তাল পাতার সেপাই-এর লাল গাড়ি||১০% বেনিফিট @shy-fox এর জন্য
এখন খালি প্রতি সপ্তাহে বাড়ি থেকে কলকাতা আর কলকাতা থেকে বাড়ি যাওয়া আসার পর্ব লেগেই থাকে। গত ১২ তারিখ অর্থাৎ এই মাসের ইংরেজি ১২ ই মে ,আমার ছোটভাই ঈশানের জন্মদিন ছিল। ঈশান আমার থেকে ১২ বছরের ছোট। ও আমার অনেক আদরের আলুভাতে ।যদিও চেহারাটা আলু ভাতের মত নয় ।দিনরাত্রি ওর পেছনে খাওয়া-দাওয়া নিয়ে ঝামেলা লেগেই থাকে ।
ছেলে কিছুই খেতে চায় না। আর এত দুষ্টু যে গায়ে লাগেনা হয়তো খাবারগুলো। ওর দুষ্টুমি গুলো যেন ওর শরীরের অর্ধেক অবস্থা খারাপ করে দিয়েছে। জন্মদিনের আগের দিন থেকেই লেগেছে ও ওর আবদার নিয়ে। এইবারে বৃহস্পতিবার দিন ওর জন্মদিন পড়েছিল ,আমার বাড়িতে বৃহস্পতিবার সাধারণত নিরামিষ। মা ঠিক করেছিল পরের শুক্রবার দিন যেটুকুনি নিজেদের মতো করে সেলিব্রেট করার সেটা করা হবে।
ঈশানের আবার জন্মদিন নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। শুধু জন্মদিন আসলেই ওনার গাড়ি চাই ।একটা গাড়ি পেলেই আর কেক কাটা লোকজন খাওয়া-দাওয়া ওর কিছুই দরকার নেই।ওর শুধু গাড়ি পেলেই সব ঠান্ডা। প্ল্যান মাফিক সকালবেলায় দমদম থেকে ট্রেন ধরলাম কৃষ্ণনগরের যাওয়ার জন্য।
সকাল আটটার ট্রেন ধরবো বলে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে পড়েছিলাম তাড়াতাড়ি । কৃষ্ণনগরে গিয়ে নামলাম তখন বাজে সকাল দশটা পনেরো হবে। তারপর টোটো করে প্রথমেই বাড়ির দিকে না গিয়ে গেলাম মার্কেটের দিকে ছোট ভাইয়ের জন্য এটা ওটা কিনতে। আমি জানি ঈশান অপেক্ষা করে বসে রয়েছে অনেক কিছুর। ওর এই সমস্ত পাগলামোগুলোর আশ্রয়-প্রশ্রয় শুধুমাত্র আমি দিই ।
গাড়ি যে কিনব ,গাড়িটা যে বেশিদিন বাঁচবে না ,সেটা আমি খুব ভালোভাবে জানি । ওর হাতে দু'দিনেও একটা গাড়ি টেকে না। কিন্তু তবুও ছোট ভাই , তাই আবদার গুলো পূরণ করতেই হবে। বড় হয়ে গেলেই এই আবদার গুলো আর থাকবে না। এত বছরের ছোট একটা ভাই এত আদরের একটা ভাই ছোটখাটো চাহিদাগুলো এমনি থেকেই যেন পূরণ করতে ইচ্ছা করে।
প্রথমে জামা কাপড়ের দোকানে গেলাম, নিজের পছন্দমত ওর তিনখানা প্যান্ট আর তিনখানা টি-শার্ট নিলাম ।সকালবেলায় না খেয়ে বেরিয়েছি ,প্রচন্ড খিদে পেয়ে গিয়েছিল। কেনাকাটা করতে বেশ টাইম লেগেছে। তারপর ওখান থেকে বেরিয়ে ঈশানের চাহিদা অনুযায়ী গেট খোলা যাবে রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি খুঁজতে হলো। একটা দোকানে প্রথমে ঢুকলাম সেখানে লাল গাড়ি পাওয়া গেলোনা ।গেট খোলা গাড়ি রয়েছে, রিমোট কন্ট্রোল হবে ,কিন্তু লাল গাড়ি হবে না। আর যাই হোক ঈশানের লাল রং প্রচন্ড পছন্দের ।
তাই আরো কয়েকটা দোকান খোলার পর তবে গিয়ে একটা লাল গাড়ী উদ্ধার হল ।নিয়ে নিলাম ।কেনার সময় একটু মায়া লাগছিল কারন আমি বুঝতে পারছিলাম এই গাড়ি দু-তিন দিনের বেশি টিকবে না । তবুও ভাইয়ের মুখের হাসিটা দেখে কিনে ফেলতে হল । তারপর চলে গেলাম কেকের দোকানে।
সন্ধ্যেবেলায় কেক কাটা হবে তাই মিও আমোর এ ঢুকলাম ।তারপর সুন্দর দেখে একটা কেক নিলাম । কেক কাটার ঘটনা গুলো এবং রাতের ব্যাপারটা আপনাদের সাথে পরে শেয়ার করব ।আপাতত চলুন বাকি কথাগুলো শেয়ার করি। সমস্ত কিছু কেনাকাটা করে আমার অবস্থা একেবারে হিমশিম খাওয়ার মত। পেটে খিদে ,মাথা যন্ত্রণা নিয়ে রীতিমত মাথা ঘুরছে বলা যেতে পারে । সকাল থেকে না খাওয়া তখন হয়তো বাজে সাড়ে বারোটা ,বাড়ি পৌঁছলাম ।
