বাসন্তী পোলাও রেসিপি ||১০% বেনিফিট @shy-fox এর জন্য
নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি সকলে ভাল আছেন।আমিও সুস্থ আছি। আবার অনেকদিন পর হাজির হয়েছি একটা রেসিপি নিয়ে। আজকে আমি শেয়ার করতে চলেছি ,কিভাবে খুব সহজে বাসন্তী পোলাও তৈরি করবেন ,তার পদ্ধতি।
আমি খুবই ভালোবাসি বাসন্তী পোলাও খেতে ।বিশেষ করে পুজোর দিন গুলোতে ,পূজামণ্ডপ থেকে এখন বেশিরভাগ জায়গাতেই এই বাসন্তী পোলাও বিতরণ করে প্রসাদ হিসেবে। আমাদের কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজো তে সব বারয়ারীতেই পোলাও প্রসাদ দেওয়া হয় ।আর সেখান থেকেই আমার এই খাবারের প্রতি একটা আকর্ষণ বলতে পারেন।
বাসন্তী পোলাও রেসিপি
যবে থেকে নিজে বানানো শিখেছি, মাঝেমধ্যেই বাড়িতে বানিয়ে ফেলি ।বাসন্তী পোলাও বানানো খুবই সহজ। এক একজন এক এক রকম ভাবে বাসন্তী পোলাও বানিয়ে থাকেন। আমি আজকে একেবারেই সাদামাটা একটা পদ্ধতি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করব। আর আশা করছি আপনারা ভালোভাবে এই রেসিপিটা শিখে নিতে পারবেন।
চলুন তাহলে দেরি না করে বাসন্তী পোলাও এর উপকরণ গুলো দেখে নেওয়া যাক-
সিরিয়াল নং | উপকরণ | পরিমাণ |
---|---|---|
১ | গোবিন্দভোগ আতব চাল | ৭৫০ গ্রাম |
২ | ঘি | পরিমাণ মতো |
৩ | জিরের গুড়ো | দেড় চামচ |
৪ | হলুদ গুড়ো | ১ টিসপুন |
৫ | লবণ | দেড় চামচ |
৬ | আদা বাটা | এক চামচ |
৭ | কাজু ও কিসিমিস | পরিমাণ মতো |
৮ | তেজ পাতা | ৩টে |
৯ | দারচিনি | ৬টা টুকরো |
১০ | লবঙ্গ | ৬টা |
১১ | শুকনো লঙ্কা | ৩ টে |
১২ | এলাচ | ৫টা |
১৩ | সাদা তেল | পরিমাণ মতো |
১৪ | চিনি | ২ কাপ |
১৫ | গরম জল | পরিমাণ মতো |
১৬ | আদা কুচি | ২চামচ |
প্রথম ধাপ
প্রথমে আমি ৭৫০ গ্রাম গোবিন্দভোগ চাল একটা বড় গামলার মধ্যে নিয়ে নিয়েছি ।আর ভালোভাবে জলের সাহায্যে চালটা কে কচলে কচলে ধুয়ে নিচ্ছি। যাতে কোন ময়লা না থাকে ,ভালোভাবে পরিষ্কার করে চাল টা ধুয়ে নিতে হবে। তারপর চালের মধ্যে জল দিয়ে চাল গুলোকে ভিজিয়ে রাখতে হবে অন্তত ৩০/৪৫ মিনিটের জন্য।
দ্বিতীয় ধাপ
তারপর চালগুলো জল থেকে ছেঁকে একটা থালার মধ্যে তুলে নিলাম ।আর জল যাতে একেবারেই ঝরে যায় ,তাই থালাটা একটু কাত করে রাখলাম ,চালের মধ্যে যেন বেশি পরিমাণে জল না থাকে ,সেটা খেয়াল রাখতে হবে। আর এইভাবে আরও ১৫ মিনিট রেখে দিলাম।
তৃতীয় ধাপ
এবারে একটা বড় গামলা মধ্যে জল থেকে ছেঁকে তোলা, সেই চালগুলো কে নিয়ে নিলাম আর দিয়ে দিলাম চার চামচ ঘি, দেড় চামচ জিরের গুড়ো,এক চামচ আদা বাটা, দেড় চামচ লবণ, আর এক ছোট চামচ হলুদ গুড়ো।
চতুর্থ ধাপ
চাল এর সাথে সবকিছুকে ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে, মাখিয়ে নিয়ে তারপরে এটাকে আমরা ঢাকনা দিয়ে দিচ্ছি। আর রেখে দিচ্ছি প্রায় দেড় ঘন্টার জন্য।
পঞ্চম ধাপ
গ্যাসে একটা কড়াই বসিয়ে দিলাম, একদম লো থেকে মিডিয়াম আঁচ রেখে এক চামচ ঘি দিয়ে দেব ।ঘি গরম হয়ে গেলে তার মধ্যে দিয়ে দেব কাজু কিসমিস।
আমি এখানে আমার ইচ্ছা মতো ব্যবহার করেছি, আপনারাও আপনাদের পছন্দমত পরিমাণের কাজু কিসমিস ব্যবহার করবেন ।অনেকেই কাজু কিসমিস বেশি পছন্দ করেন না ।তাই আমি এখানে সেরকম পরিমান নির্দিষ্ট করে দিলাম না।
তিন মিনিট মত ঘি এর মধ্যে কাজু কিসমিস হালকা করে ভেজে নিয়ে , একটা বাটিতে তুলে রাখলাম।
ষষ্ঠ ধাপ
এবারে আমার করাইয়ের মধ্যে এক চামচ মত ঘি ছিলই ,আমি আরো দুই চামচ ঘি দিয়ে দিলাম। আর সাথে দিয়ে দিলাম আরো দুই চামচ সাদা তেল। গরম হয়ে গেলে কড়াই এর মধ্যে দিয়ে দেবো শুকনো লঙ্কা, লবঙ্গ, দারচিনি, এলাচ, তেজপাতা। হালকা হালকা করে ভেজে নেব।এই সময়ে গ্যাসের আঁচ মিডিয়াম থাকবে ।
সপ্তম ধাপ
