পর্দার পেছনের গল্প পার্ট - ৪ || ১০% বেনিফিট @shy-fox এর জন্য

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

নমস্কার বন্ধুরা ।আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন ।পর্দার পেছনের গল্প কিন্তু এখনও বাকি রয়ে গেছে। বাকী রয়ে গেছে মানেই হয়তো আপনারা বুঝতেই পারছেন কনটেস্টের জন্য আমাকে কতবার কত কি করতে হয়েছে। আর এগুলো করতে আমার যে আনন্দ লেগেছে আপনাদের বলে বোঝাতে পারবো না ।

20220130_085237.jpg

যেহেতু আগের দিন আমি খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধার ছবিটা তুলতে পারিনি ,তাই আবার পরেরদিন সকালবেলায় আমি রওনা দিয়েছিলাম ওই উদ্দেশ্যে। কিন্তু এবার ভোরবেলায় যাইনি, একটু বেলা করে গেছি ।এই ধরুন আটটা সাড়ে আটটা নাগাদ।

20220130_083932.jpg

আমাদের দুধওয়ালার পরিচিত একজন এর নাম হল ভবানী ।ভবানী জেঠুর বাড়িতে নাকি যেতে হবে ,দুধওয়ালা বলে রেখেছিলেন যে, আমরা যাব। যাওয়ার সাথে সাথেই গিয়ে দেখি ওনারা গুড় জ্বাল দিচ্ছেন ।সকালবেলায় খেজুরের রস নিয়ে এসে গুড় জ্বাল দিতে বসেছেন।

20220130_085715.jpg

ইনিই খেজুর গাছে উঠবেন এবং আমার ছবির জন্য কাজ হয়ে যাবে ।কিন্তু ওনার বাড়ি ঢোকার পর গুড় জ্বাল দেওয়া দেখে আমার আর ওখান থেকে নড়তে ইচ্ছা করলো না। আমি বসে রইলাম ।আর দেখতে থাকলাম , ওনারা কিভাবে গুড় জ্বাল দেন।

20220130_085720.jpg

যেহেতু অনেকেই বলে থাকেন কিছু কিছু লোক আছে যারা ব্যবসা করে, জ্বাল দেওয়ার সময় চিনি জল ঢেলে দেয়।আর এই জন্য পাঠালি গুলো খেজুরের গুড় গুলো একদম স্বাদ হয় না ।খেজুরের রসের যে আলাদা গন্ধ থাকে, সেটা একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়।

20220130_093803.jpg

তাই আমি খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলাম যে, ওনারা কিভাবে গুড় জ্বাল দিচ্ছেন ।যাওয়ার সাথে সাথেই তো দেখলাম যে একটা পাত্রের মধ্যে ওনারা রস ঢেলে দিলেন ।এবার সেটা যে খেজুরের রস কিনা সেটাও আমি পর্যবেক্ষণ করে ভালোভাবে দেখে নিয়েছি, যে ওটা একেবারেই খাঁটি খেজুরের রস ছিল ।

20220130_094748.jpg

ওই রসটা ওনারা একটা বড় পাত্রের উপর ঢাললেন। টিনের পাত্রটিকে ওনারা ওই মাটির উনুনের ওপর বসালেন আর যেভাবে রান্না করে সেভাবেই কাজ শুরু হল।

20220130_095027.jpg

আমি বসে বসে দেখতে থাকলাম ভালোভাবে। কাকুটির মেয়ে মাঝেমধ্যে এসে কাকুকে হেল্প করছিল। বেশ অনেকক্ষণ ধরে জ্বাল দিতে দিতে ঠিক যেমন ঝোলা গুড় তৈরি হয়, ঠিক ওই ব্যাপারটা চলে আসলো।

20220130_095224.jpg

তারপর ধীরে ধীরে জ্বাল দিতে দিতে গুড় আরো ঘন করা শুরু হল। ঘন হয়ে যাওয়ার পর ওই টিনের জিনিসটাকে ওনারা ছায়ার দিকে নামিয়ে রাখলেন অর্থাৎ একটা গাছের নিচে নামিয়ে রাখলেন দুজন মিলে ধরে। তারপর হাতা দিয়ে ঐ টিনের পাত্রের একটা দিকে গুড়ের মধ্যে ঘষতে শুরু করলেন।

20220130_095326.jpg

আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম যে ,এরকম কেন করছেন। ওনারা বললেন যে ,এর জন্য চিড় তৈরি হবে, গুড়ের ভেতরে যে দানা তৈরি থাকে, সেই দানা এই জন্যই তৈরি হয়। এইজন্য ঘষে ঘষে চিড় করতে হচ্ছে। ক্রমশ গুড় ঠাণ্ডা হতে শুরু করে দিল।আর দানা দানা ভাব হতে লাগলো।

20220130_095132.jpg

তারপর ওই খেজুরের রসের হাঁড়িগুলো কে এক জায়গায় রেখে ,প্রায় নয় দশটা হাড়ির ওপর একটা সাদা কাপড় ওনারা রেখে দিলেন। আর প্রত্যেকটা হাঁড়ির সাথে একটা করে ছোট ছোট দড়ি মুখে বেঁধে দিলেন। হাঁড়ির মতো অনেকটা বাটির মতো তৈরি হয়ে গেল। আর এভাবেই এক হাতা করে ওই কলসির উপর অর্থাৎ ওই বাটির মধ্যে করে গুড় দিতে থাকলেন কাকুটি।

