নাটক রিভিউ "আলতা সুন্দরী" ২৯ তম পর্ব
কেমন আছেন আপনারা? আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার সহায়তায় ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকে ভালোবেসে উপস্থিত হলাম সুন্দর একটি বাংলা নাটক রিভিউ নিয়ে। বৃন্দাবন দাস রচিত জনপ্রিয় এই নাটকের নাম আলতা সুন্দরী। এই নাটকে মোট ৬২ পর্ব। আজকে আমি উপস্থিত হলাম ২৯ তম পর্ব রিভিউ করে শেয়ার করতে। চলুন তাহলে শুরু করি।
নাটকের নাম | আলতা সুন্দরী |
---|---|
রচনা | বৃন্দাবন দাস |
পরিচালক | সালাহউদ্দিন লাভলু |
অভিনয়ে | চঞ্চল চৌধুরী, আ খ ম হাসান, শামীম জামান, রহমত আলী, ম ম মোরশেদ, জয় রাজ, রাশেদা চৌধুরী, মনিরা মিঠু, সাইকা আহমেদ, লারা লোটাস, পুতুল, ডায়না সহ আরো অনেকে। |
দেশ | বাংলাদেশ |
ভাষা | বাংলা |
ধরণ | হাস্যরসাত্মক এবং সামাজিক |
মোট পর্ব | ৬২ |
রিভিউ | ২৯ তম পর্ব |
দৈর্ঘ্য | ২০ মিনিট |
প্ল্যাটফর্ম | ইউটিউব @cdchoicedrama চ্যানেল |
চরিত্রেঃ
- শামীম জামান (আলতা সুন্দরী/নছের)
- আর খ ম হাসান (নায়ক মেসের)
- চঞ্চল চৌধুরী (রহিম বাদশা) সহ আরো অনেকে
নতুন নায়িকার আগমনে এই প্রথম আলতা সুন্দরী নাটকের গানের দলে প্রচুর নাচ গান হয়েছে। নতুন নায়িকাকে পেয়ে দর্শক শ্রেনীর মানুষ স্টেজে উঠে এসেছে এবং নাচ গান করেছে। গানের দলের লোকজন তাদেরকে থামাতে পারেনি। না জানি এর প্রভাবে আরো কত খারাপ পর্যায়ে সৃষ্টি হতে পারতো। এদিকে নায়িকা সারারাত নাচ গান করেছে বলে দিনের বেলা অনেক দেরি করে ঘুম থেকে উঠছে। গানের দলের ওস্তাদের পরিবারের সকলের খাওয়া দাওয়া হয়ে গেছে কিন্তু নায়িকা এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি। এদিকে ওস্তাদের স্ত্রী সবসময় ভয় করে যে নাচনেওয়ালা মেয়েটার প্রভাবে তার মেয়েটা না জানি খারাপ হয়ে যায়। এদিকে রহিম বাদশা মাসুমার চিন্তা করে। মাসুমার মা বিরক্তি হয়ে তার স্বামীকে বলে দেয় বাড়ি থেকে রাজা বাদশার রানী সব কিছু বিদায় করো, যদি সম্ভব না হয় তাহলে আমি বিদায় হয়ে চলে যাব। এখানে বোঝা যাচ্ছে কতটা বিরক্তিকর মুহূর্ত পার করছেন তিনি।
নতুন নায়িকার জন্য খুব সুন্দর একটা নাচ গানের আসর হয়ে গেল কিন্তু গানের দলের ভিলেন এবং নতুন নায়ক স্টেজে চান্স পেল না। নতুন নায়ক একজন ভুয়া টাইপের মানুষ। তাই নতুন নায়িকা তাকে পছন্দ করেনা। তাই নতুন নায়ক বুলেট আগের নায়িকা আলতা সুন্দরী সম্পর্কে জানতে চাই ভিলেনের কাছে। সে যখন আলতা সুন্দরী সম্পর্কে বলা শুরু করলো বুলেট অবাক হল। আলতা সুন্দরী একজন ছেলেমানুষ। কিন্তু রহিম বাদশা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারেনা আলতা সুন্দরী একজন ছেলে। রহিম বাদশা পাগলের মত তাকে ভালোবেসে ফেলেছে। এদিকে যে ব্যক্তি আলতা সুন্দরী সেজে নাচ গান করে সে নিজেও রহিম বাদশা কে বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। তাই সবাই বুঝতে পারছে রহিম বাদশা একজন সাদাসিধে মানুষ অথবা সাংঘাতিক পাগল।
