ফিরে আসা

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন ।আমিও ভাল আছি। আজ বাড়ি থেকে কলকাতায় এলাম। সকাল থেকেই মনের অবস্থা ভালো ছিল না। বেশ অনেকদিন বাড়িতে থাকায়, আসার সময় প্রবলেম হচ্ছিল ।বাড়ির সবাই মন খারাপ করছিল। তবুও যেতে হবে ।

20220828_084102.jpg

লোকেশন

ট্রেনের লেডিস কম্পার্টমেন্টে ওঠা মাত্রই জায়গা পেয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ ভালোই কাটল ।যেহেতু ভিড় কম ছিল ।তারপর যত ট্রেনের মানুষজন বাড়তে শুরু করল। তত বাড়তে লাগল হইহুল্লোর।কাকিমারা যেন একে অপরের পেছনে লাগার জন্য আগে থেকে প্ল্যান করে ট্রেনে ওঠে।

Snapchat-96001940.jpg

আমি বরাবরের মতোই কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনতে থাকি ।ট্রেন থেকে বাইরের দৃশ্যগুলো একের পর এক রূপ বদলাতে থাকে ।কিছু জিনিস ছেড়ে আসি। কিছু আবার সামনে পেয়ে যাই। আর সবকিছুর পরে বুঝতে পারি অনেক কিছুই ছেড়ে আসলাম। তারপর বুঝতে পারি ছেড়ে এসেছি বলেই এগিয়ে আসলাম।আর এই ভাবেই সময়ের সাহায্য নিয়ে ট্রেন পৌঁছে দেয় কলকাতায়।

পিঁপড়ের সমুদ্রের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসি আবার এক অন্য জগতে। সেখানেও কোন কিছু স্থির নেই। অজানা দু-চারটে মুখের সাথে অটোতে উঠে পড়ি ,মেস বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিই। সিঁথির মোড়ে অটো থামে।

20220828_111702.jpg

পরিচিত জায়গা খুব অপরিচিত লাগে। আমি হাঁটতে থাকি।পরিচিত জায়গা পেছন পেছন তাড়া করে । আমি আরও জোরে হাঁটি। সামনে থেকে বুকের পাঁজর ভেঙে টুকরো টুকরো করে কেও। পেছন থেকে কেও পিঠে ছুরি মারতে থাকে। আমি তবুও হাঁটতে থাকি।

20220828_112111.jpg

লোকেশন

ভাবতে থাকি কিছু মাস আগেও এই রাস্তাটা আমি চিনতাম না। একেবারেই অজানা জায়গা ছিল। ভাবতে ভাবতে পৌঁছে যাই প্রিয় ঝিলের পাশে। ঝিলের জল মহানন্দে তখন লাফাচ্ছে ।বহুদিন পর আমাকে দেখে ঝিলের জলে এক অন্যরকম প্রতিচ্ছবি ভাসে।

বাঁধানো সিঁড়ি কথা বলে।
বলে - এখানে প্রাণ নেই, তাও তুই ফিরলি কেন?

বলে- আমি বছরের পর বছর ঠাঁই রয়ে গেলাম। কত প্রাণ হারিয়ে গেছে চোখের সামনে। কাউকে খুঁজে পাইনি রে ।কেউ ফিরে আসেনি। না কাউকে মুখ ফুটে ডেকেছি একবার।

বলে - আশেপাশের যে এত বাড়িঘর দেখছিস, সব মরা, এই জগতে প্রাণ নেই ।শুধু রয়েছে আমার ঝলমলে গতিবেগ আর সাক্ষী হিসেবে রয়ে গেছে বহু প্রতিচ্ছবি।

হাঁটতে হাঁটতে ঝিলের কথাগুলো কানে বেজে ওঠে। ফিরে তাকিয়ে একবার দেখি। দেখি, আমিও দেখতে পাচ্ছি নিজের প্রতিচ্ছবি ঝিলের জলে। অদৃশ্য একটা ক্যামেরা লাগানো রয়েছে সেখানে। আমার গত কিছু মাসের রেকর্ডও রয়ে গেছে ওর কাছে ।এভাবে কত রেকর্ড জমছে ঝিলের বুকে ।যত জমছে , তত গভীর হচ্ছে ঝিল।

প্রশ্ন করি - তোমার গভীরতা কত ?

কাঁপতে থাকা ঝিলের জল হঠাৎ স্থির হয়ে যায়।
বুঝিয়ে দেয় - বহু ভার তার বুকে।আর কিছুটা হলেই সে পৃথিবীর অভ্যন্তরের লাভার স্পর্শ পাবে। সে ভস্ম হয়ে যাবে।

আমি আর প্রশ্ন করি না, সামনের দিকে এগিয়ে চলি। দুলাল কাকু দোকানের ভেতর থেকে হাসির এক ঝলক দেয়। ঝিলের এই প্রান্তে এসে দেখি , খালা কাপড় কাঁচছে।

শেষ প্রান্তে আমার মেস বাড়ি। দরজা খুলতেই লালি ছুটে আসে। এখানে আসার পর ওর নাম রাখি আমি - লালি। আজ অব্দি জানতে পারলাম না বাড়ির এই কুকুরটাকে সবাই আদর করে কি নামে ডাকে। আমাকে দেখে পরিচিত গন্ধ মেখে নেয় লালি। প্রতিবার দরজা দিয়ে ঢোকার সময় বাড়িতে মা বরণ করে।
মেস বাড়িতে লালি।

@isha.ish

Sort:  
 2 years ago 

দিদি আপনার ফিরে আসা নিয়ে পোস্ট পড়ে সত্যি বলছি অনেক খারাপ লাগছে। কিন্তু নিজের জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য এই কষ্টগুলো সহ্য করতেই হবে এটাই নিয়তির খেলা। আমার কাছে কুকুরের নাম লালি শুনে অনেক ভালো লেগেছে। আমি কখনো মেসে থাকিনি তাই এর মজা বুঝিনি। কিন্তু যেদিন প্রথম আমার মাকে ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি গিয়েছিলাম ঠিক ঐ দিন আপনার মতো আমারও অনেক কষ্ট হয়েছিল। দিদি আপনার জন্য অনেক ভালোবাসা রইল।

 2 years ago 

আপনার জন্যও অনেক ভালোবাসা, ধন্যবাদ পোস্ট টি পড়ার জন্য।

 2 years ago 

ট্রেনে মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে একটু হৈ-হুল্লার ও বৃদ্ধি পায় যেমনটি আপনার ক্ষেত্রে হয়েছিল। তবে অজানা পথে একটু জোরে হেঁটে যাওয়ার যে কথাটি গল্পের মধ্যে উল্লেখ করেছেন সেটি বেশ ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর করে মন্তব্য করার জন্য

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59325.16
ETH 2609.11
USDT 1.00
SBD 2.41