কাশ্মীর পার্ট - ৭|| কাশ্মীর নিয়ে কিছু তথ্য || ১০% বেনিফিট @shy-fox এর জন্য

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago (edited)

নমস্কার বন্ধুরা, আমি কাশ্মীর থেকে চলে এসেছি ৩ তারিখ এ। কিন্তু কাশ্মীরের গল্প এখনো শেষ হয়নি এখনো ।অনেক কিছু বলার আছে, আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করার আছে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এবার কাশ্মীরের গল্পের মাঝে একটু নতুন এবং অন্যান্য ধরনের পোস্ট করা জরুরি ।

তাই কাশ্মীর নিয়ে আজকে পোস্টটি আমি করছি ,কিন্তু কালকে আমি নতুন কিছু পোস্ট করব এবং নতুন নতুন পোস্ট এর মাঝখানে কখনো কখনো কাশ্মীরের গল্প গুলো লুকিয়ে রাখবো ।আজকের পোস্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট বলে আমার কাছে মনে হয় ।কারণ কাশ্মীরের বিভিন্ন তথ্য ,যেগুলো আমরা অনেকেই জানিনা ।সেগুলো নিয়ে একটু আলোচনা করতে চাইছি এবং সাথে শেয়ার করছি এখানকার লোকজীবনের কিছু ছবি।

আমাদের হোটেল থেকে যে মিউজিয়ামে কাজ হচ্ছে ,সেই মিউজিয়ামের দূরত্ব বেশি ছিল না ।পায়ে হেঁটে হয়তো পনেরো মিনিট ।আর পাহাড়ি এলাকায় হাঁটতে-হাঁটতে এদিক ওদিক যেতে বেশ ভালই লাগে। চারিদিকের রাস্তার দু'পাশে পাহাড়, কখনো কখনো জলপ্রবাহ ,পাথর এবং গাছপালা কখন যে আমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেয়, আমরা টেরই পাই না ।

তাই সেদিন সকাল বেলায় উঠে বললাম যে মা, চলো ,আজকে আমরা হাঁটতে হাঁটতে মার্কেট করবো ।তারপরে ওখান থেকে চলে যাব মিউজিয়ামে। মিউজিয়ামের পথ যেতে যেতে আমার বয়সী এই বোন গুলোর সাথে সাক্ষাত হয় এবং তাদের সাথে ছবি তোলার জন্য আমি অনুরোধ জানালে তারা এক কথায় রাজি হয়ে যায়। তাদের ব্যবহার আমার খুবই ভালো লেগেছে। আর রাস্তার পাশেই ছোট্ট ছোট্ট জায়গা ফুলে ভরা। গাছে ভরা। ওরকম একটি ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে এই ছবিটি আমার মা তুলে দিয়েছে। আশা করছি আজকে যা পোস্ট করছি তাতে আপনারা অনেকেই টের পাবেন যে ওখানকার লোকজীবন কেমন ধরনের হতে পারে।

কাশ্মীরি পরীদের মাঝে আমি বাঙালি

20211101_140627.jpg

একটু চলে আসি খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে ।কাশ্মীরের সবথেকে বিখ্যাত খাবার হলো ওয়াজওয়ান, এই খাবারের দুটো ভাগ। এটি একচুয়ালি একটা থালির মত ।এর সাথে সাদা ভাত , গুস্তাবা ও রিস্তা থাকে । গুস্তাবা এরা পুরোপুরি টক দই দিয়ে তৈরি করে এবং রিস্তা মাংসের মত নরমাল ভাবে রান্না হয়। তবে রান্নাবান্না দিক দিয়ে সবরকম এই অঞ্চলে আমরা দেখতে পাই। যদিও খাবারের দাম অনেক বেশি । ননভেজ এ পাঁঠার মাংস থেকে শুরু করে গরুর মাংস ,শুয়োরের মাংস এবং মুরগির মাংস ও থাকে এই ওয়াজওয়ান এর ভাগে।আপনারা যেটা অর্ডার করবেন সেই অনুযায়ী তৈরি হয় ।

