কাশ্মীর থেকে ফেরার পথে : পার্ট - ১ || ১০% বেনিফিট @shy-fox এর জন্য

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। আজ বেশ অনেক দিন পর আবার চলে এসেছি কাশ্মীর এর কিছু কথা শেয়ার করতে, ফেরার কথা।
ফিরতে হবে এটাই সব কিছুর নিয়ম।অবস্থা কখনই একই থাকেনা, যা হচ্ছে ,যা হবে সবটাই মেনে নিয়ে উপভোগ করা উচিত, দুঃখ পেলে কাঁদা উচিত। হাসি পেলে হাসা উচিত।

সেদিন সকাল বেলা ভোর পাঁচটা নাগাদ উঠতে হয়েছিল। কারণ পরবর্তী রাস্তা বেশ সময় এর। সকাল সকাল রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।

আমাদের হোটেল

20211102_071733.jpg

আমাদের পরিচিত সেই গুলাম কাকার গাড়ি করে রওনা দিলাম পেহেলগাম থেকে শ্রীনগর এর দিকে। ধীরে ধীরে চেনা রাস্তা ,সেই চেনা মার্কেট ,তখন যদি ও দোকানপাট সব বন্ধ ছিল। চারিদিকে ধূ ধূ কুয়াশা ।ঠান্ডা পরিবেশে আমার মনের গভীরতায় হিম ধরে যাচ্ছিল। বুকের ভেতরটা খা খা করছিল ।তার পরেও আমাকে ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছিল সেই জগৎ।

আপেলের ঢিবি

20211102_080822.jpg

এইভাবে চলতে চলতে ধীরে ধীরে পাহাড় নদী পার হতে হতে বেরিয়ে গেল পেহেলগাম ।চোখের নিমেষে ফেলে রেখে আসলাম সেই স্বপ্নের মতো জায়গাটাকে ।ফেরার পথে একটি কবিতা লিখেছিলাম ।যে কবিতাটা আমি আপনাদের সকলের সাথে কিছুদিন আগে পোস্ট শেয়ার করেছি ।

আমি এখনও বুঝতে পারি, সেদিন যে কষ্টটা আমার হচ্ছিল বুকের ভেতরে যে যন্ত্রনা হচ্ছিল ।জায়গাটির প্রতি এতটাই যে মায়া আমার মনের ভেতরে ভরে গিয়েছিল। সে থেকেই হয়তো এই কবিতার সৃষ্টি হয়েছিল ।একজন হয়তো এতটা মায়ায় জর্জরিত হলেই কবিতা লিখতে পারবে।

মা

20211102_080914.jpg

পেহেলগাম ছেড়ে আসার কিছুক্ষণ পর যখন চোখের জল শুকিয়ে এসেছে ।রাস্তায় দাঁড়িয়ে অনেক অনেক ছবি তুলেছি ।সকালবেলা রাস্তাটা ফাঁকা থাকায় কিছু ছবি তোলার সুযোগ পেয়ে গেছিলাম ।কাশ্মীরের ড্রেস পোশাক নিয়ে এবং ওখানকার মানুষদের গঠন নিয়ে আমার ছবি সংগ্রহের ইচ্ছা ছিল ।সে ছবি আমি পেয়ে গিয়েছিলাম ।

লাইট

20211102_083406.jpg

সকালবেলায় দেখলাম রাস্তার পাশেই একটি কল থেকে অনেকগুলো মহিলা জল ধরছেন এবং গাড়ি দাঁড় করিয়ে তাদের একবার অনুরোধ করাতেই তারা আমার সাথে ছবি তুলতে আগ্রহী হয়ে উঠলেন। ছবি তোলার পর তারা এমনকি আমাদেরকে চা খাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন ।কাশ্মীরের সকলের খুবই ব্যবহার ভালো ।আমি যে কদিন থেকেছি আমার সত্যিই খুবই ভাল লেগেছে ।

