হয়ে দুপুর হয়ে যায়। আমরা যখন স্কুল থেকে ফিরলাম তখন দেখলাম মাছ ধরা প্রায় শেষের দিকে। ওই মুহূর্তে আমরা বেশ কয়েকজন দাঁড়িয়ে মাছ ধরা দেখলাম। ঠিক এই মুহূর্তে দেখলাম অনেকগুলো মাছ। আমি দ্রুত বাড়িতে বই রেখে জামা কাপড় চেঞ্জ করে আবার এসে দাঁড়ালাম। এই মুহূর্তে দেখলাম অন্যান্য মাছের মধ্যে অনেক বড় একটি শোল মাছ পেয়েছে ভাইয়া। মাছটা দেখে আমি তো খুবই আনন্দে আনন্দিত। আমি কিছুতেই মাছটা হাঁড়ির মধ্যে করে বাড়ি নিয়ে যেতে দেব না। আমি নিজে হাতে মাছটা সবাইকে দেখাতে দেখাতে বাড়িতে নিয়ে যাব। আমার ভাইয়াও খুশি হয়েছিলেন। সে নিজেও চাচ্ছিলেন মাছটা যেন সবাইকে দেখাতে দেখাতে নিয়ে যায়। এতে নিজের একটা অন্যরকম আনন্দ হবে। কারণ অনেকজন মাছ ধরছে সেই জায়গা থেকে, কেউ এত বড় শোল মাছ পাইনি।

IMG_20240714_132525.jpg


আমি ভাইয়াকে বললাম ভাইয়া মাছটা আমার হাতে দাও। ভাইয়া আনন্দের সাথে কাদা পানির মধ্য থেকে উপরে উঠে এসে মাছটা আমার হাতে দিলো। উপরে যত মানুষ ছিল তারা সবাই অবাক হয়ে দেখতে আর বিভিন্ন কথা বলছে। কেউ বলছে এই মাছ অনেক পিছলা, হাত থেকে পড়ে যেতে পারে সাবধান। আমার ভাই আনন্দের সাথে এবং নাম নিয়ে বলল আমার বোনের হাত থেকে কোন জিনিস পড়ে না, মাছ পড়ে যাবে ভাবলে কি করে। আমিও ঠিক সেভাবে মাছটাকে হাতের মধ্যে নিলাম। রাস্তার পাশে খাল অতিক্রম করে মানুষকে দেখাতে দেখাতে রাস্তায় উঠলাম। ততক্ষণে আমি সজোরে টিপে ধরেছিলাম দুই হাত দিয়ে। মাছটা কোনভাবে আমার হাতের মধ্যে থেকে নড়তে পারছিল না। অনেকে অনেক কথা বলছিল। কেউ বলছিল এক কেজি কেউ বলছিল দেড় কেজি হতে পারে মাছটা। আমি আনন্দের সাথে শোল মাছ দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে রাস্তা ক্রস করে আস্তে আস্তে বাড়ির দিকে আসতে থাকি। ততক্ষণে আমার খুবই ভালো লাগছিল কেউ এত বড় মাছ পাইনি, আমার ভাইয়া পেয়েছে। আর সেই মাছটা আমি নিজে হাতে বাড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছি।