এই ওয়াজওয়ান এর বিষয়বস্তু হল মাংস শিল নোরায় বাটা হয় বেশ অনেকক্ষণ । পিষতে পিষতে যখন একেবারে মিহি হয়ে যায় ,তখন সেটির একটি বল তৈরি হয়। মাংস করা হয় এবং আলু যেমন পিস করে কাটে ,ঠিক ওরকম করে কেটে সার্ভ করা হয়। এটাই হচ্ছে ওয়াজওয়ান। আমরা মোগল দরবার নামে একটি রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলাম, বাবা আর তার বন্ধু খাসির মাংস এর ওয়াজওয়ান খেয়ে ছিল।

প্রথমে আমি ছবি তুলতে ভুলে গিয়েছিলাম। তাই খাবার মাঝপথেই আমি এইভাবে ছবি তুলেছি ।

ওয়াজওয়ান

20211101_202724.jpg

যেহেতু বাবা কাজে ব্যস্ত থাকতেন ,কাশ্মীরের আরো বিভিন্ন জায়গায় ঘোরার ইচ্ছা থাকলেও আমরা যেতে পারিনি ।কারণ বাবার সহজে ছাড়তেন না। তবে হ্যাঁ হোটেলে নিচে থেকেই মার্কেট শুরু হয় ,আর বেশ কিছুদূর মার্কেট রয়েছে। আমরা মাঝে মধ্যেই সেই মার্কেটে ঘুরতে বেরিয়েছি এবং বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র আমাদের চোখে এসে পড়েছে। তারই মধ্যে আমি একটি দোকানে এই কাশ্মীরি কাজের ওপর সুন্দর একটি কোট হাতের নাগালে পেয়েছিলাম এবং আমি এটি কিনেছি। এটির দাম আমি পরবর্তী পোস্টে জানাবো ।কাশ্মীর শপিং নিয়ে আমি একটি অবশ্যই পোস্ট বানাবো। সেটাই আমি সকল দাম এবং সবকিছুই ডেফিনেশন দিয়ে দেব।

কাশ্মীরি কোট

20211031_121358.jpg

20211105_180127.jpg
এখানে অনেকগুলি ছবি আপনি দেখতে পাচ্ছেন, ছবিগুলো তোলার মূল উদ্দেশ্যই হলো এখানকার পুরুষদের জামা কাপড় গুলো কে বোঝানো । দেখতেই পাচ্ছেন এখানে সকলেই খুব ঢিলা ঢালা জামা কাপড় পড়ে ।

20211105_180205.jpg

মাঝেমধ্যে এখানে দেখতে পাওয়া যাবে ভেড়ার পাল ।কোন কোন ভেড়া লোমে পরিপূর্ণ ।কোন কোন আবার ছাঁটাই করা। দলবেঁধে চলে যাচ্ছে ঠিক এইভাবে।

20211105_175617.jpg

এই আঙ্কেল থেকে দেখলে বোঝা যাবে ,যে ওনার পেটে কাছটি বেশ উঁচু ।দেখে মনে হচ্ছে যেন ওনার বিশাল বড় ভুঁড়ি ।একদমই না ।আপনারা এখানে গেলেই দেখতে পাবেন সবার পেটের কাছটায় এরকম উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ।আমি যখন প্রথম কাশ্মীরে যাই, আমি অবাক হয়েছি ।যে মেয়ে থেকে শুরু করে ছেলেদের পেটে জায়গা টা এরকম কেন ফোলা। পরে জানতে পারি এনারা শরীর উষ্ণ রাখতে একটি জিনিস ব্যবহার করেন ।যেটি ওনারা হাত দিয়ে ভেতরের দিকে ধরে থাকেন ।যার জন্য এটি ফোলা থাকে। অতিরিক্ত ঠান্ডা ও শীতকালে ওনারা এটি ব্যবহার করে থাকেন ।