কাশ্মীরের সোসাইটি নিয়ে আমি একটি পোষ্ট করেছিলাম সেখানে আমি সমস্ত তথ্য দিয়েছিলাম ।আশা করছি যারা আমার পোস্ট রোজ পড়েন। তারা জানবেন।

আলুর পরোটা

20211102_082251.jpg

এর সাথেই ছিল চুনার গাছ তার ছবিও। ফেলে আসা চুনার গাছ এর কয়েকটা পাতা ব্যাগের মধ্যে করে যত্ন করে নিয়ে এসেছি কৃষ্ণনগরে। এখন সেই কচি পাতা গুলো কচি নেই ,শুকনো হয়ে গেছে ।মনের কিনারায় কিনারায় অন্তর্গত রক্তের মধ্যে যে অনুভূতি হয়েছে সেই জায়গায় গিয়ে। তা আমি আমার শেষ নিশ্বাস অব্দি মনে রাখব।

তারপরেই পৌঁছে গেলাম আপেল বাগানে। আমার মায়ের ভীষণ ইচ্ছে ছিল আপেলের জুস বাড়ি নিয়ে যাবে। আর শেষ বারের মত আর একবার এই টাটকা আপেলের জুস খাবে ।সকালে টিফিন করলাম ।ওই আপেল বাগানের পাশেই একটি দোকানে ।আলুর পরোটা আর দই দিয়ে টিফিন টা বেশ ভালোই হলো।

গুলাম্ কাকা আর ঈশান

20211102_081025.jpg

তখন সকাল আটটা বাজে ।টিফিন শেষ করে আমরা আপেল বাগানে ঢুকলাম ।শেষবারের মতো আপেলের টাটকা জুস খেলাম ।বাড়ির জন্য নিয়ে আসবো বলে এক বোতল ভরে নিলাম ।সাথে নিয়ে নিলাম আপেল কিছু ।যদিও বেশি নিয়ে আসিনি ।আমাদের মনে সন্দেহ ছিল যে আপেল এতগুলো নিয়ে গেলে, যদি বাই চান্স এয়ারপোর্টে ধরে এবং আপেল গুলো না নিয়ে যেতে দেয় ।তাই আমরা ওখান থেকে তিন কেজি আপেল মাত্র নিয়েছিলাম ।

20211102_083515.jpg

পরবর্তীকালে এয়ারপোর্টে গিয়ে বুঝতে পারলাম ধারণাটা একেবারেই ভুল ।সবার হাতে হাতে দেখি একটা করে আপেলের পেটি ।যা দেখে আমার মা ভীষণ রেগে গিয়েছিলেন ।এতই আফসোস করছিলেন। কিন্তু কিছু করার নেই ।ফিরে যাওয়া মুশকিল।

আপেল বাগান এর সাথে অনেকগুলো ছবি তুললাম ।আবার প্রথম দিন যেদিনকে শ্রীনগর থেকে পেহেলগাম আসছি সেদিন কে ঐ বাগানে ঢুকে অনেক মজা করেছি ।ক্লান্ত শরীর থাকায় সেই মজাটা ফিফটি পার্সেন্ট ছিল। কিন্তু সেদিনকে সেই মজাটা হান্ডেট পার্সেন্ট করে নিয়েছিলাম ।আপেলের গাছগুলোতে লাইটের মত আপেল ঝুলে ঝুলে আছে ।মাও ভীষন মজা করেছে পুরো টুর টাতে।

আপেলের জুস

20211102_084352.jpg

আবার রওনা দিলাম শ্রীনগরের পথে। এর আগেও বলেছি শ্রীনগরের রাস্তার কিছু ঘটনা। পুলবামা হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই শ্রীনগরে কনভয় চালু হয়েছে। কনভয় হলে কি হয় তা নিয়েও আমি বিস্তৃত একটা ব্যাখ্যা লিখেছিলাম ।যারা আমার পোস্ট পড়েন তারা হয়তো সে ব্যাপারে জেনেছেন ।

