এসো নিজে করি-বিশেষ ক্রিসমাস সপ্তাহ:"জীবনে প্রথমবার আমার মাটির কাজ"||১০% বেনিফিট @shy-fox এর জন্য

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। চলে এসেছি "এসো নিজে করি - বিশেষ ক্রিসমাস সপ্তাহ" এই ইভেন্টে দ্বিতীয় বার অংশ গ্রহণ করতে। আর এটাই হলো আমার তরফ থেকে আপনাদের সবার জন্য ক্রিসমাস সারপ্রাইজ।

স্টিমিট প্লাটফর্মে আমাকে প্রথম থেকে ফলো করলে আপনারা জানতে পারবেন , যে আমার বাড়িতে আমার নিজের বাবা একজন বিখ্যাত ভাস্কর হওয়ার সত্বেও আমি এই স্ট্রিমে যাইনি।আমি আমার মত গানের দিকে নিজেকে নিযুক্ত করেছি।আর এর কারণে আমার বাবার যে আপসোস আছে , তাও আমি অনেক জায়গায় বলেছি। এই বিশাল শিল্প কে ধরে রাখা সত্যিই উচিত, কিন্তু আমি আজ অব্দি মাটি দিয়ে কিছু বানানোর চেষ্টা করিনি।

আমার প্রথম মাটির কাজ ( শান্তা, শ্লেজ গাড়ি, হরিণ)

20211223_112330.jpg

যখন এসো নিজে করি ইভেন্টের ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে এই নতুন উদ্যোগ এর কথা শুনলাম। কেনো জানিনা ভেতর থেকেই এই ইচ্ছা জেগেছিল ,যে আমি মাটি দিয়ে শান্তা বানাবো। এই ভাবনা থেকেই হটাৎ একদিন আমার বাবার কাজের ঘরে মাটি নিয়ে বসে গিয়েছিলাম। তখনও ভাবিনি যে আমি এতো টা একা একা করে ফেলবো।

পুরো কাজটা করতে আমার ৭/৮ দিন মত সময় লেগেছে। বিভিন্ন কাজের মধ্যে থেকে রোজ একটু একটু সময় বার করে কাজ করেছি। আমার কাছে এটা খুব ইমোশনাল ব্যাপার যে এই প্রথম বার আমি মাটির কাজ করেছি।

IMG-20211224-WA0011.jpg

কীভাবে তৈরী করেছি

প্রথম ধাপ

মাখা মাটি নিয়েছি অল্প করে চোখ আন্দাজ মত, তারপর শান্তার গাড়ির আকৃতি দেওয়া শুরু করেছি। হাতের সাহায্যে মাটি টিপে টিপে, তৈরি করে ফেলেছি ।

20211224_094151.jpg

প্রথম দিন দুপুর বেলা বসে আমি এই গাড়ি তৈরী করছিলাম। বাবা বাড়ীতে ছিল না, থাকলে হয়তো করতেই দিত না, যেহেতু এতো দিনেও মাটি তে হাত দেইনি আর এই কাজে কৌতূহল দেখায়নি। তাই বাবার খুব অভিমান।

20211224_094240.jpg

মাটির কাজ করতে করতে ফোনে হাত দেওয়া যায় না, ছবি গুলো পর পর কে তুলে দেবে, কার অতো ধৈর্য্য ! আমি কিভাবে তুলেছি, সেটা আমিই জানি।
ছবি গুলো দেখে হয়তো আপনারা বুঝতে পারছেন, আমি কিভাবে আস্তে আস্তে গাড়িটা তৈরি করছি।

20211224_094319.jpg

গাড়ি তৈরী হয়ে যাওয়ার পর, শান্তা বানানো শুরু করেছি পরের দিন।

দ্বিতীয় ধাপ

প্রথমে একটা শরীরের আকৃতি আনার চেষ্টা করেছি। যেহেতু গাড়িতে শান্তাকে বসাতে হবে ,তাই সেই মাপ মতো চোখের আন্দাজে মাটি নিয়ে শান্তার শরীরের আকৃতি বানানোর চেষ্টা করেছি।

