মা । 10% for shy-fox and 5% for abb-school.

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

গ্রামের এক হত দরিদ্র পরিবারে জন্ম রহিমার। বাবা একজন দিনমজুর দিনে যা রুজি করে তাতেই দিনের খাবার খেতে হয়, আর যদি কোন কারনে কাজে যেতে না পারে তাহলে না খেয়েই দিন কাটাতে হয়। রহিমা বড় হতে হতেই তার বাবার কষ্ট সে বুঝতে পারে সে বুঝতে পারে বাবা যদি কাজ না করে তাহলে তাদের চুলায় আগুন জ্বলে না।

রহিমার বাবার বয়সের বাড়ে সেও আগের মত কাজ করতে পারনা, তাই বাবার কাজে সহযোগিতা করার জন্য নিজেই জীবন সংগ্রামে নেমে পরে, বাবার সাথে মাঠে কাজ করে, অন্যের বাড়িতে কাজ করে তাদের সংসার চালায়। রহিমা স্বপ্ন দেখে বাবার বাড়িতে হয়তো সুখ না পেলে স্বামীর সংসারে সুখ হয়তো পাবে ঐ আশায় রহিমা তার বাবার বাড়িতে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যায়। রহিমার বয়স যখন আনুমানিক তের বছর তখন পাশের গ্রামের রহিমের সাথে রহিমার বিয়ে দিয়ে দেয় তার বাবা। বাবা ভাবছে যে মেয়ে আমার জীবনে অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছে এখন যদি স্বামীর সংসারে একটু সুখ পায়। কিন্তু বিধি বাম রহিমার স্বামীর সংসারেও সুখ বুঝি এলনা। পাষন্ড স্বামী তাকে দিন রাত মারামারি করে ।

JvFFVmatwWHRfvmtd53nmEJ94xpKydwmbSC5H5svBACH7xyzLcmZsuME6QS8gYNPoJbZaGeLeSir5LS6sUEcd6u7LtAyd67Ey26wNjun12ykoYo1mBjdMty1XBpmubibLmfobLFXca.jpg

Img

রহিমা স্বামীর সংসারে গিয়েও অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয়েছে, তবুও যেন সংসারের কারো মন সে পাইনি স্বামী বলেন আর শশুর শাশুড়ী কারো মনে যেন জায়গা করে নিতে পারছেনা। রহিমার বিয়ে হয়েছে সাত বছর কোন সন্তানও আসছেনা তাদের কোলে এ নিয়ে রহিমার অনেক অপমান সয়তে হচ্ছে। রহিমাকে যত অন্যায় অত্যাচার করা হউক না কেন রহিমার তার বাবার বাড়িতে যাবেনা কারণ বাবাও যে অসহায়, তাই শত অত্যাচার সহ্য করে স্বামীর সংসারেই পরে আছে।

বিয়ের নয় বছর পর রহিমার কোলে কোল আলো করে জন্ম নেয় একটি ছেলে, রহিমার ছেলেকে মানুষ করতে শুরু করে আর অল্প অল্প করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বাবার সংসারে শান্তি পাইনি স্বামীর সংসারেও শান্তি পাইনি এখন ছেলে যদি একটু সুখ দেয় বড় হয়ে। এই স্বপ্ন নিয়ে রহিমার জীবন যুদ্ধে এগিয়ে যাওয়া। ছেলের বয়স পাঁচ বছর হতেই রহিমার স্বামী রহিম মিয়া মারা গেলেন ছেলেকে নিয়ে রহিমা অন্যের বাড়িতে কাজ করে। ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করে ছেলেও মার কষ্ট বুঝে নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে, ছেলের বয়স যখন বার বছর তখন হঠাৎ দেশে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল অনেকেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করল,রহিমার ছেলেও যুদ্ধে যাবে, রহিমার ছেলে রহিমাকে অনেক ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করছে কিন্তু রহিমা বুঝতে চাই না কারণ রহিমা একটু সুখ চাই যদি ছেলে যুদ্বে গিয়ে ফিরে না আসে তাহলে রহিমা সুখ নামক সোনার হরিণ কোথায় পাবে।

রহিমার ছেলে মাকে অনেক বুঝানোর পর রহিমা রাজী হল। রহিমার ছেলে আজ দেশের জন্য যুদ্ধ করতে যাবে মাকে ছেলে পায়ে ধরে সালাম করে বেড়িয়ে পরল, মা তার পিছু পিছু হাটতে শুরু করল ছেলে যখন অনেক দূর চলে যায় রহিমা তখন রেল লাইনের মেটো পথটার ধারে একটি বড় বট গাছের নিচে বসে আছে। রহিমা প্রতিদিনই আসে এই গাছটার নিচে ছেলে কে কি দেখা যায় কিনা। দীর্ঘ নয় মাস পর যখন দেশ স্বাধীন হল সবাই যখন যার যার মায়ের কোলে ফিরে এল কিন্তু রহিমার ছেলে তো আজও ফিরলনা, নাকি দেশের জন্য জীবন দিয়ে শহীদ হয়ে গেল, কিন্তু রহিমা মানতে রাজিনা তার ছেলে আসবে সে প্রতিদিনই সেই রেললাইনের পাশে মেটো পথ টার কাছে বড় বট গাছটির নিচে বসে থাকে খোকা আসবে এই আশায়।

পরিশেষে আমরা কি কখনো এই মায়েদের খবর রাখি স্বাধীন দেশে শুধু বসবাস করেই গেলাম। স্বাধীনতা কি ভাবে অর্জন হয়েছে আমরা কয়জনেই বা উপলব্ধি করি। এমন মায়েদের প্রতি আমার হাজারো সালাম আজ স্বাধীনতা দিবসে ।

Sort:  
 2 years ago 

মা এই শব্দটি শুনতে যেমন মধুর তেমনি মধুর হয় মায়ের মন ।মা তার সকল সন্তানকে খুবই ভালোবাসে ।রহিমা হলেন একজন সত্তিকারের মা যে তার সন্তানকে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন ভাইয়া আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আজ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এই গল্পটি সকলের সামনে উপস্থাপন করার জন্য । আপনার প্রতি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভেচ্ছা রইল। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশ ।আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক ।

 2 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 57613.91
ETH 2390.20
USDT 1.00
SBD 2.43