নাটক রিভিউ // সালাউদ্দিন লাভলুর "বাবার টাকায় মেয়ে নষ্ট" নাটকের রিভিউ।।
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই? আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভালই আছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমিও আল্লাহর মেহেরবানীতে ও আপনাদের দোয়ায় বেশ ভাল আছি। আসলে পড়ালেখার ব্যস্ততার কারণে এখন তেমন একটা নাটক সিনেমা দেখাই হয় না। তবে আমি আজকে যে নাটকটি রিভিউ দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছি এই নাটকটি অনেক পুরনো একটি নাটক এ নাটকের যারা অভিনয় করেছেন সবাই আমার খুব প্রিয়। পরিচালক সালাউদ্দিন লাভলু পরিচালনায় বাবার টাকায় মেয়ে নষ্ট নাটকটিতে অভিনয়কারী বিশেষ করে প্রভা শামীম হাসান ইমাম শাহরিয়ার নাজিম জয় ও ডলি জোহর এরা আমার অনেক প্রিয় অভিনেতা অভিনেত্রী। এদের অভিনয়কৃত এই নাটকটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। তাই আমি চিন্তা ভাবনা করলাম আপনাদের মাঝে নাটকটির রিভিউ দিলে আপনারাও এই নাটকটি দেখে অনেক মজা পাবেন এটা আমার বিশ্বাস। সত্যি বলতে নাটকটি অনেক বাস্তবমুখী একটি নাটক। এই নাটকটি দেখলে আমরা আমাদের সমাজের ঘটে যাওয়া কিছু বাস্তব চিত্র দেখতে পাবো যা আমাদের জীবনকে পাল্টে দিতে পারে। এই নাটকটি যখন আমি দেখেছি ঠিক এর শেষ মুহূর্তটা এতটা করুন যে আমি আমার কান্না ধরে রাখতে পারিনি অঝোরে কেঁদেছি। আমার বিশ্বাস যারা নরম হৃদয়ের মানুষ অবশ্যই এই নাটকটি দেখলে তারা না কেঁদে থাকতেই পারবেন না।
তাহলে চলুন বন্ধুরা নাটকটি রিভিউ আকারে দেখে আসবেন। অবশ্যই এই রিভিউ দেখার পর আপনারা নাটকটি ইউটিউবে দেখে নেবেন আমার বিশ্বাস অনেক আনন্দ পাবেন।
নাটকের নাম | বাবার টাকায় মেয়ে নষ্ট |
---|---|
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা | সালাউদ্দিন লাভলু |
অভিনয়ে | প্রভা, শাহরিয়ার নাজিম জয়, হাসান ইমাম, শামীম ও ডলি জোহর। |
সময়কাল | ৪০:০৯ মিনিট। |
প্রভার নাম এই নাটকের চরিত্রে রত্না। নাটকের প্রথমে একটি চায়ের দোকান, সেই চায়ের দোকানে শামীম ওরফে মোসলেম ও তার কয়েকজন কাস্টমার চা খেতে খেতে কথা বলছিলেন। এমন সময় রত্না মোসলেমের দোকানে এসে বোর্ডে লেখার চক চাইলেন। মোসলেম তাকে চক দিয়ে তার দাম নিয়ে নিলেন। দোকানে বসে থাকা দুজন লোক রত্নার দিকে তাকিয়ে তাকে চেনা চেনা মনে হচ্ছে এরকমই তাদের অঙ্গভঙ্গিতে বোঝা যাচ্ছে। রত্না সেখান থেকে যাওয়ার পর তখন তারা মোসলেমকে জিজ্ঞাসা করলেন এই মেয়েটি হাসান ইমাম ওরফে জাহান মাস্টারের মেয়ে রত্না না?
