মামার বাড়ির আবদার || ১০% বেনিফিট @shy-fox এর জন্য
নমস্কার বন্ধুরা ।আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। আমিও ভালো আছি ।চলে এসেছি আজকে নতুন ধরনের পোস্ট নিয়ে ।আজকে আমি একটু গল্প করবো আপনাদের সাথে ।আমার মামার বাড়ি আমার বাড়ি থেকে অনেক দূরে, বলতে গেলে ২৯৫কিমি, রায়গঞ্জ এর আগে দূর্গাপুর এর কমলাই গ্রাম।
আর এই এতখানি রাস্তা পার করতে আগে সময় লাগতো প্রায় আট ঘণ্টার কাছাকাছি, তার বেশি তো কম না। রাস্তা একসময় খারাপ ছিল প্রচন্ড ।আর সাথে কালিয়াচকের ওখানে যে পরিমাণ জ্যাম হতো, তাই সবকিছু লেট হয়ে যেত।
লাল আলু
কিন্তু বর্তমানে এই রাস্তা আমরা পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যেই সম্পূর্ণ করতে পারি ।যদি ভোরবেলা বের হই ,তাহলে পাঁচ ছয় ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যায়। আর রাস্তার হাল এখন অনেকটাই ভালো ।ফ্লাইওভার করে দেওয়াতে মালদাতে জ্যাম হয়না ।কিন্তু আমাদের কৃষ্ণনগর থেকে বহরমপুর টোল ট্যাক্স অব্দি রাস্তা আবার প্রচন্ড খারাপ।
ছোটবেলা থেকেই মামার বাড়ি যাওয়ার জন্য একটা বিশাল আনন্দ কাজ করতো । এত দূরে মামার বাড়ি হওয়াতে সমস্ত কাজের প্রেসার, পড়াশোনার চাপ ,সবমিলিয়ে বছরে শুধুমাত্র একবার মামার বাড়ি যেতে পারতাম।
এখনো ঠিক এমনটাই হয় ।বছরে দুবার কখনই মামার বাড়ি যাওয়া হয়ে ওঠেনি। এত দূরের রাস্তায় জার্নি করার পরেই ,অন্তত যাওয়ার দিন আর তারপরের দিন শরীর টাল খেত।কিন্তু আমার ভারি মজা হত ,আবার কখনো কখনো আফসোস হতো ।
মজা এই অর্থে যখন আমরা মামার বাড়ি যাই বেশ আনন্দ করতে করতে যাই, আর বছরে একবার যাই ,তাই যেন মনে হয় কোথাও ঘুরতে যাচ্ছি ।আর আফসোস হয় এই অর্থে যে সবার দেখি মামার বাড়ি বেশী দূরে নয় ,বেশিরভাগ মামার বাড়ি সেই শহরে ,অথবা সেই জেলায় ,কারোর তো আবার কুড়ি মিনিটের মধ্যেই মামার বাড়ি।
দু বস্তা চাল
আর আমার মামারবাড়ি এত দূরে থাকায়, এই যে আমি কথাটা বললাম "মামার বাড়ির আবদার " সেটা থেকে বঞ্চিত থাকি সারাটা বছর। ওই যখন মামার বাড়ি যাওয়া হয়, তখনি আদর আপ্যায়ন পাওয়া হয় ।আমার মামার বাড়ি গ্রামে ।যৌথ পরিবারের আদলে তৈরি বাড়ির ভিটে। বাড়ীঘরগুলো চারিদিক দিয়ে আর মাঝখানটায় একটা বড় উঠোন।
তুলাইপাঞ্জি চাল
গ্রামের পরিবেশটা এতই ভালো আর যেহেতু গ্রামের সবকিছুই টাটকা পাওয়া যায় ,এই ব্যাপারটা আমার খুব ভালো লাগে। প্রতিবার মামারবাড়ি গেলে আমি খাই খাই বেশি করি ।মামি যা রান্না করে, তাই খেতে ভালো লাগে ।আর যা যা রান্না হয় তা হয়তো পাশের ক্ষেতের ফসল অথবা নিজস্ব জমির ফসল। সাথে মাছ, মাংস সবকিছুরই যেন একটা টাটকা ছোঁয়া আছে।
মামার বাড়িতে মামির হাতের রান্না ভালো লাগার কারণ হলো, ওখানকার আলুগুলো সাংঘাতিক খেতে ।প্রতিটি তরকারিতে আলু তো দিতেই হয় ।আর আলু খেতে যে কি পরিমানে টেস্টি লাগে ।একেবারে আলাদা। আর আমাদের এখানে আলুর কোন স্বাদ পাওয়া যায়না ।শীতকালের ফুলকপির কোন স্বাদ নেই ।পুরো ভেজাল দুনিয়া তৈরি হয়েছে।
