বাঁদর বাবাজি || ১০% বেনিফিট @shy-fox এর জন্য

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

দাদুর কাছে শুনেছি আমাদের ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতে মোট বারোটা কুকুর ছিল। আর একটা শালিক পাখি ছিল ।শালিক পাখির নাম ছিল কেষ্ট ।সে পরবর্তীতে অসুখে মারা যায় ।আর ওই কুকুরগুলো এক এক করে সময়মতো চলে গেছে ।

monkey-4036088_1280.jpg

সোর্স

এর সাথে আরো কথা শুনেছি আমার বাবাদের ছেলেবেলায় আমাদের বাড়িটা একটা চিড়িয়াখানা ছিল ।টিয়া পাখি থেকে শুরু করে ময়না ,শালিক ,কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর, মাছ আর সব থেকে যেটা খুবই হাস্যকর জিনিস একটা বাঁদর ।হ্যাঁ বাঁদর ছিল। এসব শুনলে স্বাভাবিকভাবেই কাউকে আর বলতে হবে না এটা চিড়িয়াখানা নয় ! আমার বাড়ির লোকজন সবাই চিড়িয়াখানার বাসিন্দা।

তখন ছেলেবেলায় আমি নিজের চোখে দেখেছি আমার বাড়ী ভর্তি লোকজন ।এখন সে জায়গায় আমি ,মা ,ভাই আর বাবা এখন তো আমিও নেই। কলকাতায় এসে বসে আছি ।বাড়িতে তিনজন ভূতের মত থাকে। বাবাতো সকালবেলায় কাজে বেরিয়ে যায়। সন্ধ্যাবেলায় বাড়ি ঢোকে।ঈশান আর মা মিলে সারা বাড়িতে রাজত্ব করে ।ভাগ্যিস ঈশান টা হয়েছিল ।বাড়িজুড়ে তাও একটা বাচ্চা ছেলে খেলে বেড়ায় ।ঘুরে বেড়ায়। সারা বাড়ি জুড়ে আমার মা চেচিয়ে বেড়ায় ওর পেছনে পেছনে ।বাড়িটা ভরপুর থাকে। ও যদি না থাকতো তাহলে হয়তো ওটা শ্মশানে পরিণত হয়ে যেত ।

ঠাম্মা দাদু চলে যাওয়ার পরে বাড়িটাকে খুব একা লাগে ।যতবার বাড়ি ছেড়ে এদিক-ওদিক যাই ,খুব খারাপ লাগে। মনে হয় বাড়িটাকে একা রেখে যাচ্ছি ।
তো যেটা বলছিলাম আজকে আমি একটা দাদুর মুখ থেকে শোনা ঘটনা বলবো।

ওই যে বললাম বাঁদর টার কথা। আমার বাবারা দুই ভাই আর বোন চার ।বোনের মধ্যে আবার কিছু জনের বিয়েও হয়ে গিয়েছিল ।তারা মাঝে মধ্যে বেশিরভাগ সময় বাপের বাড়িতে এসে থাকতো ।হঠাৎ আমার দাদু বাড়িতে ।সবাই মিলে হৈ হুল্লোর করত ।সারাবাড়ি মাতামাতি হয়ে থাকত। বড় জেঠু ছেলেমেয়েরা আমার থেকে বয়সে বড়, আমার বাবার বয়সী বলা যেতে পারে। আমার বাবা বাড়ির সব থেকে ছোট ।বাবার ছেলে বেলায় বাবা কাকা হয়ে গিয়েছে এরকম অবস্থা।

তো বাড়ী ভর্তি লোকজন আর সাথে চিড়িয়াখানা থেকে উঠে আসা জীবজন্তু নিয়ে হইহুল্লোড় ।একদিন একটা কান্ড ঘটল সেটাই আজকে বলবো ।ওই যে বাঁদরটা ছিল ।তার নাম ছিল ছিল ষষ্ঠী ।এত সুন্দর নাম ওর সাথে যায়না ।তা হয়তো গল্পটা শেষ করলেই বোঝা যাবে।

বাড়ির এই বাঁদর নিয়ে সবাই বেশ মাতামাতি করতো ।কারণ পাড়ার মধ্যে বাঁদর কারোর বাড়িতে ছিল না ।আমার দাদুকে ষষ্ঠী ভীষণ ভালোবাসতো। দাদুর কাছে ভাত খাবে। দাদুর সাথে ভাত খাবে। দাদু ছাড়া কারোর হাতে ভাত খাবে না। কেউ দিলে খাবেইনা। এই জেদ ওর বরাবরই নাকি ছিল ।ও সকাল থেকে নাকি আমাদের কলতলায় নারকেল গাছের পাশে বাধা থাকতো। আবার কখনও কখনও দাদু ওকে নিয়ে নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরতো। দাদুর হতেই ও বড় হয়েছে ।

বাড়ীতে যে কটা কুকুর ছিল, সবকটা কুকুর আমার জেঠুর ধরে ধরে আনা। রাস্তা থেকে কুড়িয়ে নেওয়া বিড়াল গুলোকে । তাই আমি অবাক হয়ে যাই এতগুলো মানুষজন আর এতগুলো জীবজন্তু নিয়ে বসবাস করতো কি করে এরা! ভগবান জানে! কিন্তু ভেবে বেশ মজা লাগে এরকম জমজমাট পরিস্থিতিতে থাকতে কার না ভালো লাগে! মন তো সবসময় উৎফুল্ল থাকবে! এরকম পরিস্থিতিতে। এজন্যই তো বাড়িতে একটা বাচ্চা থাকলে মন প্রাণ আনন্দে ভরপুর হয়ে যায় ।

