"আমার বাংলা ব্লগ"প্রতিযোগিতা-২১||পটলের আইসক্রিম|| ইউনিক পটলের রেসিপি
পটলের আইসক্রিম।
রেসিপি দেখেই হতে পারে
আপনাদের রক্ত হিম।
মা- এর হাতের কোরমা ।
পটল মানেই ঠাকুমা রাঁধে
চিংড়ি পটোলের দোলমা ।
এক বন্ধুর নাম পটলা।
পটল মশাই ,সব রান্নায়
দিতে পারে জটলা।
পরানের পরান।
পটল রেঁধেই জিততে হবে
পটল কম্পিটিশন।
নমস্কার বন্ধুরা । প্রথমে কমিউনিটির সকল এডমিন এবং মডারেটর দাদা দিদিদের জানাই অনেক অনেক ভালোবাসা । প্রিয় হাফিজ দাদাকে জানাই এত সুন্দর প্রতিযোগিতা আয়োজন করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। বেশ অনেকদিন পর এই কমিউনিটিতে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছি ।তাই বরাবরের মতন এবারেও অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি অনেক খুশি।
পটলের ইউনিক কম্পিটিশনে আমিও বহুল প্রচেষ্টায় একটা ইউনিক রেসিপি নিয়ে হাজির হয়েছি। রেসিপির নাম দেখে এতক্ষণে আপনাদের অনেকের চক্ষু চরক গাছ হয়ে গেছে ।হতে পারে অনেকে আমার নামে বকাবকি দেওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
প্রথমেই মাপ চেয়ে নিচ্ছি পটলের সাথে এত দুর্ব্যবহার করার জন্য। আপনাদের মতনই পটল আমার অনেক পছন্দের একটা সবজি। কিন্তু যখন ইউনিক কম্পিটিশন হয়। তখন ইউনিক কাজটাই করা ভালো। তাই চেষ্টা করেছি পটলের সাথে একটু অন্যভাবে কাজ করার ।
প্রথমেই ভেবেছিলাম পটলের মিষ্টি তৈরি করব। তারপর দেখলাম আমার সহকর্মী একজন অলরেডি পটল দিয়ে দুর্দান্তভাবে লাড্ডু তৈরি করে ফেলেছেন ।যেটা দেখে প্রচন্ড পরিমাণে আমার লোভ হলো। তাকে প্রথমেই অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং তার জন্য আমার শুভকামনা রইল।
অনেক ভেবেচিন্তে তারপরে মাথায় আসলো পটলের চকলেট বানাবো। কিন্তু এই আইডিয়া আমার মা কিছুতেই মেনে নিতে পারলেন না ।মায়ের প্রিয় পটল গুলোকে সবজির ঝুড়ি থেকে বার করে আমি কাজ শুরু করতে পারলাম না ।তারপর মাথায় বুদ্ধি এলো আইসক্রিম তৈরি করার।
আমি সাধারণত কেক, চকলেট ,আইসক্রিম এগুলো ভালোই তৈরি করতে পারি ।তবে এই দুঃসাহসিকতা দেখার পেছনে আর একটা কারণ রয়েছে। পাঞ্জাবে আমার এক পরিচিত কাছের মানুষ থাকেন। আমার বাবার বন্ধু হন ।ওই বাড়ির ঠাকুমা আমাকে লাউয়ের আইসক্রিম তৈরি করে খাইয়েছিলেন। তখন আমি অনেক ছোট ।ক্লাস ফাইভে পড়ি। এই কথাটা আমি কোনদিনও ভুলিনি।
পটলের সাথে ইউনিক কি করা যায় - এটা ভাবতে ভাবতে কথাটা মনে পড়ে যায় ।লাউয়ের আইসক্রিম যদি হতে পারে তাহলে পটলের কেন হবে না! যদিও পটলের আইসক্রিম নিয়ে আমি কোথাও কিছু দেখিনি এখনো অব্দি। আর কারোর কাছে পটলের আইসক্রিমও খাইনি । তবুও প্রথম স্টেপটা তো কাউকে না কাউকে নিতেই হয়। তাই আপনাদের সাথে আমি শেয়ার করতে চলেছি ইউনিক পটলের রেসিপি - পটলের আইসক্রিম।
সিরিয়াল নং | সামগ্রী | পরিমাণ |
---|---|---|
১ | পটল | ২ টো |
২ | চিনি (সিরার জন্য) | ৪ চামচ |
৩ | দুধ | ৫০০ |
৪ | চিনি | ৩ চামচ |
৫ | মেরি বিস্কুট | ২ টো |
৬ | টুটি ফ্রুটি | পরিমাণ মতো |
প্রত্যেকটা স্টেপ দেখলেই বুঝতে পারবেন ,একেবারে নিজের বুদ্ধিতে রান্না করার চেষ্টা করেছি। যাইহোক দুটো পটলকে ভালোভাবে চাকু দিয়ে খোসা পরিষ্কার করে নিলাম। তারপর সুন্দর করে কেটে নিয়েছি ঠিক যেভাবে ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন।
গ্যাসে একটা ছোট বাটি বসিয়ে , গ্যাস অন করলাম।তাতে ছোট কাপের দুই কাপ মত জল দিলাম। তার মধ্যে দিয়ে দিলাম চার চামচ চিনি। এবার পটলগুলোকে দিয়ে দিলাম। মিডিয়াম আঁচে পটলগুলো চিনির রসে সিদ্ধ হতে রেখে দিলাম।