20211224_094358.jpg

তারপরে মুখের অংশটা বানাতে আরেকটু মাটি দিয়েছি উপরের দিকে। চেয়ারি র সাহায্যে মুখের একটা আকৃতি অর্থাৎ যলাইন আনার চেষ্টা করেছি। আমি জানিনা কিভাবে আমি করতে পারছিলাম ,কিন্তু আমার অজান্তেই পরপর আমি কাজ করে যাচ্ছিলাম।

20211224_094527.jpg

হ্যাঁ আমি এটা জানি পুরোপুরি ভালো হয়নি জিনিসটা। কিন্তু আমি যতটা নিজে থেকে পেরেছি ,ততটাই করার চেষ্টা করেছি ।বাবার সাহায্য নিলে হয়তো জিনিসটা অত্যন্ত দেখতে ভাল হত।
আর তা আপনারা নিজেও বুঝতে পারতেন ।কিন্তু আমি একেবারেই শুধুমাত্র নিজে থেকে কিছু করব বলে বাবার সাহায্য নিইনি।আর বাবার সাহায্য নিলে হয়তো দেখাতে পারতাম না যে আমি এতদিন আমার বাড়িতে যা দেখেছি তার প্রভাবে মাথার মধ্যে কিছু তো অন্তত আইডিয়া রয়েছে, যে কিভাবে কি বানাতে হয়।

20211224_094714.jpg

কিছুটা আকৃতি আনার পর আমি পরের দিন কাজ করবো বলে কাজের ঘরে এই গাড়িটা আর শান্তা কে রেখে দিয়েছিলাম। বাবা যখন ওই ঘরে ঢোকে, তখন যখন এই কাজগুলো দেখে বাবা ভেবেছিল ঈশান হয়তো এগুলো বানানোর চেষ্টা করেছে ।সাথে সাথে ঘরের মধ্যে এসে সবাইকে জিজ্ঞেস করছিল যে কাজটা কে করছে। মা যখন বলল যে ঈশা কাজ করছে। বাবা তো অবাক। কিন্তু বাবা তখনও চুপ করেছিল। কোন কথা বলেনি ।বুঝতে পারছিলাম বাবার অভিমান কতটা হয়ে আছে।

20211224_094903.jpg

পরের দিন আবার কাজে বসে শান্তার চোখের অংশটা থেকে চেয়ারির এর সাহায্যে মাটি তুলে নিয়ে একটা গর্ত মত করলাম। যাতে চোখ বোঝা যায় ।তারপর আস্তে আস্তে মাটি রোল করে করে শান্তার দাড়ির জায়গাই বসানোর চেষ্টা করেছি। আমার কাজে বসার সময় চেয়ারি তো দরকার পড়ত। সাথে দরকার পড়তো জল আর মাটি। এভাবেই ধীরে ধীরে আস্তে আস্তে ভুরুর জায়গাটা করে নিলাম। আর চেয়ারির এর সাহায্যে আস্তে আস্তে করে মুখের অংশটা পরিষ্কার করতে থাকলাম ।এই কাজটা করতে আমার প্রায় দুই দিন সময় লেগে গেছে।
আমার মনে হয় শুধুমাত্র শান্তার মুখ ঠিক করতে আমার খাটনি বেশি হয়েছে। কিছুতেই মন মত হয়ে উঠছিল না। কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে খোঁচাখুঁচি করার পর তারপর গিয়ে একটা মুখের দর্শন এসেছে।