এবারে দিয়ে দেব দুই চামচ আদা কুচি। সেটাও হালকা হালকা করে ভেজে নেওয়ার পরে ,ঢাকা দিয়ে রাখা চাল এবার কড়াইয়ে সম্পূর্ণ ঢেলে দেবো। তারপরে খুন্তির সাহায্যে চাল হালকা হালকা করে ভাজতে থাকবো। প্রায় ৫ মিনিট মত খুন্তি নাড়তে হবে।
অষ্টম ধাপ
এবার তুলে রাখা কাজু ও কিশমিশ গুলো এড করে দেব।
নবম ধাপ
গ্যাসের আঁচ একদম লো তে দিয়ে, আরেক টি বারনার এ একটা ডেকচি বসিয়ে হাই আঁচে জল গরম হতে দিলাম।
দশম ধাপ
জল গরম হয়ে যাওয়ার পর ওই চালের মধ্যে এই জল দিয়ে দেব। জলের পরিমাণটা এমন হবে- চাল এর স্তর যেটুকুনি রয়েছে ,তা থেকে দুই কর অব্দি জল থাকে।
নীচের ছবিতে নিচের হলুদ দাগ যদি চালের স্তর হয়, ওপরের হলুদ দাগ অব্দি জল দিতে হবে।আপনারা আশা করি আইডিয়া করে কাজ টি ঠিক করে নেবেন।
জলের পরিমাণ বেশি দিলেও হবে না ,আবার কম দিলেও হবে না ।জল বেশি হয়ে গেলে চাল গুলো খুবই নরম হয়ে যাবে। সেটা আর পোলাও হবে না। হয়ে যাবে খিচুড়ির মত ।আবার জল খুব কম দিলে, পরে আবার আপনাকে জল দিতে হবে ।যদি সিদ্ধ না হয় ।একেবারে আমি যেমন ভাবে বললাম সেভাবে করে দেখবেন,তাহলে একদম ঠিক হবে।
একাদশ ধাপ
জল দেওয়ার পর এরমধ্যে আমি ২ কাপ চিনি দিয়ে দিয়েছি। আপনারা চাইলে আপনাদের পরিমাণমতো দিতে পারেন ।অনেকে পোলাও তে চিনি কম খায় ।আবার অনেকে বেশি। তাই এর পরিমাণ আমি নির্দিষ্ট করবো না।
এবারে ঢাকনা দিয়ে একবার লো থেকে মিডিয়াম আঁচে ৫ মিনিট রাখবো , তারপর আঁচ বাড়িয়ে মিডিয়াম করে দিয়ে ১৫ মিনিট রাখব।
দ্বাদশ ধাপ
১৫ মিনিট পর ঢাকনা তুললে অনেকটা নিচের ছবির মত আপনারা দেখতে পারবেন। এই সময়ে ঢাকনা তুলে রেখে গ্যাসের আঁচ একেবারে লো তে দিয়ে নাড়াচাড়া করে নেবেন, খুন্তির সাহায্যে পোলাও ওলট-পালট করে নেবেন।
এর ফলে যদি বাকি জল থাকে সেটাও শুকিয়ে যাবে এবং আপনার পোলাও কড়াই এর লেগে ধরবেনা ।এই সময় ভাত সিদ্ধ হল নাকি সেটাও আপনারা বুঝতে পারবেন ।সাধারণত পোলাওয়ের চাল খুব নরম হয় না ,সেটাও কিন্তু আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে।
ফাইনাল লুক
আশা করছি বুঝতে পেরেছেন পোলাও রান্না করা কতটা সহজ। শুধুমাত্র জলের পরিমাণ এর উপর আপনাদের গুরুত্ব দিতে হবে ।প্রথম প্রথম হয়তো আপনাদের এই রান্না করতে গিয়ে জল বেশি হওয়াতে একটু নরম হতে পারে ।আবার জল কম হওয়াতে শক্ত হতে পারে পোলাও। কিন্তু আপনারা করতে করতে আইডিয়াটা বুঝে যাবেন। আর যদি আমি যেভাবে বললাম সেই ভাবেই আপনারা জল ব্যবহার করেন। আমি আশা করব পোলাও একদম ঠিকঠাক তৈরি হবে ।
আশা করছি আমার আজকের এই পোষ্ট আপনাদের সকলের ভাল লেগেছে ।আপনাদের সকলের মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকলাম। সকলে ভাল থাকুন ।নমস্কার।
আপু আপনার পোলাও দেখে আমার সেই দিনের কথা মনে পড়ে গেল যেদিন আমি এত বেশি পোলাও খেয়েছি যে তার পরেরদিন কিছু খেতে পারিনি। তারপর রাতে ওষুধ খাওয়ার পরের দিন সুস্থ হয়েছিলাম। আসলে পোলাও আমার সবচেয়ে ফেভারিট। একে সামনে দেখলে লোভ সামলাতে পারিনা। ধন্যবাদ আপু আমার ফেভারিট জিনিস টা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য
হিহি, অনেক ধন্যবাদ নিজের অনুভূতি বলার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে দাদা।খুব ভালো লাগলো আপনার কমেন্ট পড়ে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
বাসন্তী পোলাও শুনেই ভালো লাগলো।আপু আপনার রেসিপি মানেই তো হিট রেসিপি। রেসিপিটি তো অসাধারণ লাগলো। খেতেও মনে হয় অনেক ভালো হয়েছে তাই না আপু। এত সুন্দর একটা রেসিপি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। সব সময় আপনার পোস্টগুলো অনেক ভালো লাগলো।
হ্যাঁ দিদি অনেক ভালো হয়েছে ,,অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
এটা হলো আপু?
