ফেরার পথের হঠাৎ আনন্দগুলো || ১০% বেনিফিট @shy-fox এর জন্য
নমষ্কার বন্ধুরা। আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। কালকে যেখানে থেমে ছিলাম। সেখান থেকে শুরু করছি। তো বৃষ্টি যখন থামলো , আমি বেরিয়ে পড়লাম মেস বাড়ি থেকে। মন খারাপ করছিল না একদম । কিন্তু জায়গাটাকে আমি খুব ভালবাসি।
আমার ভীষণ ভালো লাগে ওখানকার পরিবেশ। ঝিলের হাওয়া খেতে, বর্ষায় ভেজা আমার বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি উপভোগ করতে।
আসলে আমার মেস বাড়ি চারিপাশের পরিবেশটা খুবই সুন্দর ।ছাদে উঠলেই বড় বড় বিল্ডিং এর তুলনায় সবুজ বেশি দেখতে পাওয়া যায়। বামদিকে বিস্তর একটা মিউনিসিপ্যালিটির জায়গা আর সামনে ঝিল থাকতে কলকাতার অনুভূতি একদম হয় না। বাড়ির পেছনে রয়েছে একটা বড় পার্ক। তাই একদমই অসাধারণ একটা ফিলিংস।
মন খারাপ করেনি কারণ কিছুদিনের মধ্যেই ফিরতে হবে ।আবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে দু পা হেঁটেই দেখছি ঝিলের পাশে প্যান্ডেল মত করা হয়েছে এবং সেখানে লোকজনের ভিড়। মাইকে অনেকক্ষণ ধরেই এনাউন্সমেন্ট শুনছিলাম। সামনাসামনি এসে বুঝলাম। এখানে ছোটখাটো হস্তশিল্প মেলা বসেছে। শরীর এত ক্লান্ত ছিল এই মেলার মধ্যে ঢোকার চিন্তাভাবনা করিনি। কিন্তু মেস বাড়িতে ঢুকে খানিকক্ষণ রেস্ট নিয়ে শরীর হয়ে গিয়েছিল চাঙ্গা। তাই তখন আর আমাকে কে আটকায়, আমি ঢুকে পড়লাম মেলার প্রাঙ্গণে ।
যেখানে মেলা বসেছে সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কত গল্প করি, কত আড্ডা মারি বসে বসে। শুনেছি এই জায়গাটা করেই নাকি দুর্গাপুজো হয়। ঝিল আর দুর্গা ভবনের মাঝামাঝি এই বড় জায়গাটা জুড়ে বেশ অনুষ্ঠান হয়।
মেলার মাঠে ছবি তুলতে লাগলাম। তখন ও মেলা সেভাবে বসেনি। সবাই একটু একটু করে জিনিসপত্র নিয়ে গুটিয়ে বসছে। আসলে মেলা নাকি পাঁচটা থেকে শুরু হয়। আমার ট্রেনের টাইম ৫.৩৮ , হাতে সময় কম ছিল ।তবুও ইচ্ছা থাকলে অনেক কিছুই হয়। ভীষণ লোভ লাগছে সুন্দর সুন্দর হাতের কাজ দেখে ।বিশেষ করে গয়নাগাঁটি আর জামা কাপড়ের দিকে চোখ যাচ্ছিল বেশি ।কিন্তু কেনার মত এনার্জি টা পাচ্ছিলাম না।
ভাবলাম মেলা যেদিন শেষ হবে তার আগে আগে এসে কিনে যাব। শুনতে পারলাম এই শনিবার মেলা শেষ হচ্ছে। আমি জানি না শনিবার আবার যেতে পারব কিনা ।কলকাতা কবে ফিরবো নিজের কাছে ঠিক করে উঠতে পারছি না। তবে মেলা প্রাঙ্গণে ঘুরতে বেশ ভালো লাগছিল। অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস বেশ কম দামে পেয়ে যাচ্ছিলাম।
ওখান থেকে বেরিয়েছি তারপর অটো নিয়ে দমদম স্টেশন আসলাম ।মাঝেমধ্যে বৃষ্টি শুরু হয় আবার থেমে যায় ।এই ছাগল তাড়ানো বৃষ্টি আমার বড্ড অপছন্দ। সব থেকে মজার ঘটনা ঘটলো আমি স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি। হুট করে আমার নাম ধরে কেউ যেন আমাকে ডাকতে লাগলো। আমি অবাক হয়ে গেলাম। এই সময় স্টেশনে আমার নাম ধরে ডাকছে কে। চারিদিকে তাকিয়ে খুঁজছিলাম মানুষটাকে।
হুট করে চোখে পড়ল লম্বা চওড়া আমার ছোটবেলার বন্ধুটা সামনের দিকে এগিয়ে আসছে। আসার সাথে সাথে গাল ভরা হাসি নিয়ে জিজ্ঞেস করল কিরে কেমন আছিস। আমি সোশ্যাল মিডিয়াতে ছিলাম না , এই এক দুই মাস হল ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম আর যা যা করা যায় সবকিছুই খুলে ফেলেছি।
