তীর্থস্থান ভ্রমণ এর গল্প - পাগলা খালি ||১০% বেনিফিট @shy-fox এর জন্য

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

নমস্কার বন্ধুরা ।আশা করি সকলে সুস্থ আছেন। আমিও ভালো রয়েছি। পরীক্ষার কিছুদিন আগেই একটি তীর্থস্থান ঘোরার সুযোগ হয়েছিল। এই জায়গাটি সম্পর্কে আমি বহু বছর ধরে আমার আশেপাশের পরিচিত মানুষদের মুখে অনেক গল্প শুনেছি। কিন্তু যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে তো যাওয়া হয়না। সময় সবকিছুতেই ভারী হয়ে পড়ে।

20220131_110527.jpg

লোকে বলে নাহ সময় না হলে কোন কাজ হয়না, ঠিক একই ব্যাপার আমাদের সাথে ঘটেছে ।সময় হয়নি তাই যাওয়া হয়নি এতদিন।কিন্তু সেদিন হুট করেই দেখুন নাহ, পরীক্ষার আগেই হঠাৎ করে যাওয়া হল ।এই তীর্থ স্থান টির নাম পাগলাখালি। আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় দেড় ঘন্টা লাগে ওখানে যেতে।

20220203_195151.jpg

শুনেছিলাম ওখানে ভোলে বাবা অর্থাৎ মহাদেব এর পুজো হয় । পাগলাখালি নামই যেন পাগলা বাবার কথাই বোঝাচ্ছে। তো ওখানে মহাদেবের পুজো হয় এবং ওখানে বেশির ভাগ মানুষই মানসি করেন এবং মানুষের প্রবল বিশ্বাস যে বাবা সকলের মনস্কামনা পূরণ করেন,তাই এই বিশ্বাস নিয়েই বহু মানুষ ওখানে এসে ভিড় করে।

20220131_135344.jpg

আমি এর আগেও বলেছি আমার বিশ্বাস শুভশক্তিতে । আমার পিসতুতো দাদার কিছুদিন আগে ছেলে হয়েছে, পরিবারের কাছ থেকেই শুনেছি যে , ভগবানের কাছে বিশ্বাস রেখে ওখানে গিয়ে পিসির বাড়ির সকলে এই আশা রেখেছিলেন , সেই মত আগের বছরে পুচকু হয়েছে । তাই মানসিক এর কথা মত মহাদেবের কাছে পুজো দেওয়ার কথা উঠলো।

আমার মা যখন শুনল পিসির বাড়ির সকলে ঐ জায়গায় যাচ্ছে ।আমার মামা ভীষণ আনন্দিত হল এবং সবাই মিলে যাওয়ার প্লানিং হলো ।আমার মায়ের অনেক দিনের শখ ছিল ওখানে যাওয়ার।

20220203_200343.jpg

সকলের মুখে ওই জায়গার মহিমার ব্যাপারে অনেক কথা শোনা যায় ,সেটা কুসংস্কার কিনা, কিছু দৈবিক ,কিছু একেবারেই মনের ভুল ভাবনা কিনা,তা আমি যাচাই করব না ,আর যাচাই করার চেষ্টাও করবো না। মানুষ বিশ্বাস করে আর তার ফলে যদি কোন শুভ জিনিস হয়। তাতে বাধা দেওয়া ঠিক নয় ।

বাড়ির সকলে মিলে তাই সেদিনকে পুচকু কে প্রসাদ খাওয়াতে নিয়ে যাওয়া হল ।সাথে ঘোরাঘুরি করা হয়েছিল অনেক। পরের মাসেই অন্নপ্রাশন ওর,তাই প্রথমেই মহাদেবের প্রসাদ ওর মুখে তুলে ওর মুখে ভাতের শুরু করা হলো।

20220203_195236.jpg

প্রথমে ঠিক হয়েছিল সকাল ন'টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরোনো হবে ।কিন্তু বাঙালি তো! একটা টাইম বললে তার আধ ঘন্টা লেট না হলে বাঙালির মান সম্মান ডুবে যায়। তাই সেই মতই আমরা অর্থাৎ আমি,মা,আমার পাশের বাড়ির বৌদি ,ওনার শাশুড়ি আমাদের গাড়ি নিয়ে আর পিসিদের বাড়ির সকলে আরেকটি গাড়ি নিয়ে রওনা হলাম।আমাদের বেরোতে বেরোতে দশটা বেজে গেল।

