পারিজাত - শেষ পর্ব

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

আশা করি সকলে সুস্থ আছেন। আমিও সুস্থ । শুধু এখনও গলা বসে আছে। সময় নেবে আরেকটু। আর তারপর সব কিছুর মত ঠিক হয়ে যাবে। গতকালের লেখার শেষ টুকু আজ শেয়ার করছি। আশা করি পারিজাত আপনাদের ভালো লাগবে।

20211101_135918.jpg

পারিজাত - শেষ পর্ব

আপনাদের সাথে শেয়ার করতে গিয়ে,পিছনে ফেলে আসা মাত্র কিছু সময়ের অতীতগুলোর কথা ভেবে বেশ মজা লাগছে। সময় মানুষকে কি অদ্ভুত ভাবে তাড়না করে নিয়ে বেড়ায়। এতক্ষণে হয়তো আমাকে নিয়ে রিসর্টে হাঙ্গামা শুরু হয়ে গেছে। হয়তো অনেকে খোঁজাখুঁজি করতে বেরিয়েও পড়েছে। আর এদিকে আমি খোলা আকাশের নিচে সূর্যমামার তত্ত্বাবধানে হেঁটে চলেছি ।বেলাটা বেড়ে গেছে তা বুঝতেই পারছি ।গাছের পাতার ফাঁক ফোঁকর দিয়ে কুয়াশা উঁকি দিচ্ছে এখন । ওরাও ভয় পাচ্ছে। আর একটু পরেই ওরাও হারিয়ে যাবে।

এভাবে প্রায় আরো কিছুক্ষণ সময় তলিয়ে গেল। লিখতে লিখতে আমি দশ মিনিট আগে আবার হাঁটা শুরু করেছি। অজানা রাস্তা কতদূর নিয়ে গিয়ে আমাকে দাঁড় করায় সেটাই দেখব। দূর থেকে একটা খোলা জায়গা চোখে ধরা দিচ্ছে ।মনে হচ্ছে কিছু একটা আছে ওখানে। একটু আগে পাশ দিয়ে প্রায় চারটে পাঁচটা প্রজাপতি খেলতে খেলতে বেরিয়ে গেল। আমার শহরের থেকে এই জায়গা অদ্ভুতভাবে আলাদা।
আজ খুব জটায়ুর কথা মনে পড়ছে। সীতা হরণের সময় কোথা থেকে যে বেটা চলে এসেছিল। আজ যদি ওরকম ভাবেই একটা ঈগল পাখিও উড়ে এসে আমাকে এই জায়গা থেকে উদ্ধার করার চেষ্টা করতো । সিনেমাটা আরো জমে যেত।

কিন্তু সিনেমা জমিয়ে দিতে কোনো ঈগল পাখি কিংবা রাবণ আসলো না। আসলো না কোনো নায়ক কিংবা পক্ষীরাজ ঘোড়া চড়ে রূপকথার কোনো রাজপুত্র। চোখের সামনে চলে এলো নামহারা একটা বন্যফুল। স্বর্গ - এর দেবদেবীদের বিলাসিতা ঘেরা জীবন থেকে হয়তো বড্ড অতিষ্ট হয়ে এই পারিজাত লুকিয়ে ছিল এই জঙ্গলের মাঝে। আর আমার চোখে ধরা পাবে বলেই হয়তো শুকিয়ে যায়নি এখনও।

আমার হারিয়ে যাওয়ার আসল কারণটা যে তুমি ,এখন বুঝতে পারলাম, পারিজাত ।
আলগোছে স্পর্শ নিলাম একবার।অত বড় জঙ্গলে দুই একাকিত্ব মিলেমিশে এক হল । মুহুর্ত তোলা থাকলো অদৃষ্টের খাতায়। ........

এখন আমি রিসর্টে। পারিজাত এর সাথে দেখা হওয়ার পরেই চোখে পড়ে লোকালয়। কিছুটা দূর হাঁটতেই একজন কাকুকে সব বলার পর , তিনি আমাকে রিসর্ট অব্দি দায়িত্ব সহকারে পৌঁছে দিয়ে গিয়েছেন। এখন রাত সাড়ে আটটা বাজছে। রিসর্টে এসে প্রফেসর এবং বন্ধুদের থেকে প্রাপ্ত বকুনিগুলোকে খেয়ে ,তারপর হজম করে চুপটি করে কম্বল মুরি দিয়ে বসে আছি আমি।

আর ভাবছি,
নামহারা বন্যফুলটা ওই সময় আমার কাছে পারিজাত হয়ে গিয়েছিল। আর আমিও নিজেকে খুব বিশেষ মনে করছিলাম ওর চোখ দিয়ে। সে ফুল হয়তো এতক্ষণে শুকিয়ে গিয়েছে এই তিন স্বর্গে।
কিন্তু অনুভব করতে পারছি - আমার পারিজাত অমর।

গল্পটি কিভাবে লিখে ফেললাম নিজেও বুঝতে পারিনি। আমার জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রিয় একজন মানুষকে নিয়ে লেখা এই গল্প। আসলে সবার জীবনেই এরকম ভাবে কেউ না কেউ ক্ষণিকের জন্য পারিজাত হয়ে আসে। আর নামহারা বন্যফুলটা যেমন টের পায়নি যে, সে একজনের কাছে পারিজাত নাম পেয়েছে। ঠিক সেইভাবে সেই মানুষগুলোও টের পায় না। বন্যফুল শুকিয়ে গেলেও ,সেই মানুষগুলোর সেই ভার্সান (আমার পারিজাত)অমর হয়ে থেকে যায়।

আবার অন্য কোনো লেখা নিয়ে হাজির হব। ততক্ষণে সকলে ভালো থাকুন।
@isha.ish

Sort:  
 2 years ago 

গল্প টি ছোট হলেও দারুন ছিল।প্রথম পর্ব পড়েই আন্দাজ করেছিলাম দারুন হবে।কোন ঘোড়ায় চড়া রাজকুমার এসে উদ্ধার করলে আরো দারুন হত।কিন্তু এখন তো রাজ্যপাট উঠে গেছে।হাহাহা।ধন্যবাদ সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

গল্পটি খুব সুন্দর হয়েছে। এই গল্পটি পড়ে আমার খুব ভালো লাগলো। খুব অসাধারণ ভাবে আপনি এই গল্পটি বর্ণনা করেছেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের মাঝে এই গল্পটি শেয়ার করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 66937.04
ETH 3270.78
USDT 1.00
SBD 2.74