বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আমার সৃজনশীলতা 'আমার বাংলা ব্লগ' নিয়ে - ক্লে দিয়ে দাদার মূর্তি তৈরির চেষ্টা
নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন।দেখতে দেখতে আমাদের এই প্রিয় কমিউনিটির এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে ।যত দিন যাচ্ছে আমাদের পরিবার আরো বড় হয়ে উঠছে ।এই কমিউনিটিকে ভিত্তি করেই আমাদের কত শখ আহ্লাদ এবং স্বপ্ন ! আর যদি কমিউনিটি না থাকতো তাহলে সেটা তো সম্ভব হতো না । হত হয়তো অন্য কিছুর মাধ্যমে। কিন্তু আমাদের সকলের দাদা ,আমার প্রিয় @rme দাদা খুব যত্নসহকারে আমাদের স্বপ্নগুলো এবং বাংলার এত এত গুণাবলী একত্রিত করতে এই কমিউনিটি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন ।
এক বছর পূর্তিতে কি করবো, কি সৃজনশীলতা দেখাবো, তা নিয়ে বড়ই চিন্তায় ছিলাম। প্রথমে ভাবছিলাম আমার বাংলা ব্লগ নিয়ে একটা গান লিখব। আসলে মুড না হলে তো সবকিছু হয় না ।গানের দু-চার লাইন লেখার পরে আর লিখতে পারলাম না ।তাই সেই আইডিয়া মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম। প্রিয় কমিউনিটির বছর পূর্তিতে আমাদের সবারই কিছু না কিছু তো করতে ইচ্ছা করবে ।
দাদাকে মাটি দিয়ে বানানোর প্রচেষ্টা
হঠাৎ মাথায় একটা আইডিয়া আসলো যদি মাটি দিয়ে কিছু বানানো যেত ।কিন্তু আমি মামার বাড়িতে ছিলাম। মামার বাড়িতে এই যে মাটি দিয়ে আমার বাবা কাজ করে থাকে ,আমাদের কারখানায় দোকানে যে মাটি দিয়ে কাজ হয় ,সেই মাটি নেই ।আইডিয়াটা ভেস্তে যাবে যাবে এরকম করছিল ,তখনই মাথায় আর একটা বুদ্ধি আসলো।
আগের বছর যখন এসেছিলাম, বোনেদের জন্য কালারিং ক্লে নিয়ে এসেছিলাম ,আর আমার আইডিয়াতে ছিল যে ওরা সেগুলো কোন কাজে লাগায়নি ,ওইভাবে যত্ন করে তুলে রেখেছে । আমার আইডিয়া ঠিক হলো। আমি আমার ছোট বোনকে বলাতেই ও ঝটপট ওই মাটি গুলো বের করে দিলো।
মাটিগুলো হাতে পেয়ে মাথার মধ্যে নানারকম আইডিয়া ভাবতে থাকলাম। প্রথমে ভাবলাম আমার বাংলা ব্লগ এর ওপর একটা লোগো তৈরি করব ।সেটা কেমন লোগো হবে ,এই নিয়ে যখন অনেক চিন্তাভাবনা করছি ,তখনই মাথায় আর একটা আইডিয়া আসলো - যে যদি আমি দাদাকে বানাতে পারি ।কারণ দাদাই তো এই কমিউনিটি কত পরিশ্রম করে দাঁড় করিয়েছেন। আর দাদার হাতে যদি আমার বাংলা ব্লগ এই টাইটেল টা ধরিয়ে দিতে পারি। দেখতে খুব সুন্দর লাগবে।
কিন্তু দাদাকে বানাবো কি করে ,আমি তো অত বড় শিল্পী নই । গত ক্রিসমাসে একটা সান্তাক্লজ তৈরি করতে গিয়ে আমার বাবার নাম খগেন হয়ে গিয়েছিল । এইটা কিভাবে আমি পারবো আমার মাথায় ঢুকছিলো না। তবুও চেষ্টা করতে তো দোষ নেই ।তাই শুরু করে দিলাম।
মামার বাড়িতে কোনকিছুরই আয়োজন ছিল না ।আমার বাড়িতে এসব কাজের জন্য চারিদিকে কত যন্ত্রপাতি পড়ে থাকে, কিন্তু মামার বাড়িতে এ সব কিছুই ছিলনা।