20211105_175643.jpg
এই জিনিসটির নাম হল কাংরি।ওনাদের যে ঢোলা ঢোলা কাপড় অর্থাৎ ফেরান, তার ভেতরটা গরম রাখতে এবং হাত গরম রাখতে অথবা কম্বল গরম রাখতেও ওনারা এই কাংরি ব্যবহার করে থাকেন। বেতের তৈরি এবং এর মাঝের যেটা কাঠ-কয়লা ভর্তি জায়গা থাকে সেটি হলো একটি মাটির পাত্র। ভেতরে পাত্রটিকে বসিয়ে তার মধ্যে কাঠ-কয়লার রেখে ওনারা ওটাকে শরীরের সাথে লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায় এবং যার জন্যই ফেরান গুলি এত ঢিলা ঢালা থাকে।

কাংরী

20211031_120854.jpg

মার্কেটে, আমার ও অনুরোধে আঙ্কেল ছবি তুলেছেন

20211031_120954.jpg

20211105_175550.jpg

20211105_175920.jpg

পুরো কাশ্মীর জুড়ে ভারতের ভূস্বর্গ কে প্রটেকশন দেওয়ার জন্যই ,দেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক ইন্ডিয়ান আর্মি কাশ্মীরের প্রতিটি জায়গায় খুব যত্ন সহকারে এবং সচেতন ভাবে ডিউটি করে ।আমরা যখন রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম ।লক্ষ্য করেছি দুটি তিনটি দোকানের মাঝেমাঝেই ডিউটি করছে ইন্ডিয়ান আর্মি।জনগণকে সেফ রাখার জন্য এবং এই ভূস্বর্গ কে সঠিকভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এবং পুরোপুরি ডিসিপ্লিন এর সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই এরা রাত দিন পরিশ্রম করে ডিউটি করে থাকেন।
20211105_175346.jpg

20211030_133434.jpg

এবার চলে আসি ,কাশ্মীরের একটি অতি বিখ্যাত খাবারের বর্ণনায়। এটি হলো কাশ্মীরে কাওয়া। শুনেছি এলাচ, লবঙ্গ ,দারচিনি আরো বিভিন্ন ভারতীয় মসলার সাহায্যে জল দিয়ে ফুটিয়ে ফুটিয়ে কাশ্মীরি কাওয়া তৈরি করা হয় এবং এর ওপরে ছিটিয়ে দেয়া হয় প্রচুর পরিমাণে ড্রাই ফ্রুটস ।কোন কোন জায়গায় ড্রাই ফ্রুটস এর পরিমাণ কম থাকে ।আবার কোন কোন জায়গায় ড্রাই ফুড এর পরিমাণ বেশি দেখতে পাওয়া যায় ।এই গরম পানিয় অতিরিক্ত ভালো খেতে।

আপনারা চাইলে বাড়িতেও এর ব্যবহার করতে পারেন। ইউটিউবে অবশ্যই এই নিয়ে প্রচুর রেসিপি শেয়ার করা রয়েছে ।কাশ্মীর যাওয়ার পর ভালোলাগা জিনিস গুলোর মধ্যে কাশ্মীরি কাওয়া আমার চোখে দুর্দান্ত একটি বস্তু বলে মনে হয়।

কাশ্মীরি কাওয়া

20211101_210432.jpg

আশা করছি কাশ্মীরের প্রধান প্রধান কিছু জিনিস নিয়ে কিছুটা হলেও আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করতে পেরেছি। জায়গাটির যেদিকে তাকানো যায় ,সেদিকেই নানান ধরনের গল্প ইতিহাস এবং বর্ণনা লুকিয়ে থাকে। হয়তো হাজার হাজার পার্টে বিভক্ত করলেও কাশ্মীরের বর্ণনা শেষ হবে না। তবুও আজকের মতো এই বর্ণনা শেষ করছি ।আরও নানান তথ্য নিয়ে পরে মাঝে মাঝে পোষ্টে আমি অবশ্যই কথা বলব। সকলে সুস্থ থাকুন। ভালো থাথাকুন।সকলকে দীপাবলীর অনেক অনেক শুভেচ্ছা। নমস্কার।