একদিন ষষ্ঠী কে নারকেল গাছের পাশে বেঁধে রেখে দাদু মুদিখানা দোকান গেছে কিছু জিনিস কিনতে। সকালবেলায় ষষ্ঠীর খাবার সময় হয়ে গেছে ।আমার বড় পিসি একটু পাকামি করে আমার ঠাকুমাকে বলে যে ষষ্ঠী কে খাবার দেবে। ঠাকুরমা যদিও এসব ব্যাপারে নাকি প্রথম থেকে নাক গলাত না। যত পশুপাখি নিয়ে বসে থাকতো আমার বাবা ,জেঠু, পিসি এবং দাদু মিলে ।ঠাকুরমাও এক থালা ভাত ভরে পিসির হাতে দিয়ে দেয় ।তখন পিসির বয়স বেশি নয়, হবে হয়তো পনেরো বছরের কাছাকাছি ।

থালা নিয়ে গিয়ে ষষ্ঠীর সামনে রেখেছে।ষষ্ঠী চুপ করে বসে রয়েছে। খাচ্ছে না। বড়পিসি কিছু বার বলেছে ,কি রে খা। ও শোনে না। বড়পিসি বেশ রাগ করেই এবার চেচিয়ে উঠেছে ।খাবি নাকি! আমি খাইয়ে দিচ্ছি এই বলে ভাত হাতে তুলে ওর মুখে যেই না খাওয়াতে গেছে, ষষ্ঠী নাকি তেড়ে এসে বড় পিসির গালে এক চড় বসিয়ে দিয়েছে।

বাঁদরের চর আমার বড় পিসি খেয়ে নিল । বাঁদরের হাত থেকে চড় খাওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে বড় পিসি এখনও জীবিত ।ভাগ্যবশত বড় পিসির কিছু হয়নি। আমি শুনেছি হুনুমান আর বাঁদরের হাতে প্রচুর জোর থাকে। একটা চড় মারলে নাকি অনেকে মরেও যায় । যাইহোক চর মেরে সে চুপ করে বসে রয়েছে ।এদিকে আমার বড় পিসি কান্নাকাটি করতে করতে ঘরের মধ্যে ঢুকেছে ।ওই মুহূর্তে আমার দাদু মুদিখানার দোকান থেকে ফিরে এসেছে। তারপরে আর কি হলো।

দাদুর এতই রাগ। দাদু এসব কথা শুনে বাঁদরটাকে উপহার দিল দুই ঘা, আর দুই ঘা বড়ো পিসি খেলো । গল্পটা শুনে বেশ হাসি পেয়েছিল সে সময়ে। আপনাদের সাথে তাই শেয়ার করে নিলাম।
@isha.ish

Sort:  
 2 years ago 

বাঁদরের বাঁদরামি দেখতে বেশ মজাও লাগে । ছোট বেলায় দেখতাম বাঁদর খেলা দেখাতে আসত কিছু লোক তারা সাইকেলের সামনে পিছে দুইটি বাঁদর নিয়ে বেড়াতো । বাঁদর গুলোও খুব পোজ নিয়ে বসে থাকতো ।
আপনার বাড়ির অনেক অনেক পুরানো দিনের ঘটনা শুনে বেশ ভালো লাগলো ।

 2 years ago 

আমারও অনেক ভালো লেগেছে পুরো ব্যাপারটা বলতে পেরে।

 2 years ago 

বারোটা কুকুর! বাপরে এতোগুলো পালন করতো কিভাবে দিদি? শালিক পাখির নামটি ভীষণ ভালো লাগলো কেষ্ট। আপনাদের বাড়ি একটা চিড়িয়াখানা হিসেবে পরিচিত ছিল প্রায়। দিদি আমরা ত বানর ডাকি আপনারা ডাকেন বাদড়। যায়হোক, আপনার বড়পিসি বানরের থাপ্পড় খেয়ে এখনও ঠিকে আছে 🤭। ভাগ্যিস কিছু হয়নি। ভালো ছিল গল্পটি দিদি।

 2 years ago 

😂, হ্যাঁ ঠিক আছে পিসি, এটাই অনেক।

 2 years ago 

মনে পড়ে গেল রাজশাহী সেনানিবাস এর মধ্য সেই বানর দুটোর কথা। যাদেরকে দেখার জন্য সকাল ভোরে ঘুম থেকে উঠে হাটাহাটি করতাম এবং তাদের কাছে যেয়ে আনন্দ করতাম। আবার বিকাল টাইমে ঠিকই বানর পাশে যেতাম এবং তাদের নিয়ে একটু হাসাহাসি করতাম। সাথে থাকত জীবনের সবচেয়ে প্রিয় জন, যে আমার জীবন থেকে অনেক দূরে! শুধু স্মৃতিময় দিনগুলো। আপনার এই বাবাজিকে দেখে সেগুলো স্মরণ হয়ে গেল।

 2 years ago 

বুঝতে পারছি।

 2 years ago 

এই বাদরগুলো বেশ দুষ্টু হয়ে থাকে। ভালই লাগে তাদের কান্ড কারখানা দেখে। হাহা। আপনার বাড়ির ঘটনা শুনে আনন্দ পেলাম। ধন্যবাদ আপনাকে

 2 years ago 

আমিও মজা পেয়েছি, বলতে পেরে।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 60462.58
ETH 2636.31
USDT 1.00
SBD 2.58