তৃতীয় ধাপ

তারপরে পরের দিনকে আমি চেয়ারির সাহায্যে গাড়িটাকে ভালোভাবে পরিষ্কার করলাম। জল দিয়ে আস্তে আস্তে গাড়িতে লাগিয়ে মাটির বাড়তি অংশ গুলো তুলে ফেললাম। তারপর গাড়িটাকে রোদে শুকাতে দিয়ে ,আমি শান্তার গাড়ি যারা টানে অর্থাৎ হরিণ বানানো শুরু করলাম। এই হরিণ বানাতে আমার প্রচুর অসুবিধা হয়েছে। প্রথম সব কাজ করার আগে আমি ভেবেছিলাম শুধুমাত্র শান্তাক্লস বানাবো। যখন আস্তে আস্তে সব হতে থাকলো। তখন আমি কেন হরিণটা ছেড়ে দেবো। তাই হরিণটা বানানো শুরু করে দিয়েছিলাম। কিন্তু হরিণ কিভাবে করে আর হরিণের পা কিভাবে বানায় ।এই নিয়ে প্রথম থেকে একটা চিন্তা ছিলো। যেহেতু বাবাকেও কোনো ব্যাপারে কোন কিছু জিজ্ঞেস করতে পারছিলাম না।

20211224_095213.jpg
নিজে নিজে মাটির সাহায্যে যেমন হরিণ দেখতে হয় অর্থাৎ কার্টুনে যেমন আমরা হরিণ দেখি ,ঠিক ওই ভাবে একটা আকৃতি আনার চেষ্টা করি। তারপর এর মুখের অংশটুকু চেয়ারির সাহায্যে আর মাটি দিয়ে ঠিকঠাক করতে লাগি। এই কাজ করতে আমার একদিন লেগে গেছে ।

কিন্তু আমি তো জানতাম না কাঁচা অবস্থা তেই হরিণের পায়ের জন্য একটু মাঝারি ধরনের মোটা তার ,পা যে জায়গা গুলোতে থাকে, সেখানে ঢুকিয়ে রাখতে হয়। আমার কাজ করার পর যখন জিনিসটা শুকিয়ে যায়, বাবা হঠাৎ ঘরে ঢুকে যখন ওরকম দেখে, আমাকে হঠাৎ নিজে থেকেই প্রশ্ন করে যে হরিণ যে করছিস ,তার পা কি করে করবি, পায়ের জন্য তার ঢুকাতে হয়। সেটা শুকনো অবস্থাতে তো ঢুকান যায় না। তখন আমার মাথায় হাত পড়ে।

20211224_095413.jpg

আমি আবার বাধ্য হয়ে নতুন করে হরিণ বানানোর শুরু করি, আর শুকোতে দেওয়ার আগে ,পা যে জায়গা গুলোতে থাকে ,সেই জায়গাগুলোতে প্লাস এর সাহায্যে তার কেটে কেটে ঢুকিয়ে দিই। তার গুলো কিন্তু ব্যাকানো যায় হাত দিয়ে অথবা প্লাস এর সাহায্যে। বেশি মোটা তার হলে কিন্তু তার বেঁকবে না।
তারপর আমি সেটাকে রোদে শুকোতে দিই। সাথে হরিণের মাথার হবে তার জন্য পাতলা ধরনের তার গুঁজে দিয়েছিলাম।

20211224_095812.jpg

চতুর্থ ধাপ

এবার পুরোপুরি যখন শুকনো হয়ে গেল সবকিছু ।আমি শান্তা আর শান্তার গাড়িটাকে আরেকবার পরিষ্কার করে নিয়েছি জলের সাহায্যে। তারপর হরিণের পা করতে মাটি দিয়ে দিয়ে তারের পাশে পাশে মাটির প্রলেপ লাগিয়েছি আর হরিণ গুলোকেও মাটি দিয়ে আর একটু নাদুসনুদুস করে তারপর শুকোতে দিয়েছি। আর তারপর একদিনের জন্য আবার সবকিছুকে রোদে রেখে দিয়েছিলাম।

