তিনজন মিলে হাতিবাগানে হাতির খোঁজে
কালকে যেখানে শেষ করেছিলাম, ওখান থেকেই শুরু করছি। প্রিন্সেপ ঘাট যাওয়া হবে না। এই শুনে আমার ফ্রেন্ড রাগ টাগ করে বলেই দিলো যে সে যাবে না। এদিকে ওকে এত এত প্যাম্পার করার পর আমরা যখন দেখলাম কিছুতেই মেয়ের জেদ ভাঙছে না।আমরাও ওর ওপর রেগে গেলাম এবার। কারণ এবার না বেরোলে হাতিবাগানেও যাওয়া হবে না। আমি আগে কখনও সেখানে যাইনি। বেশ বড় মার্কেট নাকি ওখানে।
তো আমরা বাকি তিন জন রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। ওদিকে ও তো ক্ষেপে ঢোল হয়ে গেল। আমরা সিঁথি র মোর থেকে দমদম স্টেশন গেলাম অটো করে। তারপর মেট্রো করে শ্যামনগর নামলাম। মেট্রো থেকে নেমে হাঁটা শুরু করলাম। আমরা কিছুই চিনতাম না। মৌসুমী দি একবার এসছিল শুধু। ওর ভরসায় হাঁটছিলাম। প্রায় ১৫ মিনিট হাঁটার পর মার্কেট এর হদিশ না পেয়ে, মৌসুমী দি বুঝলো যে রাস্তা টা ভুল হয়েছে।
আমার তো এই শুনেই মাথা গেছে। কত টা হেঁটে এখন রাস্তা ভুল। তখন পাশেই একটা দোকানের মহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম। উনি রাস্তা দেখিয়ে দিলেন। আসলে আমরা উল্টোদিকে হাঁটছিলাম। এবার ঠিকঠাক রাস্তা পেয়ে গেছি ।মৌসুমী দিও রাস্তা চিনতে পেরে গেল।
এবার আমরা মার্কেটের ভেতর ঢুকে গেলাম। ওরা এটা সেটা দেখতে লাগলো। আমার কিছুই পছন্দ হচ্ছিল না। আর আমার হুট হাট অত পছন্দ হয়না। কিন্তু যেটা পছন্দ হয়, সেটা ইউনিক পিস। ওরা এটা সেটা কিনে ফেললো। আমি তখনও এদিক ওদিক দেখছি। এটাও ভেবে নিলাম যে হয়তো কিছু না কিনেই ফিরবো।
তারপর হঠাৎ কার্টুন টাইপ দুটো থ্রি কোয়াটার প্যান্ট গুলো চোখে পড়লো। মাত্র ১০০ টাকা দিয়ে দুটো কিনে নিলাম। তারপর একটা কাপ প্লেটের দোকানে। ভীষণ মিষ্টি একটা কাপ দেখলাম।১৫০ টাকা দাম নিল। কিনে ফেললাম ওটাও। মার্কেটে প্রচুর প্রচুর জামা কাপড়ের দোকান। জুয়েলারির দোকান ও অনেক। সাথে কাপ প্লেট, কাঁচের জিনিস, ব্যাগের দোকান, জুতোর। প্রচুর প্রচুর দোকান। মাথা ঘুরে ওঠার মত।
এবার আইসক্রিম খেলাম আমরা ।ওরা দুজন বাটারস্কচ ফ্লেবার এর নিল। আমি ব্ল্যাকবেরি ফ্লেভার এর আইসক্রিম নিলাম। পাশেই ছিল এম বাজার মার্কেট। সেখানে ঢুকে পড়লাম। ওরা দুজন যেমন জামা কাপড় ঘাট ছিল আমিও সেরকম ঘাটাঘাটি করছিলাম। ভীষণ পছন্দ হলো একটা টু পিস। কাঁচা হলুদ রঙের জামাটা আর প্যান্ট সাদা রঙ এর।৯০০ টাকা দিয়ে কিনে নিলাম ওটাও।
আমার বান্ধবীরাও ওদের পছন্দমত জামা কিনে ফেলল। তারপর আর একটু এগিয়ে শ্রী মার্কেটের ভেতরে ঢুকলাম আমরা। মৌসুমীদির এক বান্ধবীর জন্য ও কুর্তি দেখতে ব্যস্ত হয়ে গেল। সমস্যা শুরু হলো এখান থেকেই। নিজের জন্য জিনিস কেনা ব্যাপারটা আলাদা। অন্যের জন্য কিছু কেনা বা নেই ১৪ বার তাকে ছবি পাঠাও হোয়াটসঅ্যাপে। এই করতে করতে প্রচুর সময় কেটে গেল। দিদির বান্ধবীর আর জামা পছন্দ হচ্ছে না। এত সুন্দর সুন্দর জামা সে একের পর এক হোয়াটস্যাপে এ ক্যানসেল করে দিচ্ছে।
দেখতে দেখতে নটা বেজে গেল। এদিকে সাড়ে নটায় মেট্রো শেষ। মৌসুমীদিকে আমি সাড়ে আটটা থেকে তাড়া দিচ্ছিলাম। এবার দিদিকে হাত ধরে টানাটানি শুরু করে দিলাম। মার্কেটের ভেতর থেকে প্রায় জোরজবরদস্তি করে দিদিকে বের করলাম। তারপর মেট্রো স্টেশনের দিকে হাটা দিলাম। শেষ মেট্রোতে ভীষণ ভিড় হল।