বেশ পনেরো-কুড়ি মিনিটের মধ্যে পটলগুলো সিদ্ধ হয়ে গেল এবং রং বদলে গেল। সাথে সিরাটাও এরকম দেখতে হয়ে গেল। এই অবস্থায় গ্যাস অফ করে ভালোভাবে ঠান্ডা হওয়ার জন্য রেখে দেব।
পুরোপুরি ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার পর মিক্সার গ্রাইন্ডার এর মধ্যে পটল গুলোকে সিরা থেকে ছেঁকে তুলে ভালোভাবে পাঁচ মিনিট গ্রাইন্ড করে নেব।
একটা কাপের ওপর ছেকনি রেখে পটলের পেস্টটা ভালোভাবে ছেঁকে নিলাম, যাতে বড় কোন খোসা না থেকে থাকে।
৫০০ গ্রাম দুধ গরম হওয়ার জন্য রেখে দিয়েছি।
দুই তিনবার দুধ উতলে ওঠার পর এরমধ্যে দিয়ে দিচ্ছি পটলের ওই পেস্ট আর তিন চামচ চিনি। তারপর ভালোভাবে দুধের সাথে মিশিয়ে নিলাম। এই অবস্থাতেই দেখতে পাবেন দুধের কালারটা হালকা বদলে গিয়ে একটু পেস্তা রঙের হয়ে আসছে।
আমরা জানি পটলের একটা আলাদা গন্ধ রয়েছে। সেই গন্ধ টাকে দূর করতেই এখানে আমি দিয়ে দিচ্ছি দুটো মেরি বিস্কুট গুঁড়ো করে। এর পেছনে আর একটা কারণ আছে। আমি সাধারণত যতবার এর আগে আইসক্রিম তৈরি করেছি আমার কাছে উইপিং ক্রিম পাউডার ছিল। উইপিং ক্রিম প্রত্যেকটা আইসক্রিমে থাকে ,কিন্তু বাড়িতে যেহেতু আইসক্রিম পাউডার ছিল না। তাই আমি এখানে দুটো বিস্কুটের গুঁড়ো করে এড করেছি। যাতে আইসক্রিমের ব্যাটার টা একটু শক্ত হয়।
সমস্ত কিছু অ্যাড করে দেওয়ার পর আরও পাঁচ মিনিট দুধটাকে ফুটতে দেব। এই সময় গ্যাসের আঁচ একদম লোতে রাখতে হবে।
এবারে গ্যাস বন্ধ করে মিশ্রণটাকে পুরোপুরি ঠান্ডা হওয়ার জন্য রেখে দেব কিছুক্ষণ।
ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার পরে আবার মিক্সচার গ্রাইন্ডার এ এই মিশ্রণটাকে ভালোভাবে গ্রাইন্ড করে নেব। যাতে বিস্কুটের দানাগুলো যেগুলো ছবিতেও দেখতে পারছিলেন ,সেগুলো ভালোভাবে মিশে যায়।
তারপর একটা কন্টেনার নিয়ে নিয়েছি ।তার মধ্যে আইসক্রিমের ব্যাটার টা ঢেলে দিলাম। সাথে এড করে দিচ্ছি টুটি ফ্রুটি।
এবারে ঢাকনা ভালোভাবে আটকে দিলাম। কন্টেনার টা এয়ার টাইট হলে বেশি ভালো হয়। যেমন আমি ব্যবহার করেছি ।এবার এই কন্টেনার টা আমি ডিপ ফ্রিজে রেখে দিলাম গোটা রাতের জন্য।
প্রায় আট নয় ঘন্টা পর কন্টেনার খুললে ঠিক এরকম দেখতে পাবেন।
আর এই ভাবেই তৈরি হয়ে যাবে পটলের আইসক্রিম।
খুব অল্প সামগ্রী দিয়ে এবং কম খরচে তৈরি হয়ে গেছে এই রেসিপি। সত্যি বলছি বন্ধুরা, আমি যখন দুধের মধ্যে পটলের ওই পেস্টটা এড করছিলাম, আমি কয়েক সেকেন্ডের জন্য চোখ বুজেছিলাম। ভীষণ ভয় ভয় করে দুধের মধ্যে পটল দিয়েছি। কারণ আমার মাকে প্রথমেই আইসক্রিম করার প্ল্যান বললে, মায়ের ইঙ্গিত আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিল যে আইসক্রিমটা যদি খেতে ভালো না হয় তাহলে আমার কপালে দুঃখ আছে। ৫০০ এম এল দুধ নষ্ট হলে স্বাভাবিকভাবে কারো মাথা ঠিক থাকবে না।
কিন্তু ঠাকুরের আশীর্বাদে দুঃখ হয়নি, দুর্দান্ত খেতে হয়েছিল আইসক্রিমটা। সব থেকে মজার ঘটনা ।মাকে যখন আইসক্রিমটা খেতে দিলাম ।টুটি ফ্রুটি গুলো মা প্রথমে দেখেনি। আইসক্রিম খাওয়ার সময় মুখে বাঁধতেই মা আমাকে বেশ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল- হ্যাঁ রে ,এটা কি পটলের খোসা? প্রশ্নটা বেশ মজা দিয়েছিল আমাকে।
আশা করছি আমার আজকের এই পোস্ট আপনাদের সকলের ভালো লেগেছে। সকলের মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকলাম ।প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে খুব মজা পেয়েছি আমি। সকলে ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।