কনভয়

এই সময় ছবি তোলা বারণ থাকে ।তাও আপনাদের জন্য আমি লুকিয়ে ছবি তুলেছি। ❤️
20211210_111507.jpg

তাই এই পোস্টে আর পুনরায় বলতে গেলাম না। দরকার পড়লে আপনারা আমার গত পোস্ট গুলো একটু চেক করে নিতে পারেন ।কনভয়ের কারণে মাঝেমধ্যেই গাড়ি দাঁড় করাতে হচ্ছিল ।তাই সেখানে সময় চলে যাচ্ছিল অনেক।

আপেলের দোকানে

20211210_111408.jpg

আমরা এত সকাল সকাল বেরিয়ে ছিলাম যদিও। কিন্তু আমাদের ফ্লাইটের টাইম ছিল দুপুরে ।এবার কেন এত সকালে বেরিয়ে ছিলাম ।তার কারণটা ছিল ডাল লেক দেখা। ডাল লেক নাকি খুব সুন্দর। তা দেখার জন্য আমরা ভেবেছিলাম একটু সকাল করে বেরোলে, লেক ঘুরে তারপরে আমরা এয়ারপোর্টে পৌঁছতে পারব ।সেই মতই কাজ হয়েছে।

আমার কিছুদিন আগে ডাল লেক নিয়ে একটি পোস্টে আমি কথাগুলো শেয়ার করেছি ।কাশ্মীরের প্রত্যেকটা পোস্ট আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং খুবই মূল্যবান ।সবকটা তথ্য যা যা লিখেছি ,আমি প্রত্যেকটি পোস্টে খুব গুছিয়ে এবং ঠিকঠাক তথ্য জোগাড় করে তবেই লিখেছি ।আমি জানিনা আপনারা কতটা মন দিয়ে পড়েছেন।

আমার মামণি

20211102_083713.jpg

কাশ্মীর নিয়ে লিখতে লিখতে আমার মনে হয়েছিল যে আপনাদের এই কাশ্মীর টপিকটা বোরিং লাগতে পারে। তাই মাঝেমধ্যে চেষ্টা করেছি অন্যান্য পোস্ট দিয়ে কাশ্মীরের টপিক যাতে আপনাদের বোর না লাগে ,সেই দিকে খেয়াল রাখার ।আজকে যে পোস্টটি করছি এটার পরে হয়তো আর দুটো পোস্ট করতে পারবো কাশ্মীর নিয়ে ।

আমি আর ঈশান

20211210_112211.jpg

কাশ্মীরের গল্প শেষ হতে চলেছে ।যাইহোক শ্রীনগরের রাস্তায় আমরা দাঁড়িয়ে গেলাম একটি চায়ের দোকানে। মা এতদিন ধরে কাশ্মীরে আছে ।আমি, বাবা সবাই কাশ্মীরি কাওয়া খেয়েছি। যেটা কাশ্মীরের সবথেকে বিখ্যাত একটি পানীয় ।কিন্তু মা খাননি ।তাই মাকে ওই কাশ্মীরি কাওয়া খাওয়ানোর প্রচন্ড ইচ্ছে ছিল।

আরেকটি পরিচিত দোকানে নেমে পড়লাম ।আর সামনে দেখলাম ওরা কাশ্মীরি কাওয়া বানাচ্ছে। এখানে নাকি কাওয়ার মধ্যে খুব বেশি পরিমাণে ড্রাই ফ্রুটস এনারা দেন ।তো সেই মতই দেখলাম ।আমি আগে যেখানে খেয়েছি সেখানে একদমই অল্প ড্রাই ফ্রুটস দেওয়া ছিল। আর এখানে ভর্তি করে ড্রাই ফুড দিয়েছে। খেতে খুবই মজা লাগলো।

