গল্প গল্প || ১০ % বেনিফিট @shy-fox এর জন্য
কোন এক ভোর বেলায় সূর্যের হাত ধরে পৃথিবীতে এসেছিলাম ।জন্মের সময় আমার কেমন লেগেছিল, সেটা আমার মনে না থাকলেও বাড়ির সকলের মনে আছে । তাদের মনে আছে যে যখন আমি হয়েছিলাম, তখন কে কোথায় ছিল। আমার ঠাম্মা নাকি ঘাটে স্নান করছিল । ছোটদাদা দৌড়ে গিয়ে ঠাম্মাকে খবরটা জানায় ।আমরা দিদা,বাবা আরো কিছুজন তখন নার্সিংহোমে ।
সন্তান হওয়ার আগে সবারই একটা আকাঙ্ক্ষা থাকে যে ,ছেলে হবে না ,মেয়ে হবে ।বাবার বড় ইচ্ছা ছিল মেয়ের । সেই চক্করে নাম আগে থেকে বানিয়ে রেখেছিল বাবা।বাবাকে বহুবার জিজ্ঞেস করেছি , এত নাম থাকতে হঠাৎ কেন এই নামটাই রাখলে তুমি।
বাবা বলেছিল - তুই যেদিন হোলি ,তার আগের দিন রাতে বসে বসে ডিকশনারি ঘাট ছিলাম, " ঈশ " শব্দের অনেক অর্থ পেলাম । কেও নাকি বলে ঈশা- মুসা- সচৈতন্য। কেউ বলে ঈশ অর্থাৎ ঈশ্বর । কেও বলে এর অর্থ যে রক্ষা করে, দেবী শাসক, হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী শিব কে বর্ণনা করতে ঈশা নামটা তাৎপর্য বহন করে, আবার কেও বলে হিন্দু মুসলিম খ্রিস্টান সব ধর্মে ঈশা নামক দেবতার কথা বলা আছে ।
সব মিলিয়ে নামটা এত ভাল লাগল যে ওটাই যাচাই করে রেখেছিল বাবা। বাবা বলে, তোর মাকে যখন ওটি তে নিয়ে গেল ,এত ভয় লাগছিল বলে বোঝানোর নয় ।যে টুকু সময় অপারেশন চলেছে ,বাবার দুই পা নাকি এক জায়গায় ছিল না ।বাবা খালি পায়চারি করছিল নার্সিংহোমের বারান্দাটাতে।
জীবনে প্রথমবার বাবা হওয়ার যে অনুভুতি, তার কিছুটা ঝলক আমি দেখতে পেয়েছি, যখন বাবা এই গল্পগুলো করেছিল। ওটি থেকে বার করে যখন অন্য বেডে ট্রানস্ফার করে মা কে , বেড জুড়ে নাকি রক্তে রক্ত। তারপর একজন নার্স
আমাকে আমার বাবার কোলে তুলে দিয়েছিল। আর বাবা ওই মুহূর্তেই প্রথবার এই পৃথিবীকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। ওই মুহুর্ত থেকে সবাই জানতে পারল আমি ঈশা ।
বাবার মাথার মুকুটের মতো আমি যেন সবসময় ছিলাম। বাবার সাথে সম্পর্ক টা কোনো ভাবে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কখনই আমি বাবার চোখের জল দেখতে পারিনি। সহ্য করা বড়ই কঠিন। বাবাকে ইচ্ছা করে কখনও কষ্ট দেইনি। আর ভবিষ্যতেও হয়তো দেবো না। আমার আর বাবার মধ্যে যে বন্ডিং আছে সেটা অনেকটা এরকম যে, আমার ভুল হলে যতটা আমাকে বাবা বকে, বাবার ভুল গুলোতেও আমি সেই পরিমাণ বকতে পারি।
এখনও তাই, দুই জন পাগলের মত বসে নিজেদের ভুল গুলো নিয়ে আর তার সংশোধন নিয়ে আলোচনা করি। বাবাও আগে থেকে কথা শোনে না, যখন ঠোক্কর খায়, তখন এসে আমাকে শেয়ার করে, আমিও তাই। দুজনের এই আচরণ গুলোকে আমার মা নাটক নামে অভিহিত করেছে। তাতে যদিও আমাদের এই সো কল্ড নাটক থামে না ।
কেও যদি বাবার চোখের জলের কারণ হয়, নিমেষের মধ্যে আমার থেকে বহু ক্রোশ দূরে চলে যায় ।গল্পের মাঝে বাবার সাথে বন্ডিং টা কি সুন্দর শেয়ার করে ফেললাম । তাই নাহ?
যাইহোক কিছু অনুভূতি শেয়ার করে ভালোই লাগলো। ভালো থাকুন সকলে।
ইশা নামের অর্থ জানতে পারলাম। আর বাবা মেয়ের এমন সুন্দর সম্পর্ক কে না চায়। সারা জীবন চালু থাকুক আপনাদের এই নাটক বা সিনেমা এই প্রার্থনা রইলো। ভালো থাকবেন।
হিহি, ধন্যবাদ দাদা।
আপু আপনাদের বাবা মেয়ের ভালোবাসা এবং আপনাদের বন্ধুত্বপূর্ণ বন্ডিং এর অনুভূতিগুলো শুনে খুবই ভালো লাগলো। প্রতিটি বাবা এবং সন্তানের সম্পর্ক আসলে এমনটাই হওয়া উচিত। দোয়া করি, আপনাদের বাবা মেয়ের সম্পর্ক অটুট থাকুক চিরকাল। শুভকামনা রইলো আপনাদের জন্য।
আপনার জন্যও শুভেচ্ছা রইল।