চরম শিক্ষা || ১০% বেনিফিট @shy-fox এর জন্য
নমস্কার বন্ধুরা ।আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন ।কলেজের প্রথম দিনের গল্প আপনাদের সেদিনকে শেয়ার করছিলাম। কলেজে পৌঁছানো অব্দি আপনাদের সাথে সমস্ত কথা হয়েছিল। সমস্ত আপনাদের বলেছিলাম ।তার পরের ঘটনা গুলি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে থাকি, চলুন।
ভাষা দিবস অর্থাৎ একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ওপেন প্রোগ্রাম করছিল সংগীত ভবন এবং ড্রামা বিভাগের ছাত্র ছাত্রীরা।
ঢুকে এরকম একটা পরিবেশ দেখে খুবই ভালো লাগলো। তারপর রাস্তায় করা বড় বড় আলপনা গুলো এত সুন্দর এবং অপূর্ব দেখতে লাগছিল যে বলে বোঝাবার নয়।
তার সাথে ছিল রং বাহারি ফুলের মেলা ।আগের মাসে যখন এসেছিলাম তখন এত ফুল ছিল না ।বলতে গেলে সেরকম ফুলই ছিল না। চারিদিকে ফুলে ফুলে ঘেরা জায়গা দেখতে কার না ভাল লাগে! তাই প্রকৃতির সাজে অপরূপ ভাবে সেজে উঠেছিল আমাদের ইউনিভার্সিটি। সোজা চলে গেলাম ক্লাসরুমে।
ইন্টারনাল স্টুডেন্টরা ভীষণই ভালো এবং মিশুকে। দেখলাম তারা দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমাদের দেখতেই কোথায় আমাদের রুম সেটা দেখিয়ে দিলো এবং আমাদের সাথে আলাপচারিতা করতে শুরু করে দিল ।ওদের ব্যবহার দেখে খুব ভালো লাগলো।
তারপরে বসে পড়লাম ক্লাস রুমের মধ্যে। পরিচিত-অপরিচিত কিছু মুখ এবং তাদের সাথে হালকা হাসি মজার মধ্যে দিয়ে কিছুটা সময় পার করতে ই ,প্রথম ক্লাস শুরু হল। আসলেন আমাদের ডিপার্টমেন্টের হেড ।পড়ানো শুরু হল তালে তালে।
ইউনিভার্সিটির সেদিনকেই প্রথম অফলাইন ক্লাস ছিল। প্রথম সামনে থেকে দেখা , যে আওয়াজ এতদিন ছোট কালো ফোনটার মধ্যে দিয়ে রেডিওর মত শুনে এসেছি, তাকে সামনে থেকে দেখলাম এবং ক্লাসটি করতে ভালোই লাগলো।ম্যামের সাথে নানান কথাবার্তা হল আলোচনার মধ্য দিয়ে।
পুরো ব্যাপারটাই একেবারেই নতুন ছিল ম্যামের সাথে প্রথমবার কথা বলতে একটু গলা কেঁপে উঠেছিল ।পরে আবার সব কিছুই মানিয়ে নিয়েছি ।আসলে সবার নতুন কিছুই যেন এরকম ভাবেই শুরু হয়। টানা পরপর দুটো ক্লাস হওয়ার পরে শুনলাম পরে আর ক্লাস হবে না।
ট্রেনে আসার সময় জানতে পেরেছি যে, আজকে মাত্র দুটো ক্লাস হবে ।কারণ সব হাফ ছুটি ।একজন মন্ত্রী মারা গেছেন এবং সাথে ভাষা দিবস উপলক্ষে ছুটি রেখেছেন সরকার । ক্লাস শেষ করার পরে ক্যান্টিনে ঢুকে পরোটা খেলাম। তারপর ঝিলপাড়ের দিকে যাওয়া হলো। ঝিলপাড় নামটা যখন থেকে ইউনিভার্সিটি তে এসেছি, তখন থেকে শুনছি।
