পাখি কখন জানি উড়ে যায় - স্বরচিত

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। হঠাৎ কাল একটা লেখা লিখেছি। নিজ অভিজ্ঞতা আর সদ্য নিজের জীবনের সাথে যা ঘটছে, কিভাবে যেন পুরো ব্যাপারটা মিলে যাচ্ছিল। তাই লিখেই ফেললাম। পাখির জায়গায় একটা মানুষ অথবা একটা বস্তুকেও আপনি ভাবতে পারেন। পুরো লেখাটা পড়লে বুঝবেন, শেষ অব্দি কি বোঝাতে চাইছি। আসলে এই পৃথিবীতে আমাদের সাথে কেও জড়িয়ে যায়না। আমরা নিজেদের আমিত্ব বোধ এর সাথে অতিরিক্ত জড়িয়ে মায়া জর্জরিত হয়ে যাই। কিন্তু এই মায়া ত্যাগ করতে পারলে তো আমরা পরমাত্মা হয়ে যাব। আমাদের সংসার জীবন বলে কিছু থাকবে না। তাই আমরা এই মায়া ত্যাগ করতে পারিনা। তবে যারা এই পুরো ব্যাপারটা একটু হলেও বুঝে কঠিন হতে পারে। আমিত্ব সরাতে পারে।তাদের জীবনে দুঃখ কম।
অনেকটা বলে দিলাম। আশা করবো পুরো লেখাটা পড়ে আপনারা আরও ভালো বুঝতে পারবেন।চলুন লেখায় যাওয়া যাক।

পাখি কখন জানি উড়ে যায়

20220717_094608.jpg

বাড়িতে এখন কম আসা হয়। পরীক্ষা শেষ করে প্রায় কুড়ি দিন পর বাড়ি এসেছি। আসার পরের দিন সকাল বেলায় বাগানে হাঁটাহাঁটি করতে করতে বেলি ফুলের গাছটায় পাখির একটা বাসা দেখতে পাই, হঠাৎ কিছু ভালো জিনিস দেখার আনন্দই আলাদা। আর এই চমক লাগিয়ে দেওয়া ব্যাপার গুলো বেশ মনের মধ্যে একটা জায়গা করে নেয়। তা ভালো হোক আর খারাপ। মাকে চেঁচিয়ে বলতে লেগেছিলাম - মা, বুলবুল পাখি বাসা বেঁধেছে মনে হয়। তাতে আবার তিনটে ডিম দেখতে পাচ্ছি। মামার বাড়িতে এর আগে বুলবুল পাখির ডিম দেখেছিলাম, তাই ডিম দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম এটা বুলবুল পাখির বাসা।

কবে বুলবুল পাখিরা বাসা বাঁধলো, বাসা বাঁধতে কতদিন সময় লাগলো। আর কবে ডিম দিল তা আমি না জানলেও মা সবটা জানত, কিন্তু আমাকে বলতে ভুলে গিয়েছিল। আমার কাছে ওই সকালটা খুবই সুন্দর হয়ে উঠেছিল। বিষয়টা আর পাঁচজনের কাছে খুব সিম্পল মনে হতে পারে, আমার কাছে ছিল খুব আনন্দের।
তারপর থেকে রোজ আমি বাগানে যেতাম ওই ডিম দেখতে। আগে বাগানে যাবার কোনো কারণ থাকত না। কিন্তু এবার কারণ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। পর্যবেক্ষণের সীমা বেড়ে গেল। সারাদিনে আমি কতবার যে ডিম দেখতে যেতাম, ঠিক নেই। রাতে বাগানের দিকে লাইট জ্বালিয়ে ফোনের টর্চ অন করে ওদের দেখে আসতাম। মাঝেমধ্যে মা পাখিটা বিরক্ত হয়ে বাসা থেকে উড়ে যেত। অজান্তেই মায়া হয়ে গিয়েছিল আমার। ডিমের ভেতরে আটকে থাকা ছোট ছোট তিনটে প্রাণ জানতো না যে তাদের কেউ খেয়াল রাখছে। হয়তো আমিও খেয়াল রাখা বা যত্ন করা এরকম কোন নাম দিইনি, আমার এই কার্যকলাপকে। যা করতাম আমার ভেতরের অনুভূতির রিঅ্যাকশন হতো আর কী।

এইভাবে কিছুদিন যেতেই ডিম ফুটে তিনটে বাচ্চা বেরিয়ে এলো। ওরা কখন বেরিয়ে এসেছে তা আমি জানিনা। না জানার আপসোস করার সময় হয়নি। ওদের দেখে কি যেন একটা তৃপ্তি পাচ্ছিলাম সেদিন। হাসি পায় এখনো নিজের ওই আচরণ গুলোর কথা ভেবে।

