ছুটে যাই বাড়ির দিকে

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

বেশ অনেকদিন পর পোস্ট করছি। আশা করি সকলে ঠিক আছেন। মাঝে মধ্যে এইভাবেই হারিয়ে যেতে বেশ ভালো লাগে, নতুন উত্তেজনা নিয়ে ফিরে আসা যায়। জানিনা আবার কবে উধাও হব। তবে হ্যাঁ, এরকম চলতে থাকলে আমার দাদা দিদিরা আমাকে কমিউনিটির অ্যাক্টিভ লিস্ট থেকে উধাও করে দেবে।🤭

মা,বাবা,পরিবার এর মর্মটা ছোটো থেকেই ভালো ভাবে বুঝি। কারণ আমার পরিবার একেবারেই বেশ শক্ত পোক্ত। অর্থাৎ বেশ সবাই মিলে মিশে থাকে। ছোটো থেকেই দেখে এসেছি, কথা কাটাকাটি হলেও কিছুদিনের মধ্যে সব গুছিয়ে নেয় সকলে মিলে।
বিশেষ করে আমার মা । শত কিছুর পরেও দেখেছি মা সবাইকে নিয়ে থাকতে পছন্দ করে। সব কিছু ভুলে গিয়ে নতুন করে গুছিয়ে তোলে। মা এর মধ্যে এই যে উদারতা, আমাকে অবাক করে বারবার।
এখনও আমাকে শেখায় কিভাবে সবাইকে নিয়ে চলতে হয়। এই বয়সেও বকাবকি করে যদি আমি কারোর নামে বাজে কথা বলি। অদ্ভুত একটা শক্তি উপলব্ধি করেছি আমি মা এর মধ্যে ।ক্ষমা জিনিসটার কতটা শক্তি! এটা মা এর থেকে শেখা।

IMG-20220912-WA0000.jpg

হয়তো এই জন্যই , মা এর শিক্ষায় আমি সবাইকে নিয়ে চলতে পছন্দ করি। সব খারাপ গুলোকে মিটিয়ে ভালো ধরে বাঁচতে পারি। নিঃসন্দেহে এতে আমার গর্ব আছে।

প্রায় দুই সপ্তাহ বাড়ি যাইনি। খুব মন খারাপ করছিল । কেন জানিনা মাও বুঝতে পারছিল আমার মন খারাপ করছে। তাই যাওয়ার আগের দিন গুলো খুব ফোন করতো। আর বার বার বলতো , তাড়াতাড়ি চলে আয়। দেখা করে যা।

আমার এখনও মনে আছে, কলকাতা যেদিন প্রথম আসি , মানে, বাবা মা রেখে যায় মেস বাড়িতে। আমি ভীষণ কান্না করেছিলাম। নিজেকে নার্সারির বাচ্চা মনে হচ্ছিল। এখনও মনে আছে , কারোর সাথে কথা বলেও আমার শান্তি হচ্ছিল না।
আর তারপরের দিন একদম ভোর সকালের ট্রেন ধরে আমি বাড়ি চলে গিয়েছিলাম।এই নিয়ে বাড়ির সবাই খুব হাসাহাসি করেছিল।

দূরত্ব আসলেই সব সম্পর্কে দরকার। একটা ছবিকে খুব কাছ থেকে দেখতে ভালো লাগে না , কিন্তু দূরে গেলে তার সৌন্দর্য্য বেশি ধরা দেয়।তাই কাছে থাকলে যে সৌন্দর্য আমরা দেখতে পারিনা, দূর সেটা আমাদের দেখিয়ে দেয়।

মা বাবার প্রতি আমার যে এখনও সেই ছোটো বাচ্চাদের মত ভয়ানক টান আছে, সেটা বুঝতে পেরেছিলাম , সেদিন। আর কলকাতায় থাকতে থাকতে এটা যেন আরো ভালো ভাবে বুঝতে পারছি।

গত শুক্রবার ছুট্টে গিয়েছিলাম বাড়ি। ঠিক বাচ্চাদের মত। ছোটবেলায় মেলায় হারিয়ে যাওয়ার ভয় পেতাম আমি । ঠিক নিজেকে মনে হচ্ছিল হারিয়ে গিয়েছি। আর শত ভিড়ের মধ্যে ভয়ে ভয়ে হাঁটতে হাঁটতে যেই মা কে দেখতে পেয়েছি। ছুটে গিয়ে কোলে উঠে পড়লাম।

বাড়ি ঢুকতেই মা আর বাবাকে দেখে পরস্পরের মধ্যে একটা অব্যক্ত আনন্দ ছড়িয়ে গেল।দুপুরে একসাথে খেতে বসলাম চারজন। আমি , ভাই, মা , বাবা। খেতে যা ভালোবাসি, তাই রান্না করেছিল।অমল কাকার দোকানের মিষ্টি দইও ছিল সাথে।

