কলেজ লাইফে অস্বস্তিকর একটা দিনের গল্প

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago


আসসালামু আলাইকুম
আমার বাংলা ব্লগে সকলকে স্বাগতম

অস্বস্তিকর একটা দিনের গল্প


IMG_20240421_151937.jpg

Photography device: Huawei P30 Pro-40mp



২০১১ সাল, এসএসসি পাশ করে গাংনী ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হলাম। ভর্তি হওয়ার পর বেশ ক্লাস করি। তবে একদিন বিশেষ প্রয়োজনে মহিলার ডিগ্রী কলেজের এলাকায় গেলাম। আমার বেশ কিছু বান্ধবী মহিলা ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হয়েছিল। আর আমরা বেশ কয়েকজন মহিলা পুরুষের ডিগ্রি কলেজটাই ভর্তি হয়েছিলাম। বর্তমান সেই কলেজ টা সরকারি হয়ে গেছে। আমাদের সময় সরকারি ছিল না। তবে যাই হোক হাই স্কুল লাইফের আমার মহিলা কলেজে পড়া বান্ধবীরা একটি স্যারের কাছে ইংরাজি প্রাইভেট পড়তো। আমি শুনেছিলাম সেই স্যারটা খুবই ভালো। তাই খুব ইচ্ছে ছিল ওই স্যারের কাছে ইংরেজি প্রাইভেট পড়বো। আমি একদিন আমার বান্ধবীদের সাথে ওই কলেজের এরিয়া ঘুরতে গেছিলাম। তবে গাংনীতে যেহেতু নতুন আর বান্ধবীদের কলেজ টা আরো নতুন। সেখানে চারটি রাস্তার মোড় গলি রয়েছে।

হঠাৎ একদিন আমার কি মনে হল আমি আমার বান্ধবীদের সাথে দেখা করতে সেই মহিলা কলেজে পাশে গেলাম। আমার সাথের অন্যান্য বান্ধবীরা যারা আমার সাথে ডিগ্রীতে পড়তো, তারা কেউই ছিল না। তাই আরো মন মানসিকতা এটাই ছিল যে আমার কলেজে পড়ে সেই বান্ধবীরা না আসলেও মহিলা কলেজে পড়ে হয়তো তাদেরকে আমি পাব। ওদের সাথে আমি সেই স্যারের প্রাইভেট পড়ার জায়গাটা দেখে আসব। আরো একটা দুঃখের বিষয় ছিল ওই মুহূর্তে আমার মোবাইল ছিল না। আমি গাংনী ডিগ্রী কলেজ থেকে বের হয়ে গাংনী মহিলা ডিগ্রী কলেজের দিকে অগ্রসর হলাম। প্রথমে বলে রাখা ভালো দুই কলেজের মাঝখানে গাংনী পৌরসভা কার্যালয়। হাই রোডের দিকে দুইটা গেট রয়েছে। চারিপাশ পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। তবে একটি কর্ণার সাইডে সেই সময় পাঁচিল ভাঙ্গা ছিল সেই স্থান দিয়ে চলাচল করা যেত অর্থাৎ সহজ রাস্তা হয়ে গেছিল ভাঙ্গার কারণে। প্রথম দিন বান্ধবীদের সাথে মহিলা কলেজে গিয়েছিলাম সেই পথ দিয়ে। এবার যেইদিন আমি একা যাচ্ছিলাম ঐদিন শর্ট রাস্তায় না গিয়ে সবাই যে রাস্তা দিয়ে যায় সে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম।

গাংনী মহিলা কলেজের রাস্তা সবার কাছে কমন একটা রাস্তা। সোজাসুজি চলে গেলে গাংনী মহিলা কলেজের গেট সামনে। সেখানে উপস্থিত হলাম। গেটের পাশে গিয়ে দেখলাম গেট দারোয়ান পাহারা দিচ্ছে। লক্ষ্য করে দেখলাম কয়েকজন মেয়ে বের হতে যাচ্ছে তাদেরকে বের হতে দিল না। তাদেরকে বলল ছুটি না হওয়া পর্যন্ত একটা মেয়ে গেটের বাইরে যেতে পারবে না। এই মুহূর্তে আমি যদি মিথ্যা বলে গেটের মধ্যে প্রবেশ করি তাহলে তো আমি বের হতেও পারবো না। আবার যদি পরিচয় দিয়ে আমার বান্ধবীরা এই কলেজে পড়ে, তাদের সাথে দেখা করব। দেখা করতে দেবে কিনা তারও ঠিক নাই। আমি কি করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। মনে মনে হলো গেটের মধ্যে প্রবেশ না করাটাই বেটার হবে। আমি এদিকে ওদিকে চারিপাশে তাকালাম। গেট দারোয়ান আমার দিকে লক্ষ্য করল। আমি কিছু বললাম না তাই সেও কিছু বলল না। এদিকে লক্ষ্য করে দেখলাম সাড়ে বারোটা বাজে বান্ধবীদের কলেজ নাকি ছুটি হয় দুইটার পরে। তারা এসেছে কিনা সেটাও ঠিক জানিনা।

তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমার কলেজের ওখানে চলে যাব। কারণ আমাদের কলেজের রাস্তার পাশে রয়েছে গাংনী জেনারেল হাসপাতাল। আর সেখানেই লোকাল বাস থামে। ওখান থেকে বাসে চড়ে বাসাই চলে যাব এমন চিন্তা। এদিকে মহিলা কলেজের রাস্তা অতিক্রম করে অতদূর যেতে আরো হাপিয়ে যাব, এমনিতেই এতদূর পথ হেঁটে এসেছি হাঁপিয়ে গেছি। তাই ভাবলাম প্রথম দিন বান্ধবীদের সাথে যখন শর্টকাট রাস্তা দিয়ে এখানে এসেছিলাম ওই পথ দিয়ে শর্টকাটে চলে যায়। আর তাই আমি সামনের দিকে হাঁটা শুরু করে দিলাম। কিন্তু আমি যেতে যেতে শর্টকাটের সেই রাস্তা যেন খুঁজে পাচ্ছিনা। রাস্তার চারিপাশে বন জঙ্গল বেঁধে গেছে। পাঁচিলের সেই ভাঙ্গা স্থানটা চোখে বাঁধলো না। এরপর আমি পেছনদিকে সামনের দিকে যেদিকে লক্ষ্য করি সবকিছু যেন আমার কাছে অচেনা মনে হতে লাগলো। ওই মুহূর্তে আমি বেশ ঘাবরিয়ে গেলাম ভয়ে ভয়ে অনুভব। এরপর রাস্তা দিকে লক্ষ্য করে দেখি কোন মানুষজন নেই সামনের দিকে আরো বন জঙ্গলে এরিয়া। এই মুহূর্তে আমার সামনে একটা কুকুর আসলো। কুকুরটাকে দেখে আরো বেশি ভয় লাগলো আমার।

একদিকে পাঁচিলের সেই ভাঙ্গা স্থান পাচ্ছিনা আরেকদিকে সামনে কুকুর অন্য কোন লোকজন নেই। তাই আমি এতটা ভীতু হলাম তা বলে বোঝাতে পারবো না। এরপর আমি পিছু দিকে দ্রুত হাঁটা শুরু করলাম। ইতোমধ্যে আমার জান শুকিয়ে গেছে প্রচন্ড ঘেমে গেছি ভয়ে। তারপর আবার মহিলা কলেজের গেটের কাছে এসে উপস্থিত হলাম। তখন যেন একটু স্বস্তি পেলাম। ইতোমধ্যে কিন্তু আমি বেশ হাপিয়ে গেছি আর পা চলছে না। কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা। কিছুটাখন দাঁড়িয়ে থাকলাম গেটের এক সাইডে। ততক্ষণ ও গেট থেকে কাউকে বের হতে দেয়নি। এরপর আমি অসহায় মত হাঁটতে হাঁটতে হাঁটতে হাইরোডে এসে উপস্থিত হলাম। হাইরোড থেকে আবার হাঁটতে হাঁটতে এসে জেনারেল হাসপাতালের কাছে অর্থাৎ আমাদের ডিগ্রী কলেজের রাস্তার পাশে। তারপর একটা লোকাল বাসে আসলো লোকাল বাসে উঠলাম। আরো দূর ভাগ্যের বিষয়। গাড়ি থেকে বেশ অনেক লোকজন নেমেছিল কিন্তু গাড়িতে এত পরিমাণ মানুষ ছিল বসার সিট ছিল না। দীর্ঘ পথ গাড়ির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হলো। অবশেষে একটি বসার জায়গা পেলাম। এরপর স্বস্তি ফেলে বাসে চড়ে বাড়ির দিকে চলে আসলাম।

