ছোটখাটো মজার মুহুর্তগুলো
কিছু কিছু সময়কে দায়িত্ব সহযোগে সুন্দর বানানোর চেষ্টা করলেও সুন্দর হয় না। আবার কিছু সময় কোনো প্ল্যানিং ছাড়াই খুব সুন্দর হয়ে ওঠে। যেটাকে সারপ্রাইজ বলা চলে।আবার, এটাও ঠিক প্ল্যানিং করেও সময় খুব খুব , মাত্রাধিক স্মৃতি বহুল হয়ে যায়। আবার এটাও ভুল নয় যে, প্ল্যানিং করেও সময় সুন্দর হতে গিয়ে মাত্রাধিক বাজে হয়ে উঠতে পারে।
আমরা রোজ চলার পথে প্রেডিকশন করি। যে এখানে যাব, এই হবে। কিন্তু সাথে অতিরিক্ত যে মুহূর্ত গুলো যুক্ত হয়। সেটা আমরা কখনোই আগে থেকে জানতে পারিনা। তাই হয়তো আমাদের প্রতি পদক্ষেপে নতুন কিছুর সম্মুখীন হতে হয় এবং সেই পরিস্থিতি কখনও আমাদের খুব কষ্ট দেয়, আঘাত করে, আবার কখনও এতই আনন্দের আর মজার হয় যে, পরবর্তী কালে সেগুলো ভেবে আমরা বেশ মজা পাই।
দিনটা ছিল শনিবার। এ মাসের ছয় তারিখ। আমার বাড়ি ফেরার আগের দিন। সকাল থেকে বেশ বৃষ্টি। মেস বাড়িতে আমরা ৪জন মেয়ে দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে নিলাম । বাকি দুজন বাড়ি যাবে , তাই প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
যেহেতু পরের দিন সবাই বাড়ি যাচ্ছি, সকাল থেকে ওরা প্ল্যান করছিল কোথাও ঘুরতে যাবে। হঠাৎ দেখি ওরা আমার ঘরে এসে শুয়ে পড়লো। আমি অবাক। তিন জন মিলে বিছানা দখল করে ফেলেছে। প্রথম কথা আমি কই ঢুকবো। আর দ্বিতীয় এরা সকাল থেকে এতক্ষণে যাব, ওখানে যাব, প্ল্যান করে এখন শুয়ে পড়লো! আর তাদের শোয়ার ধরন এমন যেন গভীর ঘুমে পাড়ি দেবে।
আমিও তো ছাড়ার পাত্রী নই। ততক্ষণে আমার এক বান্ধবী অলরেডি এক সাইডে ঘুমের জগতের দিকে হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছে। বাকি দের দুজন ফোনে বিসি। কয়েকবার লাথি তাঠি মেরে আমিও ওদের মধ্যে সামান্য জায়গা খুঁজে নিলাম। আমাকে পাশ বালিশ এর মত করে নিয়ে একজন গায়ের ওপর ঠাং তুলেই দিলো।
আমি খালি ভাবছি, এদের আলসেমি টা কি লেভেল এর তৈরি হয়েছে, বৃষ্টির দিন ঠান্ডা পেয়ে, সবার ঘুমের প্রতি এত ঝোঁক, আর সকাল থেকে এরাই একবার প্রিন্সেপ ঘাট, একবার ভিক্টোরিয়া ,একবার হাতিবাগান - জায়গার নাম ধরে তর্কাতর্কি করছিল।
আমি এদের আচরণ দেখে ভীষণ ক্ষেপে উঠেছিলাম। ব্লুটুথ ডিভাইসের সাথে ফোন কানেক্ট করলাম। ইউ টিউব এ গিয়ে সার্চ এ লিখলাম - ভূতের আওয়াজ আর তারপর প্লে। ভীতুর ডিম গুলো ঘুমোবে কী। উৎভট ভূতের সাউন্ড শুনে ঘুমের ওদের বারোটা বেজে গেল। আমি ডিভাইস টা নিয়ে পায়চারি করতে লাগলাম। কিছুক্ষন ধরে আমার ওপর চেচামেচি করে যখন লাভ হচ্ছে না। তখন দুজন আমার পেছনে ছুটতে শুরু করলো। আমিও ডিভাইস আর ফোন নিয়ে এদিক ওদিক ছুটছি।
ব্যলকনিতে বৃষ্টির জল পড়ে পিছল হয়ে ছিল। একবার স্লিপ কাটলাম। ভাগ্যিস পড়ে যাইনি। একজন এসে ধরলো। কিন্তু আবার দৌড়াদৌড়ি, যতটা পারলাম জ্বালিয়ে মারলাম। তারপর ওদের উঠতেই হলো।
ওরা এবার শুরু করলো , কোথায় যাবে এই নিয়ে তর্ক। আমি বললাম রেডি হই, কোথায় যাব, সেসব পরে ভাববো। যে যার মত রেডি হওয়া শুরু করলো। আমার এক কচ্ছপ বান্ধবী , সে তখনও আমার বেডে গড়াগড়ি দিচ্ছে। আর বিছানায় শুয়ে শুয়েই কোথায় যাবে , এই নিয়ে এ ঘর থেকে পাশের ঘরে তর্ক করছে।
আমি ততক্ষনে দুই বার ড্রেস চেঞ্জ করে ফেলেছি। কোনটা ভালো লাগছে , ভোটিং রেট নিয়ে আবার তিন নম্বর টা ট্রাই করবো। হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো আমার। কথা বলতে আছি, এদিকে কাজ করছি। বন্ধুর থেকে ওই সময় জানতে পারলাম। প্রিন্সেপ ঘাট যেতে বেশ অনেক সময় লেগে যাবে, ফিরে আসতেও রাত হতে পারে।