@isha.ish
জাস্ট দারুন। ইউনেক আইডিয়া। তোর সমস্ত কাজের মতো এই কাজটাও খুব সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ভীষণ ভালো লাগছে দেখে।
আমারও মজা লেগেছে পুরো কাজ টা করে।
পটল দিয়ে যে আইস্ক্রিম বানানো দেখবো তা কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি আগে। এখন বাস্তবতায় এর দেখা পেলাম।
আইস্ক্রিম আমার ও খুব পছন্দের একটা খাবার। তবে বাড়িতে তৈরি করলে সাধারণত কমন স্বাদের আইস্ক্রিম তৈরি করি। লাউ, পটল এমন সবজি দিয়ে আইস্ক্রিম তৈরির আইডিয়া পেয়ে খুব ভাল লাগলো।
ধন্যবাদ আপু প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের নিমিত্তে দারুণ মজার একটা রেসিপি শেয়ার করার জন্য।
হাহাহা, সেরা , হাসি পাচ্ছে মন্তব্য পড়ে।
আপনি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে, পটলের ইউনিক একটি রেসিপি, পটল দিয়ে আইসক্রিম অত্যন্ত সুন্দরভাবে ও ধাপে ধাপে সম্পূর্ণ তৈরীর প্রক্রিয়াটি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। এটি দেখতে অসাধারণ সুন্দর হয়েছে এবং বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে পটল দিয়েও আইসক্রিম তৈরি করা যায়। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি রেসিপি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
হাহাহা, হ্যাঁ দাদা, বিশ্বাস করুন। এটা পটল!🤭🤭
সত্যি কথা দিদি আমার রক্ত হিম হয়ে গেছে। পটলেরও আইসক্রিম হয়। আপনি তো ঐ মাখাকাকু কেউ পেছনে ফেলে দেবেন হা হা।।
দেখতে তো চমৎকার লাগছে। যাইহোক দারুণ তৈরি করেছেন দিদি পটলের আইসক্রিম টা। অনেক সুন্দর ছিল আপনার উপস্থাপনা টা। ধন্যবাদ আমাদের সঙ্গে শেয়ার করে নেওয়ার জন্য।।
হাহাহা দাদা, হিম রক্ত হয়েছে শুনে মজা পেলাম।
পটলের আইসক্রিম এত সুন্দর রেসিপি তো কখনো দেখিনি। দেখতে অসাধারণ লাগছে। আর এই রেসিপিটির নাম দেখেই খুবই ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার জন্য রইল অনেক অনেক শুভকামনা।
হাহাহা, ধন্যবাদ।
আপু আপনার রেসিপি আসলে অবাক হওয়ার মতই। পটলের আইসক্রিম কখনো তো জীবনে শুনিনি আর তৈরি করে খাওয়াও হয়নি। তবে আপনার আইসক্রিমের শেষ লুকটা দেখে বোঝা যাচ্ছে খেতে খুবই মজা হয়েছিল। আর আপনার কবিতাটাও কিন্তু খুবই ভালো লাগছে।
আনেক মজার হয়েছিল খেতে।
পটলের আইসক্রিম রেসিপিটি আজকে প্রথম দেখলাম। পটলের আইসক্রিমটি বেশ ইউনিক একটি রেসিপি। খুব চমৎকারভাবে ১১ টি ধাপের মাধ্যমে আপনার রেসিপিটি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন।
অনেক ধন্যবাদ দিদি। ভালো থাকুন।
আপু কবিতাটা বেশ দারুন হয়েছে।পোস্ট পড়ে বেশ ভালো লাগলো।যাক কপালের দুঃখ যে কেটেগেলো,তাই বেশ।হা হা।শুভ কামনা রইলো। ধন্যবাদ
হাহাহা, আইসক্রিম করে খাওয়াবো। চলে আসুন।
মার আজকের এই পোস্ট দেখে আমি তো মুগ্ধ হয়ে গেলাম। আপনি আজকে খুবই ইউনিট একটি রেসিপি তৈরি করেছেন। আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে আপনার আজকের এই পোস্ট। এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
ধন্যবাদ আপনাকে
ওয়াও অসাধারণ পটলের আইসক্রিম রেসিপি তৈরি করেছেন। আমি এভাবে কখনো পটলের আইসক্রিম খাইনি। এই প্রথম আমি পটলের আইসক্রিম দেখলাম। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খুব সুন্দর ভাবে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ দিদি ।