@isha.ish

Sort:  
 3 years ago 

আপনার মাধ্যমে অনেক নতুন কিছু জানতে পারলাম কাশ্মীর সম্পর্কে। আপনার দিন গুলো ভালই কেটেছে বোঝা যাচ্ছে । যাই হোক ভাল থাকবেন ।শুভেচ্ছা্ ।

 3 years ago 

কয়েকদিন আগে আমি ফোনে তারেক মেহতা কি উল্টা চাশমা দেখছিলাম।সেখানে পোপাটলাল নামের একজন কে তার এক শুভাকাঙ্ক্ষী কাশ্মিরি কাওয়া পাঠিয়েছিলো। সেখানে আমি প্রথম এই কাশ্মিরি কাওয়া নামটা শুনলাম।আর আজকে তো পুরোটাই জানলাম।
অনেক কিছুই জানলাম তার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপু।

 3 years ago 

আপনি যে ধর্য্য নিয়ে সব গুলো লেখা পড়ছেন আমি সত্যি কৃতজ্ঞ। অনেক ভালবাসা রইলো দিদি।

দিদি আপনার পোস্টটি পড়ে আমার মনে হলো আপনি অনেক চমৎকার ভাবে কাশ্মীরের প্রকৃতি ও মানুষের ভালোবাসা মধ্যে দিন গুলো পার করছেন।আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো ।এতে সুন্দর পোস্ট শেয়ার করার জন্য অনেক শুভ কামনা রইল।

 3 years ago 

আমি চেষ্টা করেছি ওই পাঁচ দিনের সময় টিকে ব্যবহার করে যেটুকু পারি জায়গাটিকে জানার, আর ওখানকার মানুষের ব্যবহার সত্যিই ভালো ছিল ।আমার খুবই ভালো লেগেছে ওনাদের সাথে। অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর করে মন্তব্য করার জন্য।

 3 years ago 

কাশ্মীর খুবই সুন্দর জায়গায় এই জায়গাতে ভ্রমণ করার খুব ইচ্ছা আছে আমার। আপনার এই সুন্দর ভ্রমণের দৃশ্য গুলো দেখে আমার অনেক ভালো লাগলো। আপনি খুবই সুন্দর ভাবে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। আপনার ফটোগ্রাফি গুলো খুবই সুন্দর ছিল। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

 3 years ago 

সে আর বলতে, সত্যি বাড়ি বসে বসে আমরা পৃথিবীটাকে চিনতেই পারি না ।যতক্ষণ না সেই জায়গায় গিয়ে পৌঁছোচ্ছি। আসলেই জায়গাটি অত্যন্ত অপূর্ব ।অনেক ভাল লাগল আপনার কমেন্ট পড়ে। ভাল থাকুন ।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

কাশ্মির দেখতে দেখতে আর বাসায় থাকতে মন চাচ্ছেনা এখন। কাশ্মিরের এতো কিছু একদম ই জানা ছিলোনা আমার। আপনার কাশ্মির নিয়ে এই পোস্টগুলা অনেক উপভোগ করছি আপু আমি।

 3 years ago 

সময় করে অবশ্যই চলে যান এই ভূস্বর্গে ।জীবন সার্থক হয়ে যাবে বলে আমার ধারণা। অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার পোস্টটি ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্য এবং এত সুন্দর করে মন্তব্য করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.12
JST 0.027
BTC 62033.06
ETH 3004.78
USDT 1.00
SBD 2.48