রাতে গানের আসরে কেমন পরিবেশ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল সমস্ত বিষয়গুলো হসেন আলতা সুন্দরী অরূপে নাসেরের কাছে বর্ণনা সাথে তুলে ধরে। নতুন নায়িকার জন্য হোসেন মিয়া তার কৌতুক অভিনয় করতে পারে নাই। গানের দলের ওস্তাদ ঘোষণা করেছিল কিন্তু জনগণ কৌতুক দেখবে না নায়িকার সাথে নাচ করবে। সে মনে করে এই সমস্ত বিষয়গুলো সৃষ্টি হচ্ছে হাসেম জোয়ারের জন্য। হাসেম জোয়ারী তার জুয়া খেলার অনেক টাকা উপার্জন করতে পারবে তাই দলের ওস্তাদকে ওভারটেক করে নিজে উস্তাদি শুরু করেছে। তাই সে চাচ্ছিল নছের যেন গানের দলে ফিরে আসে এবং ওস্তাদের পাশে দাঁড়ায়। কিন্তু পারুল কিছুতে ঝামেলার মধ্যে যেতে দিতে চায় না তার প্রেমিক নছের কে। নছের পারুলকে বোঝানোর চেষ্টা করে তার কথা শুনে বসে থাকলে হবে না, এই মুহূর্তে ওস্তাদের পাশে থাকা প্রয়োজন। এত সুন্দর করে গড়া গানের দলটা নষ্ট হয়ে যাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না।
আলতা সুন্দরী নাটকের গানের দলে, নতুন নায়িকা শহর থেকে আনা হয়েছে। সত্যিকারের নায়িকা পেয়ে গ্রামবাসীর মানুষ আসলে অনেক নাচানাচি করেছে। যেই নাচানাচি মোটেও কাম্য ছিল না। আর এই সমস্ত আয়োজন মূলত হাসেম জোয়ারী চক্রান্তে হয়েছে। গানের দলের ওস্তাদ ফেলুগায়েন যেভাবে অনুষ্ঠান পরিচালনা করে, সেভাবে অনুষ্ঠান পরিচালনা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। নতুন নায়িকার নাচার কারণে গানের দলের মান ক্ষুন্ন হয়েছে। এতে হাসান জুয়ারীর জুয়া খেলায় লাভ হয়েছে। কিন্তু একটা গানের দলের মান-সম্মান নষ্ট হয়ে গেলে সে গানের দল পরবর্তীতে অকেজ হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে। এজন্য হাসেম জোয়ারীর সাথে ফেলু গায়েনের একটা মনোদন্ড সৃষ্টি হয়ে যায়। ফেলু গায়েনের মনের কথা হাশেম জুয়ারী বুঝতে পারে। তাই তার লাভের টাকার মধ্য থেকে বেশ অনেক কিছু কেনাকাটা করে গাইনের বাড়িতে উপস্থিত হয় হাশেম। সে তাদের বাড়িতে এসে গাইনের স্ত্রীর কাছে সবকিছু তুলে দেয়। বলতে থাকে গাইনের স্ত্রী খুব ভাল রান্না করতে জানে আজকে সবাই তার হাতে রান্না খাবে। কিন্তু কোন কিছুতেই গায়ে মেনে নিতে পারছে না হাশেমের এমন আচরণ। যেখানে গানের দলে কোন মেয়ে মানুষ নাচানো হয়নি কোনদিন। আজকে হাশেমের কারণে মেয়ে মানুষ এসেছে ভালো কথা কিন্তু তাই বলে এভাবে নাচ গান করবে। যেখানে কোন নিয়ম-শৃঙ্খলা থাকবে না। দর্শক স্টেজে উঠে পড়বে নায়িকার সাথে নাচবে। হাসান তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে প্রথম প্রথম এমনটা হয় স্বাভাবিক। এতে তার কিছু মনে করতে নেই। পরবর্তীতে ঠিক হয়ে যাবে। গ্রামের মানুষজন প্রথম প্রথম একটা নায়িকা পেয়েছে তো তাই এতটা মাতাল হয়ে উঠেছিল। ফেলু গায়েন হাসেম এর হাতে জিনিস নিতে চাইনি কিন্তু তার স্ত্রী রেখে দিল, সবার জন্য রান্না করার আয়োজন করবে। হাসেম কে বোঝানোর চেষ্টা করল সে যেন কখনো তার গানের দলে এভাবে মাথা না ঘামায়। দরকার হলে সেই আলাদা একটা গানের দল তৈরি করুক। গায়েনের পক্ষ নিল রহিম বাদশা। উনি ঠিকই বলছেন। একজন জুয়ারী মানুষের জন্য তো দলের ওস্তাদ অপমানিত হতে পারে না।
গুলজার নতুন নায়িকাকে চা তৈরি করে খাওয়াবে। এজন্য দুইদিন ধরে সাজা গুজার শুরু করেছে, চা তৈরি করার শুরু হয়েছে। তার হাতের চা টেস্ট হচ্ছে কেমন এই বিষয়টাও পরীক্ষা করে নিয়ে আসছে বোনের কাছ থেকে। কখন গানের দলের লোকজন তার বাড়িতে আসবে বিশেষ করে নায়িকা কখন আসবে এই জন্য সে অস্থির হয়ে পড়েছে। সে নতুন জামা কাপড় গায়ে দিয়ে বারবার এদিকে ওদিকে ঘোরাফেরা করছে কখন আসবে তারা। তার এমন পায়তারা করতে দেখে বোন ডিউটি খুব বিরক্ত হয়। বিউটি তার ভাইয়ের সাথে কথায় কথায় একটু