একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা পার্ট - ২ || ১০% বেনিফিট @shy-fox এর জন্য

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

সেদিন নতুন অভিজ্ঞতার গল্প বলতে বলতে চুপ করে গিয়েছিলাম ।তাই আজকে সেই কথা জারি হবে।সেদিনকে রাতে হোম ডেলিভারি নিয়ে খাওয়া দাওয়া সারলাম। হোম ডেলিভারি দিয়ে গেল। কিন্তু খাবার দেখে এবং খেয়ে পেটটা ভরলো না। বাবা এবং পিসেমশাই কালকে দক্ষিণেশ্বরে পুজো দেবে বলে দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের পাশে চলে গেছে। ওরা ওখানে খাওয়া-দাওয়া করেছে। এদিকে আমি আর মা ডেলিভারি খাবার খেয়ে বুঝতে পারলাম যে হোম ডেলিভারি দেওয়া যাবে না। বরং নিজে রান্না করলেই ভালো হবে ।

এই বাড়িতে আসার পর থেকে আমার একটা দিদির সাথে খুব ভালোভাব হয়েছে। ও বাংলাদেশের রংপুর জেলার বাসিন্দা, আমাদের এই রবীন্দ্র ভারতী ইউনিভার্সিটি তে লোকগীতি নিয়ে পড়াশোনা করছে। আমার থেকে বয়সে দু বছরের বড় ।তবে ও মাস্টার্স করছে ।আর আমিও মাস্টার্স করছি। যাইহোক খুবই মিশুকে ও এবং খুবই ভালো। রাতের বেলায় কোন রকমে সমস্ত কিছু গুছিয়ে শুয়ে পরলাম। আমি ঈশান আর মা আমার ঘরে শুয়ে পড়লাম।

20220312_211259.jpg

আমি যে ঘরে থাকি ,ঘর বড়, মাঝে পার্টিশন দেওয়া ।আমি এক দিকটাতে থাকি আর অন্য দিকে তিনটে মেয়ে থাকে ।মাঝে পার্টিশনটা পুরোপুরি ঢাকা। শুধু একটুখানি ফাঁক রয়েছে উপর থেকে। কিন্তু আমার ঘরটা খুবই বড় এবং আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। সে নিয়েও আমি আগে বলেছি যে বাড়িটা কেন আমার পছন্দ হয়েছে ।

সকাল বেলায় ঘুম থেকে ওঠার পর সকাল সকাল ফ্রেশ হয়ে স্নান করে ফেললাম। মা অনেক আগে ওঠে। সেই মতে অনেক আগে উঠে পড়েছিল। ওদিকে বাবা ,পিসেমশাই চলে আসলো সকাল-সকাল পুজো দিয়ে। তারপরে আমি বাবা মা পাশের রুমের ওই দিদি টা আর এবং আমার পাশের রুমের বন্ধু সবাই মিলে আমরা চা খেলাম। গল্পগুজব শুরু হল ।সাথে শরিফা দির গান শোনা হল ।দিদি দুর্দান্ত লোকগীতি গায়। বলার ভাষা নেই। এত অপূর্ব গানের গলা এবং ভঙ্গিমা অসাধারণ ।

20220312_211002.jpg

তার পরে রেডি হয়ে সকালে ভাত-টাত খেলাম ।মা ভাত করেছিল যেহেতু এখানে রান্নাঘর আছে ।মা সমস্তকিছুই এনেছিল। সেই মতই করা হলো। ভাত খেলাম। আমাদের গাড়ি করেই বাবা নামিয়ে দিলো আমাকে আর দিদি কে কলেজে ।এদিকে আমি যতক্ষণে কলেজে ক্লাস করেছি ,বাবা মা আরও টুকিটাকি জিনিস পত্রগুলো কিনছিল। কলেজে ক্লাস চারটে নাগাত শেষে হলো ।বেরিয়ে আসার পরে থেকেই আমার মনটা ভেঙে পড়েছিল । কারণ বাবা-মা একটু পরে চলে যাবে ।

কলেজ থেকে নিয়ে আসলো আমাকে আর আমার পাশের রুমের আরেকটা মেয়েকে। আসার পরে কিছুক্ষন ওরা ঘরের মধ্যেই ছিল ।এটা ওটা নানান কথা বলতে থাকলো ।তারপর ঠিক পাঁচটা নাগাদ মা-বাবা পিশেমশাই বেরোনোর জন্য তৈরি হল। যখন থেকে ওরা বেরোনো অঙ্গভঙ্গি করছে আমার মনটা ভেঙে গেল ।আমি আর চোখের জল সামলে রাখতে পারলাম না ।সাথেই ঈশান এবং মা।এইভাবে ধীরে ধীরে তিন তলা থেকে নিচে নামলাম। সবাই নিস্তব্ধ ছিলাম ।মা গাড়িতে উঠে পড়লো। ঈশান এর মুখের যন্ত্রণা দেখার মত নয় ।ভেতরে কোথাও যেন সবকিছুই ভেঙে পড়েছিল। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না।

