বৌদির জন্মদিনে

পিসতুতো দাদার বিয়ের জন্য যখন পাত্রী খোঁজা চলছে।আমিও বড়ো দায়িত্বে ছিলাম। গোটা পরিবারে পিসিদের এবং জেঠুর বাড়ির সব মিলিয়ে ছেলেদের মধ্যে ছোট আমার পিসির ছেলে আমার ছোট দা, আর মেয়েদের মধ্যে আমি। ঈশান যেহেতু অনেক পরে এসছে। ওকে ক্যাট কুটের দলে ধরা হয়। দিদি দাদার ছেলে মেয়েদের বয়স আর ঈশানের বয়স কাছাকাছি। 🤪

বৌদি কোলে

ছোট থেকেই ছোট দা আর আমি বেশ বন্ধুর মত।দাদা বয়সে যদিও আমার থেকে সাত আট বছরের বড়ো । তাই পিঠাপিঠি নই আমরা। তাই ঝামেলা বেশি হয়নি কখনও। বরং দাদা ভীষণ ভালোবাসে । এই তো রাখির দিনও ছবি দিয়েছিলাম ওকে রাখি পড়ানোর। আমার গোটা পরিবারে অনেক দাদা দিদি, কিন্তু শুধু ছোট দার সাথেই আমার সম্পর্ক ভীষণ মধুর। দাদার জীবনের প্রেম ভালোবাসার গল্প গুলো সব ও আমাকে এসে বলতো। আমিও ওকে সব বলতাম। প্রেম যেদিন ভেঙে গেল। তারপর থেকে কিছু মাস ডিপ্রেসন। সেই সময়টাতেও দাদা কে দেখেছি আমি।

ওকে আমি ঘুরতে নিয়ে যেতাম খুব। বলতাম চল বেরিয়ে আসি। ওর মন খারাপ দেখলেই ও আমাকে ফোন করতো। আর আমরা দুই ভাই বোন আমাদের প্রিয় রেস্টুরেন্ট রান্নাবাটি তে বিরিয়ানি খেতে যেতাম। দাদা যেই বিয়ে করলো, তারপর আর একবারও যায়নি।🤣

ওর জন্য পাত্রী চয়েস করার সময় দাদা আমার মতামতের দামও দিত। শেষ দিকে এসে যে মেয়েটিকে আমাদের দুজনের খুব ভালো লেগে যায়, সেই হলো এই বৌদি। বৌদি আমার বয়সী। তাই ভাব জমেছিল খুব। বিয়ের আগে দাদার থেকে বেশি আমার সাথে কথা বলেছে বৌদি।

সমবয়সী হলেও কখনও ওকে নাম ধরে ডাকিনি।ও আমার কাছে এখনও বন্ধুর মত। বিয়ের পর বেশ গিন্নি হয়ে গেছে। বিয়ের আগে কী ভয় করতো। আসলে ওদের বাড়ি জলপাইগুড়ি, আমার বাড়ি থেকে বহু দূর ৪৮৮ কিমি। এত দূরে প্রথম দিকে বিয়েতে কেও রাজি হচ্ছিল না।নাহ আমাদের বাড়ি নাহ মেয়ের বাড়ি। কিন্তু আমার দাদার সাথে আর আমাদের পরিবারের সাথে মেয়েটা কেমন যেন মিশে গেল। অজান্তেই খুব কম সময়ে আপন হয়ে গেলো।তারপর বিয়ে টাও হয়ে গেলো ডিসেম্বরে।

মেয়েটা ভীষণ শান্ত, ভীষণ মিশুকে, আর সহজেই সবাইকে আপন করে নিতে পারে। বৌদি বলা ভুল , ও আমার বোনের মত।

বাড়িতে আছি, বৌদির জন্মদিন, আর আমি কিছু ঘটাবো নাহ! হতে পারে!! এই প্ল্যাটফর্মে যারা আমার পোস্ট বহুদিন ধরে পড়ছেন ,তারা অনেকেই জানেন আমি জন্মদিন পালন করতে কত ভালোবাসি, সেটা নিজের হোক ,কিংবা অন্যের।

বৌদি জন্মদিনের দিন সকাল বেলায় পিসি কে ফোন করে বলে দিয়েছিলাম যাতে রান্নাবান্না যাক যমক ভাবে করে, রাতের বেলা হাজির হবো আর অনেক মজা করবো । বাড়ির সবার কাছে আমার এই আবদার গুলো বহুল পরিমাণে কাজ করে। আমি ভীষণ লাকি যে আমি এত ভালো একটা পরিবার পেয়েছি যারা আমাকে মাথায় তুলে রাখে আর ভীষণ ভালোবাসে। ছোট থেকে যেভাবে এরা পেম্পার করেছে আমাকে ,আমি সত্যি নিজেকে নাকি মনে করি। আমার ভাই ঈশানও এতটা পায় না। যতটা এখনও সবার থেকে আদর পাই।
এই নিয়ে আমার একটা বড়সড়ো গর্ব আছে। আর থাকাটা স্বাভাবিক।

যাই হোক প্ল্যানমাফিক সন্ধ্যা বেলায় পিসির বাড়িতে গিয়ে হাজির হলাম। বৌদি তো চমকে উঠেছে। বৌদির জন্য কেক নিয়ে গিয়েছিলাম। সাথে সন্ধ্যাবেলার টিফিন করার জন্য কিছু স্নাক্স ,কোলড্রিংস আর রাতের বেলায় ওখানে পছন্দের রান্নাবান্না হয়েছিল। পিসির মেয়ে আর পিসি সব রান্নাবান্না করেছিল। সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করেছি ।অনেক অনেক মজা করেছি।

কলকাতায় থাকি বলে বাড়িতে আসলে আর কোথাও যেতে মন করে না। একটা সময় ছিল পিসির বাড়িতে অর্ধেক দিন কেটে যেত আমার ।দাদা বৌদির সাথে গল্পে গল্পে সময় যেত। কিন্তু এখন সেরকম হয় না। সেদিন বেশ বহুদিন পর পিসির বাড়িতে গিয়েছি। সবার সাথে সন্ধ্যা বেলা থেকে মজা করতে পেরে অনেক অনেক ভালো লাগছিল রাতে। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম রাতে সেদিনকে পিসির বাড়িতে থেকে যাব। বাবার শরীর হঠাৎ করে খারাপ হওয়াতে বাড়ি ফিরে আসতে হয় রাতেই।

সময়টা বেশ সুন্দর কেটেছিল সেদিন ।বৌদি ও ভীষণ আনন্দ পেয়েছিল ।সকলে ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন ।নিজে ভালো থাকুন ,নিজে খুশি থাকুন এবং অপরকেও খুশি রাখুন।

একটা জিনিস মাথায় রাখবেন। যন্ত্রণা ব্যথা সবাই দিতে পারে। কিন্তু মানুষের মুখে হাসি ফোটানো এক অন্যরকম শান্তি। তাই বলে এটাও না যে সবার সুখে থাকার দায়িত্ব আপনি নিয়ে নিচ্ছেন।

যাইহোক অনেক কথাই বললাম। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
@isha.ish