একা একাই খাবেন? আমরা কই গেলাম?
😁😁
প্রথমত বলব রেসিপিটি দেখেই জিভে পানি চলে আসলো 😋😋।লোভ সামলানো খুবই কষ্টকর হয়ে গেছে।কিছুক্ষণের জন্য পোলাও এর জগতে হারিয়ে গিয়েছিলাম।যাইহোক আপু আপনার রেসিপিটি আসলে খুব সুন্দর ছিল। আপনি খুব সুন্দরভাবেই উপস্থাপনা করেছেন এতে আমাদের বুঝতে আরো সহজ হয়েছে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মনের মাঝে এত সুন্দর একটা রেসিপি শেয়ার করার জন্য আপনার জন্য। অনেক অনেক শুভকামনা রইল 🤗
বাড়ীতে অবশ্যই একদিন তৈরি করে দেখবেন দিদি। ভালো লাগবে। অনেক ধন্যবাদ।
আমি কখনো বাসন্তী পোলাও খাই নি।তবে আপনার রেসিপির ছবি দেখে খুব খেতে ইচ্ছে করছে।বাদাম, কিশমিশ সব উপকরন দেখে মনে হচ্ছে খাবারটা অনেক মজাদার স্বাদের হবে। ধন্যবাদ আপু সুন্দর এবং মজাদার রেসিপি শেয়ার করার জন্য।
হ্যাঁ খুবই সুন্দর খেতে এই পোলাও, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
বাসন্তী পোলাও নামটাই তো খুব সুন্দর, নাম শুনেই মনে হলো এটি বেশ দারুণ হয়েছে। সত্যিই দিদি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে এটি৷ খুব সুন্দর করে রান্না করেছেন আর উপস্থাপন করার পদ্ধতি অসাধারণ হয়েছে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে দাদা।
এইভাবে কখনো পোলাও রান্না করিনি।দেখেই মনে হচ্ছে অসম্ভব মজার হয়েছে।
একটু খেতে পারলে খুব ভালো লাগতো।
চলে আসো দিদি আমার বাড়িতে, আর নাহলে বাড়িতে একবার বানিয়ে দেখো দিদি।
বাসন্তী পোলাও আমার খুব ফেভারিট। এরকম পোলাওয়ের সাথে আলুর দম খেতে দারুন লাগে। আপনার পোলাওটি দেখে মনে হচ্ছে একটু টেস্ট করে আসি 🤭🤭।আপনি একদম ঠিক বলেছেন পোলাওয়ের জলের পরিমাণটাই আসল। জলের ওপরই ডিপেন্ড করে চাল কিরকম হবে। খুব সহজ ভাবে সুন্দর ভাবে প্রত্যেকটি ধাপ উপস্থাপন করে দেখিয়েছেন এতে সকলের বুঝতে সুবিধা হবে ।অনেক ভালোবাসা রইল আপনার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ দিদি , ভালো থাকুন।
আপু আপনার বাসন্তী পোলাও রেসিপি টি খুবই চমৎকার হয়েছে। আমার কাছেতো খুবই ভাল লেগেছে ।দেখে খুব খেতে ইচ্ছে করছে। লোভ সামলাতে পারছিনা। এই শীতের দিনে এধরনের পোলাও পেলে তো কোন কথাই নেই ।দারুণভাবে আপনি রান্নাটা করেছেন। প্রতিটি ধাপ চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করেছেন যা দেখে খুবই ভালো লাগলো ।ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর মজার একটি রেসিপি শেয়ার করার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, সত্যিই তাই, শীতের মধ্যে এই পোলাও আরই দারুন লাগে ।