এক বুড়ির টিভি দেখার গল্প
আমরা সবাই জানি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে গ্রামাঞ্চলে কারেন্ট অনেক পরে এসেছিল। আর যখনই কোন গ্রামে কারেন্ট এসেছিল আলো জ্বলতো এই সমস্ত বিষয়গুলো দেখে বেশ আশ্চর্য হত আগেকার মানুষেরা। কারণ তারা তো সব সময় হারিকেন ল্যাম্পো অথবা চেরাগ জ্বালিয়ে ঘর আলোকিত করত। তাই ঠিক এমনই একটা ঘটনা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলেছি। বিষয়টা আত্মীয়দের মুখে শোনা।
এক বুড়ির টিভি দেখার গল্প
তখন প্রথম আমার নানীদের গ্রামে কারেন্ট এসেছিল। মাত্র কয়েকজন মানুষের বাড়িতে কারেন্ট নেয়া হয়েছিল। আর তার মধ্য থেকে মাত্র একজন ব্যক্তির শখ করে টিভি কিনেছিল সেই সময়। আর তখনকার সময় টিভিতে তো একটা দুইটা সিনেমা হতো। আর এই সিনেমা দেখার জন্য ভিড় করতো সারা গ্রামের মানুষ। ঠিক এমনই এক বিকেল-সন্ধ্যার মুহূর্তে টিভিতে সিনেমা দেখার জন্য গ্রামের অনেক মানুষ ভিড় জমিয়েছে। আর সেই টিভিতে সিনেমা দেখার জন্য গ্রামের এক প্রান্তের এক বুড়ি লাঠি ভর দিয়ে সেই বাড়ির দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। ঠিক বাড়িতে পৌঁছানোর পূর্বেই কারেন্ট চলে গেছে। লোকজন অপেক্ষা করছিল প্রায় আধাঘন্টা ধরে কিন্তু কারেন্ট আসলো না, সন্ধ্যা নেমে আসলো। তাই লোকজন যে যার মত নিজের কর্মের জন্য বা নিজের বাড়ির দিকে রওনা দিল। ঠিক ওই মুহূর্তে বুড়ির সাথে অনেকের দেখা হল। সবাই বুড়িকে প্রশ্ন করল বুড়ি কোথায় যাচ্ছ। বুড়ি উত্তর দিল গ্রামে কারেন্ট এসেছে, টিভি এসেছে, সিনেমা হয় সিনেমা দেখতে যাচ্ছি।
তখন সবাই বুড়িকে জানালো কারেন্ট চলে গেছে, তাই টিভি চলছে না। বুড়ি তখন সে মানুষদেরকে বলল কারেন্ট চলে গেছে তা কি হয়েছে? হারিকেন জ্বালিয়ে টিভি দেখবে। হারিকেনের আলো আছে না। নাকি হারিকেনের কেরোসিন ফুরিয়ে গেছে? আমি বাড়ি থেকে বড় হারিকেন টা হাতে করে আসলেও তো ভালো হতো। বুড়ির এমন উদ্ভট কথা শুনে সবাই হাসাহাসিতে মেতে উঠলো। বুড়ি সবার হাসাহাসি দেখে রেগে গেল এবং সেই টিভি আলা বাড়ির দিকে অগ্রসর হলো।
টিভি আলা বাড়িতে উপস্থিত হয়ে সবাইকে প্রশ্ন করল কারেন্ট কোথায় চলে গেল? তখন অন্যান্য মানুষরাও ঠিকভাবে উত্তর দিতে পারল না, কারেন্ট কোথায় চলে গেল। অনেকেই বলাবলি শুরু করল কারেন্ট এসেছে আবার কারেন্ট চলে যায় কিভাবে? কারেন্টের তার তো রয়েছে। এদের মধ্যে যে কয়েকজন মানুষ বুঝত তারাও হাসাহাসিতে ফেটে পরল। তখন বুড়ি আবার সবাইকে এই কথাই বলল। কারেন্ট যায় যাকগি হারিকেন জ্বালিয়ে টিভি দেখা যাবে না। আমিও বাড়ি থেকে বড় হারিকেন টা আনলাম না। কেরোসিন পুরা ছিল। সারারাত আলো জ্বলে থাকবে। বুড়ির এই সমস্ত কথা শুনে টিভি আলা বাড়ির উপস্থিত লোকজন খুবই হাসাহাসিতে ফেটে পড়লো। তখন সবার মনে হলো যেন সিনেমার বদলে এই বুড়িটা আরো আগে আসলে আরো সুন্দর সিন হতো আনন্দ হতো সবার। তবে সেই সন্ধ্যা কালের মুহূর্তে কারেন্ট না থাকলেও সিনেমার চেয়েও সিনেমার আনন্দ সবাই পেয়ে গেল বুড়ির কথাতে।