কথাটা ঠিক, কারণ চারিদিকে যা দেখছিলাম, তাতে সত্যিই প্রিন্সেপ ঘাট যাওয়ার মত সময় ছিল না। মৌসুমী দি, আনাহারা, হাবিবা ততক্ষণে মেকআপ বক্স নিয়ে বসে পড়েছে। মুখে গাদা গাদা করে ফাউন্ডেশন ফেসপাউডার ।কেউ আবার ভ্রু তে কালি মাখছে। কেউ দুবার লিপস্টিকের কালার চেঞ্জ করে আবার আরেকটা নতুন লিপস্টিক নিয়ে টেস্ট করছে কোনটা ঠোঁটে ভালো লাগে বেশি। 🤣
এদিকে আমি তিন নম্বর জামাটা পড়ে বসে রয়েছি। আমি সাধারণত সাজুগুজু কম করি। শুধুমাত্র আইলাইনার আর লিপস্টিক। বাকি মেকআপ প্রোডাক্টস ব্যবহার করতে ভালো লাগেনা। স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টগুলো যেটুকু প্রয়োজন হয়। ওদের সংসার সাজানো দেখে আমিও বুঝতে পারলাম প্রিন্সেপ ঘাট যাওয়া হবে না।
সকাল থেকে আসলে সবাই প্রিন্সেপ ঘাটে যাওয়ার জন্যই বেশি যুদ্ধ করছিল। কারণ আমরা কেউ সেখানে যাইনি। রাস্তা আমাদের জানা ছিল না ।কিন্তু এখানে সেখান থেকে জিজ্ঞেস করে করে এবং গুগল ম্যাপ তো আছেই ।সব মিলিয়ে চলে যেতে পারতাম ।কিন্তু বিকেলের গড়িয়ে এসেছে। এই সময় বেরোলে পৌঁছতে তো সময় লাগবে। তখন চারটে পেরিয়ে গেছে। তখনও কেউ মাথার চুল স্ট্রেট করছে কেউ জামা বদলাচ্ছে।
আপনাদের বলে বোঝাতে পারবো না এই দৃশ্যগুলো দেখতে কতটা মজা লাগে ।প্রিন্সেপ ঘাট যাবে বলে কথা!!একটু না সাজলে হয়!!
বন্ধুর সাথে ফোনে কথা বলে বুঝতে পারলাম প্রিন্সেপ ঘাট যাওয়া ক্যান্সেল করতে হবে। এটা সবাইকে জানাতেই দুজন তো মেনে নিল ।কিন্তু আর একজন কিছুতেই মেনে নিতে পারল না। সে কোনমতেই হাতিবাগান যাবে না। তার হাতিবাগানে গিয়ে হাতি ঘোড়া জামা কাপড় কেনার একদম ইচ্ছে নেই। আর ওদিকে ভিক্টোরিয়াতে এই বর্ষার সময় কাদা থাকতে পারে। আর সেখানে যেতেও সময় লেগে যাবে।
কিন্তু এই কথা ওই পাগলীকে বোঝায় কে। বেচারা অত কষ্ট করে সাজুগুজু করলো! কোঁকড়ানো চুল স্ট্রেট করলো, এত সাজেগুজে হাতিবাগান কিছুতেই সে যেতে চায় না। কারণ সেখানে গেলেই হাঁটাহাঁটি। অবশেষে সে রাগ করে ফেলল। আর কোথাও যাবে না ,এই ঠিক করল।
আমরাও নাছোড়বান্দার মত কয়েকবার ওর পেছনে জেদাজেদি শুরু করলাম। কিন্তু ওর জেদ আমাদের থেকেও বেশি। অবশেষে ঝগড়া লেগে গেল। মহল হাসি মজা থেকে বদলে ঝামেলা মহল তৈরি হলো।
আর তারপর কি হল সে ঘটনা পরের পোস্টে জানাবো। আজকের মত এখানেই শেষ করছি। সকলে ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।
আপু ভূতের আওয়াজ শুনিয়ে খুবই বিরক্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন আপনার তিন বান্ধবীকে। সত্যি আপু আপনার বুদ্ধির প্রশংসা করতেই হয়। তবে আপু কোথাও স্লিপ করে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে সেখানে যাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। আপু পরের ঘটনাগুলো জানার তীব্র আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকলাম।
হ্যাঁ, দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে ব্যাপার টা ভুলে গিয়েছিলাম। ধন্যবাদ দাদা মন্তব্য করার জন্য।
আমাদের সবারই এইরকম বন্ধু থাকে অন্যরা মেনে নিলেও ঐ একজন মেনে নেয় না। তবে আমার জীবনের স্মরণীয় মূহুর্ত গুলো হঠাৎ করেই হয়েছে। প্ল্যান করেও হয়েছে তবে ততটা না।।
ঠিক কথা। এরকম একজন থাকবেই।