20211224_095845.jpg

পঞ্চম ধাপ

যখন আমার সবকিছু রেডি হয়ে গেছে তারপর আমি রং করা শুরু করে দিয়েছি। হরিণ বানানোর সময় থেকে বাবা বেশ আমার কাজের দিকে মাঝেমধ্যে চোখ দিচ্ছিল এবং এটা ওটা ভুল হলে ভুল ধরিয়ে দিচ্ছিল। প্রথমে সাদা রংয়ের প্রাইমার নিয়ে ৩ চামচ জলের মধ্যে এক চামচ মত প্রাইমার গুলে আমি গাড়ি হরিণ আর শান্তাকে দুবার সাদা রঙের প্রলেপ দিয়েছি।

রং শুকিয়ে যাবার পর লাল রং এর ফেব্রিক দিয়ে আমি শান্তার গাড়ি রং করা শুরু করেছি।

20211224_095940.jpg

ষষ্ঠ ধাপ

তখনই হঠাৎ দেখলাম বাবা আমার জন্য কাঠের দোকান থেকে একটি কার্ডবোর্ড প্লাই এর ,সুন্দর করে বাঁধানো ,তৈরি করে নিয়ে এসেছে। যাতে আমি শান্তা এবং বাকি হরিণ গাড়িটাকে ঠিক ভাবে রাখতে পারি। এটা দেখে আমি খুবই আনন্দিত হয়েছিলাম যে বাবার রাগটা একটু কমেছে।

এবার আমি ক্রিসমাসট্রি বানাবো। তাই নিয়ে নিয়েছি সবুজ রঙের আর্ট পেপার। আর্ট পেপার টা কে স্কেলের মাপ অনুযায়ী ফোল্ড করে ঝিরি করে কাঁচি দিয়ে কেটে নিয়েছি।

আর একটা কুলফির কোণের মত জিনিস তৈরি করে নিয়েছি আর্ট পেপারের সাহায্যে আর আঠা দিয়ে।

20211224_100016.jpg

তারপর একটা ছোট সরু পাটকাঠির সাহায্যে আমি কাগজগুলো কে একটু রোল দিয়েছি, যেমন ক্রিসমাস ট্রি এর পাতা গুলো দেখতে হয়, সেরকম বানানোর জন্য।
আর তারপর ওই হলুদ রঙের কোণের পাশ দিয়ে আঠা দিয়ে পর পর নিচ থেকে ওপরের দিকে এই ঝিরিঝিরি কাগজগুলো কে বসিয়ে দিয়েছি।
আর এভাবেই তৈরি হয়ে গেছে আমাদের ক্রিসমাস ট্রি।

20211224_100034.jpg

সপ্তম ধাপ

এবার ক্রিসমাস ট্রি কিছুক্ষণের জন্য রেখে দিয়েছি, যাতে আঠারসাথে কাগজ গুলো ভালোভাবে সেট হয়ে যায়।
তারপর আমি আবার শান্তার জামাটা রং করেছি। সাথে গাড়ির পেছনের দিকে যে উপহারের বস্তা রয়েছে সেই বস্তা নীল রং করে দিয়েছি।

20211224_100117.jpg

অষ্টম ধাপ

তারপরে আমি ক্রিসমাস ট্রি এর ভেতরে একটা পাট কাঠি আঠার সাহায্যে ঢুকিয়ে দিয়েছি। দুটো গাছ এরকমভাবে বানিয়ে নিয়েছি ।আর তারপরে পাটকাঠির গায়ে বাদামি রং করে দিয়েছি ।যাতে গাছের ডালের মতো দেখতে লাগে।

20211224_100146.jpg

নবম ধাপ

তারপর আমি বাবা যে প্লাই এর কাঠের জায়গাটা এনে দিয়েছিল ,তার ঠিক এক ধার করে হাতুড়ির সাহায্যে দুটো পেরেক বসিয়ে দিয়েছি। যাতে পেরেক এর মধ্যে দিয়ে আমি গাছ দুটোকে বসাতে পারি আঠা দিয়ে। যাতে কোনোভাবেই গাছ দুটো ভেঙে পড়ে না যায় ।তাই জন্য পেরেক দুটো বসিয়ে দিয়েছি।