20220131_144610.jpg

যখন রওনা দিলাম তখনও বুঝতে পারিনি যে কত সুন্দর জায়গায় আমরা যেতে চলেছি, পাগলা খালি লোকেশন যেখানে ,সেই জায়গাটি খুবই সুন্দর। চারিদিকে শুধু ফসল এর জমি । এখন আরও শীতকাল। সর্ষের জমি, খেজুরগাছ ,ধানের জমি ,গাঁদা ফুলের ক্ষেত এর জন্য চারিদিকে দারুন লাগছিল।

মাঝে ছিল চূর্ণী নদী ।সবকিছুই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। যে সমস্ত ছবি আমি ক্যাপচার করেছি এবং বাকি কাহিনী আমি অবশ্যই আমার পরবর্তী পোস্টে লিখব । যাই হোক আর বেশি কথা না বাড়িয়ে সোজা তীর্থস্থানের কথা বলা যাক। প্রায় দেড় ঘন্টা পরে আমরা ওখানে গিয়ে পৌঁছলাম। যাওয়ার পরে দেখি মেলার মত প্রচুর দোকান বসেছে মন্দিরের চারদিক ঘিরে ।বাঁদিকে নদী। নাম চূর্ণী নদী। সেখানে অনেক নৌকা বাঁধা আছে।

20220131_144731.jpg

আর সেই রাস্তা বরাবর দোকান গুলোর মাঝ দিয়ে দিয়ে আমরা প্রবেশ করলাম মন্দির প্রাঙ্গণে ।মন্দির প্রাঙ্গণে দর্শনার্থী ভিড় ।অনেকে পুজো দেওয়ার ডালার দোকান নিয়ে বসেছে। আমরা বাড়ি থেকে পূজোর সামগ্রী সমস্ত কিছু নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তবুও আমরা কিছু জন অল্পবয়সী যারা ছিলাম ,সবাই ডালা কিনলাম। ডালা ভর্তি করে ছিল পাঁচ রকম ফল, ধূপকাঠি,ফুল বাতাসা ,বেলপাতা, ধুতরা ফুল আর হাতে বাঁধার ধাগা ছিল ।এসব বাবার উদ্দেশ্যে পুজো দেওয়ার জন্যই ছিল।

20220203_195347.jpg

আমরা যখন ওখানে পৌঁছলাম ।প্রথমেই একটা গাছ তলায় মাদুর পেতে সমস্ত জিনিসপত্র রেখে দিলাম ।আমার পিসির পায়ে সমস্যা আছে ,পিসি হাঁটতে পারেন না। তাই পিসিকে এক জায়গায় বসিয়ে রাখলাম ।আর ওনার সাথে আমার দাদা ,পিসেমশাই ওনারাও ছিলেন ।আর এদিকে আমরা মনে মা ,কাকিমারা আর আমরা অল্প বয়সী মেয়েরা ছিলাম।

20220131_122921.jpg

যখনই মন্দিরের সামনে এসেছি ,দেখি বেশ একটা বড় লাইন পড়ে গেছে ।সাথে সাথে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়লাম ।লাইনে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে হয়নি ,হয়তো চল্লিশ মিনিট ।তবে আমাদের পড়ে বেশ একটা বড় লাইন দেখতে পাওয়া গেল ।মন্দির ঢুকতেই ডানদিকে কীর্তন হচ্ছিল।

20220203_201616.jpg

এই মন্দির এ একটি নিয়ম খুব ভালো। এখানে নিজের হাতে পুজো দেওয়া যায় ,শুধু ওখানে কিছু ব্রাহ্মণ বসে থাকেন, তবে এখানে কোন পান্ডা ভাড়া করতে হয় না, বা কোন ব্রাহ্মণ কে ভাড়া করে পুজো দেওয়া হয়না। নিজের হাতে বাবা কে স্নান করিয়ে পুজো করানো যায় ।তবে আমি শুনেছি আগে এই নিয়মটা ছিলনা ।আগে নাকি পান্ডা ধরে ব্রাহ্মণকে ভাড়া করে তবে পূজা দিতে হতো ।আমরা ভাগ্যিস এই সময়ে গেছি। তাই আমরা নিজের ইচ্ছামত মনমতো পুজো দিতে পেরেছি।