মামীর জমির কলাই এর ডাল
আর আপনারা হয়তো কেউ কেউ জেনে থাকবেন উত্তরবঙ্গের দিকে এক ধরনের চাল বিখ্যাত, বিশেষ করে রায়গঞ্জে। এই চালের নাম তুলাইপাঞ্জি চাল। এতই অপূর্ব এই চাল যে না খেলে বলে বুঝাবার নয় ।আমি এই চালের ভাত খেতে খুব পছন্দ করি। এই চাল দিয়ে ফ্রাইড রাইস অথবা পোলাও বানানো যায়।
আমাদের বাড়ির পরিচিত এক ড্রাইভার কাকু আছে ,আমাদের গাড়ি যখন কেনা হয়নি ,উনি তখন থেকে একজনের স্কোরপিও চালাতেন, তখন ওনার গাড়ি করে যাতায়াত করতাম আমরা, আমি তখন খুব ছোট ।তাই ওনার সাথে আমাদের বাড়ির একটা ভালো সম্পর্ক রয়েছে। উনি মাঝেমধ্যেই কাজের জন্য মালদা এবং রায়গঞ্জের দিকে যান ।তাই সেই সূত্রেই আমার মামার বাড়ি থেকে মাঝেমধ্যে এটা ওটা পাঠিয়ে দেয় ওনার গাড়ি করে।
যেহেতু কাকুর গাড়ি ফাঁকা থাকে ,তাই আনতে অসুবিধা হয় না কোনো জিনিস।এক এক সময় জিনিসের সাথে সাথে মামার বাড়ির লোকজনও চলে আসে। হিহি। কিছুদিন আগে সেই কাকু রায়গঞ্জে যাওয়ার আগে বাবাকে ফোন করে বলেছিল যে সে ওদিকে যাচ্ছে, মামা কে যখন জানানো হয়, জানতে পেরে ছোটো মামা তুলাইপাঞ্জি চাল কুঁড়ি কেজি ,খাবার চাল ২৫ কেজি বস্তা ধরে কিনে রেখেছিল, আর আমার বড় মামি নিজের জমির কলাইয়ের ডাল প্যাক করে রেখেছিল ,সাথে নিজে হাতে বরি দিয়েছিল ,সেটাও।আর মামীর বাপের বাড়ির আলুর ক্ষেত থেকে এক বস্তা আলু পাঠিয়েছে ।এই আলুগুলো লাল আর ছোট ছোট ।এরকম আলু সব জায়গায় পাওয়া যায় না। আর এসব ড্রাইভার কাকু আসার সময় নিয়ে এসেছে।
অনেকের জানতে ইচ্ছে হতে পারে তুলাইপাঞ্জি চাল এর দাম কত, এই চাল ১০৮ টাকা করে কেজি ওখানে ।এই চল আমাদের এদিকে পাওয়া যায় না।আমাদের এখানে চালের দাম যতই বেশি হোক সে রকম টেস্টি হয় না ।আমাদের বাড়ীর চাল যেটা কেনা হয় ,সেটা ৬০/৭০ টাকা করে কেজি, তাও আমার কেন জানি না মামার বাড়ীর চাল টা বেশি ভালো লাগে। তাই মামা বাড়ি থেকে ২৫ কেজি খাবার চাল পাঠিয়েছে। সেই চালের প্রটিকেজির দাম ৪০ টাকা করে।
আর কুড়ি কেজি লাল আলু পাঠিয়ে দিয়েছে। আজকে কাকু কৃষ্ণনগরে ফিরেছে এবং বাড়িতেই সমস্ত জিনিস পৌঁছে দিয়েছিল। আমি ভীষণ খুশি এসব দেখে। কারণ বিশেষ করে মামারবাড়ির আলু আর চালটা দুর্দান্ত হয় ।তাই জন্যই আমি পোস্টের টাইটেল মামার বাড়ির আবদার দিয়েছি ।
আমার মামার বাড়িতে ছোট মামা ,ছোট মামী ,তাদের মেয়ে আর দিদা আর বড় মামি ,বড় মামির দুই মেয়ে রয়েছে। বড় মামা ২০১৭ সালে গত হয়েছিলেন ।বড় মামার কাছ থেকে আরো বেশি আবদার পেয়েছি ।যেভাবে মাথায় তুলে নিয়ে থাকতেন মামা বাড়ি গেলে,,সবাইকে কে কি খাবে, সেই নিয়ে যেন বড় বড় মামার টানাটানি লেগে থাকত।
মানুষটার কথা মনে হলে আজও মন খারাপ করে। কিন্তু সময় সময়ের তালে চলে ।মামার বাড়ি একই রকম রয়েছে ।আজও মামার বাড়ি গিয়ে বড় মামীর হাতের রান্না খেয়ে অমৃত খেয়েছি বোধ হয়। আপনাদের সকলের সাথে গল্প গুলো শেয়ার করতে পেরে ভালো লাগলো। সকলের সুস্থ থাকুন। ভালো থাকুন।