সাথে সাথে কোনো রকমে ফ্রেশ হয়ে জামাকাপড় চেঞ্জ করে খাবার টেবিলে বসে পড়লাম ।ভাত ভরপেট খেয়ে রুমের মধ্যে গিয়ে এসি ছেড়ে চিত্ হয়ে শুয়ে পড়লাম। তারপর বেশ ভালো ঘুম হলো ।আড়াইটার পর ঘুমটা ভাঙলো। ঈশান সেই গাড়ি নিয়ে খেলা শুরু করেছে , সে আর কাউকে তোয়াক্কা করেনা ।
তার আর কেক এর দরকার পড়ে না। জামা কাপড় দরকার পড়ে না। খালি গাড়ি নিয়ে খেলে যাচ্ছে। ঘুমোতে যাওয়ার আগে দেখেছি গাড়ি হাতে খেলতে ।ঘুম থেকে উঠে দেখি ঐ গাড়ি নিয়ে খেলে চলেছে । ওর গাড়িটা পছন্দ হয়েছে।
যাই হোক তারপরে মা প্রতি বারের মত দেখলাম মাটিতে আসন পেতে চারিধার দিয়ে খাবারের বাটি সাজাচ্ছে। পাঁচ তরকারি রান্না করেছে ।সেগুলো সাজানো গোছানো হল। যেমন হয় ।ঠিক ওরকম ভাবে। আমার জন্মদিনে যদিও ফ্রাইড রাইস আর মাংস হলেই চলে যায় ।কিন্তু ঈশানের খাবার দিকে খুব একটা মন নেই ।তাই মা ওর জন্মদিনের দিনে যেটা মন মত হয় সেরকম কিছু একটা রেঁধে বেড়ে খাওয়ায়।
আমার তালপাতার সেপাই কে নতুন জামাকাপড় পড়িয়ে বসিয়ে দিলাম। আসনের উপর চারিপাশ দিয়ে খাবার দাবার সাজানো হলো। তারপরে প্রদীপের তাপ আর ধান দূর্বা ঘাস দিয়ে আশীর্বাদ করা হল। বাবু খাওয়া-দাওয়া শুরু করলো ।
ওর পাতের খাবারগুলো অর্ধেকটা মনে হয় আমার বাবার আর আমার পেটে ঢুকেছে ।যাক এই ছিল দুপুরের আয়োজন ।সন্ধ্যেবেলা থেকে কি কি করেছি, সেটা না হয় আর একটা পোষ্টের মাধ্যমে জানাবো। আমার তালপাতার সেপাই-এর জন্য সকলে প্রার্থনা করবেন ।ছোট ভাইটা যেন মানুষের মতো মানুষ হয় , রোগা থাকুক আর না থাকুক যেন ভালো থাকে। মানবিকতা যেন সবসময় বজায় থাকে ওর অন্তরে। আজকের মত এখানেই শেষ করছি। সকলে সুস্থ থাকুন। ভালো থাকুন।
@isha.ish
আপনার ডিসকর্ড এনগেজমেন্ট খুব খারাপ।এরকম ধারাবাহিক থাকলে active লিস্ট এ পরিবর্তন আসবে।ধন্যবাদ।।
আচ্ছা দাদা, আমি চেষ্টা করবো সব ঠিক করে নেওয়ার। বড়ো দাদার মত ভুলটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলে। মান রাখবো অবশ্যই।
এভাবেই বেঁচে থাক আপনাদের ভাই বোনের ভালোবাসা, ছোট ভাইয়ের ছোট ছোট আবদার গুলো পূরণ করতে হয়, একসময় এই ভাই আপনার পাশের শক্তি হয়ে দাঁড়াবে, আপনাকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিবে। খুব ভালো লাগলো ওর জন্মদিনে চমৎকার অনুভূতিগুলো আপনি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন, আপনার ছোট ভাইয়ের জন্য জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
লাইন গুলো মন ছুঁয়ে গেল। ভাই এখনই আমার ঢাল হয়ে দাঁড়ায়, মা বাবা আমাকে কিছু বললে , ভাই এখনই সামনে দাঁড়িয়ে ঝগড়া লাগায়।
আদরের ছোট ভাই ঈশানকে জন্মদিনের এত্তগুলা ভালবাসা জানাচ্ছি। ☺💙
ছোটবেলায় আমিও গাড়িও জন্য বায়না করতাম। অনেক ভাল লাগলো আপনার লেখাটী পড়ে। ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল সেই সাথে ভাইয়ের প্রতি বোনের এরকম ভালোবাসা দেখেই মনটা জুড়িয়ে গেল। ধন্যবাদ দিদি শেয়ার করার জন্য
কয়টা গাড়ি ভেঙেছেন দাদা?
