মনুষ্যত্বহীন মানুষ || 10% Beneficiary To @shy-fox
আমি একটা সাধারণ পরিবারের সন্তান । অষ্টম শ্রেণি পাশ করার পর বাবা আমাকে কাজের জন্য ঢাকা পাঠিয়ে দেন । আমি ঢাকা প্রথম আসলাম আমার এক কাকার সাথে । সেও আবার দূর সম্পর্কে চাচা ।সে আমাকে একটা অফিসে অফিস সহকারী হিসেবে চাকুরী দেন । মাস শেষে বেতন দিবে সাত হাজার টাকা ।
পরের দিন আমি অফিসে গেলাম । আমার স্যারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন । আমার ডিউটি শুরু হল , আমাকে আমার স্যার কিছু আনতে পাঠিয়েছে কিন্তু আমি তো ঢাকার কোন রাস্তা চিনিনা । খুব কষ্টে আমি রাস্তা চিনে দোকান থেকে আসলাম । আসার পর আমার স্যার আমাকে অনেক বকা বকি করে আমি আসতে কেন লেট হল ।তখন আমি চুপ করে শুনেছি কিছুই বলার ছিল না ।
পরে আমি আমার কাকাকে বলেছি । সে আমাকে বলে গরীবের বকা বকি শুনলে কিছু হয়না কাজ করলে বকা শুনতে হবে । তখন আমি আর কিছু বললাম না ।শুধু মনে মনে ভাবলাম যে বাবা আমাকে এত কষ্ট করে এত বড় করেছে সে তো আমাকে এভাবে কোন দিন বকা দেয়নি । তারপরও কাজ করে যাচ্ছি মাস শেষে বেতন পাওয়ার আশায় । এক সময় মাস শেষ হল মা বাড়ি থেকে ফোন দিতে শুরু করল কবে বেতন পাবি বাবা । আমি বলি মা দশ তারিখ ।
আজ দশ তারিখ চলে গেল কিন্তু বেতন পাইনি । এ মাসটা আমি অনেক কষ্টে কাটিয়েছি কখনো খেয়ে কখনো না খেয়ে ঢাকা আসার পর সকালে নাস্তার কথা ভুলেই গিয়েছি আমি।আজ বার তারিখ মা ফোন করে আমাকে বলে বেতন পাইছি কিনা আমি বলি মা আজ হয়তো বিকেলে পাব আমি কালকে সকালে পাঠিয়ে দেব ।
বিকাল গিয়ে রাত চলে আসলো রাত গিয়ে আবার অফিস শুরু হল আমার বেতনের কথা কেউ বলেনা,মা আবার ফোন করল টাকা পাঠানোর জন্য, আমি মাকে বলি মা আজ বিকেলে শিউর দিব বেতন । মা আমাকে বলে তাহলে তোর বাবাকে বিকেলে বাজারে পাঠাবো ঘরে কিছু নেই দুই দিন যাবত । আমার স্যার দুপুরে আমাকে এক নামি দামি রেষ্টুরেন্ট থেকে খাবার আনতে বলে আমি গিয়ে দুপুরের খাবার নিয়ে আসলাম যার দাম সাত হাজার টাকা । স্যার খাওয়া শেষ করে আরাম করছিল আর আমি না খেয়ে বসে আছি কখন বেতন দিবে আমি বাড়ি পাঠাব আর বাবা বাজারে যাবে ।
একসময় আমি স্যারের রুমে ঢুকে পরি আর স্যার কে আমার বেতনের কথা বলি স্যার তখন রেগে আমাকে অনেক বকা দিতে লাগল আর বলতে লাগল যে ভিক্ষুকের দলের এই একটা অভ্যাস যে কোন সময় টাকা চেয়ে বসে থাকে । তখন আমি স্যারের রুম থেকে বের হয়ে আসি ঠিক ঐ সময় আমার মা আমাকে ফোন দিয়ে বলে বাবা তোর বাবা বাজারের ব্যাগ নিয়ে বসে আছে তুই টাকা কখন পাঠাবি, তখন আমি মাকে কি বলব কিছুই ভেবে পাচ্ছি না আমি মোবাইলটা কেটে দিলাম আর কাঁদতে শুরু করলাম " আল্লাহ আমাকে ধৈর্য ধরার তৌফিক দান করুন " বলতে লাগলাম ।
আপনার এই কাহিনীটি পড়ে আপনার সঙ্গে আমি ব্যথিত হলাম খুবই খারাপ লাগলো। আপনার জন্য অনেক দোয়া ও শুভকামনা রইল যেন আপনি ধৈর্য ধারণ করে সামনের পথগুলো পাড়ি দিতে পারেন এবং বাবা মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারেন।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
জীবন কখনো খুবই নির্মম। চেষ্টা করবেন আপনার এই কষ্টকে শক্তিতে পরিনত করতে। সফলতা আসবেই ইনশাআল্লাহ।
হ্যা , ইনশাআল্লাহ ভাইয়া , ধন্যবাদ আপনাকে।
মানুষের মনুষত্ব প্রকাশ পায় সেখানেই যেখানে প্রত্যেকটি মানুষের ন্যায্য অধিকার এবং সাম্য বজায় থাকে। আমি সাম্য বলতে ব্যবহার আচার আচরণ সবকিছু কি বুঝাতে চাচ্ছি। অনেক সংগ্রামী জীবন আপনার। আপনার জন্য দোয়া এবং শুভকামনা রইল সামনের পথ চলা আপনার জন্য সুগম হোক।
আপনার জীবন কাহিনী শুনে কি বলবো ভেবে পাচ্ছিনা। আসলে প্রতিটা বাবা মায়ের কাছে তার সন্তান অমূল্য। সন্তান অপরাধ করলে তাকে একটু শাসন করে। কিন্তু আবার তাকে বুকে টেনে নেয়। কিন্তু বাহিরের মানুষগুলো আর তার চিন্তা করবেনা এবং ভাববেও না। তবে আপনার ঢাকায় যাওয়ার চাকরি করা এবং কি খেয়ে না খেয়ে পড়ে থাকা বেতনের প্রহর গোনা বাড়িতে থেকে আপনার মায়ের ফোন আসা বারবার এ বিষয়গুলো খুবই যন্ত্রণাদায়ক যা কাউকে বলা যায়না এবং কি হস্য করা যায় না। অনেক সময় মাঝে মাঝে মনে হত যে গরীব হয়ে জন্ম নেওয়াটাই অপরাধ। কারণ গরিবের কোথাও ভালো মর্যাদা এবং স্থান নেই। প্রতিনিয়ত তাদেরকে শুধু অর্থবিত্ত মানুষের কথা শুনে আসতে হয় তাদের গালিগালাজ কে মেনে নিতে হয় আদরের বুলি হিসেবে। আপনাকে সান্ত্বনা দেওয়ার মত কিছু নেই আমার কাছে তবুও এটুকু বলব যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যান একদিন ইনশাআল্লাহ সফল হবেন। আমাদের সাথে এত সুন্দর একটি আপনার জীবনের বাস্তব গল্প শেয়ার করার জন্য আপনার প্রতি রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদ ভাইয়া ।