মনোমালিন্য শুরু করে এবং বলে তার মনের ভাব সবই সে বোঝে। নতুন নায়িকার প্রেমে না পড়ে বউটাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাড়িতে আনলেই তো হয়। সে কেন নিজের এত অহংকার দেখিয়ে বউকে বাড়ি আনছে না। এভাবে দুই ভাই বোনের কথা কাটাকাটি সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে গুলজার তার বোনকে বলে সে মায়ের পেটের শত্রু। ভাইয়ের প্রতি দরদ কম, ভাবীর প্রতি দরদ বেশি। এরপর সে আবারও তার মত অপেক্ষা করতে থাকে কখন নায়িকা বাড়িতে আসবে।
আলতা সুন্দরী নাটকের এ পর্যায়ে আমরা লক্ষ্য করে দেখেছি হাসেম জোয়ারীর চক্রান্ত। হাসেম জোয়ারী মূলত নিজের চক্রান্তে গানের দলটাকে নিজের মত পরিচালনা করার চেষ্টা করতে ওস্তাদকে অতিক্রম করে। এখানে তার স্বার্থ লুকিয়ে রয়েছে,অধিক মানুষ হলে অধিক পরিমাণ আসর বসাতে পারবে এবং লাভবান হবে। সমস্ত কিছু জেনেশুনেও যেন ওস্তাদ কিছুই করতে পারছেন না। কারণ গানের দলের কয়েকজন হাসেম জোয়ারীর সাথে পক্ষ নিয়ে চলছে তাই। আমরা জানি নসু ভিলেন গানের দলের ভিলেন কিন্তু বাস্তবে ওস্তাদের সাথে ভিলেন এর কাজ চালাচ্ছে। এদিকে গুলজারের মনে রং লেগেছে, নতুন নায়িকা কে চা তৈরি করে খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে একদিন গানের দলে অংশ নিতে পারবে। এদিকে নাছের আগের মত গানের দলে অংশ নিতে পারে না। তাই আমরা লক্ষ্য করে দেখে বিভিন্ন সুযোগে হাসেন জোয়ারী এই গানের দলটাকে নিজের মত করে পরিচালনা করার সুযোগ তৈরি করে নিয়েছে। তবে সকলের অভিনয়ের মধ্যে হাসেম জোয়ারীর অভিনয়টাই নিখুঁত হয়ে থাকে। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে তার অভিনয়টাকে বেশি প্রাধান্য দিতে পারি। অন্যান্য নাট্যকারের মধ্যে হাশেমের অভিনয় যেন নাটকটাকে আরো সুন্দর রূপ প্রদান করেছে।
রিভিউটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আমি মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের bidyut01 এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। এক পরিবার থেকে "আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে" চারজন সদস্য রয়েছি। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ভালোলাগা রেসিপি তৈরি, নাটক রিভিউ, ভিডিও ও ফটোগ্রাফি করা সহ ভ্রমণ করতে পছন্দ করি। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে সদস্য হয়ে পোস্ট শেয়ার করার।
আপনি অনেক সুন্দর করে আলতা সুন্দরী নাটকের ২৯ তম পর্ব আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। এই পর্ব টা অনেক সুন্দর ছিল অন্য সবগুলো পর্বের মত। এই নাটকের অনেকগুলো পর্বের রিভিউ আমি পড়েছি। আশা করছি আপনি একে একে এই নাটকের প্রত্যেকটা পর্ব আমাদের মাঝে শেয়ার করে নিবেন। অপেক্ষায় থাকলাম পরবর্তী পর্বগুলোর রিভিউ পড়ার জন্য।
অনেক ভালো লাগলো মন্তব্য দেখে।
পর্ব নাটকগুলো যদিও খুব একটা দেখা হয় না। তবে আপনি দেখছি মাঝে মাঝেই এই নাটকের পর্বগুলো শেয়ার করেন। এই নাটকটি কখনো দেখা হয়নি। তবে সময় পেলে নাটকটি দেখব আপু।
অনেকদিন ধরে আমাদের মাঝে আলতা সুন্দরী নাটক রিভিউ করে আসছেন। আপনার রিভিউ করা নাটকটি অনেক জনপ্রিয়। আমার কাছে নাটকের পড়ে অনেক ভালো লাগলো আপু। ধন্যবাদ অনেক সুন্দর করে নাটকের রিভিউ আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।