20220131_125932.jpg

মন্দিরের ভেতরে ঢুকতেই দেখি একটা বড় গাছ মন্দিরের ভেতর দিয়ে এবং মন্দিরের মাঝে ওই গাছের নিচে রয়েছে একটি শিবলিঙ্গ ।আর সেখানে প্রচুর মানুষ ভিড় করে পূজো দিচ্ছে ।সবার মুখেই যদিও মাক্স ছিল। কিন্তু এত ভিড়ে করোনা ও মনে হয় ভয় পেয়ে কোথাও লুকিয়ে পড়েছিল।

মায়ের কথা মতো আমি আমার আমার ডালা নিয়ে গাছের চারিদিকে তিনবার পাক দিলাম ,কেন দিলাম তা নিজে জানিনা। মা বলল তাই দিলাম ।আর মহাদেব এর নাম ধরে স্মরণ করছিলাম।সেই সময় দেখলাম গাছের পেছনদিকে আরো দুটো শিব ঠাকুর রয়েছে ।আর ভক্তরা দুধ, গঙ্গাজল মধু যা যা ,ঢেলেছে সেগুলো একটি নালীর মাধ্যমে দিয়ে বেরিয়ে মন্দিরের পেছন দিকে চলে যাচ্ছে।

20220203_200243.jpg

এগুলোর আমি বিরোধী বলব না ।কিন্তু মাঝেমধ্যে দেখে খারাপ লাগে ।বহু মানুষ খেতে পায় না ।তাদের কাছে যদি এই দুধ পৌঁছাতে পারতো ।তাহলে কতই না ভালো হতো। তবে বাবাকে দুধ দিয়ে যদি মানুষের শান্তি হয় ।তাহলে মানুষ তাই করুক। আমার কথা হল মানুষ যেখানে শান্তি পাচ্ছে, তাকে সেটা করতে দেওয়া হোক ।তবে হ্যাঁ সেটা অবশ্যই ভাল কিছু ।এমন না যে খারাপ কিছু করে সে যদি শান্তি পায়, তাহলে তাকে সেটা করতে দেওয়া হবে।

তিনবার পাক ঘুরে নেওয়ার পর আমিও ওই ভিড়ের মধ্যে ঢুকে মায়ের কাছে গিয়ে বাবার মাথায় বেল পাতা, বাতাসা আর দুধ অল্প করে দিয়ে পুজো দিলাম। আর নিজের মনোবাঞ্ছা বাবাকে জানালাম ।ঘরে বসেই ভগবান কে এত ডাকি। জানি না আমার মনের কথাগুলো কবে সম্পূর্ণ হবে। ওই যে সময় না আসলে কিছুই হয়না। হয়তো সময় আসলে সব কিছুই ভালো হবে ।

পুজো করার পরে বেরিয়ে আসলাম ।সকাল থেকে কিছুই খাইনি ।তাই বেরিয়ে আসার পরেই পিসির ওখানে গিয়ে ঠাকুরের বাতাসা প্রসাদ মুখে দিয়ে তবে জল খেলাম ।

20220131_130349.jpg

ওই জায়গাটি আমার অপূর্ব লেগেছে। চারিদিকে যে সৌন্দর্য আমি দেখেছি তা আমাকে আবারো যেতে বাধ্য করবে। পরবর্তী পোস্টে আমি সমস্ত জায়গাটা এবং বাকি কথাগুলো লিখব।

আজ বেশ বড় একটা পোস্ট হয়ে গেল আজকের মতো এখানেই শেষ করছি ।ধর্মকে নিয়ে কোনো তর্ক যুক্তি কখনোই চলে না বলে আমার মনে হয়। কারণ আমরা মানুষ। আমাদের মন আছে ।আমরা দুঃখই কান্নাকাটি করি। আনন্দে হাসি ।আমাদের কষ্ট হয় ,আমাদের যন্ত্রণা হয়। সে জায়গা থেকে যদি কোথাও আমরা গিয়ে স্বস্তি পাই ,সেটা তো অন্যায় নয়।