ওখানে নাকি সবাই খুব মজা করে। গান-বাজনা হয়। আরো অনেক কিছু ।যাই হোক সেগুলো আর বলতে আসলাম না ।তবে যাওয়ার পরেই দেখলাম জায়গাটা বেশ সুন্দর করে আলপনা দিয়ে সাজিয়েছে ।অনেকে ওখানে বসে আছে এবং অনেকে গান-বাজনা করছে। একদল একদিকে হিন্দি গান ,একদিকে ফোক গান এই ভাবেই হাসি মজা চলছে ।বন্ধুদের সাথে নানান গল্পগুজব শুরু হতে লাগল, তারপর দেখলাম ধীরে ধীরে জায়গাটায় ভিড় ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
আমার এক পরিচিত দিদি ওখানে সংগীত ভবনে পড়াশোনা করে। দিদির সাথে দেখা হলো ফোনে যোগাযোগ করে, দিদি ঝিল পাড়ে এগিয়ে আসলো ,তারপর দিদির সাথে কিছুটা সময় কাটালাম ,নানান গল্প গুজব হল। একেবারেই নতুন জায়গা বলতে গেলে। আমি একেবারেই একা ছিলাম।তাই সব মিলিয়ে সবকিছুই ছিল আমার কাছে নতুন।
প্রথম দিনের সবার ব্যবহার আমার মন জয় করে নিয়েছিল। তারপরে আবার বাড়ি ফিরতে হবে তাড়াতাড়ি, তাই তিনটে ছত্রিশ এর ট্রেন ধরবো বলে ছুটলাম শিয়ালদার দিকে আমার দুটো বন্ধুর সাথে। ট্রেনে যাতায়াত করা আমার অভ্যাস নেই ।তাই এ সব ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। কোথা থেকে কোন ট্রেন ছাড়ে ,কখন কোন ট্রেন , কোথায় কোন প্ল্যাটফর্ম এ আসবে, এ ব্যাপারে আমার কোন কিছুই জানা নেই।
ওই দুই বন্ধুর কথা মতোই এদিক-ওদিক যাচ্ছিলাম। এবার এখানে একটা ঘটনার কথা বলি, ট্রেনে আমি উঠে পড়েছি কৃষ্ণনগর যাব বলে, আমার দুই বন্ধু অর্থাৎ ওরা কাপল, ওই জুটি দুজন দুজনার হাত ধরে সামনের জেনারেল কম্পার্টমেন্টে দিকে এগিয়ে চলেছে ।আমি দেখলাম লেডিস এ কিছুটা ভিড় কম। লেডিস কম্পার্টমেন্টে উঠে পড়লাম তাই।
একটু পরে হঠাৎ করে দেখি আমি দাঁড়িয়ে আছি, আমার বান্ধবী প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আমাকে বলতে শুরু করল ঈশা শিগগিরই নাম।এটা ভুল ট্রেন ।আমি ওর কথাই ভয় পেয়ে ট্রেন থেকে প্লাটফর্মের দিকে লাফ মারলাম। যতক্ষণ ও কথা বলেছে, ততক্ষনে ট্রেনটা চালু হয়ে গেছে , ট্রেনটা চলতে শুরু করেছে।
আমি বুঝতে পারিনি কি হবে আর ওর কথা আমাকে নার্ভাস করে তুলেছিল ,যেহেতু আমি এই সম্পর্কে সে রকম কিছু জানতাম না। ও যখনই বলেছে ভুল ট্রেন, শিগগিরই নাম ।আমিও ওর কথামত লাফ মেরেছি প্লাটফর্মে আর নিজের অজান্তেই ব্যালেন্স রাখতে না পেরে বাঁদিকে ছিটকে পড়েছিলাম প্লাটফর্মে ।চলন্ত ট্রেন থেকে এর আগে কখনোই এরকম ভাবে নামিনি আর নামবোও না।
যদি পেছন দিক করে দৌড়ে নামতাম, তাহলে হয়তো পড়ে যেতাম না ছিটকে। তারপরে তো পিঠের বাঁদিকে প্রচন্ড লাগলো। পেছনের হকার গুলো বলতে লাগল ,ট্রেনটা তো ঠিক ছিল। ওটাইতো কৃষ্ণনগর যাচ্ছিল। আসলে আমার বন্ধুদের কারা যেন বলেছে ওটা কল্যাণী যাবে, তাই ওরাও ঘাবড়ে গিয়েছিল।