মোসলেম সাথে সাথে উত্তরে বললেন হ্যাঁ, তখন তারা বলল যে রত্নার বিয়ে হল কবে তখন মোসলেম বললো আপার বিয়ে হয়নি তাহলে তারা বললো বিধবা হলো কিভাবে তখন মোসলেম বলল সে বিধবা ও হয়নি, তাহলে কি সমস্যা হয়েছে এরকম ভাবে সে কেন চলাফেরা করছে? মোসলেমকে এতকিছু জিজ্ঞাসা করার অর্থ হলো তারা জানত মোসলেম তাদের বাড়িতে কাজ করতো। তখন মোসলেম তাদেরকে রত্নার ঘটে যাওয়া ঘটনাটা বিস্তারিত ভাবে খুলে বলা শুরু করল।
রত্না ছিল জাহান মাস্টারের আদরের একমাত্র কন্যা। সারা জীবনের যত সঞ্চয় সবকিছুই তার পিছনে সে ব্য য় করেছে। রত্না বি.বি.এ করার জন্য শহরে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিল সেখানে তার থাকার অসুবিধার কারণে তার বাবাও গ্রাম থেকে শহরে গিয়ে তাদের জন্য একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করে নেয়। বাবা মেয়ে সাথে আমার ভালোই তাদের দিন কাটছিল। জাহান মাস্টার তার সকল টাকা আমাকে বিশ্বাস করে হিসাব মতো খরচ করার জন্য আমার কাছে রাখতো কারণ আমি টাকা-পয়সা খুব হিসেব-নিকাশ করে চলতাম এজন্যই আমাকে খুব পছন্দ করত জাহান মাস্টার।
কিন্তু রত্না আপা টাকা-পয়সার খুব বাজে ব্যবহার করত। তিনি তার বাবাকে অনেক মিথ্যা কথা বলে তার কাছ থেকে টাকা পয়সা নিতো। রত্না আপা একটি ছেলেকে ভালবাসে যদিও তার গাড়িতেই সব সময় ভার্সিটিতে যাতায়াত করে কিন্তু রত্না আপা তার বাবার কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে বিভিন্নভাবে টাকা নিতো আর সেগুলো সে বাজে খরচ করত বা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে খরচ করত।
বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া অবস্থায় এক বন্ধুর একটা মোবাইল রত্না আপার পছন্দ হয় তখন সে তাকে বলে এটির দাম ১৫০০০ টাকা তুই চাইলে তোকে কিছু কমে নিয়ে দিতে পারব। তবে এখন ১০০০০ টাকা দিবি বাকি ৫০০০ পরে দিলেও চলবে এভাবে তোকে নিয়ে দিতে পারব। এরপর রত্না আপা বাসায় এসে তার বাবাকে বলে তার ভার্সিটিতে আরো দুইটা সাবজেক্ট বাড়ানো হয়েছে এটার জন্য ১০ হাজার টাকা তার আরো বেশি লাগবে। তার বাবা সরল বিশ্বাসে খুশি হয়ে তাকে দিয়ে দিবে বলে আশ্বস্ত করে। কিন্তু সে টাকা দিয়ে রত্না আপা একটি মোবাইল কিনে এই মোবাইল বাসায় কিভাবে কোথায় পেয়েছে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে তাই বুদ্ধি করে সে এ বিষয়টাও তার বাবার কাছে মিথ্যা বলে সে বলে তাদের ভার্সিটিতে একটা কুইজ কম্পিটিশন হয়েছে যে কুইজ কম্পিটিশনে যে ফাস্ট হবে সে একটি মোবাইল পাবে। এই মোবাইল নিয়ে এসে বাবাকে দেখায় এবং সে কুইজ কম্পিটিশনে ফার্স্ট হয়েছে তাকে বলে খুশি হয়েছে কিনা তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করে তার বাবা সরল বিশ্বাসে তাকে বলে হে অনেক খুশি হয়েছে।