বুড়ি সবার হাসাহাসি দেখে তার হাতে লাঠি দিয়ে এর ওর দিকে মারার চেষ্টা করল। এরপর সবাই বুড়িকে বুঝিয়ে বলল হারিকেন দিয়ে যদি টিভি চালানো যেত, তাহলে তো কারেন্ট আসার আগেই টিভি কিনে আনো। তখন বুড়ি বুঝতে পারল। আসলেই সত্যি তো। তবে বুড়ের মনের মধ্যে একটা কনফিউশন রয়ে গেল। কারেন্টের তার তো তাদের বাড়িতে রয়েছে কিন্তু কারেন্ট কিভাবে কোথায় চলে গেল। কেউ বুড়িকে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারল না, সঠিকভাবে বোঝাতে পারলো না। বুড়ি এই টেনশন করতে করতে বাড়ির দিকে রওনা দিল। কারেন্ট নিয়ার মানে কি হলো? কারেন্ট কোথায় চলে গেল? কারেন্টের তার তো রয়েছে।
পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ
বিষয় | অতীত ঘটনা |
---|---|
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Infinix Hot 11s-50mp |
ক্রেডিট | @jannatul01 |
দেশ | বাংলাদেশ |
ব্লগার | আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি |
আমার পরিচয়
আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।
আপনার লেখা আজকের গল্পটা পড়ে আমি তো হাসতে হাসতে একেবারে শেষ। বুড়ির এতসব কথা শুনে সত্যি অনেক বেশি মজা পেলাম। টিভির ব্যাপারটা বুড়িকে বুঝাতে পারলেও কারেন্টের ব্যাপারটা কেউই বুঝাতে পারিনি। কারণ এটা তো একেবারে অসম্ভব। বুড়ি হারিকেন জ্বালিয়ে টিভি দেখবে কথাটা শুনে আমার একটু বেশি হাসি পেয়েছে। যাই হোক আপনি অনেক সুন্দর করেই আজকের গল্পটা লিখে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে পুরো গল্পটা।
এত সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
বড় হাস্যকর একটি গল্প আজকে আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনার লেখা গল্প পড়ে খুবই ভালো লেগেছে আমার। আসলে আগের মানুষ এই সমস্ত বিষয়ে বেশ বেবুঝ ছিল। এই জন্যই তো কেউ তাকে সেভাবে বোঝাতে পারে নাই। ঘটনাটা খুবই ভালো লাগলো।
অনেক ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য দেখে।
আপনার গল্পটি পড়ে বেশ হাসি পাচ্ছিল।আসলে মনে হচ্ছিলো বুড়িকে বোঝাতে পারবে এমন লোক মনে হয় সেখানে একজনও ছিল না, উল্টে অন্যদের-ই মাথা খারাপ হয়ে যাবে।শেষমেষ বুড়ির টিভি দেখা হলো না আর,ভালো ছিল গল্পটি।ধন্যবাদ আপু।
হ্যাঁ আপু, ঠিক বলেছেন।
আপু খুব সুন্দর একটি গল্প লিখেছেন। আগের মানুষ খুবই সহজ সরল ছিল আর সেজন্যই বুড়ি এমন হাস্যকর কথা বললো। তবে একটা কথা কি যখন কারেন্ট ছিল না তখনই কিন্তু ভালো ছিল। মানুষ অনেক আনন্দ করতো কিন্তু বর্তমানে হাসি তামাশা করার মতো সেই সময় কারো হাতে নেই। বুড়ি এত কষ্ট করে এসেও আর টিভি দেখতে পারলো না। সত্যিই কারেন্ট চলে যাওয়ায় টিভি দেখতে না পারলেও মানুষ বুড়ির মাধ্যমে মজা পেয়েছে জেনে ভালো লাগলো।
হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিক, সিনেমা না থাকলেও বুড়ির হাস্যকর মুহূর্তটা বেশ দারুন ছিল।