গল্প: শায়লার প্রেম কাহিনী
গল্প
শায়লা,সে অনেক বুদ্ধিমতী মেধাবী এবং জ্ঞানসম্মত ছিল। সে গরিব ঘরের সন্তান। চেহারা শ্যামলা বর্ণের হলেও দেখতে মুখের আকৃতি সুন্দর ছিল। সে ক্লাসে খুব ভালো পড়া পারতো। ক্লাসে যদি কোন পড়া করতে দিবে স্যাররা কিছুক্ষণ পর ধরতো, সে সাথে সাথে বলে দিতে পারতো; এত সুন্দর মেধা তার। সে অন্যান্য বান্ধবীদের খুব সহায়তা প্রদান করতে। কেউ একটু বুঝুক বা না বুঝুক সুন্দর করে বুঝিয়ে দিত। পারিবারিক কষ্টের মধ্যেও দুইবেলা প্রাইভেট পড়ার চেষ্টা করত অংক ইংরেজি। দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে স্কুলে আসতো। স্কুল শুরু হওয়ার পূর্বে একটা প্রাইভেট স্কুল ছুটি হলে বাড়ি যাওয়ার আগে একটা প্রাইভেট এভাবেই তার স্টুডেন্ট লাইফের সংগ্রাম। তার খুব আশা ছিল লেখাপড়া শিখে চাকরি করার। সবাই আশা করতো সে এক বারে সরকারি চাকরি পেয়ে যাবে। মানুষের উৎসাহ নিজের লেখাপড়ার গতি যেন তাকে দিন দিন ভালো পর্যায়ে নিয়ে যেতে থাকলো।
তবে লেখাপড়া ভালো হলে কি হবে, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এবং উঠতি বয়সে প্রেম ভালোবাসার অনুভূতি মানুষকে ক্ষতি করে ফেলে। ঠিক তেমনি নাইন টেনে পড়া বয়সে মেয়েদের চেহারার সৌন্দর্য আসে সবাই জানেন। এই মুহূর্তে প্রেম অনুভূতি জাগ্রত হয় এবং অনেক ছেলেরা প্রেমের প্রস্তাব রাখেন। ঠিক তেমনি অনেকগুলো ছেলে প্রায় তার পিছু লাগতো। তবে একটা পর্যায়ে লক্ষ্য করা যায় ক্লাস টেনে উঠে সেও একটা ছেলের সাথে রিলেশনে জড়িত হয়ে গেল। সে রিলেশনে যাতে জড়িত হোক না কেন, লেখাপড়ার কোন কমতি ছিল না। এগিয়ে যেতে থাকলো নিজের গতিতে। কিন্তু নিয়মিত ছেলেটা স্কুল মাঠ রাস্তার আশেপাশে ঘুরঘুর করতো তাকে দেখার জন্য। আর এভাবেই সে জড়িত হয়ে যায় তার সাথে। তবে সে চেষ্টা করতো ভালোবাসা যতই হোক না কেন, কখনো ছেলেটার হাতের স্পর্শে যাবে না। তার মনের মধ্যে এমনটাই কাজ করতো, প্রেম ভালোবাসা হতে পারে তবে কোন খারাপ ভাবে রিলেশন সম্পৃক্ত হবে না যেটা মানুষ সমাজ সিসি করবে বা খারাপ দৃষ্টিতে দেখবে।
ছেলেটা সম্ভবত অনার্সে পড়তো তখন আর সাহেলা ক্লাস টেন। ছেলেটা আশ্বাস দিতে থাকে খুব শীঘ্রই অনার্স শেষ হয়ে যাবে, আর সে যে কোন চাকরির মধ্যে জয়েন করবে। তখন তো ক্লাস নাইন টেনের ছাত্রীরা অনার্স শেষ হওয়ার চাকরির বিষয়ে অতটা অবগত ছিল না। যখন ২০০৯-১০ সাল তখন আমরা একটা জিনিস জানতাম যারা কলেজে চলে যায় তাদের খুব সহজে চাকরি হয়ে যায়। আর সেই ছেলেটা অনার্সে পড়ে বাইরে থেকে,তাহলে তো খুব সহজে তার চাকরি হবে। তাই বান্ধবী মনে করতো খুব শীঘ্রই ছেলেটার চাকরি হবে এবং তাকে বিবাহ করবে। তাই ছেলেটার প্রতি সায়লার ভালোবাসা যেন আরো গভীর হতে