রত্নার মোবাইল কেনার আনন্দে তার বন্ধুরা তাকে পার্টি দেওয়ার জন্য বলে কিন্তু রত্না আপা বলে এখন না রত্না আপার কথা শুনে শুভ তখন বলে যে না পার্টি হবে, কাল সারারাত আমাদের পার্টি হবে আমার বাসায়, আমার বন্ধু হাবিব আসবে। শিল্পী হাবিবের কথা শুনে সবাই কিছুটা আনন্দিত হয়ে গেল এবং সবাই রাজি হয়ে গেল। এটা শুনে রত্না আপা তার বাবাকে তার বান্ধবী সোভার জন্মদিন বলে মিথ্যা কথা বলে তার বাবাকে রাজি করায় তার বাবাও তাকে বিশ্বাস করে তাকে সারারাত পার্টিতে যাওয়ার অনুমতি দেয়। এদিকে তারা পার্টিতে যে হাবিব আসার কথা সে হাবিব না এসে শুভর ছোটবেলার এক বন্ধু সে এসেছে এটা দেখে সবাই কিছুটা মন খারাপ হয়ে যায় তারপরও কিছু করার নেই সবাই যেহেতু রাত জেগে পার্টি করবে তারা কিছু গান শুনে লং ড্রাইভ এ গিয়ে ভোরে রত্না আপা বাড়িতে ফিরে আসে।
এদিকে পরের দিন পয়লা বৈশাখ হওয়ায় রত্না আপার বাবা পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে তার মেয়ের জন্য একটি শাড়ি কিনে নিয়ে আসে, কিন্তু পড়বে না বলে তার বাবাকে মনে কষ্ট দেয় এবং সেই দিনেই তাকে একটা ল্যাপটপ কিনে দেওয়ার জন্য আকুতি জানায় ল্যাপটপের দাম ছিল ১.৫ লক্ষ টাকা। ওই সময় রত্না আপা বিবিএ কমপ্লিট করে দেশের বাইরে চলে যাওয়ার জন্য বলে কিন্তু তার বাবার ইচ্ছা সেই গ্রামে যারা অসহায় মানুষ তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তাকে বলে। তখন তার বাবাকে সে বলে গ্রামে ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই। অসুস্থ বাবা টাকার জন্য ডাক্তার দেখাতে পারছে না মেয়ের জন্য কারণ যদি মেয়ের টাকা শট পড়ে যায় আর সেই মেয়ে বাবার দেওয়া উপহারটা গ্রহণ করল না। রত্না আপার বাবা আমার দোকান উদ্বোধনের জন্য পরের দিন আমার সাথে চলে যাবে সেটা রত্না আপাকে জানায় এতে আবার অনেক খুশি হয়ে যায় এরপর তার বাবা সেখান থেকে চলে আসার পর সে শুভকে ফোন দেয় ফোন দিয়ে তাদের কি প্রোগ্রাম সেটা ঠিক করতে বলে, তখন শুভ বলল যে লং ড্রাইভে যাবে। এ কথা শুনে সে অনেক খুশি হয়ে যায়।
এদিকে আমি ওরফে মোসলেম এবং রত্না আপার বাবা আমরা দুজনে আমার দোকান উদ্বোধন করার জন্য চলে যাই। অন্যদিকে শুভ এবং রত্না আপা ওরা দুজনে লং ড্রাইভ বের হয় কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল শুভর দেওয়া গিফটও ছিল শাড়ি এবং সেই শাড়ি পড়েই লং ড্রাইভে বের হয় রত্না আপা। এদিকে আমার দোকান উদ্বোধন করে আমি আমার আঙ্কেলকে আমার দোকানে বসিয়ে আমি অন্য কাজে চলে যাই। এরমধ্যে রত্না আপা এবং শুভ তারা লংড্রাইভে গ্রামে ঘুরতে এসেছে আসতে আসতে ওই দোকানেই তারা এসে বসলো এবং আঙ্কেলকে চা দেওয়ার জন্য বলল আঙ্কেল তো রত্না আপাকে দেখেই অবাক হয়ে গেল। এরপর শুভর ফোনে একটা কল আসলো সেই কলে শুভ রত্না সাথে যা যা ঘটে গিয়েছে সেগুলো তার এক বন্ধুকে খুলে বলতে লাগলো এগুলো শুনে রত্না আপার বাবা অনেক কষ্ট পাচ্ছে। এদিকে রত্না পাতার বাবাকে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছে সে কি বলবে তার সম্পূর্ণ বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে একটা সময় সে এখান থেকে উঠে চলে যায়। কিন্তু তার বাবা সেখানেই হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায়।