নিজেকে আটকে রাখতে পারছিলাম না। মা ক্রমাগত কান্নাকাটি করে যাচ্ছে। এইভাবে ধীরে ধীরে গাড়িটা ছেড়ে দিল, চোখের পলকে আমার চোখের সীমানা থেকে অনেকটা দূরে বেরিয়ে চলে গেল ওরা। আমি যেন এই পুরো জগতের মধ্যে একা হয়ে গেলাম। আমি একটুতেই খুব কান্নাকাটি করি ।এটা আমার ছোট বেলা থেকেই একটা বাজে অভ্যেস বলা যেতে পারে। সেই মতই কান্না কিছুতেই থামছে না।

20220310_212709.jpg

রুমে আসার পরপরই আমার পাশের রুমের মেয়েটা আমার ঘরে এসে বসলো। কিছুক্ষণ আমার সাথে সময় কাটালো এবং বলতে গেলে ওকে ধন্যবাদ জানাই যে ও এসেছিল ।আসাতে আমার মনটা কিছুটা ভালো হলো ।এরকম করতে করতে সন্ধ্যাটুকু পার হলো। তারপর রাতের বেলা আমি আর ঐ আমার শরিফা দি, দুজন মিলে রান্না করলাম ।ভাত আর ডিমের ঝোল ।দিদির সাথে প্রথমবার রান্না করতে বেশ মজা লাগছিল।

সব মিলিয়ে খুবই ভালো সময় কাটছিল। মাঝেমধ্যে মাকে ফোন করে খোঁজ নিচ্ছিলাম যে ওরা কতদূর পৌঁছেছে । ওরা বাড়ি পৌঁছানোর পর ঠিক রাতে শোয়ার আগে ভিডিও কল করল। ভিডিও কলে সবাইকে দেখে মনটা আবার ভেঙে গেল। কথা বলতে পারলাম না ।ভিডিও কল টা বন্ধ করে দিলাম ।কিছুক্ষণ আবার চোখ দিয়ে গঙ্গা-যমুনা বইলো।

তারপরে কিছুক্ষণ এটা ওটা করেও মনটাকে স্থির রাখতে পারছিলাম না ।সাথে সাথেই রাতে প্লান করে ফেললাম। কালকে বাড়ি যাব ,না হলে আমার মন ঠিক থাকবে না ।বন্ধুদেরকে ফোন টোন করে এটা ওটা শুনে জানতে পারলাম কালকে চারটে ক্লাসের মধ্যে মাত্র দুটো ক্লাস হবে। তাই আরো উত্তেজনা বেড়ে গেল যে ,কালকে সকাল সকাল উঠে ফ্রেশ হয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেব ।কিভাবে কিভাবে যেতে হবে ,কোথা থেকে কিভাবে যাব দমদম যাব। সবকিছু শোনা হয়ে গেল ।কটার ট্রেনে যাব সেটাও ঠিক হয়ে গেল।

রাতে বিছানায় শুতে না শুতেই ঘুমিয়ে পড়লাম। মাকে শুধুমাত্র ফোন করে একবার জানিয়েছি যে আমি কালকে বাড়ি আসছি ।মা শুনে অবাক ।কারণ আমি তো তাহলে দুপুরবেলায় ওদের সাথে বাড়ি যেতে পারতাম। এটা যদি আগে বুঝতাম ।কিন্তু আমার মন কিছুতেই স্থির থাকছিল না ।আর যেহেতু শনি-রবিবার ক্লাস থাকেনা, তাই আরো ভালো হলো।শনি রবিবার থেকে এটা ওটা কাজগুলো গুছিয়ে নেব ভেবেছিলাম।

বাবা বারবার বলেছিল যে প্রতি সপ্তাহের শনিবার করে বাড়িতে আসতে, কিন্তু আমি শুনছিলাম না ।ওরা চলে যাওয়ার পর থেকে বুঝতে পারলাম প্রতি সপ্তাহে আমাকে বাড়ি একবার যেতেই হবে ।না হলে মন ভালো থাকবে না ।

তাই সকাল বেলায় উঠে ,ছটার সময় স্নান করে , পুজো সেরে তারপর ধীরে সুস্থে সমস্ত কিছু বুঝিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। আমার বাড়ি থেকে মেনরোড রিক্সা করে গেলাম ,আবার মেইন রোডের উপর থেকেই বাস যাচ্ছিল দমদম স্টেশনের দিকে। তারপর ট্রেনে উঠে পড়লাম ।আর বাড়ির দিকে রওনা হলাম। ভেতরে ভেতরে যেটুকুনি মুহূর্ত বাড়ির জন্য মন খারাপ করেছে, বিশেষ করে মায়ের জন্য ,সে অনুভূতি সেই অভিজ্ঞতা একেবারেই প্রথম ছিল।

যাইহোক বাড়িতে গিয়ে পৌঁছলাম বেলা বারোটার আগে। শুক্রবার শনিবার টা থেকে রবিবার আবার ফিরে এলাম।আশাকরছি আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।আমার পোষ্ট কেমন লাগল অবশ্যই মন্তব্য করে জানাবেন ।সকলে ভালো থাকুন। নমষ্কার।

অনুভূতি গুলো শেয়ার করেছ়ি বেশি। তাই ছবি সেরকম তোলা ছিল না ।সে জন্য ক্ষমা চাইছি।

@isha.ish

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 62816.09
ETH 2466.13
USDT 1.00
SBD 2.64