তুলাইপাঞ্জি চালের নতুন করে নাম শুনলাম।তবে,আপনার মামার বাড়ির যাত্রাকাল অবশ্যই সকালে করা দরকার। একদিকে দূরের পথ অন্যদিকে জ্যাম।যাইহোক,আপনার মামার বাড়ির আবদার কিন্তু খুবই ভালো ছিলো।যদিও কথায় কথায় আমরা বলি,মামার বাড়ির আবদার নাকি যে চাইলেই পাওয়া যায়।সত্যিই খুবই ভালো লিখেছেন।ধন্যবাদ, আমন্ত্রন রইলো।
অনেক ধন্যবাদ দাদা সুন্দর করে মন্তব্য করার জন্য। ভালো থাকুন।
আপনাকেও ধন্যবাদ, আমন্ত্রণ রইলো।
বলা হয়ে থাকে মামার বাড়ি রসের হাড়ি। কথাটি একদম মিলে যাচ্ছে আপনার পোষ্টের মাধ্যমে। আপনি আপনার মামার বাড়িতে অনেক সুন্দর সময় কাটিয়েছেন। যদি আপনার মামা অনেকদিন আগেই গত হয়ে গিয়েছে। মামার বাড়ি যাওয়ার রাস্তা খারাপ হলেও সেখানে গিয়ে আপনি অনেক সুন্দর মুহূর্ত উপভোগ করেছেন। আপনার সুন্দর মুহূর্ত গুলো আমাদের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
দাদা পোষ্ট টা একটু ঠিক করে পড়ুন, আমি মামার বাড়ীতে গিয়েছি, সময় কাটিয়েছি, এমন না , পোস্ট এর টপিক একটু আলাদা , ভালো করে পড়লে বুঝবেন হয়তো।
বুঝতে পারলাম আপনার মামা বাড়ির সব জিনিসই ফ্রেশ। আসলে শহরের মানুষের মধ্যে যেরকম ভেজাল প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে গ্রামের সহজ সরল মানুষ গুলো এখনও তার থেকে অনেকটাই দূরে। তাই প্রকৃতির কাছাকাছি সবকিছু একদম সজীব পাওয়া যায়। আর দুরে হওয়াতে মনে হয় মজাটা একটু বেশিই হয়। আমার নানু বাড়ি একদম কাছে তাই আমার কাছে ডাল-ভাত হয়ে গেছে। শুভকামনা আপনার জন্য
প্রকৃতির কাছে না গেলেও হবে দাদা, আমার নিজের কাছেই একটা আস্ত সজীব@roy.sajib আছে, হিহি,
আমার আগে কোন আইডিয়া ছিলো না তুলাইপাঞ্জি চালের ব্যাপারে, তাছাড়া দাম দেখেই বুঝা যাচ্ছে চালটি কতটা জনপ্রিয়। তবে আমার মামার বাড়ী খুব কাছে ছিলো, প্রায় প্রতিদিনই আমি যেতাম এবং আপনার দেখে বেশী আবদার করার সুযোগ নিতাম, হা হা হা। আপনার বড় মামা স্বার্গবাসী হোন এই দোয়া করি। ভালো থাকবেন।
অনেক ধন্যবাদ দাদা, আপনার মন্তব্য পড়ে আমার খুব ভালো লাগে দাদা, অনেক অনেক ভালোবাসা নেবেন দাদা ছোটো বোনের থেকে।
দিদি,আপনার আজকের এই পোস্টটি একদমই ভিন্ন৷ আর আমি ছবি দেখে ভাবলাম এটা কি হতে পারে,আবার টাইটেল এ দেখি অন্যকিছু। তবে সবটা পড়ে ভালোই লাগলো। আমার মামার বাড়ি যেতে ৫০ মিনিট বা ১ ঘন্টা লাগে। আর আগে যেমন যেতাম এখন তো বিয়ে হওয়ার পর আর যাওয়াই হয় না।আমি সবচেয়ে বেশি আদর পেয়েছি আর এখনও নানু বলে যেতে।ভাবতেছি কিছুদিন পর যাব। মামার বাড়িতে সত্যিই আবদার করতেও ভালো লাগে,কারণ সেটা পূরণ হয়ে যায়।
হ্যাঁ, মামার বাড়ি আসলেই সবার জীবনের একটা বিশেষ জায়গা।
বড় মামার কথাটি পড়ে খারাপ লাগলো।তবে কি আর করার।যে চলে যায় তার স্মস্মৃতি গুলোই থেকে যায়। তবে এতো জিনিস দেখে আমার আবার যেতে ইচ্ছে করছে।
সেটাই দিদি, তবুও এই স্মৃতি গুলোই বেঁচে থাকতে সাহায্য করে।
চলে আসুন দিদি। মজা হবে।