খেতে বসে বাবা আমার সাথে অনেক কথা বললো। আর তারপর মা । খুব খুব বকবক করলাম । আবারও কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে আমাকে ওরা অবাক করে দিলো । কিছু না বলতেই এরা এত কথা বুঝে যায়, কি করে বুঝিনা। সমস্যা গুলো বলতেই হয়না। নিজেরাই বলতে শুরু করে।
আর আমি শুধু অবাক হয়ে যাই। এত দূরে থেকেও এরা বোঝে কি করে আমি কেমন আছি ।

মা বাবার সাপোর্ট থাকলে সত্যিই আর কিছুই দরকার পড়ে না। আর আমার মা বাবা আমাকে বারবার বুঝিয়ে দেয় ওরা সবসময় আমার সাথে আছে। সবসময়। আর এই জন্যই হয়তো অনেক জটিল কথা এখন কত সহজেই ওদের বলে ফেলি আমি।

যত বড়ো হচ্ছি। পৃথিবীর সাথে লুকোচুরি শুরু হলেও, মা বাবার সাথে লুকোচুরি গুলো সরে যাচ্ছে। আর এর থেকে বড় শান্তি নেই আমার কাছে। নিজের মানুষগুলোর কাছে পরিষ্কার থাকাটা যে কতটা সস্তি দেয়। তা আমি খুব ভালো ভাবে বুঝতে শিখেছি।

সময় খুব বড় শিক্ষক।
আজ এই অব্দি। সকলে ভালো থাকুন।

@isha.ish

Sort:  
 2 years ago 

পৃথিবী তে যদি স্বর্গ বলে কিছু থাকে সেটা হল নিজের বাড়ি।রাজপ্রাসাদ এ থাকার থেকে বাব মার সাথে নিজের কুড়ে ঘরে থাকা অনেক সুখের।আমরা যারা বাইরে থাকি তারাই বুঝতে পারি বাড়ির টান কত ভয়াবহ।আর সবাইকে ফাকি দিলেও মা কে ফাকি দেওয়া সম্ভব না।

 2 years ago 

আপনার পারিবারিক ছবি দেখে খুব ভাল লাগলো। সবাই খুব হাশিখুশি। যেকোন পরিবারেই মায়ের থেকে বেশি ম্যানেজ পাওয়ার আর কারো নেই। মায়েরা না থাকলে হয়ত প্রতিটি পরিবারে ঝামেলা লেগেই থাকত। আপনি অনেক দিন পর বাড়ি গিয়ে অনেক খুশি তা আপনার চোখে মুখেই দেখা যাচ্ছে। আপনার ছোট ভাইটি অনেক কিউট। অনেকদিন পর বাড়ি গেলে বাবা মার সাথে বিশেষ করে মার সাথে যেন কথা শেষই হয় না। ধন্যবাদ দিদি।

 2 years ago 

কোন জায়গাতে বেড়াতে গেলে বা কোন স্থানে থাকলে বাড়ি যাওয়ার জন্য মনটা সব সময় আনচান করে। বিশেষ করে মেয়েদের শ্বশুরবাড়ি থেকে নিজের পিতা-মাতার বাড়িতে যাওয়ার জন্য মনটা ঠিক এভাবেই ছুটে যাই বাড়ির দিকে। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে উপহার দেওয়ার জন্য।

 2 years ago 

সত্যি বলতে আপু পৃথিবীর বুকে মা এবং বাবায় হলো পৃথিবীর স্বর্গ। মা-বাবার কাছেই তার সন্তানেরা সব সময় অকৃত্রিম ভালবাসা পেয়ে থাকে। তাদের কাছে কোন কিছু বলা লাগে না তার আগে থেকেই সবকিছু বুঝতে পারে যে তার সন্তানের কি লাগবে বা তার সন্তানের কি প্রয়োজন। পৃথিবীর প্রতিটি পিতা-মাতার সাথে তার সন্তানদের সম্পর্ক আরও বেশি ভালোবাসা, স্নেহ, মায়া-মমতার অটুট বন্ধনে আবদ্ধ এটাই আমার প্রত্যাশা। আপু অনেকদিন পরে আপনার পোস্টটি পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে, ভালো থাকবেন আপু।

 2 years ago 
আসলে পরিবারের সকলের সাথে মিলে মিশে থাকার মাঝে যে কত সুখ দুরে গেলে তা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায়।আপনার সাথে আমি একটা বিষয়ে একমত আমরা যেখানেই থাকি, যত সুখেই থাকি নিজের বাড়ির মতো সুখ কোথায় সম্ভব নয়।আর মা-বাবা সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সন্তানের মনের ভাব বুঝতে পারেন।এটা মা-বাবা প্রতি সৃষ্টিকর্তার এক নিয়ামত।প্রায় দুই সপ্তাহ পরে বাড়ি গিয়ে অনেক আনন্দ উপভোগ করেছেন যা আপনার ফটোগ্রাফি দেখে বোঝা যায়।অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি এত সুন্দর ও চমৎকার করে আপনার বাড়িতে যাওয়ার অনুভূতির টুকু আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59484.75
ETH 2614.53
USDT 1.00
SBD 2.41