নাটের গুরু আইসক্রীম
ইউনিভার্সিটিতে সারাদিনের ক্লাস শেষ করে, দুই পাগলির সাথে ফিরছি। মেস বাড়ির দিকে ফিরছি তিন জন মিলে। নানান গল্প আর হাসাহাসি । এবার মাঝ পথেই একটা সুপার মার্কেট পরে - স্পেন্সার। আমাদের আগে থেকে কোন প্ল্যান ছিল না ওখানে ঢোকার ।কিন্তু চোখে পড়তে মনে হলো কিছু খাবার জিনিস কিনে নিলে ভালোই হয়। সেই মতন আমরা তিনজন ঢুকে গেলাম স্পেন্সারে।
এর আগে আমি আমার এক দিদির সাথে এবং আমার বন্ধুর সাথে স্পেন্সার এসছি। কিন্তু আমার মেসের দুই পাগলী হাবিবা ,আনাহারা এখানে এর আগে আসেনি। ওদের কাছে নতুন ছিল ।সুপার মার্কেটে ঢোকার পরে নানান খাবার জিনিসের চোখ পড়তে থাকলো ।আর ওরা আলোচনা করে বাস্কেটে ভেতর সব পুড়তে থাকল।
আমাদের নানান কথা নিয়ে হাসাহাসি দেখে মার্কেটে স্টাফরা পর্যন্ত হাসাহাসি শুরু করে দিয়েছিল ।এই পাগলী দুটোকে নিয়ে যেখানেই যাব সেখানেই মানুষ পাগল হয়ে যাবে ।বিস্কুট থেকে শুরু করে জুস পাস্তা প্রয়োজনীয় আরো কিছু জিনিস বাস্কেট ভরিয়ে ফেললাম ।তারপরে বিল করা হলো। টাকা পয়সা সব আমার পকেট থেকেই গেল । এক হাজার একশ দশ টাকার মত টোটাল বিল হয়েছে।
আইসক্রিম নিজের পছন্দমত ব্ল্যাকবেরি ফ্লেভারের নিয়েছি ।এই ফ্লেভারের আইসক্রিম এর আগে ওই দুটো পাগলী খায়নি। আমি জানতাম ওদের খেতে ভালো লাগবে। ব্যাগ ভারী হওয়ায় মেস বাড়ির দিকে ফেরার সময়, আমি, আনাহারা আর হাবিবা মিলে অল্টারনেট করে ব্যাগ ধরে ধরে আনছিলাম ।
ওখান থেকে আমাদের মেস বাড়ি হাঁটার পথে ১০ মিনিট মত লাগে ।শিথির মোড়ের কাছেই এই সুপার মার্কেটটা। যাই হোক নিয়ে আসতে আসতে আমরা ঘেমে ঘামেশ্বরীতে পরিণত হয়েছি। সকাল থেকে ক্লাস করতে করতে হাঁপিয়ে গেছি ।তার উপর দুটোর কথাবার্তায় পেট ব্যাথা ধরে যাচ্ছিল ।এই করে যখন বাড়ি ঢুকলাম ।সমস্ত জিনিস ঠিকঠাক করে রেখে ফ্রেশ হলাম।
ফ্রেশ হয়ে এখন আইসক্রিমের বার যেটা কেনা হয়েছে ,সেটা খুলেছি। চার জন মিলে আইসক্রিম খাওয়া চলছে ।খাওয়া শেষ হয়ে যাওয়ার পরে প্যাকেটের গায়ে অনেক আইসক্রিম লেগেছিল। আমি এদিকে হাত ধুতে গিয়েছি ,,হুট করে পেছন থেকে এসে আনাহারা আমার সারা মুখে আইসক্রিম লাগিয়ে দিল। আমিও হাতে যেটুকুনি লেগেছিল ,ওর গায়ে লাগিয়ে দিলাম ।
এই করতে করতে দেখি ওদিকে আর একজন হাবিবা আমার আর এক বান্ধবীকে আইসক্রিম মাখিয়ে দিয়েছে। আনাহারা তো প্যাকেট টা ই হাতে ধরে নিয়ে ঘুরছিল, ডান হাতে ভর্তি আইসক্রিম নিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার সারা মাথায় মাখিয়ে দিল ।আমি নিজেকে শত চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারলাম না ।কত ছুটবো ,আর এইটুকুনি তো জায়গা ,।।রাগারাগি করার উপায় নেই। তারপরে বাথরুমে ঢুকলাম আবার স্নান করার জন্য ।গা দিয়ে তখন ব্ল্যাকবেরি আইসক্রিমের গন্ধ বেরোচ্ছে।