বান্ধবী জেনে-বুঝে বলেনি, আমার মতনই অজানা ছিল এইসব ব্যাপারে ।তাই বলে ফেলেছে। তারপর মা জানতে পেরে এবং বাড়ির লোকজন জানতে পেরে ভীষণ বকাবকি করলো এরকম কাজ করাতে।
আসলে ব্যাপারটা আসলেই ভুল হয়ে গেছে ।বিপদ ঘটতে পারত। কিন্তু আমি না জেনে বুঝে কাজটা করেছি। আর বলতে গেলে পরিস্থিতি কি জানি কেমন একটা ছিল। যাক সে সব বাজে কথা না হয় বাদই দিলাম। একটা চরম শিক্ষা সেদিনকে পেয়েছি ।তারপর ধীরে সুস্থে পরে ট্রেনে বাড়ি এসেছি।
বাড়ি আসার পরে ব্যথা ছিল এত যে পরের দিন আর ইউনিভারসিটি যেতে পারিনি ।প্রথম দিনেই একটা বড় ধাক্কা খেয়ে গেছি। আর যে কি কি ভাবে ধাক্কা পাবো।ভগবান জানেন।
যতক্ষণ পর্যন্ত কলকাতায় রুমে গিয়ে না উঠছি ,ততক্ষণ আমার শান্তি নেই। আর বাড়ির লোকের তো টেনশনে ভরপুর । অন্তত এই যাতায়াত বন্ধ হবে।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। সকলে ভাল থাকুন। সুস্থ থাকুন। আর ভুলেও কেউ এইভাবে আমার মত ভুল করেও এরকম কাজ করতে যাবেন না। দরকার পড়লে ভুল ট্রেনে উঠলেও পরের স্টেশনে নেমে যাবেন। চলন্ত ট্রেন থেকে লাফ মারার মতো কাজ ভুলেও করবেন না। ঠিক ট্রেনে উঠে ও আমি যা শিক্ষা পেয়েছি ,এরপরে আর এই কাজ জ্ঞান থাকতে করবো না।
একটা কথা সবসময় মাথায় রাখবেন । রাস্তা কিংবা ট্রেন বা বাস যেটাই হোক না কেন সব সময় সাবধান থাকতে হবে। তাছাড়া যদি ওটা ভুল ট্রেন হতো পরের প্লাটফর্মে নেমে যেতেন । পরে উল্টো ট্রেনে চেপে আবার ফিরে আসতেন। কোন কিছুতেই তাড়াহুড়া না করাই ভাল। স্থির মনে একটু দেরী হলেও সবসময় সাবধানতার সাথে চলতে হয়। আমি যখন প্রথম ঢাকা গিয়েছিলাম তখন আমার ও এমন হয়েছিল। আমি ঢাকা শহরে কোন বাস কোন দিকে যায় জানতাম না। ট্রাফিক কে জিজ্ঞাসা করে বাসে উঠতাম। ধীর স্থির ভাবে চলাচল করাই শ্রেয় । সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশী। কলেজের গল্প পড়তে পড়তে হটাৎ ঘটনাটা শুনে খারাপ লাগলো। যাই হোক ইশ্বরের কৃপা ছিল বলেই বিপদ বড় হয়নি। ধন্যবাদ ভাল থাকবেন বোন।
অনেক ধন্যবাদ দাদা খুব ভালো করে মন্তব্য করেন আপনি, ভালো লাগে তাই, হ্যাঁ আমি এবার সাবধান হয়ে গেছি। ধীরে সুস্থে সব করার চেষ্টা করছি।
আসলে হঠাৎ আতঙ্কে মানুষ কখন কি করে বসে। আপু হঠাৎ আপনি ট্রেন থাকে যে লাফ দিলেন আরো বড় বিপদ ঘটতে পারতো।তাই তাড়াহুড়া না করে সাবধানে চলাফেরা করিয়েন।যাই হোক আপনার ইউনিভার্সিটির কম্পাস টা খুব সুন্দর। ভালো লাগলো ফুল প গাছগুলো। ধন্যবাদ আপু।
অনেক ধন্যবাদ দিদি। হ্যাঁ দিদি, এখন সাবধান হয়ে গেছি।