জেনারেল রাইটিং // অপচয় নিয়ে আমার ব্যক্তিগত কিছু অভিমত।

কেমন আছেন সবাই? আশা করি আপনারা সবাই আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবানীতে ভালই আছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমিও আপনাদের দোয়ায় বেশ ভাল আছি। আমি আজকে যে বিষয়টি নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি সেটি হচ্ছে অপচয়। আমরা সকলেই কমবেশি এই অপচয় করে থাকি। কেউ সময়ের অপচয় করি, কেউ খাওয়ার অপচয় করি, কেউ পানির অপচয় করি, কেউ বিদ্যুতের অপচয় করি, কেউবা আবার আমাদের সকলেরই খুবই প্রয়োজনীয় টাকার অপচয় করি।

আমরা সকলেই জানি কথাই বলে অপচয় কারী শয়তানের ভাই কিন্তু আমরা যখন নিজেরা অপচয় করি তখন এই বিষয়টা আমাদের মাথায় থাকে না। আসল কথা হচ্ছে আমরা মানুষকে উপদেশ দিতে বেশি পছন্দ করি কিন্তু নিজের বেলায় সেভাবে সতর্ক থাকি না। আমি মনে করি মানুষকে উপদেশ দেওয়ার পাশাপাশি নিজেও যদি সতর্ক থাকি তাহলে কোন কিছু আর সেভাবে অপচয় হয় না। কিছু কিছু জিনিস আছে আমরা না চাইলেও অপচয় হয়ে যায়। তবে যেটা আমাদের দ্বারা অপচয় নির্মূল করা সম্ভব সেটা অবশ্যই আমাদেরকে সতর্কতার সহিত সর্বাত্মক চেষ্টা করে এই অপচয় থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা উচিত।

যেকোনো বিষয় নিয়ে একটা ছোট্ট উদাহরণ দিয়ে যদি বলি আমাদের বাংলাদেশে আমরা বর্তমানে ১৭ থেকে ১৮ কোটি জনগণ রয়েছি প্রত্যেকে যদি একটা বালুকণা পরিমান কোন এক জায়গায় রাখি তাহলে আমি নিশ্চিত যে অনেক বিশাল বড় একটা বালুর পাহাড় তৈরি হয়ে যাবে। এই উদাহরণটা এই কারণেই দিলাম যে আমরা অনেকেই ভাবি আমি একাই কিছু সেভ করে কি হবে তাই সেভাবে আর এই অপচয়ের দিকে গুরুত্ব দেই না। যেমনে মন চায় সেভাবেই অপচয় করে থাকি কিন্তু যদি এভাবে চিন্তা করি তাহলে কিন্তু বিশাল একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়, যেটা আমরা কখনো কল্পনাও করতে পারবো না। তাই আমাদের এই চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে যে আমি একা না করলে কি হবে আমরা যদি এই চিন্তা-ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে পারি তাহলে অনেক অনাহারির মুখে খাবার জুটবে।

আমরা অনেক সময় বিদ্যুতের ভয়াবহতার মধ্যে পড়ে যাই, ম্যাক্সিমাম সময় বিদ্যুৎ থাকে না আমরা যদি সবাই সাশ্রই হই অপচয় না করি তাহলে এই বিদ্যুতের ভয়াবহতা থেকেও আমরা রেহাই পেতে পারি। এভাবে চিন্তা করলে সব ক্ষেত্রেই আমরা যদি সবাই নিজের জায়গা থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করে এই অপচয় রোধ করতে পারি, তাহলে আমরা আমাদের পরবর্তী জীবনে যেমন ভালো থাকবো, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভালো কিছু আশা করতে পারবে আমাদের কাছ থেকে। তারাও আমাদের থেকে দেখে শিখে নিজেদেরকে সেভাবে তৈরি করতে পারবে। আমরা সবাই বলি বাচ্চারা তার পরিবার থেকে শিখে পরিবার যেভাবে গড়ে তোলে ছোট বাচ্চারা কিন্তু সেভাবেই ছোট থেকে গড়ে ওঠে ঠিক এভাবেই আমরা যদি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভালো দেখতে চাই তাহলে নিজেদেরকে সেভাবে তৈরি করতে হবে যে কোন বিষয়ে অপচয় রোধ করতে হবে।

আমি খুব ছোটবেলা থেকেই দেখছি আমার পরিবারে এই অপচয়ের ব্যাপারে খুবই সতর্ক যে কোন বিষয়ে। কোথাও কোন লাইট জ্বলতেছে, ফ্যান চলতেছে ও পানির ট্যাপ খোলা রয়েছে বিনা কারণে সেটা দেখে আম্মু অনেক রেগে যেত এবং বলতো কেন এই অপচয় গুলো করছো? অবশ্য আমাদেরকে বুঝিয়ে বলত আমরাও সেভাবে এখন বুঝতে শিখেছি। তাছাড়া আমার বাবা যদিও গার্মেন্টসে জব করতেন কিন্তু তিনি এই অপচয় নিয়ে সবচেয়ে বেশি কাজ করতেন। গার্মেন্টস সেক্টরে অনেক রকম অপচয় হয়ে থাকে আমি বাবার কাছ থেকে শুনেছি প্রায় ৭-৮ রকমের অপচয় হয়ে থাকে যেগুলো নিয়ে বাবা অনেক বেশি কাজ করতেন এবং এই অপচয় গুলো রোধ করে ভালো একটা অ্যামাউন্ট কোম্পানিকে সেভ করে দিতেন। তবে বাবা বলেছেন তিনি সবচেয়ে বেশি সময়ের অপচয় নিয়ে কাজ করতে।

এখনো অনেক অনুষ্ঠানে গেলে দেখা যায় কি পরিমান অপচয় হয়ে থাকে খাবারের, আমি যখন কোন দাওয়াতে যাই এই বিষয়গুলো দেখলে খুব খারাপ লাগে আমার। যখন দেখি মানুষ খেতে পারে না নিজের প্লেটের খাবার অর্ধেক খেয়ে বাকি অর্ধেক ফেলে দিয়ে চলে যায় সেটা দেখলে আরো বেশি খারাপ লাগে। সে মানুষটা একবারও চিন্তা করলো না যে আমি যে খাবারটা এখানে রেখে যাচ্ছি এই খাবারটা তো অপচয় হচ্ছে এর জবাব কি আমি দিতে পারবো কাল হাশরের ময়দানে? এরকম চিন্তা ভাবনা যদি সবার থাকতো তাহলে এভাবে কখনোই কেউ অপচয় করত না। তাই আসুন আমরা সবাই মিলে সকলের অবস্থান থেকে যে কোন কিছুরই অপচয় রোধ করি নিজে ভাল থাকি দেশকে ভালো রাখি সেই সাথে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মেকে সুন্দর একটা আধুনিক দেশ গড়ার সুযোগ তৈরি করে দেই।

আজ এই পর্যন্তই অন্য একদিন অন্য কোন বিষয় নিয়ে আবার হাজির হব ইনশাআল্লাহ। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আমার জন্য দোয়া করবেন। আমিও আপনাদের জন্য দোয়া করি। সকলের জন্য শুভকামনা অবিরাম।