তবুও ইচ্ছা থাকলে কত কিছুই না হয়! আমি কিভাবে কাজটা করে ফেললাম আমি নিজেও জানিনা ।কল্পনাও করতে পারিনি এতটা দাঁড় করিয়ে ফেলতে পারব।
আমি জানি মুখের গড়ন দাদার মতো হয়নি ।কিন্তু দাদার ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি আনার চেষ্টা করেছি।😅 বাকি যা আছে নিজের মনমতো করেছি ।পুরো ফিগারটার সাইজ মাত্র ১৪ সেন্টিমিটার । অত ছোটর মধ্যে কাজ করা একটু আধটু কথা না ।বিশ্বাস করুন আমার হাত কাঁপছিল যখন ছোট ছোট জায়গায় কাজ করছিলাম ।এই ধরুন গোঁফ লাগানো থেকে শুরু করে জ্যাকেটটা কে পড়ানো । কাজ করতে গিয়ে বুঝলাম যে বাবা কেন বলে - ছোট কাজ করতে গিয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।
সব মিলিয়ে একটা দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে কাজ করাতে ।আমার বাংলা ব্লগ এর প্রথম বছর পূর্তি উপলক্ষে এই কাজটা করতে পেরে আমার খুবই ভালো লেগেছে ।চলুন আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করে নিই - কিভাবে গোটা কাজটা দাঁড় করালাম।
খুঁজে খুঁজে বার করলাম একটা থারমোকল, যেটাকে আমি বেস বানাবো। বাড়িতে থাকলে হয়তো এটা কাঠের হত।তারপর চাকুর সাহায্যে কাটলাম। বাড়ীতে থাকলে হ্যাকসো ব্লেড দিয়ে কাটতে পারতাম।কেটে আমার চোখের আন্দাজ মত একটা বেস বানিয়ে ফেললাম।
অনেক খুঁজে জোগাড় করেছিলাম তার। কপাল রে, স্টোর রুমে পরে ছিল মেঝেতে। আমার জন্যই হয়তো পড়ে ছিল। পুরো মূর্তিটা দাঁড় করাতে একটা ভিত তো লাগবেই। সেটাই হলো এই তার। আর এবার তার টা প্লাস দিয়ে কেটে নিলাম।দাদার পা তৈরি করতে যতটা লাগবে, সেই মত।
তার দুটো থার্মকলের ওপর বসিয়ে দিলাম।
নীল রঙের ক্লে নিয়ে দাদার প্যান্ট তৈরি করছি। প্রথমে হাতের তালুর সাহয্যে নীল মাটির একটু রোল করে নিয়ে তারের চারদিক দিয়ে লাগিয়ে নিয়ে, হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে টিপে প্যান্ট এর আকৃতি তৈরি করলাম।
কালো মাটি নিয়ে নিলাম। ক্লে এর সাথে তিনটি চেয়ারি দিয়েছিল অনলাইন থেকে। বাড়ীতে আমার অনেক ধরনের চেয়ারি আছে। যাইহোক এই দিয়েই প্যান্ট টা একটু উঁচু করে নিয়ে কালো মাটি চাপালাম আর জুতোর আকৃতি আনলাম।
প্যান্ট তৈরি শেষ হয়ে যাওয়ার পরে থাইয়ের দুই জায়গার উপরে বসিয়ে দিলাম আরো দুটো তার ছোট ছোট, এর ওপরে বডিটাকে দাঁড় করাতে হবে।
এর জন্য আমি কমলা রং ব্যবহার করছি। কমলা রঙের টি-শার্ট ভেতরে রাখব। তাই কমলা রঙের ক্লে হাত দিয়ে টিপে টিপে শরীরের আকৃতি বানানোর চেষ্টা করলাম।
এবারের বডিটাকে তারের মধ্যে ঢুকিয়ে বসিয়ে দিলাম। আর মাথা তৈরি করব বলে মাথার কাছটাতে আবার একটা ছোট তার ঢুকিয়ে দিলাম।
হালকা গোলাপি আর কমলা রঙের মাটি মিশিয়ে তৈরি করে নিলাম স্কিন কালার। তারপর সেটা দিয়ে গোল বানিয়ে মাথার আকৃতি দিয়ে তারের মধ্যে ঢুকিয়ে বসিয়ে দিলাম। চেয়ারির সাহায্যে গলা নাক মুখের গঠন আনার চেষ্টা করলাম।