দমদম পৌঁছে শান্তি । আমি এত রাতে এভাবে দমদমের খুব একটা বাইরে থাকি নি , তাও একা এমন। এমনি সময় বাড়ির বাইরে থাকলে মা চোদ্দবার করে ফোন করে, সেদিন কি আর মা ফোনই করেনি। বাড়ি পৌঁছানোর আগে। যে ঘটনাগুলো আমরা ঘটিয়েছি। সেটা একেবারেই শেয়ার করার মতো নয়। কিন্তু সেই রাতের কথা আমি কোনদিনও ভুলবো না।
সেদিন সকাল থেকে রাত দুর্দান্ত ছিল মুহূর্তগুলো। হাসি মজা আড্ডা ঝামেলা তারপর দুষ্টুমি। আমার জীবনের সেরা একটা দিন ছিল সেটা। প্ল্যানিং না করে অনেক কিছু পেয়ে গেছি সেদিন। আর এভাবেই হয়তো জীবন আমাদের সাথে রংবেরঙের মুহূর্তগুলোকে পরিচয় করিয়ে দেয়।
বেশ ভালো লাগলো আপনাদের সাথে সবটা শেয়ার করতে পেরে। সকলে ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। হাসি, মজা, আড্ডা ,কষ্ট ,দুঃখ ,ঝামেলা, ঝগড়া, দুষ্টুমি সবকিছু নিয়েই জীবন। সবকিছুকে উপভোগ করতে থাকুন।
Hi Isha it's @nawaz1 I'm also interested in exploring markets
Hi, thanks for visiting my post.
Most welcome
You also visit my profile
হাতিবাগানে একটা হাতি ও খুঁজে পেলাম না শুধু কাপড়-চোপড় আর আইসক্রিম হা হা হা। আপনার বন্ধুর রাগ করার যথেষ্ট কারণ ছিল। প্রিন্সেপ ঘাটে গেলে আমরাও অনেক সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি দেখতে পেতাম। মিস করে দিলাম। যাইহোক আপনি বাহিরে দুর্দান্ত সময় কাটালেও বাসায় লোকজন কিন্তু অনেক টেনশনে ছিল। ভালো লাগার মুহূর্তগুলো শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমার বান্ধবীর সাথে সাথে মনে হচ্ছে আপনি একটু রাগ করে ফেললেন। পরেরবার প্রিন্সেপ ঘাট যাবই। 🤭
দাদার পোস্টে দেখেছি ভালই লেগেছিল।
বিশেষ করে সন্ধ্যার পরের দৃশ্য।
সবই হলো কিন্তু হাতি বাগানে গিয়ে তো হাতির দেখাই পেলেন না হি হি। হাতিবাগানে গিয়ে সবাই বেশ দারুণ কেনাকাটা করলেন। দারুণ ছিল আপনাদের সময়টা।।
কি জানি বাবা ,হাতিগুলো বুঝি আমাকে দেখে পালিয়ে গেল।
হাতিবাগানে হাতি নেই 😄। যায়হোক, জামাকাপড় তো কিনতে পেরেছেন। এসব দোকানগুলোতে কম দামে ভালো জামা পাওয়া যায় দিদি। আপনার ৯০০ টাকা দিয়ে জামাটা সুন্দর হয়েছে মনে হয়। তিন বান্ববী মিলে ভালো সময় কাটিয়েছেন। 😊
হ্যাঁ ওই জামাটা ভীষণ সুন্দর হয়েছে। পুজোর জন্য কিনেছি তাই পুজোর সময় দেখাবো।
শেষ পর্যন্ত তো হাতি খুজে পেলেন না দিদি। জিনিশ পাতির দাম তো মনে হয় কম কমই। তবে যে ঘটনা শেয়ার করলেন না সেটা জানার খুব আগ্রহ থাকলো।
যে ঘটনা শেয়ার করিনি সেটা কখনোই শেয়ার করা যাবে না।
আপু নির্দিষ্ট কোথায় যাওয়ার সময় সে জায়গার পথ ভুল করাটাও বেশ আনন্দের। যদিও একটু বিরক্ত লাগে কিন্তু যখন সঠিক পথটা পাওয়া যায় তখন বেশ মজাই লাগে। যাহোক বান্ধবীদের সাথে মার্কেটে বেশ আনন্দই করেছেন আপনি। বিশেষ করে আইসক্রিম খাওয়া দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে আপনাদের আনন্দটা কি পরিমাণ হয়েছিল। যাহোক বান্ধবীদের সাথে এরকম হাসি, ঠাট্টা, দুঃখ, আনন্দ শেয়ার করে চলাটাই প্রকৃত জীবন।
আসলেই জীবনটা সবকিছু মিলিয়ে।