অভ্যাস জিনিসটা বড়ই শক্তিশালী। ওরা হওয়ার পরও একই ছন্দে ওদের দেখতে যেতাম। ধীরে ধীরে ওরা বড় হলো, ওদের আওয়াজ সারা বাগান ভরিয়ে দিত। ওদের আওয়াজ না শুনতে পারলে আমি ছুটে গিয়ে দেখে আসতাম ওরা ঠিক আছে কিনা। সত্যি বলছি এখনো হাসি পায় ।আর এই হাসির মধ্যে অনুভূতির বহু প্রকার মিশে আছে।

সেদিন সকালে বাগানে গেলাম, যেমন রোজ যাই। ওদের আওয়াজ পাচ্ছিলাম না বলেই একটু ভ্রু কুঁচকে উঠেছিল। আমার ঘর থেকে বাগান অব্দি যেতে যেটুকুনি সময় লাগে, ওই কয়েক সেকেন্ড যেন ভেতরে একটা ছটফটানি কাজ করছিল।

বেলি ফুলের গাছের মাঝে থাকা বাসাটা খালি। আমার ভেতরটায় কি যেন একটা ধাক্কা লাগলো। সে ধাক্কা টা কেমন ছিল তা বলার মত ভাষা, শব্দ আমার কাছে নেই। মাকে চেঁচিয়ে সেদিনও ডাকলাম। মা বললো - ওরা উড়ে গেছে।

"ওরা উড়ে গেছে" - কত সহজ সরল একটা বাক্য। কিন্তু আমি মেনে নিতে পারলাম না। আমি ভীষণ ভেঙ্গে পড়লাম। বেলি ফুলের গাছটার সামনে বসে কাঁদতে লাগলাম। আমার কান্না ঐ উড়ে যাওয়া বুলবুল পাখিদের কানে গিয়ে পৌঁছল না । না ওরা বুঝতে পারল আমার অনুভূতি। এখনও প্রশ্ন জাগে, ওরা কী বুঝতো? একটা পাগলি মেয়ে রোজ ওদের দেখতে আসে ,ওদের অজান্তেই খেয়াল রাখে কোন স্বার্থ ছাড়া!

কিছুক্ষণ পর নিজেকে প্রশ্ন করলাম। আজ অবধি তো কিছু চাইনি ওদের থেকে। ওরা যাতে সুস্থভাবে বড় হয়ে ওঠে একদিন উড়তে পারে, এটাই তো চেয়েছিলাম আমি। আর তাই তো হল। আমার ইচ্ছাটা পূরণ হল। তাহলে আমি এখন কাঁদছি কেন?

পাখির বাসাটা খালি দেখে!? নাকি অভ্যেস ভেঙে গেল বলে!?
"পাখি কখন জানি উড়ে যায়" - পাখি তো আমার নয়। পাখি তো এই প্রকৃতির। আমি তাকে বোকার মত বাঁধতে চাইবো কেন?

বুঝলাম যে, অজান্তেই সময়ের সাথে সাথে যে অদৃশ্য বাঁধন তৈরি হয়েছে, তা আমার নিজের সাথে নিজেরই বাধন। ওদের এতে কোন দায়বদ্ধতা নেই। নেই কোনো পিছুটান।

এখানে আমার 'আমি'র অস্তিত্বটা এতই প্রবল যে, আমি নিজেই সব দিক দিয়ে জড়িয়ে গিয়েছি। নিজেকেই বেঁধে ফেলেছি কোথাও। ওরা উড়ে চলে গেছে। কিন্তু আমি সেই বেলি ফুলের গাছের সামনে পড়ে। বুঝলাম, এই 'আমিত্ব' কে মুক্তি দিতে হবে। আর তারই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

আশা করছি আমার আজকের পোষ্ট আপনাদের সকলের ভাল লেগেছে। ভালো থাকুন।
@isha.ish

Sort:  
 2 years ago 

বেশ মায়ায় পরে গিয়েছিলেন,তাই হয়ত ওরা উড়ে যাওয়াতে বেশ কষ্ট হচ্ছিলো।কেমন জানি অদ্ভুত মায়া কাজ করে।ভালো লাগলো পোস্ট টা পড়ে।ধন্যবাদ আপু

 2 years ago 

হ্যাঁ , অমনি তো হয়।

 2 years ago 

আজকে আপনার পোস্টটি পড়ে সত্যি খুব ভালো লাগলো। আসলে আমাদের পশুপাখিদের প্রতি এক ধরনের মমত্ত্ববোধ কাজ করে। যখন প্রিয় পাখিটি আমাদের থেকে হারিয়ে যায় তখন খুব কষ্ট লাগে। সুন্দরভাবে পোস্টটি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। ভালো থাকবেন।

 2 years ago 

আপনার জন্য শুভ কামনা রইল। ভালো থাকুন।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 64689.90
ETH 3450.92
USDT 1.00
SBD 2.50