সরস্বতী পুজোর বাজার|| ১০% বেনিফিট @shy-fox এর জন্য
নমস্কার বন্ধুরা ।আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। এই দুদিন ধরে সরস্বতী পুজোয় কেমন মজা করলাম সেই নিয়ে পোস্ট করেছিলাম ।চলুন আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করে ফেলি তার পূর্বের কিছু ঘটনা। আপনাদের সাথে গল্প করতে আমার খুবই ভালো লাগে। তাই জন্যই তো আমার সবকিছু আপনাদের সাথে আমি প্রত্যেকদিন শেয়ার করি ।তাহলে এটা কেন বাদ রাখবো ।
সরস্বতী পুজোর আগের দিন আমি ঠিক করলাম যে বাজার করতে যাব। সকাল থেকে বৃষ্টি এত পরিমাণে হচ্ছিল যে ,ভাবতে পারিনি এই স্বপ্ন আমার পূরণ হবে। কারণ এর আগে আমি কখনও বাজার করিনি পুজোর। এছাড়াও আমি সবজি বাজার কখনো একা হাতে করিনি ।প্রথমবার ঠিক করেছি যে বাজার করবো।
আমার পিসেমশাই কে সাথে নিয়ে বাজার করব ,কিন্তু যখন দেখলাম বৃষ্টি কমার নাম নিচ্ছে না ।তখন ওই বৃষ্টির মধ্যেই বেরোতে হলো। হাতে বড় বড় দুটো ব্যাগ , মায়ের কাছ থেকে ২০০০ টাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম সরস্বতী পুজোর বাজার করতে ।আমাদের রাস্তাটায় এত জল থাকে। আমিতো পা টিপটিপ করে হেঁটে হেঁটে এগোচ্ছিলাম।
পাড়ার মোড়ের মাথা থেকে টোটো তে চেপে তারপর গিয়ে একটু শান্তি হলো। আমার হাতে একটা আর ওনার হাতে একটা মোট দুটো ছাতা ছিল। কিন্তু বাজার করতে গিয়ে কি সবসময় ছাতা মাথায় রাখা যায়! তারমধ্যে ঝোড়ো হাওয়া ।আর কি ঠান্ডা। সব মিলিয়ে একটা দুর্দান্ত পরিবেশ ।বেশ মজা হচ্ছিল।
আমার বৃষ্টি বেশ ভালো লাগে ।আমি বৃষ্টির দিনে বাইরে বেরোতেও ভালোবাসি। কিন্তু এই বৃষ্টি ঠান্ডার বৃষ্টি ।তাই একটু অসুবিধা করছিল ।আমাদের এখানে সবথেকে পুরনো বাজার গোয়ারী বাজার। টোটো করে সোজা সেই বাজারের মুখে নেমে পড়লাম। দেখলাম বৃষ্টির দিন হলেও বাজারে প্রচন্ড ভিড়।
তবে হ্যাঁ পুজোর দিনের আগে যে ভিড়টা থাকে, সেই ভিড় সেদিন ছিল না। বৃষ্টির জন্য হয়তো সবাই লেপ কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘরের মধ্যে বসে আছে আর খিচুড়ি খাচ্ছে ।যাইহোক প্রথমেই চলে গেলাম ফলের দোকানে। মা আমাকে যাওয়ার সময় লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছিল, কি কি আনতে হবে ।আমি ফল কিনতে শুরু করলাম বেছে বেছে।
আমি সব রকম ফল কিনলাম আপেল, কমলা লেবু ,কুল তরমুজ ,কলা ,নাশপাতি, পেয়ারা ,আঙ্গুর আর কিছু বাকি ছিল না বললেই চলে। মা আমাকে বলেছিল সব রকম ফল ৫০০ করে কিনতে। আমি সেই মতই কিনেছি। তারপরে ওখান থেকে চলে গেলাম দশকর্মার দোকানে। প্রথম বাজার করার মজাটাই আলাদা ছিল। পিসেমশাই ও সেরকম বাজারে পটু নয়।
কিচুজন জন রয়েছে ,বাজার করতে দিব্যি পারে ।জিনিসের দাম একনাগাড়ে বলে ফেলতে পারে ।আমরা সে জায়গায় একেবারেই লবডঙ্কা ।আমি জানিনা কি হচ্ছিলো ওই সময় আমার সাথে ।তবুও আমি শুধু কিনতে থাকছিলাম। হাতে যখন টাকা আছে। তখন কিনবো না কেন ।আর সরস্বতী পুজোর বাজার বলে কথা। মন ভোরে মা কে ভোগ চড়াবো ।
দশকর্মার দোকানে গেলাম তারপরে মন পছন্দ করে কিছু মোমবাতি কিনলাম। আমার একটাও চাঁদ মালা ভালো লাগছিল না। তাই চাঁদ মালা কিনিনি ।এছাড়া মায়ের কথা মত যা যা জিনিস কেনার কথা, সবই কিনেছি। তারপর গেলাম খই মুড়কি বাতাসার দোকানে ।সেখানে গিয়ে বাতাসা, খই ,গোবিন্দভোগ চাল,কদম, ছাঁচ এসব কিনলাম ।
আমি পিসেমশাই এর হাতে ব্যাগ ধরিয়ে দিয়েছিলাম। আর আমার হাতে কিছুই ছিল না ।শুধু ছিল ছাতা আর টাকার ব্যাগ। বাইরে বেরিয়ে আসার পরে এক জায়গা থেকে বেলপাতা, আমের শাখা ,জবের শীষ, দোয়াত, পেন এসব কিনলাম ।পলাশফুল কিনলাম ।
সেদিন বাজারে যা দাম বলছিল ওনারা ,আপনাদের বলে বোঝাতে পারবো না। মা আমাকে আগেই বলেছিলো পুজোর আগের দিন যাস না। তার আগেরদিন যা,তাহলে কমদামে জিনিসপত্র পাবি ।কিন্তু বাড়ির কিছু কারণে আগের দিন না যাওয়ায় পুজোর আগের দিনই যেতে হলো। আর এত এত দাম নিচ্ছিল দোকানদারেরা ।যাইহোক এই সময়টাতেই শুধু ওরা আমদানি করবে। তাই জন্য এটা নিয়ে আর কারো র সাথেই তর্ক বাড়ালাম না।