থাকে। আরেক গভীর ভালবাসার সুযোগ নিয়ে ছেলেটা মাঝেমধ্যে তাকে সুযোগ করে নরমালি স্পর্শ করা সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করতে। ঠিক সেই মুহূর্তে সাহেলা তার প্রতি অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়তে লাগলো আর সেই দুর্বলতায় ছেলেটা কিছুটা করে সুযোগ সন্ধান করত। তবে শায়লার মধ্যে এটা নিশ্চিত ছিল বিবাহের আগে কোন প্রকার খারাপ কাজে লিপ্ত হবে না যতটাই সে ভালোবাসুক না কেন। কিন্তু ভালবাসি তাই আবেগপ্রবণ আর তার প্রতি আসক্ততা দুর্বলতা শুধু স্পর্শ করার সুযোগ পেয়ে বসেছিল।
এমনই একটা মুহূর্তে সাহেলার বিবাহের জন্য প্রায় বিভিন্ন ঘটকে পাত্র সন্তান নিয়ে আসতো। সায়লার বাবা গরিব মানুষ সে চেয়েছিল তার মেয়ে মেট্রিক পাশ হোক বা না হোক সুযোগ বুঝে ভালো একটা পাত্রের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে। কারণ গ্রামের পিতামাতারা বেশিরভাগ এমনটা প্রত্যাশা করে। মেয়ের মান সম্মান থাকতে থাকতে ভালো ছাত্রী এমন অবস্থায় থাকতে থাকতে বিয়ে হয়ে যাক। বাড়ি থেকে যেমন চাপ সৃষ্টি হলো সে সব সময় বলে থাকতো এসএসসি পাস না করে বিয়ে করবো না। বাড়ি থেকে যেন তার বিয়ের কথা না বলে। সে সরকারি চাকরি করতে চায়। এদিকে তার প্রেমিকের কাছে এই বিষয়ে বলতে থাকে, তার প্রেমিক তাকে আশ্বাস দেয় খুব শীঘ্রই চাকরি হয়ে যাবে এবং তাকে বিয়ে করবে। আর এভাবেই তাদের প্রেম গভীর হতে থাকে। এরপর এমন একটা মুহূর্ত চলে আসে তাদের মধ্যে ছেলেটা প্রায় তাকে তাগিদ দিত গোপন খারাপ কাজ করার জন্য। কিন্তু শায়লা নিজ থেকে স্ট্রং ছিল বিয়ের আগে কখনো পাপের কাজে লিপ্ত হবে না। সে ভালোবাসায় লিপ্ত হয়েছে এটাই তো বড় পাপ। একজন পুরুষ তার কিন্তু মুখে স্পর্শ করে গায়ে স্পর্শ করে এটাই তো বড় পাপ। তাই সে চেয়েছিল তার চাকরি হোক বা না হোক এসএসসি পাশ হয়ে গেলে যেন সে তাকে বিয়ে করে। কারণ পারিবারিক চাপ এদিকে প্রেমের সম্পর্ক তার লেখাপড়াকে ব্যাঘাত ঘটছে।
কিন্তু ছেলেটা এতটাই তাকে রাগ দেখাতো, যেন তার সাথে গোপনে খারাপ কাজ করলে ছেলেটা খুশি হবে। কিন্তু তার প্রিয় বান্ধবীর কাছে যখন প্রেমিকের কথা ব্যক্ত করত বান্ধবীরা সব সময় মানা করতো ভুল করেও যেন খারাপ স্থানে পা না রাখে। এদিকে সায়লা নিজের মনকে শক্ত রাখতে এবং নিজেও সেভাবে ঠিক থাকতো এমনকি দিন দিন চেষ্টা করতে ছেলেটা থেকে দূরে দূরে থাকার। একটি পর্যায়ে লক্ষ্য করা গেল ছেলেটা তার সাথে ঝগড়া বিবাদ সৃষ্টি করলো। শায়লা মন থেকে তাকে ভালোবাসে, তার কথা সে সঠিক পথে এগিয়ে যাবে। বিয়ের আগে কোন খারাপ কাজে লিপ্ত হবে না। এটাই ছিল তার অপরাধ। বেশ কয়েক মাস গেল। এসএসসি পাস হলো। তাদের প্রেমের সম্পর্কের গভীরতা কমে