সত্যি কথা বলতে কি দিদি ছোটরা সব সময় একটু বেশী দুষ্টামি করে। আর আপনার ভাই টার নামটা শুনে আমি অনেক সময় ভাবি যে আসলো দিদির বাই টার নাম আমার এতো পরিচিত কেন। তখন মনে পরলো আমার একটা মামাতো ভাই আছে ঈশান। সেতো অনেক বড় প্রায় বিয়ের উপযুক্ত হয়ে গেছে। তবে আমার অনেক ছোট প্রায় ১৪/১৫ বছরের ছোট হবে। যাই হোক দিদি সকাল থেকে উঠে ঘাটাঘাটি করতে করতে মার্কেট করতে করতে ছোট ভাইয়ের জন্য আপনারা অবস্থা খুবই কাহিল হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে গিয়ে খেয়ে দেয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়ে গিয়েছেন। অসাধারণ লেগেছে আপনার মনের ভাবগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। বাকিটুকু আশায় রইলাম। শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।
আপনি বেশ গুছিয়ে মন্তব্য করেছেন। খুব ভালো লাগলো পড়ে।
আপনার ভাইয়ের প্রতি আপনার ভালোবাসা দেখে মনে হচ্ছে এরকম একটা বোন যদি থাকতো আমার😢।যাইহোক সবার কপালে সব কিছু জোট না🙏।
আর ছোটভাই বলে কথা,না দিয়ে যাবেন কই।ভালো ছিল আপু লেখা।ভালোবাসা নিবেন,আর আপনার ছোটভাই এর প্রতি জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা রইলো।🎉
এই তো আমি বোন!! অনেক অনেক শুভ কামনা । ভালো থাকুন।
আপনার ভাই ঈশানের গাড়ি পছন্দ সেজন্য ঐরকম টাইটেল। তবে ঈশান না হয় আমার মতো একটু চিকন তাই বলে তালপাতার সেপাই😴। ভাইয়ের জন্মদিনে একেবারে পঞ্চব্যঞ্জন সাজিয়ে দিয়েছেন। আপনার ভাই ঈশানকে জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। ওর ভবিষ্যৎ পথচলা সুগম হোক।
হাহাহা!! তাল পাতার সেপাই ই তো!!
আপনার ভাইয়ের জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা জানাই শুভ জন্মদিন ।
আগামী পথ চলা খুবই সুন্দর এবং সফল মন্ডিত হোক। মানুষের মত মানুষ হয়ে আপনাদের পরিবারের সকলের মুখ উজ্জ্বল করুক। এত সুন্দর পোস্ট দেখে খুব ভালো লাগলো। খুব সুন্দর ভাবে আপনার অনুভূতি গুলো আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন, ধন্যবাদ।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর করে মন্তব্য করার জন্য।
এটাই চাওয়া যেনো মানুষের মতো মানুষ হয়।আজকাল এতো এতো অমানুষের ভীড়ে মানুষ হতে পারাটাই সবচেয়ে বড় কথা তাই দোয়া করি।
লাল গাড়ির ইতি শীঘ্রই হবে।🤪
ইতি হইয়া গেছে দিদি অলরেডি। হাহাহা।
ভাই ভালো থাক। ভাইকে আমার তরফ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। এমন একটা দিদি পৃথিবীর সব ভাইদের যেন দরকার, তাহলে জীবনে দুঃখ বলে কিছু থাকবে না।
ভগবান কে ডাক, পরের জন্মে যেন আমি তোর দিদি হই 😅😅 দিদি মানে কিন্তু দাদি না, দিদি মানে বোন
ঈশান ঠিক আছে দুষ্টমি না করলে বাচ্চাদের বাচ্চা বলা যায় না। শুভ জন্মদিনের শুভেচ্ছা রইল ঈশান বাবুর জন্য। আমার বহুদিনের শখ এভাবে সাজিয়ে খাবো কিন্তু হয়ে ওঠে না। মাকে বলি মা আমার কাসার থাল গ্লাস গুলো ঢুকিয়ে রেখেছে আলমারিতে। যদিও কাসার থাল কিংবা পাত্রে খাবার খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে। যাহোক বাচ্চারা খেলানা ভেঙ্গে ফেলবে এটাই স্বাভাবিক। আমার ভাগিনা ও আমার মেয়েও ঠিক এমন টাই করে। ভাল থাকবে ছোট্ট বোন। শুভেচ্ছা রইল।
এভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে খেতে ছেলেদের বেশ ভালো লাগে আমি জানি। হিহি, বাচ্চা বলেই তো ঈশান এত পার পেয়ে যাচ্ছে।