এক ঝড়ের রাতের ভৌতিক ঘটনা
ভৌতিক গল্প
অনেকদিন আগের কথা। তখন আমার দাদা শ্বশুরের বাড়িতে ছিল বেশ বড় বড় কলা গাছ। বাড়ির মধ্যে ছিল গরুর গোয়াল ঘর। কলা গাছগুলো ছিল গোয়াল ঘরের পাশে। তারমধ্যে দুইটা কলাগাছে এত বড় কাইন পড়েছে যে একটি মানুষের চেয়েও বড়। সেখানে প্রায় কুড়ি ২৫ টা ছড়ি ছিল কলার। এমনই বড় বড় দুইটা কলা গাছের কলার কাইন কখন চুরি হয়ে যায় বা ঝড়ে ভেঙে যায় এমন একটা ভয় ছিল। কারণ আগের পাড়ার মাতবর টাইপের মানুষগুলো চোর পুষে রাখত। তারা বিভিন্নভাবে পাড়াগাঁয়ে চুরি করে ঝামেলা করত। আগে ছিল চোরের ভয়। রাতে মানুষজন যখন ঘুমিয়ে পড়তো। চোর এসে গোয়াল ঘর থেকে গরু খুলে নিয়ে চলে যেত। বিশেষ করে এখনকার মতো পাটের সময় গুলো ছিল বেশ ভয়ানক। কারণ চোর গরু বা ছাগল নিয়ে যদি পাটের জমি দিয়ে চলে যেত রাতে আধারে আর খুঁজে পাওয়া যেত না। তখন মানুষজন কম ছিল তাই ভয় থেকেও খুঁজতেও যেত না। এদিকে ছিল ভূত পেত্নীর ভয়। এক কথায় বলতে গেলে সেই সময় তো আলোর ব্যবস্থা তেমন একটা ছিল না আর এই সমস্ত সমস্যার সংখ্যা ছিল আরো বেশি। ঠিক তেমনি এই কলা গাছ আর গোয়াল ঘর নিয়ে বেশ আতঙ্কে থাকতে হতো দাদা-দাদীদের। রাত্রে প্রায় হারিকেন জ্বালিয়ে গরু-ছাগল দেখতো আর মাঝেমধ্যে কলার কাইন গুলো দেখত। কারণ এই কলা চুরি হয়ে যাওয়ার ভয় ছিল। আশেপাশের মানুষজন যে আসতো কলাগুলো দেখে বেশ প্রশংসা করত। ঠিক এমনই এক ঝড় বৃষ্টির রাত। প্রচন্ড ঝড় উঠেছে। দাদা-দাদীরা হারিকেন জালিয়ে ঘরে বসে রয়েছে। ঘর ছিল খড়ের চালের। ঘরে খড়ের চালা দিয়ে মাঝে মধ্যে ফোটা ফোটা বৃষ্টি পড়ছিল।
মূলত এই বৃষ্টির পানিতে ঘরের মধ্যে জিনিস যেন ভিজে না যায় সেটা ঠেকানোর জন্য তারা জাগ্রত। দাদা-দাদি ভয় ভয় করছিল প্রচন্ড ঝড়ে কলার কাইন দুইটা যদি ভেঙে যায় তাহলে ক্ষতি হয়ে যাবে। বিশেষ করে আরও ক্ষতি হবে কাইন দুইটা গরুর গোয়াল ঘরের পাসে ছিল। গোয়াল ঘরের এক অংশ ছিল মাটির গাথনি দেওয়াল। যদি ভেঙে পড়ে যায় তাহলে গোয়াল ঘর ভেঙে যাবে। গরু মারা যাওয়ার ভয় ছিল। আর ওই মুহূর্তে সেই প্রচন্ড ঝড়। ঝড় বৃষ্টি আস্তে আস্তে কমলো। এরপর তারা ঘুমানোর চেষ্টা করল এই মুহূর্তে বিকট শব্দ হলো। তারা হারিকেন জ্বালিয়ে ঘর থেকে লক্ষ্য করে দেখলো কলা গাছ দুইটা ভেঙে পড়ে রয়েছে গরুর ঘরের উপর। তারা কলা গাছ দুইটা নিয়ে বেশ আফসোস করল আরো আফসোস করল না জানে গোয়াল ঘরে ক্ষতি হয়ে গেল কিনা। তবে কাঁদা পানির কারণে ও অলসতার কারণে দাদি বাইরে আসলো না। ভাবল সকালেই দেখব। শুধু দাদা এসে দেখে গেল গোয়াল ঘরের তেমন ক্ষতি হয়নি গরুর ঠিক আছে। তবে হারিকেনের আলোয় ভালোভাবে দেখা যাচ্ছিল কলা গাছ দুইটা ভেঙে পড়ে রয়েছে। এমনকি কলার পাতা নিজ হাতে সরিয়ে কাদা পার হয়ে গোয়াল ঘরের দিকে গেছে ও এসেছে।