এবারে নিলাম বেগুনি রংয়ের মাটি ।তারপর কিছুটা পরিমাণ মাটি নিয়ে হাতের সাহায্যে চ্যাপ্টা করে দাদার শরীরের দুই পাশে কাঁধের জায়গা থেকে নিচে নামিয়ে দিলাম ।জ্যাকেটটা যেন একটু খোলা টাইপের দেখতে লাগে। সেই কারণে ।আর এইভাবে জ্যাকেটটা আস্তে আস্তে যেমন দেখতে হয় সেরকম তৈরী করে নিলাম।
বেগুনি রং এর সাহায্যে হাতের জায়গাটুকু নি করে নেওয়ার চেষ্টা করলাম ।তারপরে হাতের সামনে অংশটুকু স্কিন কালার যেটা বানিয়েছিলাম সেটা দিয়ে বানিয়ে নিলাম। আর হাতটা কে দু দিকে বিস্তৃত করলাম, মাঝখানে ছোট একটা কাগজ মাপ করে কেটে বসিয়ে দিলাম।
কালো রঙের মাটি নিয়ে দাদার মাথার চুল বানানোর চেষ্টা করলাম ।দাদা মাঝেমধ্যে পোস্ট করে, সেখান থেকে আমি দাদার চুলের যেরকম গঠন দেখেছি ,সেরকম আনার চেষ্টা করেছি ।সাথে দাড়িটাও ওরকম বানানোর চেষ্টা করলাম।
থার্মোকলের সাদা অংশটা বাজে লাগছিল তাই সবুজ রঙের প্লে দিয়ে ঢেকে দিলাম।
কাগজটার ওপর সুন্দর করে আমার বাংলা ব্লগ লিখে দিলাম।
কালো দিয়ে চোখে জায়গা টুকুনি করার চেষ্টা করলাম।
আর এভাবে প্রায় টানা তিন ঘন্টা সময় কাজ করেছি।তারপর পূরণ হয়ে গেল দাদার মূর্তি তৈরীর স্বপ্ন। প্রথম কথা এরকম ছোট ফিগার আমার বাড়িতে অসংখ্য হয় ।আমি নিজেও দেখেছি প্রচুর ।কিন্তু করার চেষ্টা করিনি। মাত্র ১৪ সেন্টিমিটার এর মধ্যে যে এতটা কিছু করে ফেলতে পারবো, আমি এখনো অব্দি নিজের হাতকে বিশ্বাস করতে পারছি না। প্রতিবারে দাদার জন্য আমি নানান ভাবে নিজের ভেতরের গুণগুলোকে চিনতে পারি এবারেও একইভাবে সেটাই হলো।
"আমার বাংলা ব্লগ" পরিবারের সকলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আমার প্রিয় দাদাকে আমার তরফ থেকে অনেক অনেক ভালোবাসা। আমার সকল মডারেটর দাদা দিদিদেরও অনেক অনেক অভিনন্দন। এভাবেই আমাদের পরিবার আরো সমৃদ্ধ হয়ে উঠুক।
আপু আপনার সৃজনশীলতার দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। আপনি ক্লে দিয়ে খুবই সুন্দর হবে দাদার মূর্তি তৈরি করেছেন। আপনি খুবই পরিশ্রম, ধৈর্য এবং সময় দিয়ে এত সুন্দর ভাবে দাদার মূর্তি তৈরি করেছেন দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়ে গেলাম আপু। আপনার কাজের প্রশংসা করতেই হয়। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
আপু আপনি অনেক সুন্দর করে ক্লে দিয়ে দাদার মূর্তি তৈরি করেছেন। দেখতে অসাধারণ লাগছে। আপনি সবসময় আমাদের সাথে অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে হাজির হন। আজকের টাও ব্যতিক্রম নয়। আপনি অনেক দক্ষতার সাথে কাজটি সম্পন্ন করেছেন। দাদার মূর্তিটি আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোষ্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইল।
আপনাদের ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো আমারও!