এই সময় আমি যখন ফেবিকল আঠা র সাহায্যে শান্তাকে এবং শান্তার গাড়িটাকে বসাবো, বাবা আমাকে একটা বুদ্ধি দিলো। এই প্রথমবার আমি এই জিনিসটা শিখলাম ।বাবা বলল সুতির একটা কাপড় কে কুচি কুচি করে কাটতে ,সেই মত কেটে নিয়েছি। আর তারপরে সেটার মধ্যে বাবা প্রায় তিন চার চামচ মত ফেবিকল ঢেলে দিতে বললো, ভালোভাবে কাপড় কুচি আর ফেভিকল কে মাখিয়ে নেওয়ার পর সেটাকে কার্ডবোর্ডের ওপর যেখানে শান্তার গাড়িটা বসাবো, সেখানে লাগিয়ে দিলাম ।আর তারপর শান্তার গাড়িটা বসিয়ে দিলাম। ঠিক একইভাবে শান্তার চেয়ারের ওপর ওরকম কাপড়ের প্রলেপ লাগিয়ে। শান্তা বসিয়ে দিলাম। এই কাজটা করাতে নাকি ব্যাপারটা অনেক শক্ত পোক্ত হল ।কোনভাবেই নাকি খুলে পড়ে যাবে না ।কাপড় দেওয়াতে আঠাটা আরো জোরালো হয়ে গেল।

আর পর প্রথমবার যে শান্তার গাড়ি রং করার সময় সাদা রংয়ের প্রাইমার রং দিয়েছিলাম, ঠিক একইভাবে এই কাঠের বোর্ডের ওপর সাদা রং করে নিলাম। এবং পেরেক এর মধ্যে আঠা দিয়ে বসিয়ে দিলাম দুটো ক্রিসমাসট্রি কে।

20211224_100316.jpg

নবম ধাপ

তারপরে আমি বোর্ডের ওপর ফেবিকল আঠা ভালোভাবে মাখিয়ে দিলাম। আর সিনথেটিকের তুলো আস্তে আস্তে বসিয়ে দিলাম পুরো জায়গাটা জুড়ে ।যাতে দেখে মনে হয় বরফ।

20211224_100355.jpg

তারপর সোনালী রং এর সাহায্যে শান্তার গাড়িটাকে আরেকটু আকর্ষণীয় করে তুললাম।

20211224_100512.jpg
এই কাজটা করার পর জিনিসটা এত সুন্দর দেখতে লাগছিল যে বলে বোঝাতে পারবো না।

দশম ধাপ

এবার আমি হরিণ গুলোকে সাদা রঙ করলাম। আর তারপরে হরিণের গায়ের রং অর্থাৎ একটু বাদামির সাথে একটু হলুদ রং মিশিয়ে হরিণের পুরো শরীরটাকে রং করে দিলাম ।তারপর ধীরে ধীরে হরিণের চোখের জায়গাটা রং করলাম ।সত্যিই চোখ দেওয়া অনেক কঠিন ব্যাপার। আর অনেক ধৈর্যের। যেন দম আটকে আসে।

20211224_100711.jpg

একাদশ ধাপ

তারপরে হরিণগুলো কে বোর্ডের মধ্যে বসিয়ে দিলাম। কিভাবে বসালাম সেটা নিয়ে একটু কথা বলি। হরিণের পায়ের নিচের অংশটা তার বের করা ছিল । তাই বোর্ডের ওপর চারটে ফুটো করে পরপর দুটো হরিণ বসিয়ে দিলাম ।সেইমতো তারটা বোর্ডের ভেতরে ঢুকে গেল ।তাই কোনভাবেই হরিণটা আর বাইরে পড়ে যাবে না। অথবা বেঁকে যাবে না।