20220130_095847.jpg

তারপর ধীরে ধীরে গুড় জমতে লাগলো। আর বাটির মত গুড় গুলো শক্ত হতে লাগলো। অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে এরকম হয়ে থাকে। ঠান্ডা না থাকলে গুড় গুলো ভালো জমবে না, গলে যাবে ।তারপর আস্তে আস্তে প্রায় কুড়ি মিনিট পর কাপড়ের মধ্যে থেকে এক এক করে আলতো আলতো করে গুড় গুলোকে বার করে নিল কাকু।

20220130_100346.jpg

তারপর খবরের কাগজে মুড়িয়ে দিল। আমি এখান থেকে কিনে নিলাম ।আমি দুশো টাকা করে তিন কেজি কিনেছি। এর মধ্যে এক কেজি আমি পাঞ্জাবে পাঠিয়েছি কুরিয়ার করে। পাঞ্জাবে কিছু কাছের মানুষজন রয়েছে আমাদের।আমার বাবার কাজের সূত্রে তাদের সাথে পরিচয় হয়েছিল, কিন্তু তারা এখন অনেকটাই আত্মিক হয়ে গেছেন। খেজুরের গুড় আমরা প্রতিবারই চেষ্টা করি ওখানে কুরিয়ার করার।

20220130_102153.jpg

এই ভাবেই কাজ হয়ে যাওয়ার পর বাকি যে গুড় ছিল অর্থাৎ ঝোলাগুড় যেটাকে বলে ,দানা দানা লিকুইড যেটা ,সেটা নিয়ে নিলাম এক কেজি মত। আমার ঠিক খেয়াল নেই তবে মনে হয় ১৫০ টাকা করে নিয়েছিল । কাজ হয়ে যাওয়ার পর বেশ দুপুর দুপুর হয়ে গেল ।কাকু দেখলাম উনুনের উপর খেজুরের রসের হাঁড়িগুলোকে উপর করে রাখছে। হ্যাঁ অবশ্যই ফাঁকা কলসি।

20220130_102559.jpg

কাকু বলল আমি যেন পাটালি গুড় গুলোকে মুরির মধ্যে রেখে দিই ,না হলে প্লাস্টিকের কৌটার মধ্যে রাখলে পাটালি গুড় গুলো গলে যাবে ।ওখান থেকে আমরা অন্য কাজে এগিয়ে গেলাম ।সেই ব্যাপারে কালকে আপনাদের সাথে শেয়ার করব ।আজকের মত এখানেই শেষ করছি। সকলে ভাল থাকুন। সুস্থ থাকুন।

20220130_102626.jpg

আশা করছি আপনাদের সকলের আমার আজকের পোষ্ট ভালো লাগবে।
নমস্কার।
@isha.ish

Sort:  
 2 years ago 

যাক আপনার কারণে অনেক কিছু জানতে পারলাম আজ।আমি আসলেই জানতাম না গুড় কি করে বানায়।

 2 years ago 

আমারও প্রথম অভিজ্ঞতা ছিল দিদি ।

 2 years ago 

পর্দার পেছনের আজকে যে পর্বটি চমৎকার ছিল ।খেজুরের গুড়ের সিস্টেমগুলো কি ভাবে করে । খেজুরের রস থেকে কিভাবে গুর তৈরি করা হয় এই ফটোগ্রাফি গুলো খুব সুন্দর ভাবে ধাপে ধাপ দেখে বুঝতে পেরেছি । কিভাবে খেজুর রস থেকে খুব সুন্দর ভাবে গুর তৈরি হয় । ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর ফটোগ্রাফি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ।

 2 years ago 

অনেক ধন্যবাদ দাদা। এভাবেই পাশে থাকবেন

 2 years ago 

এতো দেখছি জমে ক্ষীর । মানে ক্ষীর নয় কিন্তু আমার কাছে খাটি গুড় ক্ষীরের মতই।পুরো খাটি গুড় ।পুরোটা খুবি গুছিয়ে ফটোগ্রাফির মাধ্যেমে দেখালেন। খুবি ভাল লাগলো। এ বছর আমি বহু চেষ্টা করেও খাটি গুড় কিনতে পারিনি। প্রতিবার সামনে দাড়িয়ে গুড় বানিয়ে কিনে আনলেও এবার কেউ গুড় সামনে বানাতে রাজি হল না। মানে বুঝতে একটুও দেরী হল না। সত্যি বোন আপনি খুবি লাকী কারন খাটি গুড়ের সন্ধান পেয়েছেন। আমাদের এখানে গুড়ের মধ্যে আলু , আটা ইত্যাদি মিশিয়ে এবার বাজারের বারোটা বাজিয়ে ফেলেছে। এমন কি এবার একফোটা খেজুরের রস ও খাই নি ভয়ে । যাই হোক বোন সুন্দর একটি পোষ্ট করেছেন। ধন্যবাদ।

 2 years ago 

খাঁটি জিনিস পাওয়া বর্তমান বাজারে সত্যিই খুব কষ্টের। আমার সত্যি খুব খারাপ লাগলো শুনে দাদা, এত চেষ্টার পরেও ভালো গুড় না পাওয়ার জন্য। সুযোগ থাকলে আমিই পাঠিয়ে দিতাম দাদা 😔।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 58665.81
ETH 3153.57
USDT 1.00
SBD 2.44