এই জীবন এ আমাদের দেখার মতন একজনই আছেন সেটাই হল ভগবান, ঈশ্বর ,আল্লাহ। সেটাইতো শুভশক্তি। যাই নামেই ডাকি কেন। সে তো তার কাছেই মিশতে হয়। সকলের ভালো হোক ।সকলের মনস্কামনা পূরণ হোক। ভগবান সকলের মঙ্গল করুক ।এটাই চাওয়া সব সময়।

জায়গাটির লোকেশন
Pagla Khali
094348 76941
https://maps.app.goo.gl/M8xNhRVmMqK6XzXYA
GM35+JMG, West Bengal 741506

@isha.ish

Sort:  
 2 years ago 

Screenshot_20220203-233157_Twitter.jpg

 2 years ago 

এমন মন্দির তেমন একটা দেখা যায় না খুবই চমৎকার একটি পোস্ট আপনি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন দিদি। মন্দিরটিতে আপনি অনেক সুন্দর সময় কাটিয়েছেন এবং এখানে সবাই অনেক ভিড়ের মধ্য মুখে মাস্ক পড়েছিল যেটি আসলেই অনেক ভালো একটি বিষয়। এই করোনাভাইরাস এর সময় আমাদের সবাইকে সেফটি নিয়ে চলাফেরা করা উচিত যাতে আমরা নিজেকে সুরক্ষিত করতে পারি তার সাথে সাথে অপরকেও সুরক্ষা দিতে পারি ‌। যাইহোক আপনি এখানে অনেক সুন্দর সময় মুহূর্ত অতিবাহিত করলেন এবং পোস্টটি অনেক সাজিয়ে-গুছিয়ে আপনি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন । ধন্যবাদ আপনাকে এমন সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ♥️

 2 years ago 

অনেক সুন্দর করে মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ দাদা।

 2 years ago 

দিদি আপনার মত আমারও মনে হয় দুধটুকু যদি কোন অভুক্ত মানুষকে খাওয়ানো যেত তাহলেই ভালো হতো। মোটকথা মানুষের মঙ্গলকেই সবার উপরে প্রাধান্য দেয়া উচিত। অবশ্য প্রত্যেক ধর্মেরই কিছু নিজস্ব রীতিনীতি থাকে যার বাইরে কেউ যেতে পারে না। আপনার সম্পুর্ন পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লাম। লেখার হাত আপনার খুবই ভালো কিন্তু আমাদের এই কমিউনিটিতে জেনারেল রাইটিং গুলো না পড়ার একটা প্রবণতা দাঁড়িয়ে গেছে। লিখিত কোন টপিক দেখলেই সবাই এরিয়ে যায়। পরিবারের সবার সাথে বেশ সুন্দর একটা সময় অতিবাহিত করেছেন। আপনার বর্ণনা পড়ে মনে হল, জায়গাটা যদি বাংলাদেশের মধ্যে হতো তাহলে অবশ্যই একবার দেখতে যেতাম। শুভকামনা রইল আপনার জন্য

 2 years ago 

সময় নিয়ে যে আমার পোষ্টটি দেখেছেন দাদা,, আমিও অনেক খুশি এই জন্য। অনেক ভালো থাকবেন

 2 years ago 

ধর্মকে নিয়ে কোনো তর্ক যুক্তি কখনোই চলে না বলে আমার মনে হয়।

তা অবশ্যই।আমাদের বিশ্বাস নিয়ে আমাদের খুশি থাকা উচিত।অন্যের বিশ্বাসকে,অন্যের আনন্দকে ছোট করা কোনো ধর্মেই শেখায়নি।মানুষ ভুল করে আসলে খারাপ ব্যবহার বা মনে খারাপ ধারণা পুষে।
ধর্মের মানে শান্তি।❤️❤️

 2 years ago 

একদম মনের কথা বলে দিলেন দিদি। অনেক অনেক ভালো থাকবেন। ভালোবাসা রইলো ❤️।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 59190.13
ETH 3187.58
USDT 1.00
SBD 2.45