তারপর কালারিং সোলার বল গুলো আঠা দিয়ে গাছের সাথে লাগিয়ে দিলাম যাতে দেখতে ভালো লাগে। আর বরফের ওপর কিছু ছড়িয়ে দিল।

20211224_100759.jpg

ব্যাস, তারপর একরাতের জন্য আমি পুরো ব্যাপারটা শুকানোর জন্য রেখে দিলাম যাতে সবকিছু ভালোভাবে সেট হয়ে যায়। এত পরিশ্রম করছি দেখে বাবা সত্যিই কোনো না কোনোভাবে ভেতর থেকে আনন্দ পেয়েছে ।যদিও মুখে কিছু বলেনি। কিন্তু বাবার মুখ চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল ।পরেরদিন সকালবেলায় বাবার পরিচিত যিনি কাচের বক্সের ফ্রেম বানান, তাকে ডেকে বাবা ঐ মাপের একটি বক্স বানিয়ে নিয়েছে।

20211223_112338.jpg

এভাবেই এত এত পরিশ্রম করার পর একটা সুন্দর জিনিস তৈরি হতে পেরেছে ।সত্যিই পরিশ্রম করলে ফল তো ভালো হবেই। আমি নিজে থেকে আমার নিজের কাজের ওপর বিশ্বাস করতে পারছি না যে কিভাবে এত ধৈর্য ধরে পুরো কাজটা করে ফেললাম। সব থেকে বড় কথা আমি আজ অব্দি মাটি দিয়ে কোনো কিছু তৈরি করিনি। এই প্রথমবার এই কাজটা করলাম আর সত্যিই এর জন্য আমি আমার কমিউনিটির প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।

কারণ কমিউনিটির এরকম প্রতিযোগিতা এরকম ইভেন্ট না থাকলে হয়তো এই উদ্যোগ নিয়ে আমি কাজটা করতে পারতাম না ।আর আমার বাবার সাথে যে মাটির কাজ নিয়ে মনোমালিন্য আছে তাও দূর হতো না।

IMG-20211224-WA0006.jpg

ফাইনাল ছবি

20211223_112341.jpg

আমার পরিবার

20211224_101241.jpg

আর সব থেকে বড় ঘটনা তখন ঘটল যখন আমার বাড়িতে হাজির হলো আনন্দবাজার এবং বর্তমান পেপারের রিপোর্টার ।দুজন আমার বাবার বন্ধু ।আমার কাজের প্রশংসা বাবা করেছিল তাদের কাছে ,তাই তারা একটা সাবজেক্ট পেয়ে আমার বাড়িতে এসে হাজির হয়। আর ছবি তুলে নিয়ে যায় ।আর সেই মতই পরের দিনকে এরকমভাবে খবরের কাগজে ছবি । যেটা আমার জন্য খুবই ইমোশনাল ছিল।

20211224_101113.jpg

পুরো কাজটা করে আমি যতটা আনন্দ পেয়েছি এবং তার ফলস্বরূপ আমি যা যা ফিরে পেয়েছি তা আমি ভাষায় প্রকাশ করে বলতে পারবোনা ।আমি জানিনা এর পরে কি হতে চলেছে। আপনাদের কতটা মন মন জয় করতে পারলাম সেটা আমি জানি না। তবে আপনাদের সকলের মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকলাম ।সকলের সুস্থতা কামনা করি ।সকলে ভাল থাকুন । কাজ করতে থাকুন। পরিশ্রম করলে অবশ্যই অবশ্যই ফল পাবেন ।আর মন দিয়ে কাজ করুন অবশ্যই ভালো কিছু হবে।

