মা মহামায়া মন্দির নিয়ে আলোচনা||কৃষ্ণনগর||১০%বেনিফিট @shy-fox এর জন্য।
নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন। প্রতিবছর এর মত ১০ই অক্টোবর অর্থাৎ গত কাল সকালে আমাদের শহরের একটি অতি প্রাচীন দূর্গা মা এর মন্দিরে পূজা দিতে গিয়েছিলাম। তারই কিছু মুহূর্ত এবং কিছু তথ্য আপনাদের সকলের সাথে আজ শেয়ার করছি।
মা মহামায়া
মানচিত্রে -
9GF4+4F Dogachhi P, West Bengal
মহামায়া মন্দির
https://maps.app.goo.gl/zGAEhdkTDDDg2ubq8
মন্দির টি ১০০ বছরেরও বেশি পুরনো। আমাদের শহরের বাসিন্দাদের কথা অনুযায়ী মন্দিরটি ভীষণ জাগ্রত। আশেপাশের লোকালয় থেকে জানতে পারা যায়, বহু বছর আগে কামাখ্যা মন্দিরের একজন নাগা সাধু কৃষ্ণনগরে এসেছিলেন ।তিনি স্বপ্নে মা দুর্গার দর্শন পান ।মায়ের আরাধনা করতেন তিনি ।আর তার হাতেই এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই মন্দিরটি দুই ভাগে বিভক্ত বলা যেতে পারে ।আসল যে মন্দির ,যেখানে প্রথম মায়ের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ,সেটি বেশ গভীর জঙ্গলের ভিতরে ।চারিদিকে সারিসারি বাঁশ গাছের বন ।তার মাঝখান দিয়ে রাস্তা ।দুই ধারে উঁচু হয়ে আছে মাটি। লোকজন চোখের নজরে আসবে না এমন একটি জায়গা। জমির পর জমি বাঁশঝাড়ে ঘেরা ।তারি মাঝখানে রয়েছে সেই অতি প্রাচীন মন্দির যা সেই সাধু প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ।
এই ছবিটি ২০১৮ তে তোলা
সাধু মৃত্যুর পর তার পরিবারের লোকজন এবং আমাদের কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় এই মন্দির এর পুনর্নির্মাণ করেন জঙ্গলের বাইরে রাস্তার পাশেএই জায়গাটিতে ।তাই মন্দির এর দুই অংশ বলা যেতে পারে -একটি জঙ্গলের ভিতরে ,একটি একদম রাস্তার পাশে ।লোকালয়ের মানুষ এবং বহু দূর থেকে মানুষের সেখানে পুজো দিয়ে যান। তারা সকলেই এই মন্দিরের প্রতি খুবই নিয়োগী। মায়ের আরাধনার মাধ্যমে তাদের বহু সুবিধার সমাধান হয়েছে বলে জানা যায় ।
এখানে বলে রাখি ,আমি মাত্র দুইবার ভেতরের আসল মন্দিরটিতে দর্শন করেছিলাম। কারণ ভেতরের মন্দিরটিতে সহজে সচরাচর সেভাবে কেউ প্রবেশ করে না। জায়গাটি এমনই বলা যেতে পারে ,আপনি ওখানে গেলে আপনার শরীর ভারী হয়ে আসবে। কেন এই অনুভূতি হয় আমি আদৌ জানিনা ।আমি আমার একেবারেই ছোটবেলায়,তখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি তখন একবার ভেতরের মন্দির দর্শন করেছিলাম ।তখন সেই মন্দিরের অবস্থা একেবারেই খুব শোচনীয় ছিল। একটা বেড়া দিয়ে জাস্ট মন্দিরটিকে ঘেরাও করা ছিল। ভেতরের মন্দিরটি এখন ইট পাথর দিয়ে বাঁধানো হয়েছে। আমি ২০১৮ তে আরেকবার গিয়েছি। তো সেই একই রকম অনুভূতি হয়েছে। আর মন্দির যারা দেখাশোনা করেন এবং ব্রাহ্মণ ছাড়া ভেতরের মন্দিরে সচরাচর কেউ প্রবেশ করেন না ।তার পেছনে কোনো কারণ অবশ্যই আছে ।সেগুলো নিয়ে আমি এখানে আলোচনা করতে চাইছি না।
সাধারণত মা দুর্গার দশটা হাত আমরা লক্ষ্য করি। কিন্তু এই মন্দিরের যে মূর্তিটি আপনারা লক্ষ্য করছেন ।সেই মূর্তির হাত আঠেরো টি ।মূর্তিটি ৬০ বছরের পুরনো মাটির মূর্তি ।দেখলে মনে হয় মূর্তিটি পাথরের ।তবে সামনের যে কালী মূর্তি দেখতে পাচ্ছেন, সেটি পাথরের মূর্তি ।মায়ের সামনে বিরাট বড় যে কলসি রয়েছে ট নাকি মোহরে ভর্তি শোনা যায়।
