সমাজের তালাচাবি পার্ট - ১ || ১০% বেনিফিট @shy-fox এর জন্য

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

নমস্কার বন্ধুরা ।আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন ।নিজের মনের ভেতরে থাকা একটা ভাবনাকে ছোট্ট একটা গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম ।আশাকরি বেশি কিছু বোঝাতে হবে না। গল্পটা একবার পড়েই দেখুন।

adult-gb1648e711_1920.jpg

সোর্স

ও পাড়ার টুটুল আর আমাদের রিম্পি একসাথে পড়তে যেত রোজ। আমরা সবাই দেখতাম রিম্পি একা একা হাটতে হাটতে পড়তে যাচ্ছে ।তারপর দেখতাম ফেরার পথে সন্ধ্যা বেলায় টুটুল ওকে পৌঁছে দিচ্ছে ।বাড়িতে সবার কাছে শুনেছি টুটুল আর রিম্পি একই ক্লাসে পড়ে। আমি বহুদিন হলো দেখে আসছি ছেলেটা ভারী ভালো। বড়দের সাথে খুব ভদ্রভাবে কথা বলে। মায়ের অনেক বাধ্য ছেলে। আমাদের রিম্পি ও কম নয় ।পড়াশোনায় ভালো ।কিন্তু কথা কম বলে ।মাঝে মধ্যে পাশ দিয়ে গেলেও রিম্পি কথা বলেনা আমাদের সাথে।
ছেলে মেয়ে দুটোর বয়স ষোলো হবে হয়তো। একসাথে বাংলা পড়ে। দুই পাড়ার মোড়ের মাথায় মাঝে মধ্যেই দেখেছি দুজনকে ফুচকা খেতে ।মেয়েদের মত ছেলেটা ফুচকা খেতে পারে ।ওদের বন্ধুত্ব দেখে আমার বেশ ভালো লাগে।

আশেপাশের মানুষজন রিম্পি র মা বাবাকে বহু কথা শুনিয়েছে ।পাড়াতে বহুজন নানান কথা বলে বেড়ায় ওদের নিয়ে।বলে নাকি ওদের প্রেম চলছে । তা নিয়ে যদিও ওদের মা-বাবার কোন দুঃখ নেই ।টুটুলের মা-বাবাকেও এর মধ্যে নাক গলাতে দেখিনি। পাড়ার লোকের মাতামাতি প্রচন্ড।

সেদিন পাড়ার মোড়ে বৌদিদের সাথে বসে আছি। আমার কোলে আমার তিন্নি বসে বসে পা দোলাচ্ছে। আমার সাথেই এটা-ওটা গল্প শুনেছে। আমি যদিও বৌদিদের আড্ডা তে বসে থাকি না। সেদিন হঠাৎ পাশের বাড়ির কাকলি দি বেশ জোর বশতই আড্ডাতে ডেকে আনল ।

সকাল থেকে কাজের প্রেসার থাকে ।ঘুম থেকে উঠেই তিন্নিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাই। তারপরে তো নিজের কাজ অফিস যাওয়া। প্রত্যেকদিন মা আর মালতি দি'র কাছে তিন্নিকে থুয়ে তারপর ওর সবকিছু গুছিয়ে, সবাইকে সবকিছু বুঝিয়ে, ওকে একটা হামি দিয়ে তারপর বেরোয়। মেয়ে আমার বিকেল বেলায় দরজা খুলে আমাকে ঢুকতে দেখামাত্রই ছুটে কোলে উঠে পড়ে।

কাকলি দিদি দের আবোলতাবোল কথাবার্তা গুলো বেশ কানে বাজতে থাকলো ।দুটো ছেলেমেয়ে দিব্যি বন্ধু। পড়তে যায় আর আসে ।কোনদিনও খারাপ কিছু দেখি নি। দুটো পরিবারই অনেক ভদ্র ।তাও পাড়ার লোকে এত কথা কেন বলে বুঝিনা। চারিদিকে মানুষের এত কাজ থাকতে পাড়ার মোড়ে মোড়ে এগুলো লেগেই থাকে। তাই আমার এসব আড্ডায় বসতে ভাল লাগেনা।

আজ বড় বিরক্ত লাগছে ।কেন যে কাকলি দির জেদাজেদি তে এখানে আসলাম। বিরক্তর সাথে মাথার মধ্যে ঘুরছে - নিজের কথা ।আমিও তো এরকম অনেক ঘোরাঘুরি করেছি। আমাকে নিয়েও কত লোকে কত কথাই না বলেছে। তারা এখন কোথায় চলে গেছে। কেউ বেঁচে আছে। কেউ মরে গেছে। কারোর আবার হদিস নেই।

কিন্তু মনে আছে আমার সময় টা আলাদা ছিল। মা-বাবার কানে কিছু ঢুকলে আমাকে কড়া শাসনে রাখা শুরু করে দিত। সমাজকে চাবি ধরিয়ে দিতো সবকিছু তালা বন্ধ করার। সে নিয়ে ওই বয়সে কত ঝামেলা করেছি মা বাবার সাথে।আজ আমি এখন কি করছি, কখন খাচ্ছি, কখন ঘুমাব, কখন কাজে বেরোচ্ছি ,সে-খবর আর সেই আড্ডার দল রাখতে চায়না।
বেশ অবাক লাগে এই সমাজটাকে। সমাজের চোখটা যেন আসল জায়গাতেই অন্ধ যে জায়গা গুলোতে থাকলে সমাজটা আজ এগিয়ে যেতে পারত ,সে জায়গায় সমাজ এর চোখ অন্ধ।

তিন্নির মুখের দিকে একবার তাকিয়ে মনে মনে ভাবি তিন্নির ভবিষ্যৎ টা। ওর সময় ও কারোর সাথে এরকম ভাবে ঘুরে বেড়ালে আশেপাশের মানুষজন ঠিক একইভাবে বলবে!? কোন বৌদিদের আড্ডায় , চায়ের দোকানে ওকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলবে !?? প্রশ্নটা মাথায় আসতেই তিন্নিকে কোলে করে নিয়ে আমি উঠে পড়ি আড্ডা ছেড়ে।

ভেবেছি এরকম ভাবেই সমাজের তালা চাবি নিয়ে পরপর কিছু গল্প লিখব অর্থাৎ আমার ভাবনা গুলোকে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব। আমরা আসলেই অনেক কিছু জানি তাও আমরা জ্ঞানপাপী। একেবারেই ব্যক্তিগত দিক দিয়ে গল্পটা লিখেছি ।আশা করি এই নিয়ে আপনাদের সাথে আমার ঝগড়া ঝামেলা হবে না। সকলে ভাল থাকুন। সুস্থ থাকুন।

@isha.ish

Sort:  
 2 years ago 

সব সমাজেই কিছু মানুষজন থাকে যাদের কাজই হচ্ছে অন্যদের নিয়ে সমালোচনা করা। এসব মানুষের চোখ যে কবে খুলবে আল্লাহ্‌ ভাল জানেন। আপনি সেই সময়টি পার করে এসেছেন। অনেক কড়া শাসনের মধ্যে ছিলেন। বিষয়টি অনেক দুঃখ জনক। ছোট্ট তিন্নির পিছনেও হয়তো সমাজের কিছু সমালোচনাকারী উঠে পড়ে লাগবে। ঘুনে ধরা সমাজ আমাদের।

 2 years ago 

পার করে আসিনি, পার করছি।
আমার বিয়ে হয়নি, আমি স্টুডেন্ট দাদা😅
গল্প এমনই লিখেছি

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 67614.76
ETH 2610.64
USDT 1.00
SBD 2.73