পার্থক্যটা কোথায় ?
ভালোলাগাটা
তখনই ভালোলাগা হয়ে চিরন্তন থাকতে পারে ।
যখন তার পুরোটা নাগালের বাইরে থাকে ।
আর সিকিভাগটুকু উঁকি দেয় ইচ্ছেমতো।
আর এই সামান্য এবং খুব সরল ক্যালকুলেশন বুঝতে বেশি পরিশ্রমের প্রয়োজন নেই । যেমন ধরুন আমার ক্ষেত্রে , আমি বিরিয়ানি খেতে ভীষণ পছন্দ করি। একটা সময় হয়ে দাঁড়িয়েছিল সপ্তাহে মনে হয়, দুইবার তিনবার বিরিয়ানি খাওয়া হয়ে যেত ।তারপরে বুঝতে পারলাম ওই বিরিয়ানির আর স্বাদ পাচ্ছি না। আসলে বিরিয়ানির দোকানে ঠিক একই ভাবেই বিরিয়ানি তৈরি হচ্ছে। স্বাদ ঠিক একই রকম। শুধুমাত্র আমার প্রতিদিনের বিরিয়ানি খাওয়া বিরিয়ানির প্রতি আমার স্বর্গতুল্য প্রেমের ব্যাঘাত ঘটিয়ে দিয়েছে।
যেদিন বুঝতে পারলাম , তারপর থেকে বিরিয়ানি খাওয়া বহুকাল বন্ধ করেছিলাম। তারপর আবার বেশ অনেকদিন পর বিরিয়ানি খেলাম । অনুভব করলাম - এবার ভালো লাগছে,আর গাল ভরা হাসি নিয়ে একবার বলেও উঠলাম - বাহ ! কি দুর্দান্ত খেতে !
আমি এখানে কথাটা ভালোলাগা বলছি। এটাতেও খেয়াল দিতে হবে। বলিনি একবারও ভালোবাসা।ভালোলাগা আর ভালোবাসার মধ্যে আকাশ এবং পাতাল পার্থক্য। যে মানুষটা ফুচকা খেতে ভালোবাসে ,তার রোজই ফুচকা খেতে ভালো লাগবে। সে প্রতিদিন ১০ টাকার ফুচকা খেলেও আবার আজ মার্কেটে বেরিয়ে আবার ১০ টাকার ফুচকা খেয়ে নেবে।
হ্যাঁ, এই ভালোবাসাকে তাই মাঝে মধ্যে বুঝতে পারা যায় না, যে এটা আদেও ভালোবাসা নাকি অভ্যাস!?
আবার বেশির ভাগ সময় আমরা যে কাজটা করছি ,তা আমাদের অতি প্রিয় হয়ে ওঠে আশেপাশের পরিস্থিতি এবং সাথে কে আছে, তার ওপর নির্ভর করে। যেমন আমি গান গাইতে বসলে, আমার পাশে যদি আমার বাবা সঙ্গ দেয় ,আমার সেই মুহূর্ত আরো সুন্দর হয়ে ওঠে ।এই ক্ষেত্রে বাবার জায়গায় অন্য কোন মানুষ কখনোই আমাকে ততটা পরিমাণ তুষ্ট করতে পারবে না।
ভালোলাগায় যেখানে পঞ্চইন্দ্রিয়ের প্রভাব বেশি। সেখানে ভালোবাসায় পঞ্চইন্দ্রিয়ের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে প্রভাব বিস্তার করছে মন।
শরতে পদ্মফুল। সারা বছর অপেক্ষা করে শুধুমাত্র এই ঋতুতে পদ্মের একটা ঝলক দেখতে সত্যিই দুর্দান্ত লাগে। আবার গোলাপফুল , সারা বছর আমরা দেখতে পাচ্ছি । কিন্তু একবারের জন্যেও এর ওপর বিতৃষ্ণা আসে না। কিন্তু অনুভূতি দুই ফুলের ক্ষেত্রে দুই রকম ।
আবার আরেকদিকে, কেও যদি গোলাপের বদলে অন্য কোন ফুল হাতের কাছে এনে দেয়,তাহলে কিন্তু আর এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে।
মানুষ সর্বদাই নতুন কিছু পছন্দ করে। যেটা সে নিজে বোঝেনা। আমরা সবসময় চাই আমাদের মন মত ,আমাদের স্বপ্নের মত নিজের জগতটুকু সাজিয়ে নিতে, কিন্তু আসলে যে আমরা সারপ্রাইজ পছন্দ করি, নতুন জিনিসের অভিজ্ঞতা নিতে পছন্দ করি সেটা আমরা বুঝেও বুঝতে পারি না।
ভালো লাগাটা ক্ষনিকের, কিছু বছর আগে যে ফিল্ম অ্যাকট্রেসকে পছন্দ করতাম, আজ সেখানে অন্য কেউ জায়গা দখল করেছে। স্কুল জীবনে যে রং খুব পছন্দ হলো , আজ সে রং ভালোই লাগেনা। বয়সের সাথে সাথে চারিপাশের পরিস্থিতির প্রভাবে এটা পরিবর্তন হয়ে আসছে।
কিন্তু ভালোলাগা যদি সারা বছরে পদ্মের মত শরতে একবার করে এসে উঁকি দেয়, তাহলে সেটা পরিবর্তন হওয়া চাপের।
ভালোবাসার পরিবর্তন হয় না। বরং সংসার জীবনে যত দিন যায়, প্রত্যেকদিনের সাথে ভালবাসার অন্তর্ভুক্ত মোহমায়া আরও বাড়তে থাকে। তাই হাজারটা পুতুল এনে দিলেও ক্লাস সেভেনে যে পুতুলটা কিনেছিলাম, ওটা এখনও আমার সবচেয়ে প্রিয় । হাজার ঝগড়ার পরেও, যোগাযোগ না থাকলেও স্কুল জীবনের প্রিয় বন্ধু এখনও ভালোবাসায় জর্জরিত।
আর এসব কিছুর জন্য সময় / মুহূর্তর অবদান প্রবল।
আমি জানিনা কতটা যুক্তিপূর্ণ কথা বললাম, তবে আমার কাছে মনে হয় , আমার মা-বাবার সাথে আমার যে সম্পর্ক ,যে অনুভূতি । হয়তো সেটার মত হয় 'ভালোবাসা ' ।
দিদি পার্থক্যটা নিজের কাছে ৷ আপনি বা আমি যেই হই না কেন ৷যেভাবে নিজেকে মানিয়ে নিবে সেভাবেই হবে ৷ তবে হ্যা একটা জিনিস সঠিক যে এক বিষয়ে বার বার করতে বা ক্ষেতে ভালো লাগে না ৷
আর দিদি শেষের কথা টা সঠিক কথা ৷
মা বাবার সাথে আমার যে সম্পর্ক ,যে অনুভূতি । হয়তো সেটাই সঠিক ভালোবাসা ৷
ধন্যবাদ দিদি
কথাটা তো দারুণ বললেন দিদি। আসলেই ভালোবাসা এবং ভালোলাগা এর মধ্যে পার্থক্য করা কিন্তু মোটেও সহজ কথা নয়। ভালোলাগা টা একসময় বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু ভালোবাসাটা একসময় গিয়ে অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে। আপনার পোস্ট টা থেকে আজ অনেক কিছু বাস্তব জানলাম। চমৎকার ছিল আপনার পোস্ট টা দিদি।।