সব থেকে বড় কথা তথ্য আমরা যা তথ্য পেয়ে থাকি ,তার সবটাই যে সঠিক হবে ,অথবা সবটাই যে মিথ্যা হবে ,তার সিদ্ধান্ত এবং ফাইনাল একটা মন্তব্য আমরা করতে পারি না ।কারণ পুরাতন সব কিছুর সাথেই জড়িয়ে রয়েছে বহু ইতিহাস ,যেগুলো আমাদের সংস্কৃতি এবং লোকসমাজের ও চোখের বাইরে ।তেমনই এই মন্দিরের সাথে জড়িয়ে রয়েছে বহু ঘটনা বহু চমৎকার স্মৃতি।
আমি মনে করি ভগবান /আল্লাহ /ঈশ্বর -আমরা যে নামেই ডাকি সেটি আসলে কোন রূপ নয়। কোন চরিত্র নয় ।সেটি একটি শক্তি। একটি শুভশক্তি।
শক্তি ছাড়া এই পৃথিবী, পৃথিবী নয় ।এই জগত মহাবিশ্ব শক্তি ছাড়া কিছুই নয় ।আজ যা করছি, যা হচ্ছে ,বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জুড়ে যা হয়ে আসছে তা শক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আমাদের চারিপাশে যা কিছু আমরা দেখছি এবং আমরা নিজেরাও যা করছি সবকিছুই শক্তির ছায়ায়। তাই এই শুভশক্তি যা কিনা আদিশক্তি যা আপনাদের ডাক অনুযায়ী কারোর কাছে মা দুর্গা ,কারোর কাছে কৃষ্ণ , কারো কাছে আল্লাহ ,কারো কাছে ঈশ্বর ।
আমার এতগুলো কথা বলার কারণ হচ্ছে আমি লক্ষ্য করেছি, আর আশা করছি আপনাদের অনুভূতি হয়েছে কারো না কারো যে, কিছু কিছু জায়গায় এমন থাকে যা আমাদের অনেক কিছু অনুভব করায়। কিছু জায়গা ভালো অনুভব করায় ।কিছু জায়গা খারাপ অনুভব করায়। এই মন্দিরের কি আছে, কি ছিল ,এই মন্দিরের চমৎকার কি ,তার পেছনের গল্প কি, তা নিয়ে আমি আলোচনা করতেও চাইনা। আর আমি করব না।
তবে আমি অনুভব করেছি মন্দিরে শুভশক্তি বিরাজমান। আর এই শক্তি আমাদের জীবনের অগ্রগতির জন্য আমাদের আশীর্বাদ করে চলেছে। আর আমি সেই শক্তির পূজারী ।এমন একটি জায়গা যেখানে মাথা নত হয়ে যায় ।শরীর ক্লান্ত হয়ে যায় ।শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়। মনে হয় সেই শক্তির শরণাপন্ন হয়ে কিছুক্ষণ জগত ভুলে নিরবে থাকি। এমনই শান্ত করে দেওয়া একটি জায়গা এই মন্দির অঞ্চল।
আশেপাশের লোকালয় বেশি হলেও মন্দিরের ভেতর টি এতই শান্ত এবং এতই মনোরম তা আমি বলে বোঝাতে পারবো না। আমার প্রার্থনা, যে শক্তি আমি বিশ্বাস করি সেই শক্তি আপনাদের সকলের মঙ্গল করুক। জগতের মঙ্গল করুক আপনাদের প্রতি পদে পদে শক্তি প্রদান করুক ।আপনারা সুস্থ থাকুন। ভালো থাকুন।
নমস্কার।
@isha.ish
আপু প্রথমে আপনাকে শারদীয় শুভেচ্ছা রইল।
আপনি অনেক সুন্দর করে কৃশ্ন নগর এর অনেক তথ্য শেয়ার করেছেন।গোপাল ভার কার্টুন এর মাধ্যমে আমি কৃশ্ন নগর কে চিনি সরাসরি দেখার খুবই ইচ্ছা আছে।
আপনাকেও অনেক শুভেচ্ছা। ধন্যবাদ আমার পোস্টটি পড়ার জন্য। ভালো থাকুন।
জায়গাটি খুব সুন্দর তো!
একদম গ্রামীণ পরিবেশ,খুবই মনোরম।
আসলে সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস এটা আমাদের আলাদা একটা শক্তি দেয়,যা মানুষ মতে ভিন্ন ও হতে পারে।
আমি দোয়া করি আপনি যেনো সবসময় ভালো থাকেন।
একদম ঠিক বলেছেন দিদি। এত সুন্দর ভাবে মন্তব্য করেছেন,ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে।
তুমি জানো আমার ভোলা রোগ আছে। আমার জন্য প্রতি বছর যাও মায়ের মন্দিরে,, মন্দির নিয়ে সব বিস্তারিত আগেও বলেছিলে, বিশ্বাস করো ভুলে গেছিলাম। আজ আবার মনে পড়লো সব টা। জয় মা 🙏🙏❤️