স্নান করে বাথরুম থেকে বেরিয়েছি। বাথরুমের দরজার বাইরে যে আরেকজন অকাজ করার জন্য দাঁড়িয়ে আছে ,আমি জানতাম না। দরজা খুলতে না খুলতে দুজন মিলে আমাকে ধরে আইসক্রিম মাখিয়ে দিল ।কি জ্বালাতন। এই সব ধুয়ে আমি বেরোলাম আবার আমাকে স্নান করতে হবে ।আমিও ছাড়ার পাত্রী নয়। তখন আমার মাথা মেজাজ ক্ষেপে গিয়েছে। আমিও রীতিমতো ওদের পেছন পেছন ছুটছি। ওদের গায়ে মাখানোর জন্য।
এই করে করে সারা বারান্দাতে আইসক্রিম । খাওয়া দাওয়ার পরে জিনিসকে কিভাবে উপযুক্ত কাজে লাগাতে হয় সেটা মনে হয় এদের থেকেই শিখতে হবে। আইসক্রিমের জন্য সেদিন আমাকে তিনবার গা ধুতে হয়েছে ।সাথে ওদেরকেও। মাথা ভেজালে সন্ধ্যেবেলায় ঠান্ডা লেগে যায় আমার। কিন্তু আজ দু তিন দিন হয়ে যাচ্ছে। এখন অব্দি ঠান্ডা লাগে নি। এই আমার ভাগ্য ভালো। আমি বলে দিয়েছি আর কোনদিনও ওদের আইসক্রিম কিনে খাওয়াবো না ।আইসক্রিমের অপপ্রয়োগ করতে দেবো না আমি।
এই ছিল দুষ্টু মিষ্টি কিছু মুহূর্ত । শেয়ার করে ভালো লাগলো বেশ। ভালো থাকুন সকলে।
@isha.ish
ওয়াও দিদি নাটের গুরু আইসক্রিম দেখে লোভ সামলানো মুশকিল। আসলে আমি ভাবছিলাম আপনাদের ফ্লেভারের আইসক্রিম এর আগে ওই দুটো পাগলী খায়নি। ওদের কিনে দিয়েছেন সাথে আমরা ও থাকব । আইসক্রিম দেখে মনে হচ্ছে অনেক মজা। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
দিদি আপনারা পারেন ও বটে তিন পাগলি খুব আনন্দ করেছেন ৷জিনিস পত্র মনের মতো নিয়েছেন ব্যাগ ভর্তি ৷আইস্ক্রিম নিয়ে মুখে মাখা মাখি করার দরকার ছিল ৷আসলে সবাই পাগলি ৷
দিদি রাগ করছেন খুব সুন্দর দুষ্টু মিষ্টি মূহুর্ত টা ৷
বাবাগো এত শপিং করেছেন!!! আপনার স্টোরি পড়ে আমার একটি বন্ধুর কথা মনে পরে গেল। নাম ছিল হাবিবা। মাঝেমাঝে আমাদেরকে নিয়ে শপিং-এ যেত, ক্লাসমেট হওয়াতে আমরা যেতে বাধ্য থাকতাম, বুঝেন তো মেয়ে বান্ধুবি। শপিং করতে গেলেই পাগলামি করতো, তখন তার পাগলামী দেখে মার্কেটের স্থাপনাসহ হেসে ফেলে। আজকে সেই একই জিনিস আপনার পোষ্ট দেখলাম ভালই লাগলো।।
আপনার আইসক্রিম খাওয়ার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি ভিন্ন ধরনের ।যেমন সবার সাথে মজা করে আইসক্রিম খেয়েছেন ঠিক তেমনি সবাইকে আইসক্রিম মাখিয়ে দেওয়ার জন্য সারা বারান্দায় আইসক্রিম সরিয়ে ফেলেছিলেন ।সব মিলিয়ে খুব ভালো ছিল আইসক্রিম খাওয়ার দৃশ্যগুলো ।ধন্যবাদ আপনাকে।