IMG_20240421_151935.jpg


PB8ro82ZpZP35bVGjGoE93K3E4U5KX8KtMBJ2rhmkyLqtRRZvVw9YH8hEBg7DJQKSJLWf7VJRhnjGRYSDmuGDMSHAPBRbiRis5HV4ATHTF7QvLHc.png


পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ



received_434859771523295.gif


পোস্ট এর বিবরণ


বিষয়অতীত ঘটনা
ফটোগ্রাফি ডিভাইসHuawei P30 Pro-40mp
ক্রেডিট@jannatul01
দেশবাংলাদেশ
ব্লগারআমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি


আমার পরিচয়



আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।


2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

6VvuHGsoU2QBt9MXeXNdDuyd4Bmd63j7zJymDTWgdcJjo1NfxyQcRUrHnbvGAuDxuMioMRjoG74XpZyTRDsUp566Bu2ZZHRsryAWmeAqnTe9T6zT4X1bZ8DTXHHYrr.png

Sort:  
 2 months ago 

আপু আপনার বান্ধবীদের সাথে দেখা করার জন্য মহিলা কলেজের দিকে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে বাড়ি ফেরার জন্য শর্টকাটে একটা রাস্তা খুঁজছিলেন। তবে শর্টকাটে একটি রাস্তা চিনে থাকলেও রাস্তাটি বিভিন্ন বন জঙ্গলে গিয়ে গেছে যার কারণে আপনি ঠিকঠাক ভাবে চিনতে পারছিলেন না। আর এরকম রাস্তাতে একা সাথে যদি একটি কুকুর থাকে তাহলে সত্যিই অনেক ভয় লাগে। যাই হোক পরবর্তীতে আপনি লোকাল বাস ধরে যে বাড়ি পৌঁছাতে পেরেছেন এটা জানতে পেরে খুবই ভালো লাগে।

 2 months ago 

আসলেই বেশ অস্বস্তিকর একটা পরিবেশ ছিলো । শেষ পর্যন্ত যে ঠিকমতন বাসায় ফিরতে পেরেছিলেন, এটা জেনে ভালো লাগলো আপু।

 2 months ago 

ওয়ালাইকুম আসসালাম,

আপনার লেখা পড়ে কলেজ জীবনের সেই অস্বস্তিকর দিনের গল্পটি মন ছুঁয়ে গেল। আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের মনে করিয়ে দিল যে জীবনের প্রতিটি দিনই নতুন কিছু শেখার সুযোগ নিয়ে আসে, যদিও সেটা সবসময় সুখকর নাও হতে পারে। গাংনী মহিলা কলেজে আপনার সেই বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি এবং ভয়ের মুহূর্তগুলো খুবই বাস্তব ও জীবন্তভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। আপনার গল্পটি সত্যিই আমাদের কলেজ জীবনের নানা মুহূর্তকে মনে করিয়ে দিল। আশা করি, ভবিষ্যতে আরও এমন সুন্দর এবং বাস্তব গল্প শেয়ার করবেন। আপনার পরবর্তী ব্লগের অপেক্ষায় রইলাম।

ধন্যবাদ,
[@redwanhossain]

 2 months ago 

বেশি দারুণ একটি ঘটনা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনার আজকের এই ঘটনা পড়ে বেশ অনেক কিছুই জানতে পারলাম। আসলে অচেনা রাস্তায় এমনটা সবারই কম বেশি হয়ে থাকে। আর এতে বেশ বিভ্রান্তিকর অবস্থা সৃষ্টি হয়। হয়তো সেই ছোট্ট রাস্তা পারছিলেন না এদিকে রাস্তায় কোনো মানুষজন নেই কুকুর দেখে আরো ভয় পেয়ে গেছিলেন। তবে শর্টকাট রাস্তা খুঁজতে গিয়ে আরেকটু বেশি হয়রানি হয়েছেন বুঝতে পারলাম।

 2 months ago 

এই শর্টকার্ট রাস্তা আমি বেশ ফলো করি।কিন্তু প্রতিবারই আমার যে উদ্যেশ্যে শর্টকার্ট ফলো করা হয় তারচেয়ে বেশি সময় লাগে। বন জঙ্গল ঘেরা রাস্তা সাথে কুকুর।এরপরেও লোকাল বাসে করে বাড়ি ফিরেছিলেন অবশেষে জেনে ভালো লাগলো।বান্ধবীর সাথে দেখা করতে গিয়ে বেশ বিপাকেই পড়েছিলেন তাহলে।ধন্যবাদ আপু সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.031
BTC 59214.59
ETH 2524.82
USDT 1.00
SBD 2.48