আজকের মতো এখানেই শেষ করছি এই ইভেন্টের জন্য আমার দ্বিতীয় অংশগ্রহণ।

@isha.ish

Sort:  
 3 years ago 

ইশাদী আপনি তো অস্কার পাবেন। আপনার যে টেলেন্ট এতদিন তো মনে করে ছিলাম শুধু আপনি গানের পাখি। আর মাঝে মাঝে ভাবতাম আমার ভূমিকা চাওলা প্রিয় একজন অভিনেত্রী। কিন্তু এখনতো দেখছি আপনি সত্যি কারের একজন চিত্রশিল্পী যা সত্যিই মনমুগ্ধকর ছিল। এবং কি আপনার ক্রিসমাস ডে উপলক্ষে অংশগ্রহণ করার জন্য যে আর্টিকেল তৈরি করেছেন সত্যিই প্রশংসনীয় ছিল। এবং সেইসাথে পত্রিকায় আসার ব্যাপারটা হাতে চাঁদ পাওয়ার মতন আমি মনে করি। সব মিলিয়ে আপনি অসাধারন একটি পোস্ট করেছেন এবং সেইসাথে বিস্তারিত। আপনার জন্য শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা রইলো।

 3 years ago 

হিহিহিহি,,, আসলে দাদা যখন যে কাজটা করি সেটা মন দিয়ে করার চেষ্টা করি। আর আপনাদের সবার ভালোবাসা সাথে আছে বলেই হয়তোবা সফলভাবে করে উঠতে পারি। অনেক ধন্যবাদ

 3 years ago 

আপনি অসাধারণ একটা জিনিস আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন আপু। আজ পর্যন্ত আমি যতগুলো মাটির জিনিস তৈরি দেখেছি আমার কাছে মনে হয় আপনার এই টি সবথেকে ভালো হয়েছে। প্রত্যেকটি ধাপ আপনি এত সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তা বলে শেষ করা যাবেনা। সবথেকে আনন্দের বিষয় এই যে আপনার এই জিনিসটি আপনি পত্রিকাতেও দিতে সক্ষম হয়েছেন। এটি দেখার পরে আমি সবথেকে বেশি খুশি হয়েছি। ধন্যবাদ আপু পরবর্তীতে এমন সুন্দর সুন্দর জিনিস আমাদের মাঝে শেয়ার করবেন।

 3 years ago 

অনেক ধন্যবাদ দাদা এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 3 years ago 

আপু আপনি কিন্তু আপনার বাবার লাইনে গেলে খুবই ভালো করতেন। আপনি নিজেও জানেন না যে আপনার আজকের শান্তা, শ্লেজ গাড়ি, হরিণ কতটা চমৎকার হয়েছে। আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে এটি আপনি বানিয়েছেন। পরে আপনার পোস্টটি পুরোপুরি পড়ে এবং বানানোর ধাপ গুলো দেখে বুঝতে পারলাম যে আপনি এটি বানিয়েছেন। এক কথায় অসাধারণ হয়েছে আপনার আজকের শান্তা, শ্লেজ গাড়ি, হরিণটি।

 3 years ago 

আসলে দিদি আগে থেকে অতটা ইন্টারেস্ট দেখাই নি বলে এখন কাজে যেতে নিজেরই কেমন সংকোচ লাগে। বাবা খুব অভিমান করে থাকে এজন্য আমার উপরে। দেখা যাক পরবর্তীতে কি হয়। ধন্যবাদ দিদি আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 3 years ago 

  • চোখ ধাঁধানো একটি কাজ হয়েছে আজকে। প্রথমে দেখে অনেকক্ষণ পর্যন্ত তাকিয়ে ছিলাম। আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে দিদি। আপনার অভিজ্ঞতা দেখে আমি হতভম্ব। আসলেই আপনি প্রশংসার পাওয়ার যোগ্য। শুধু আনন্দবাজার পত্রিকায় নয়। সকল পত্রিকায় আসার মত যোগ্য আপনার কাজ
 3 years ago 

আপনাদের এত সুন্দর মন্তব্য আমাকে আরও ভালো কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে দাদা। ভালো থাকবেন।