বিগত বহু বছর হল এসব থেকে বিরত ছিলাম। এই মানুষগুলোর সাথে একটা সময় কত মজা করেছি এরা আমার ছোটবেলাকার বন্ধু। আমরা সবাই একসাথে পড়তে যেতাম। তারপরে তো উচ্চমাধ্যমিকের সময় সাইন্স আর্টস বিভাজন হয়ে যায় ।আর তারপর উচ্চমাধ্যমিক শেষ হয়ে যে যার মত এদিক ওদিক কলেজে চলে যায়। তো এতকাল পরে ওর সাথে দেখা, ও উ কৃষ্ণনগর ফিরছে। তো দুজন মিলে গল্প করতে করতে যাওয়া হবে, এটা ভেবেই ভালো লাগলো।
ট্রেনে উঠে দুজন দুজনের তিন বছরের জীবন কাহিনী শুরু করলাম তারপর আমাদের আর বন্ধুদের কার কি হাল, সে নিয়েও গল্প হলো। স্কুল লাইফ এর বন্ধু পেয়ে সারাদিনের ক্লান্তিটা কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। ওর সাথে আমার কথাই হয়না। আসলে যে যার কাজে এত ব্যস্ত। তবে এরকম হুট করে দেখা আর তারপর আড্ডার আলাদা একটা মজা আছে, সেটা অনুভব করলাম।
সবথেকে অবাক লাগলো এটা জানতে পেরে যে ওর সম্পর্কটাও আর নেই। আমাদের বন্ধুদের যে কটা রিলেশন ছিল, সবারই ভেঙে গেছে ।কারোর ই আর ভালোবাসার সম্পর্ক গুলো টিকে নেই। কিন্তু যে যার মত করে নিজের লাইফ এগিয়ে যাচ্ছে। যারা একটা সময় ভালো ছিল না ,তারা এখন ভালো আছে। যাদের সদ্য ভেঙেছে তারা ভালো থাকার চেষ্টা করছে।
দুজন বন্ধুর গল্পে গল্পে ট্রেন যে কখন কৃষ্ণনগর থেমে গেলো, বুঝলাম না। সময়টা ভালো কাটলো। ছোটোবেলা আর তার সাথে জড়িয়ে থাকা গল্প সত্যিই অনেক সহজ সরল হয়।
দিদি আপনার হস্তশিল্প মেলায় অল্প কিছু সময় ঘোরাঘুরির যে অনুভূতি এবং সেই সাথে পুরনো বন্ধুকে ফিরে পেয়ে আড্ডায় মেতে সকল বন্ধুর একে একে খবর নেওয়া আসলে এগুলো সবই বাস্তব আমাদের সাথেও এরকম হয়ে থাকে এবং ওই সময়টায় এত আনন্দিত উৎফুল্ল হয়ে যাই যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। বেশ ভালো লাগলো আপনার এই ব্লকটি পড়ে এ জাতীয় ব্লক গুলো আমার কাছে খুবই ভালো লাগে পড়তে। অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
অনুভুতি ভাগ করে নেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আসল কথা কিন্তু আপনি নিজেই বলে দিয়েছেন দিদি,
"যে যার মত করে নিজের লাইফ এগিয়ে যাচ্ছে। যারা একটা সময় ভালো ছিল না ,তারা এখন ভালো আছে। যাদের সদ্য ভেঙেছে তারা ভালো থাকার চেষ্টা করছে।"
জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না, আপনাকে নিজেই নিজেকে ভালো থাকার ব্যবস্থাটা করে নিতে হবে। আর সেটা কারোর ওপর নির্ভর না হয়ে। আসলে আমাদের একা বেঁচে থাকতে শিখতে হবে, শুনতে খারাপ লাগলেও কঠিন সত্য এটাই।
যাইহোক,ভালো থাকিস 😒
শুনতে ভালই লাগলো । কারণ চেষ্টা করে চলেছি। তাই এই কঠোর সত্য গুলোকে বারবার মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে নিচ্ছি। দিক ভ্রষ্ট হলে হবে না আর। নিজেকে ভালো রাখতে হলে প্র্যাক্টিকাল হতে হবে। বহু রূপকথায় ঘুরে ফেলেছি।
আর তুই ভুল টা ঠিকঠাক ধরেছিস দেখি, পোস্টের খুঁটিনাটি খুঁটিয়ে পড়েছিস। যাইহোক সব ঠিক হয়ে যাবে আশা করি। আর সব শেষ অব্দি ঠিক হয়েই যায় ।
মেলার মাঠের ফটোগ্রাফি গুলো অনেক সুন্দর হয়েছে। বিশেষ করে একতারা নামক বাদ্যযন্ত্রটি অনেকদিন পরে আপনার এই পোস্টের মাধ্যমে দেখতে পেলাম। এ ধরনের মেলা ভ্রমণ করার মাধ্যমে অনেক অজানা জিনিসপত্র সম্পর্কে জানা যায়।
ধন্যবাদ ভালো থাকুন।