রত্না আপা বাসায় ফিরে অনেক কান্নাকাটি করে এরই মধ্যে আমি রত্না আপাকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিলাম তার বাবা মারা গিয়েছে। এটা শুনে রত্না আপা পাগলের মত হয়ে গিয়েছে। এরই মধ্যে সে তার টেবিলে একটা চিঠি পেয়েছে সেই চিঠিতে লেখা রয়েছে সে যে ল্যাপটপটা চেয়েছিল তার হ্জের জমানো টাকা দিয়ে সেই ল্যাপটপটা কিনে এনেছে এবং মেয়ে যখন বড় হয়ে ভালো চাকরি পাবে তখন সেই মেয়ে টাকা দিয়ে আরো কয়েক বছর পর হ্জ করবে এগুলো লেখা ছিল। এগুলো পড়ে তো সে আরো পাগল হয়ে গিয়েছে। এরপর রত্না আপা গ্রামে চলে আসে তার বাবা যে ইচ্ছা সেই ইচ্ছা সে পূরণ করার জন্য লেগে যায়। এই কাহিনী গুলো শুনে দোকানে বসে থাকা একটি ছেলে সে উঠে চলে যায় এবং তার মা ডলি জহুরকে কোন কষ্ট দিবে না এবং সে তার সকল কথা শুনবে এই বলে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে। কারণ ওই মুহূর্তে সে ওই রত্নার ঘটনা থেকে তার ভুলটা সে বুঝতে পেরেছে।
বিঃদ্রঃ সকল ছবি মোবাইলে স্ক্রিনশট নেওয়া।
হাসান ইমাম ওরফে জাহান মাস্টার মানে রত্নার বাবা যদি তার মেয়ের কর্মকাণ্ডগুলো ফলোআপ করত বা তার মেয়ে কোথায় যায় কি করে সেগুলো নজরে রাখত এতটা স্বাধীনতা তাকে না দিত তাইলে হয়তো মেয়ে এতটা বিপথে চলে যেত না। আমি মনে করি এখানে বাবা-মায়ের অনেক গাফিলতি রয়েছে যার কারণে আমাদের সমাজে এরকম কিছু ছেলে-মেয়ে অনেক টাকা পয়সা পেয়ে বা তার যখন যা চায় তাই পেয়ে খারাপের দিকে চলে যায়। এজন্যই প্রত্যেকটা অভিভাবককে তার সন্তানদের এতটা স্বাধীনতা না দেওয়া। তারা কোথায় যায় কি করে সেটা যথেষ্ট সম্ভব ফলোআপে রাখলে ছেলে মেয়ে এতটা খারাপ হয় না। বাবা মা ছেলে মেয়েদেরকে অবশ্যই বিশ্বাস করবে, কিন্তু আমি মনে করি এতটা বিশ্বাস যে বিশ্বাসে তারা সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পেয়ে সকল প্রকার মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বাবা মাকে ধোকা দেয় এরকম বিশ্বাস কোন বাবা মায়েরই করা উচিত নয়।
- |
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
এই নাটকের মধ্যে অনেক শিক্ষনীয় বিষয় ছিল বাবা মায়ের দোষে ছেলেমেয়েরা খারাপ হয়ে যায়। সেই বিষয়টি ফুটে উঠেছে নাটকের মধ্যে। যাইহোক, অনেক ভালো লেগেছে আপনার রিভিউ পড়ে নাটকটি দেখা হয়নি দেখার চেষ্টা করব।
সালাউদ্দিন লাভলু অনেক গুনি একজন নাটক নির্মাতা।ওনার নাটক গুলো অনেক ভালো হয় আমি জানি।আপনার রিভিউ পোস্টটি অনেক ভালো লেগেছে।আপনি খুব সুন্দর করে নাটকটির রিভিউ সাজিয়েছেন।এটা দেখে যে কোনো নাটক দেখার আগ্রহ এমনিতেই অনেকটা বেড়ে যাবে সবার।আমারও আগ্রহ বেড়ে গেল নাটকটি দেখার।ধন্যবাদ আপনাকে আপু সুন্দর রিভিউ পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
আপু আপনার নাটক রিভিউ পড়ে অনেক ভালো লেগেছে। এই নাটক এখনো দেখা হয়নি কিন্তু আপনার রিভিউ পড়ে বুঝতে পারছি এর কাহিনি খুব সুন্দর। বাস্তবে এমন অনেক ঘটনা রয়েছে। আমারও মনে হয় এখানে বাবা মায়ের গাফিলতির জন্য ছেলেমেয়েরা বিপথে চলে যায়। তাদের স্বাধীনতা দিলেও এতটা দেওয়া উচিত নয়।যাই হোক সময় পেলে অবশ্যই দেখবো।ধন্যবাদ এত সুন্দর নাটক রিভিউ দেওয়ার জন্য।
নাটকটি হয়তো কোন একটি ঈদের প্রচার হয়েছিল। অনেকবার নাটকটি দেখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আর দেখা হয়ে ওঠেনি। আজ আপনার রিভিউতে পড়ে নাটকটি দেখার খুব ইচ্ছে জাগলো। এমনিতে আমার কাছে হাসান ইমামের নাটক বেশ ভালো লাগে। আপনি অনেক সুন্দর ভাবে নাটকটি রিভিউ করেছেন আপু।