আসছে। কিন্তু মনের মধ্যে দুইজনার প্রেম রয়েছে। শায়লা যখন তার প্রেমিকের সাথে যোগাযোগ রাখতে এবং বিয়ের বিষয়টা বলতো। ছেলেটা বলতো চাকরি না হলে বিয়ে করতে পারব না। এভাবে একটা বছর সে তার পানে তাকিয়ে থাকলো, ছেলেটা ভালোবাসার নামে শুধু তাকে স্পর্শ করতো আর গোপন কাজে লিপ্ত হওয়ার তাগিদ জানাতে। তবে শায়লা নিজেকে ঠিক রাখল। অবশেষে দেখা যায় ছেলেটা শাহেলার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এতে সাহেলা খুব কষ্ট পেতো, একাকী কান্না করছো। সে লেখাপড়ায় সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এই মন মানসিকতা ভেঙে পড়ল। সে মন থেকে ভালোবেসে ফেলেছিল কিন্তু এতটা প্রতারিত হবে কখনো ভাবেনি। তার অনেক আফসোস হতো কিন্তু এটা চিন্তা করে খুশি থাকতো ছেলেটা তাকে খারাপ ভাবে ব্যবহার করতে পারেনি। একটি পর্যায়ে দেখা গেল সেই ছেলেটা শহরে অন্য একটা মেয়ের সাথে রিলেশনের যুক্ত হয়ে গেছে। এখানেই শায়লার মন ভেঙে গেল। যখন সে নিশ্চিত হল ছেলেটা তার জীবনে আর আসবে না। সে পারিবারিক চাপে সম্মতি দিল বিয়ে করবে। শায়লার বয়স যখন ১৮-১৯ তার বিয়ে হল ৩৫ বা ৩৭ বছর বয়সী একজন বয়স্ক মানুষের সাথে। আর এভাবেই শায়লার জীবনে ভালো লাগার অনুভূতিটা নষ্ট হয়ে গেল, চাকরি করার ইচ্ছা ভেঙে গেল। এরপর সে সংসারিক জীবনে লিপ্ত হয়ে লেখাপড়া নষ্ট হয়ে যায়। একটি ছেলে ও একটি মেয়ের মা হয়ে যথেষ্ট সুখের জীবন পার করছেন। সারা জীবনের আফসোস বয়সে অনেক বড় ব্যক্তির সাথে বিয়ে হয়েছে,স্বপ্ন আশা ভঙ্গ হয়েছে প্রতারকের প্রেমে পড়ে।
পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ
বিষয় | অতীত ঘটনা |
---|---|
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Infinix Hot 11s-50mp |
ক্রেডিট | @jannatul01 |
দেশ | বাংলাদেশ |
ব্লগার | আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি |
আমার পরিচয়
আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।
বেশ ভালো লাগলো আপনার গল্প পড়ে। গল্পের শায়লার প্রেম কাহিনী। শায়লা ভালো করেছে। এভাবে হাজারো সাহেবা ভুলের পথে পা রেখে নিজের সর্বোচ্চ বিসর্জন দিয়ে ফেলে। তবে শায়লা নিজেকে কন্ট্রোলে রেখেছে এবং প্রতারকের হাত থেকে ইজ্জত বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছে এটাই তার সৌভাগ্য। তবে বড় বয়সের ছেলের সাথে বিয়ে না করলে পারতো। বাবা-মা সবসময় চায় সন্তানের টাকাওয়ালা পাথরের সাথে বিয়ে দিয়ে আর সেই সময় ভুল করে বেশি বয়সের মানুষের সাথে বিয়ে দিয়ে ফেলে। এর জন্য পরবর্তী জীবনে পস্তাতে হয় অনেক মেয়েদের। তবে দোয়া করি সেই আপার জন্য।
গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।