"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা -০৪(আমার শেষ উৎসবের স্মৃতি) || কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পূজা❤️🙏
নমস্কার বন্ধুরা @amarbanglablog । এত সুন্দর একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ @moh.arif দাদা । এই ভয়াবহ এবং বন্দী অবস্থায় নিজের ভালো কিছু স্মৃতি মনে করা এবং সকলের সাথে ভাগ করে নেওয়ার মত আনন্দ আর কি আছে?
মানুষ বড়ই সুখ ও আমোদ প্রিয়। আগের বছর করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বেশি থাকলেও , থেমে ছিল না আমার শহর কৃষ্ণনগরের ঐতিহ্য মহামায়া - জগদ্ধাত্রী মা এর পূজা। এই ভাইরাসের কারণে অনেক বিধি নিষেধ মেনে পুজো হয়েছিল। এই ছিল আমার শেষ উৎসব ।
জগদ্ধাত্রী পূজা
কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় মা জগদ্ধাত্রী র পূজা শুরু করেছিলেন প্রথম। তারপর থেকেই আমার শহরের প্রতি বারোয়ারী এবং ক্লাবঘরে এই পুজো অনুষ্ঠিত হয়।প্রতিবছর কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে এই পূজা হয়। কৃষ্ণনগরে একদিনে
ষষ্ঠী, সপ্তমী,অষ্টমী ,নবমী পূজা হয় । এবং পরের দিন দশমী পূজা হয়ে ,দুপুরে ঘট বিসর্জন হয় ,তারপর বিকেল থেকে প্রতিমা বিসর্জন পরপর হতে থাকে।ঠাকুর দেখা শুরু হয় পুজোর আগের দিন থেকে ।
পুজোর তারিখ - ২৩ শে নভেম্বর ২০২০
আমি সাধারণত আমার বাড়ির পাশের বারোয়ারী - 'ঘুর্নী শিবতলা বারোয়ারী' - র পুজো নিয়েই ব্যস্ত থাকি বেশি। আর বাকি সময় টুকু এদিক ওদিক ঠাকুর দেখতে যাই।
পূজার আগের দিন রাতের ঘোরাঘুরি
আমি এবং আমার বাবা প্রতিবছর মা এর প্রতিমা যখন মণ্ডপে ওঠে ,তখন থেকে আমাদের উপোস শুরু করি। সন্ধি পূজার পর জল গ্রহণ করি। জানিনা কিভাবে তার সত্ত্বেও ঘুরতে যাওয়ার এনার্জি থাকে😁😁 ।
আগের দিন রাতে প্রতিমা মণ্ডপে ওঠার আগে আমরা খাওয়া দাওয়া করে নিলাম।তারপর রেডি হলাম।আমি,মা,বাবা,ভাই মিলে আমাদের গাড়ি নিয়ে রাত সাড়ে দশ টা'র পর বেরিয়ে পড়লাম। আমার বাবা ভিড় দেখে ,আমাদের বহু মণ্ডপে নামতে দেননি । এই জন্য আমার দুঃখ হচ্ছিল। কিন্তু তবুও এত দিন বাদে বাড়ি থেকে সেজেগুজে বেরোনোর আনন্দ ছিল।
রাস্তায় রাতের বেলাতেও খুব ভিড় থাকে। কিন্তু এই ভাইরাসের প্রকোপে ভিড় তুলনামূলক কম ছিল।বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত এক টা বাজলো।
পুজোর দিন
ঘুম ভাঙ্গল ঢাকের আওয়াজ এ। এই শান্তি বলে বোঝাবার নয়। তারপর স্নান করে নতুন হলুদ শাড়ি পড়ে মণ্ডপে গিয়ে বসলাম। এক এক করে ষষ্ঠী,সপ্তমী,অষ্টমী পুজোর অঞ্জলী দিলাম। বাড়ির পাশেই বারোয়ারী বলে আমার একটু সুবিধা ।
খুব ইচ্ছা ছিল নবমী অঞ্জলী বুড়িমা ঠাকুরের স্থানে গিয়ে দেব। মা এর কি আজব খেলা , হটাৎ বাবা আসলো , কোনো প্ল্যানিং ছাড়াই বুড়িমা মণ্ডপ এ গিয়ে পৌঁছলাম।
আসলে বুড়িমা পুজো কৃষ্ণনগরে র সব মণ্ডপের মধ্যে একটি অন্যতম জাগ্রত জগদ্ধাত্রী পুজো বলে মানা হয়। দেশ বিদেশ থেকে মা এর পুজো দিতে আসে। তাই খুব ভিড় হয়। পুলিশ আর সিকিউরিটি ভরপুর । সোনা রূপা ও হীরের অলঙ্কারে সজ্জিত মা এর প্রতিমা দেখতে যে কি অপরূপ লাগে । সামনে থেকে না দেখলে কি ভাবে বলি!