আপু আপনার তৈরি মুর্তি দেখে অনেকক্ষণ হেসেছি। বোঝায় যাচ্ছে অনেক চিন্তাভাবনা এবং পরিশ্রমের ফসল। তবে হেসেছি কারণ আপনি দাদাকে পুরই "মাইকেল মধুসূদন দত্ত" বানিয়ে ফেলেছেন।
একদম দারুন একটি জিনিস আমাদের মাঝে উপহার দিয়েছেন আপু। আপনি তো আমার ধারণাটা কি চুরি করে নিয়েছেন দেখছি🤪🤪। আমিও এরকম কিছুই ভেবে রেখেছিলাম। তবে বিভিন্ন কারণে করা হচ্ছে না ।আমার খুবই ভালো লাগলো আপনার সাথে আমার ধারণা অনেকটাই মিলে গেল দেখে ।খুব সুন্দর হয়েছে এই কাজটি।
মাটি দিয়ে চমৎকার সুন্দর একটা জিনিস তৈরি করে আজকে আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন দিদি। হা মাটি দিয়ে জিনিস তৈরি করার ক্ষেত্রে আপনার দক্ষতা রয়েছে তা দেখেই বুঝতে পারা যাচ্ছে। টানা তিন ঘণ্টা সময় কাজ করে এমন সুন্দর একটা জিনিস তৈরি করে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন এর জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমার বাংলা ব্লগের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আপনি খুবই সুন্দর একটি ডাই প্রজেক্ট আমাদের মাঝে হাজির করলেন। সত্যিই আমার বাংলা ব্লগে সবার প্রিয় দাদার মূর্তি দেখতে পেয়ে আমার খুবই ভালো লাগলো। আপনি খুবই সুন্দর এবং চিন্তাধারার মাধ্যমে এই প্রজেক্টটি তৈরি করেছেন।টানা তিন ঘণ্টা কাজ করে আপনি সফল হয়েছেন। আপনার এই মূর্তিটি আমার কাছে অনেক ভাল লেগেছে। আপনার জন্য রইল শুভকামনা।
যদিও ফেসটা একটু এলোমেলো হয়েছে তারপরও @rme দাদার মূর্তি বানানোর প্রচেষ্টা কে আমি সম্মান জানাচ্ছি। অত্যন্ত চমৎকার হয়েছে আপনার মূর্তিটি। প্রত্যেকটা ধাপ আপনি খুব সুন্দর করে আমাদের মধ্যে উপস্থাপন করেছেন। দাদার মূর্তি বানানোর প্রত্যেকটি ধাপ আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
এরকম কাজ করা আমার দ্বাড়া প্রায় অসম্ভব এর ও অনেক অনেক উর্ধে।দাদার মতো না হলেও আপনার মনের ইচ্ছাটাই তো বড় বিষয়।এ ভালোবাসার কোনো দাম হয়না।
হাহাহা, চেষ্টা করলেই সব হবে। হ্যাঁ, ইচ্ছেটা ছিল। পূরণ হয়েছে। আমি খুব খুশি।
আমি সম্মান করি আপনার এই সৃজনশীলমূলক কাজটিকে। মাথার চুল গুলো দেখতে প্রায় দাদার মতো হয়েছে। সবচাইতে বেশি আকর্ষণীয় হয়েছে আমার বাংলা ব্লগ লেখা প্ল্যাকার্ডটি। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোষ্ট উপহার দেওয়ার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ। আপনার কথাতে একটু স্বস্তি পেলাম।
মাত্র 14 সেন্টিমিটার ফিগারের এই পুতুলটি বানাতে বেশ খাটনি হয়েছে তা দেখে বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু আপনার এই আইডিটি কিন্তু বেশ দারুন হয়েছে। আমার তো বেশ ভালই লেগেছে।
একদমই দাদা, হিহি, এত গুলো বুদ্ধিমান দাদার বোন বলে কথা!!!আইডিয়া তো ভালো হবেই।