তবে সকাল বেলায় ,,, কিন্তু সেদিনকে তো রাতে খাবার পর কাশ্মীরি কাওয়া ঠান্ডা ঠান্ডা শীতের বেলায় যে মজাটা দিয়েছিল ,তার থেকে তুলনামূলক কম মজা পেয়েছি সকালের কাওয়াতে। মায়ের খুব ভালো লেগেছে তারপরেও।

রাস্তার পাশে

20211102_094538.jpg

এই ভাবেই আমাদের যাত্রা চলতে থাকলো ।আজকের মতো এখানেই শেষ করছি ।একটি পোস্টে অতগুলি কথা বলা সম্ভব নয় ।

কাশ্মিরী কাওয়া

20211210_111558.jpg

কাশ্মীর থেকে ফেরার এই প্রথম পাঠ এখানেই শেষ করছি ।আশা করছি আপনাদের সকলের ভাল লেগেছে। আপনারা সকলে সুস্থ থাকুন। ভালো থাকুন। আপনাদের ভালোবাসার জন্য আমি আজকে এতদূর পৌঁছেছি। সব সময় আপনাদের আশীর্বাদ এবং ভালোবাসা কামনা করি ।আশীর্বাদ করবেন যেন ঠিক এই ভাবেই আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারি নানান তথ্য। নমস্কার।
@isha.ish

Sort:  
 3 years ago 

কাশ্মীর অনেক সুন্দর জায়গা আপনার পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারলাম। আর আপেল বাগান দেখে আমার অনেক ভালো লাগলো। আপেলগুলো দেখেই আমার পরিচিত মনে হইছে। সেদিন আপেল কিনতে গেছিলাম বাজারে হুবুহু আপনার দেওয়া ছবিতে যেমন আপেল তেমন আপেল পেয়েছিলাম। অন্য আপেলও ছিল এটা সেদিক থেকে আমার কাছে অন্য আপেলের চেয়ে আনকমন মনে হইছে। যাইহোক, আপনার পোস্টটা আমার পারসোনালি অনেক ভালো লাগছে। শুভ কামনা আপনার জন্য।

 3 years ago 

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 years ago 

কি বলেন ইশা আপু ভালো লাগবেনা এটা কখনই সম্ভব নয় যে ভালো লাগবেনা ।অবশ্যই ভালো লেগেছে ।আপনার কাশ্মীর নিয়ে প্রতিটি পোষ্টই পরেছি আর প্রতিটি আমার কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে।যেমন আজকে টা ভালো লেগেছে ।তবে আজকের টা বেশিই ভাল লেগেছে আপেল গাছগুলো দেখে ।সত্যি আপনার ফেরার মুহূর্ত গুলো অসাধারন ছিলো ।ধন্যবাদ আপু।

 3 years ago 

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে দাদা।

 3 years ago 

কাশ্মীরের ভ্রমণটা সত্যিই অসাধারণ ছিল। বিশেষ করে আপেল গাছ এবং আপেলের জুস আমার কাছে খুবই ভালো লাগেছে। আপনি খুবই সুন্দরভাবে ফটোগ্রাফির মাধ্যমে আমাদের দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন। আপনার জন্য রইল শুভকামনা

 3 years ago 

অনেক ধন্যবাদ দাদা।

দিদি অসাধারণ অনুভুতি আমি যখনই আপনার এই কাশ্মিরের ছবি দেখি আর আপসোস করি, কবে যাবো। আপেলের ঢিবি দেখে তো মন চাইছে সব খেয়ে ফেলি হাহাহাহাহা। ইনশাআল্লাহ জীবনে একবার হলেও কাশ্মির জাবো 😍😍

 3 years ago 

অবশ্যই যাবেন একদিন ।শুভ কামনা রইলো।

 3 years ago 

আপেলের জুস খেতে কেমন লাগে জানি না কারণ কোনদিন খাইনি। কাশ্মীর থেকে বাড়ি ফেরা নিয়ে পোস্টের ফটোগ্রাফি করার দেখতে আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

 3 years ago 

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 66937.04
ETH 3270.78
USDT 1.00
SBD 2.74