বুঝতে পারছেন মানসিক টেনশন থাকলে ভালো ঘুম হয় না। ঠিক তেমনি সকাল ভোর হতে না হতেই দাদা দাদির ঘুম ভেঙে গেল। এরপর তারা এসেই গোয়াল ঘরের দিকে তাকালো। কিন্তু তখন তারা আশ্চর্য জিনিস দেখতে পারলো। দেখলো যে কলা গাছের সেই বিশাল বিশাল কাইন দুইটা যেভাবে খাড়া ছিল সেভাবেই খাড়া রয়েছে। অর্থাৎ কলা গাছ ভাঙা লক্ষ্য করলো না। তারা এমন দেখে ভয় পেয়ে গেল। কারণ কলা গাছ দুইটা ভেঙে পড়েছিল কলার পাতা সরিয়ে দাদা চলাচল করেছিল। গাল দুইটা গোয়াল ঘরের উপর দিয়ে ভেঙেছিল। কিন্তু সকালে উঠে দেখছে গাছের কোন ক্ষয়ক্ষতি নাই গাছ আগের মত খাড়াভাবে দাঁড়ানো। গোয়াল ঘরে কোন সমস্যা হয়নি। আশেপাশের কোন গাছ-গাছালি ভাঙ্গা নেই। তাহলে রাতে এমন বিকট শব্দ হলো কিসের? কলাগাছ ভেঙে পড়েছিল সেটা ঠিক হলো কিভাবে? এরপর পাড়া-প্রতিবেশীরা জানতে পারলো, শুনতে পারলো, সবাই আসলো। সেই সময় দাদা-দাদীদের বাড়ির পাশে কোন ঘরবাড়ি ছিল না এমনিতেই জনবসতি কম ছিল। অনেক দূরে দূরে একটা করে ঘরবাড়ি ছিল। আর সব জায়গায় বন জঙ্গল বেশি। তখন এমন কথা শুনে পাড়ার এক মুরুব্বী বলল, প্রচন্ড ঝড় মেঘের মুহূর্তে বাইরে বের হতে নেই। এই সমস্ত ভৌতিক কার্যগুলো জিন পরীরা করে থাকে। মুরুব্বী ব্যক্তির তাদের আমলের অনেক কথা বলল। কারণ এমন বিভিন্ন প্রকার বিভ্রান্তিমূলক ঘটনা ঘটে থাকে বর্ষার সময়,অন্ধকার রাতের সময়, ঝড় মেঘের সময়। আর যখনই এমন ঘটনা ঘটে তখন বাইরে বের হতে নেই। ঘটনা স্থানে উপস্থিত হতে নেই। ওই মুহূর্তে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যাহোক অতঃপর দেখা গেল সেই কলা গাছের কলা অনেকদিন গাছে থেকে পুষ্ট হল, পাকলো। সেই কলা নিজেরা না খেয়ে বাজারে বিক্রয় করে দিল।
পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ
বিষয় | অতীত ঘটনা |
---|---|
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Huawei P30 Pro-40mp |
ক্রেডিট | @jannatul01 |
দেশ | বাংলাদেশ |
ব্লগার | আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি |
আমার পরিচয়
আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।
আসলেই তো বিষয়টা ভয়ংকর ছিল।গভীর রাতে বিকট আওয়াজ,নিজ চোখে দেখা কলা গাছ ভেঙে গোয়াল ঘরের চালের উপরে পড়েছে। আর সকাল হতে না হতেই সবকিছু গায়েব।আগেকার দিনে অন্ধকার থাকার কারণে আর জনবসতি কম হওয়ার কারণে এমন সব কিছু ঘটতো।আমরা এখন হয়তো এগুলো বিশ্বাস করি না তবে এমন নজির আছে। যাইহোক এই ঘটনাটা পড়ছি রাতের বেলায়,ভয় লাগলেও ভালো লাগলো আপু।
হ্যাঁ আপু এমন ঘটনা প্রায় শোনা যায়