এসে দেখলাম। প্রতিবারের তুলনায় ভিড় কম। আর খুব বিধি মেনে দূরত্ব বজায় রেখে ঠাকুর দেখছে সকলে।
এই ভাবে তো দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হল। আবার জামা চেঞ্জ করে বারোয়ারী র পুজোয় বসলাম। সন্ধ্যা আরতীতে না থাকলে আমার পুজো দেখা মূল্যহীন।
আরতী শেষ হলো রাত সাড়ে আট টা তে। তারপর ঠাকুরের প্রসাদ গ্রহণ করে জল খেলাম।
তারপর বাড়িতে এসে কিছু খেয়ে আবার রেডি হলাম। বাকি মণ্ডপের ঠাকুর দেখতে যাব বলে।😁😁😁
দই ফুচকা মিস করা যাবেনা
বাড়ি ফিরলাম বারোটা / সাড়ে বারোটা নাগাত।
বিসর্জনের দিন
এই দিন সকাল থেকেই মনটা খারাপ লাগছিল। বেশ অনেকদিন পর সকলের মুখের হাসি কেরে নিয়ে মা আমার আজ চলে যাবে। স্নান করে বারোয়ারী তে গেলাম। তারপর দশমী পুজো শুরু হলো। কিছুক্ষণ পর সিঁদুর খেলা হলো। ঠাকুর মশাই ঘট নাড়িয়ে দিলেন।প্রতিবারে এই মুহূর্তে যেন আপনা আপনি চোখে জল আসে।
সকাল এভাবে শেষ হলো। বিকেল বেলা রেডি হয়ে বিসর্জন দেখতে গেলাম। রাস্তায় কত লোক। করোনা ভাইরাস কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না😅😅😅। পর পর আমাদের সামনে দিয়ে এক এক করে প্রতিমা জলঙ্গী নদীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। এইভাবে বেশ কিছু ঠাকুর দেখার পর বাড়ি ফিরলাম রাত এগারোটায়। বিসর্জন সকাল আটটা অব্দি হয়। আর দুদিন ধরে প্রতিমা বিসর্জন হয়।
বুঝতে পারছ তো সবাই? আমার শহরে কত পুজো হয় 💕💕 ।
পুজোর আগে থেকেই সকলের মনে প্রশ্ন ছিল যে পুজো কেমন ভাবে হবে আর আমরা কিভাবে ঠাকুর দেখব। কিন্তু মা জগদ্ধাত্রী - এর কৃপায় কিভাবে কত সহজে যে উৎসব পালন হল। বুঝতেই পারিনি।
সময় থেমে থাকেনা । বাজে সময়ও না। আশা করছি আমাদের পৃথিবী খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হবে।খুব ভালো লাগলো সকলের সাথে নিজের আনন্দ ভাগ করে নিতে পেরে। অনেক লিখে ফেললাম তাইনা? 😅😅
আশা করছি সকলের ভালো লাগবে এবং এই পূজো সংক্রান্ত অনেক কিছু জানতে পারবে।
ধন্যবাদ
@isha.ish
সত্যি উৎসবগুলো এই রকম আবেগময় এবং আনন্দময় হয়ে থাকে, যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রিত হয়ে গেছে। আপনার সুন্দর অনুভূতিগুলো ভাগ করে নেয়ার জন্য ধন্যবাদ, শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
চার দেয়ালে আবদ্ধ থাকতে থাকতে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে তৃপ্তির নিশ্বাস নেওয়ার অনুভূতি ভুলে গেছি আজ অনেকদিন হলো। উৎসবের এই স্মৃতি গুলো মনে করতে গিয়ে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও শান্তির নিঃশ্বাসটুকু নিতে পেরেছি । ধন্যবাদ ভাইয়া এভাবে পাশে থাকার জন্য।
আপনার পোষ্টটা অনেক সুন্দর হয়েছে।
ধন্যবাদ ভাইয়া
🥰🥰
দারুন ছিলো আপনার শেষ উৎসবের স্মৃতি। ছবিগুলো অনেক সুন্দর হয়েছে। 👌
শুভেচ্ছা রইল ছোড়দা ❤️। মায়ের কৃপায় আমরা সবাই যেন খুব তাড়াতাড়ি একসাথে উৎসবের এই আনন্দ গুলো ভাগ করে নিতে পারি।
আমাদের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া এভাবে পাশে থাকার জন্য ❤️
আপনার পোষ্টটা অনেক সুন্দর হয়েছে।শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
শুভ কামনা আপু। সন্দর উপস্হাপনা।
ভালোবাসা রইলো আপু। ❤️
অনাবিল শুভেচ্ছা আপু।
Sei sei .
ডন ডন 😉😉❤️
লেডি মাস্তান 😋