আর এভাবে বাড়ির দিকে যেতে যেতে আমাদের চার ভাগের একটা পুকুর রয়েছে বাড়ির খুবই নিকটে। সে পুকুরের ধার দিয়ে আমি বাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তখন আমার কাছে ইজি মনে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল মাছটা এতক্ষণে এমন একটা হাত দিয়ে গেছে। মাছের গায়ে শক্তি নষ্ট হয়ে গেছে আর লাফাতে পারবে না। আমিও দুষ্টু পেট ভরে রেখে হাত লেগে গেছে। তাই কোনরকম শক্ত হাত কমিয়েছি। এবার পুকুরের পাড় দিয়ে বাড়ি ঢুকতে মাছটা সজোরে নড়ে উঠল, আর আমার হাত থেকে পড়ে গেল। আমি দ্রুত মাছটাকে ধরার চেষ্টা করলাম। মাছটা মাটিতে পড়ছিলো। কোনভাবেই জানো আমি আর তাকে সামলাতে পারছি না সে এতটাই লাফাচ্ছে। এরপর আরেকটা লাফ দিয়ে পুকুরের মধ্যে চলে গেল। মাছটা যখন পুকুরের মধ্যে চলে যায় তখন আমার খুবই খারাপ লাগছিল। ততক্ষণে কয়েকজন মানুষ দেখে ফেলেছে বিষয়টা। রাস্তার পাশে খাল দিয়ে মাছ ধরা দেখার লোকজন সবাই বলাবলি আর ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছে আমার দিকে। এদিকে ভাইয়াও খালের মধ্যে থেকে উঠে রাস্তায় তাকিয়ে দেখতে। ততক্ষণ এসে জানতে পেরে গেছে আমার হাত থেকে মাছটা ফসকে গিয়ে পুকুরের মধ্যে চলে গেছে। তখন আমার খুব কান্না পাচ্ছিলে। এদিকে মনে মনে খুব রাগ হচ্ছিল। আমার রাগ কার উপরে ঝাড়বো বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু আমি কান্নায় ফেটে পড়লাম। কেন মাছটা আমার হাত থেকে এভাবে লাফ দিয়ে ছুঁড়ে গেল, আর পানের মধ্যে চলে গেল। রাস্তার উপরে থাকা লোকজন যারা আমার হাতে মাছটা দেখেছিল, তারা এসে সবাই হাসাহাসি শুরু করলো।

IMG_20240714_132435.jpg


আমার কান্না করতে দেখে মানুষজন আরো হাসাহাসি করছিল। এতক্ষণে ভাইয়া হাঁটতে হাঁটতে আমার কাছে আসলো। আমি ভাবছিলাম ভাইয়া খুবই রাগ দেখাবে আমার উপরে। কিন্তু দেখলাম ভাই এক মোটেও রাগ করল না। ভাইয়া আমার কান্না দেখে হেসে উঠলো। হাত থেকে ছুঁড়ে গেছে তো কি হয়েছে, এখন তো বর্ষার সময় না। শীতের সময় আসছে এই পুকুর তো ছেকতে হবে কিছুদিন পর। ততক্ষণে মাছটা আরেকটু মোটা হয়ে যায়। ভাইয়ার কথা শুনে আমার কান্না কমে গেল। অন্যান্য চাচারা বলল পুকুর থেকে মাছটা ধরে তোমাকেই দেওয়া হবে, কান্না করো না। তখন আমি কান্না থামাতে থামাতে বাড়ির দিকে হাঁটতে থাকলাম। তখন আমার খুব অসহায় মনে হচ্ছিল। কারণ মাছটা হাতে করে আমি খুব আনন্দের সাথে ও গৌরবের সাথে চলছিলাম, কিন্তু মাছটা যখন হাত থেকে পড়ে পানির মধ্যে চলে গেছে তখন যেন আমার সেই ভালো লাগাটাই মাটি হয়ে গেছে।

PB8ro82ZpZP35bVGjGoE93K3E4U5KX8KtMBJ2rhmkyLqtRRZvVw9YH8hEBg7DJQKSJLWf7VJRhnjGRYSDmuGDMSHAPBRbiRis5HV4ATHTF7QvLHc.png


পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ



received_434859771523295.gif


পোস্ট এর বিবরণ


বিষয়শোল মাছের গল্প
ফটোগ্রাফি ডিভাইসHuawei P30 Pro-40mp
ক্রেডিট@jannatul01
W3w locationsource
দেশবাংলাদেশ
ব্লগারআমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি


আমার পরিচয়


আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।


2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif



99pyU5Ga1kwqSXWA2evTexn6YzPHotJF8R85JZsErvtTWXkFkcDg5ibdZCen8p3uDxVoV5q1NZLwPPeBug1jepgK3e2Zdtv5gFKAP1J8S7nez1ced4GsXM4bVpnBb88Np6.png


Coin Marketplace

STEEM 0.29
TRX 0.24
JST 0.040
BTC 92090.92
ETH 3207.87
USDT 1.00
SBD 8.18