তারপর ওখান থেকে আবার টোটো করে চলে গেলাম ফুলের দোকান গুলোতে। আমাদের কৃষ্ণনগর এ পোস্টঅফিসের মোড়ে প্রচুর ফুলের দোকান। সেখানে এক একটা গাঁদাফুলের দাম জিজ্ঞেস করতে আমার মাথা ঘুরে উঠলো। একটা গাঁদা ফুলের মালার দাম ৪০ টাকা করে বলছিল ।কিন্তু কিছু করার নেই ।মায়ের কথা মতো হলুদ গাঁদা ফুলের মালা দুটো ,কমলা দুটো আর রক্তগাদা দুটো মালা কিনলাম।
আর দোকানদার জেঠু র সাথে খুব জেদাজেদি করে আরো কয়েকটা পলাশফুল ফ্রিতে দিয়ে দিতে বললাম। ভালোবেসে তাই দিলেন। এবার বাজার ঘাট করার পর ডাইরেক্ট দোকান থেকে টোটো নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম ।এই ছিল আমার পুজোর বাজার ।
এইভাবে সকাল টা কেটে গেল। রাতের বেলায় ঠাকুর আনতে যাওয়া। আমাদের যে ঠাকুর টা রয়েছে। সেই ঠাকুরটা আমাদের কৃষ্ণনগরের একজন বিখ্যাত ঠাকুরের শিল্পী অলোক পাল কাকা করেছেন। আমার বাবার বন্ধু হন ।আমার বাবা ঠাকুর করেন না ।তাই কাকাকে দিয়ে আগেরবার সুন্দর করে আমার মন পছন্দ মতোই ঠাকুর করে নিয়েছিলাম।
ওই সময় ঠাকুরের সাজ অন্যরকম ছিল। আমি চেয়েছিলাম ঠাকুর টা যেন বিসর্জন না দিই। তাই এবারেও বিসর্জনের বদলে আমরা ঠাকুরটা কে সাজিয়ে নিয়েছি। সাজ বদলে নিয়েছি ।পুনরায় কাকা ঠাকুর টা ঠিক করে রং করে,নতুন চুল লাগিয়ে, পেছনের চাঁদোয়া থেকে শুরু করে বাকি সাজ পোশাক এবং শাড়ি টা পর্যন্ত ঠিক করে দিয়েছে।
নতুন করে সবকিছু শুধু কাঠামো পুরনো। বাবার সাথে আর ভাইয়ের সাথে ঠাকুর আনতে চলে গেলাম কারখানায় ।সেখানে যেতে বেশ ভালো লাগে আমার। যখনই যাই চারিদিকে ঠাকুর আর ঠাকুর । আর এত সুন্দর করে অলোক কাকা কাজ করে ,দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই ।
তারপরে ওখান থেকে ঠাকুর নিয়ে টোটো করে বাড়ি আসলাম। বাড়ি আসার পরে ঘর সাজানো হলো অল্প করে। তারপর ঠাকুরের জায়গায় ঠাকুর কে বসিয়ে রেখে, ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় ঘুমের দেশে চলে গেলাম।
আশা করছি আমার আজকের পোষ্ট আপনাদের সকলের ভাল লেগেছে ।সকলে ভাল থাকুন।
পুজোর মার্কেট দেখে মনে হচ্ছে ভালো ভাবে করেছেন দিদি। তবে বৃষ্টিতে মনে হচ্ছে আষাঢ় মাসে পুজোর মার্কেট করতে বের হয়েছেন।শুভকামনা রইল আপনার জন্য দিদি
হাহাহা, ঠিক তাই। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
সরস্বতী পুজোর আগের দিন ঠাকুর কেনা আর বাজার করার অভিজ্ঞতা আমার আছে। সত্যি কথা বলতে আপনাদের ওখানে গাঁদা ফুল তো তাও ৪০টাকা নিচ্ছিল আমাদের এখানে ৫০ টাকার নিচে গাঁদা ফুল দিচ্ছিলই না। কতটা বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে আপনি গেছেন সেটাই ভাবছি। আমরা এইবার পুজোর দুদিন আগেই ঠাকুর কিনে বাজার করে নিয়েছিলাম। খুব সুন্দর একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে বুঝতেই পারছি, আর পুজোর বাজার করার কিন্তু একটা আলাদাই আনন্দ আছে। ঠাকুরটা খুব সুন্দরভাবে সাজিয়েছেন আর ঠাকুরের চাঁদমালাটা তো মনে হয় আপনার হাতে বানানো ছিল। আজকের পোস্টটি সবমিলিয়ে খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। পড়ে খুব ভালো লাগলো।
একদম ঠিক ধরেছেন দেখি, হ্যাঁ আমিই বানিয়েছি। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে দিদি, সবটা খুব সুন্দর করে পড়েছেন, বোঝাই যাচ্ছে, আমারও ভালো লাগলো আপনার কমেন্ট পড়ে।
বাহ্ পূজার বাজার টাও তো দেখছি বেশ জমজমাট ভাবে করেছেন। কিন্তু সত্যিই আপনাকে স্যালুট যে এত বৃষ্টিতেও বাজারে গিয়েছেন। ধন্যবাদ আপু দিনটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। অনেক অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে দিদি।