 3 years ago 

মাটি দিয়ে তৈরি শান্তা, শ্লেজ গাড়ি ও হরিণ অসাধারণ হয়েছে আপু। আপনার নিপুন হাতের কাজ আমাকে মুগ্ধ করেছে। সত্যি আপু আপনার কাজের প্রশংসা না করে পারছি না। আপনি অনেক সুন্দর করে প্রতিটি ধাপ উপস্থাপন করেছেন। আপু আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

 3 years ago 

ধন্যবাদ দাদা আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 3 years ago 

Screenshot_20211227-141110_Twitter.jpg

 3 years ago 

বাপকা বেটি
দিদি আপনার শিল্পকর্ম এবং ভাস্কর্য যদি এত সুন্দর হয় তাহলে আপনার বাবারটা কত সুন্দর হবে সেটাই চিন্তা করছি।

মাটি দিয়ে শান্তা শ্লেজ এবং ঘোড়াটা অসাধারণ তৈরি করেছেন। আমি যতগুলো দেখেছি এটাই একমাত্র ইভেন্ট রিলেটেড প্রজেক্ট ছিল। আমি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছি বলা যায়। অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি শিল্পকর্ম আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।।

 3 years ago 

বাবার কাজ দেখলে হা করে তাকিয়ে থাকি শুধু আমি। উনি অন্য জগতের মানুষ পুরোপুরি। আমি আমার বাবার এক কানিও এখনো হয়ে উঠতে পারিনি। খুব ভালো লাগলো এত সুন্দর মন্তব্য পেয়ে। ভালো থাকবেন দাদা

 3 years ago 

😍😍💖💖

 3 years ago 

আপু আপনার প্রতিটা হাতের কাজ আমার খুবই দারুন লাগে। আপনার ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে স্যান্টা ক্লজের মাটির ভাস্কর্যটি দেখে সত্যিই আমি মুগ্ধ। অসম্ভব সুন্দর করে বানিয়েছেন আপনি এই ভাস্কর্যটি। শিল্পীর থেকে আমি আপনাকে কোন অংশে তুলনা করতে পারছি না। এত দারুন একটি কাজ আমাদের মাঝে খুব সুন্দর ভাবে ধাপে ধাপে উপস্থাপন করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আপু।
আপনার অভিজ্ঞতা এবং আপনার কর্মের প্রতিক্রিয়া দেখে খুবই ভালো লাগছে। এভাবেই এগিয়ে যান সফলতা হাত ধরে, শুভকামনা আপনার জন্য।

 3 years ago 

অনেক ধন্যবাদ দাদা এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য। আপনাদের সুন্দর মতামত আমাকে ভালো কাজের উৎসাহ দান করে প্রচুর।

 3 years ago 

আমার চোখে দেখা সেরা ডাই গুলোর একটি ছিল এটি এতো লম্বা সুন্দর উপস্থাপন দেখিনি এর আগে। অসম্ভব দারুন এবং গুছিয়ে করেছেন প্রতিটা ধাপ আপু।সত্যি আপনি প্রশংসা পাবার মতো ডাই করেছেন।।অভিনন্দন আপু।

 3 years ago 

নিজের সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। অনেক ধন্যবাদ।

 3 years ago 

আপু,কিছু বলার মত ভাষা যেন হারিয়ে গেল। কি দেখলাম আমি। অনেক অনেক বেশি সুন্দর হয়েছে। আপনার কাজ দেখেই বুঝতে পারতেছি আপনি কতটা কষ্ট করে এই সম্পূর্ণ কাজটি শেষ করেছেন।

আর শেষের দিকে যে লিখলেন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে আপনার এই কাজটি, শুনে খুব ভালো লাগলো এটি। অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল আপু। আপনার এই কাজের প্রশংসা যতই করি কম হবে।

 3 years ago 

অনেক ধন্যবাদ দিদি। এভাবে সব সময় পাশে থাকবেন এবং উৎসাহিত করবেন

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.027
BTC 59944.92
ETH 2307.28
USDT 1.00
SBD 2.48