আমাদের উত্তর সিকিম ভ্রমনের গল্প (১০% বরাদ্দ রইল লাজুক খ্যাঁক ভাইয়ের জন্য)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

Edit 1.jpg

বাঙালি মানেই পায়ের তলায় সরষে, এ তো সেই কবেকার কথা। সেই সরষের ভান্ডারে বোধহয় টান পড়েছিল এই কোভিডের সময়। বাঙালি তার স্বাভাবিক ছন্দ হারালো, রোগের ভয়ে ঘুরতে যাওয়া ভুলে গেল। জীবন শুধু লকডাউনের ফাঁদে আটকে গেল। মানুষ ওয়ার্ক ফ্রম হোম শিখল, অনলাইনে সবজি বাজার করা শিখল,ঘরে বসে নেটফ্লিক্স এ সিনেমা দেখা শিখল, কিন্ত যেটা শিখতে পারলনা সেটা হলো ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছেটাকে মারতে। সারাদিন বসে বসে খবর শুনতে লাগলো এই আশায় যে এবার বোধহয় কোভিডটা কমবে, কারণ সেই আশায় ঘুরতে যাওয়ার জন্য ট্রেনের টিকিট কাটা আছে, হোটেল বুকিংটা পরে করে নিলেও হবে সেটা বাঙালি জানে। দিন যায় আর যায়, ভাল খবর কিছু পাওয়া যায়না। এদিকে কানাঘুষো শুনতে পাওয়া যায় যে অসুস্থ আত্মীয় কে দেখতে যাওয়ার বাহানায় কোনো এক বন্ধু টুক করে লাটাগুড়ির জঙ্গল থেকে ঘুরে এসেছে। শুনেই মনটা আনচান করে ওঠে, হায় রে কপাল, দূরে কোনো আত্মীয় একটু অসুস্থও হয়না।

এভাবেই দিন চলে যাচ্ছিল, একটু একটু করে খবর পাচ্ছিলাম যে কোরোনা নাকি কমছে। প্রথম আশার আলো দেখতে পেলাম যখন শুনলাম যে সিকিম সরকার নাকি সব বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে এবং টুরিস্টদের ঢুকতে দিচ্ছে। ব্যাস, আর আমাকে পায় কে, যে বন্ধুর সঙ্গে এতদিন ধরে পরিকল্পনা করছিলাম, সেই সত্য কে বললাম যে ট্রেনের টিকেট কাটতে। প্রথমে ঠিক হলো যে ১২ জন যাব, সেই ১২ জন বেড়ে ১৪ জন হলো। আমরা তো খুব খুশি, কারণ লোক বেশী হলে খরচাটা তুলনামূলক ভাবে কম পড়ে। এইবার যতদিন যায়, একটা একটা করে উইকেট পড়তে থাকে। বিভিন্ন লোকের বিভিন্ন সমস্যা, কারোর বাবার শরীর ভাল নয় তো কারোর বউ চায়না এখন ঘুরতে যেতে। সবথেকে বড় অসুবিধা হলো অফিস থেকে ছুটি পাওয়ার। এই ভাবে চলতে চলতে শেষ পর্য্যন্ত ঘুরতে যাওয়ার আগে ৪ জনে এসে ঠেকলাম, সত্য, আমি, দেবজ্যোতি আর শুভ। মনে মনে ভাবলাম যে তাই হোক, যেতে তো পারছি। কিন্তু ১২-১৪ জনের জন্য যে প্ল্যানটা করেছিলাম, সেই প্ল্যান এ তো ৪ জনে ঘোরা যাবেনা, তাই কিছু বদল করলাম। ঠিক হলো যে আমরা নর্থ সিকিম এ যাব। আমার বন্ধু সত্য এর আগে ১০ বার মতো সিকিম এর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছে। আমরা সবাই মিলে তাকেই টিম লিডার নির্বাচন করলাম, এবং ঠিক হলো যে সত্য যা বলবে, সেই ভাবেই ঘোরা হবে। ওই সব কিছু ঠিক করল, হোম স্টে, যাতায়াত সবকিছু।

ডিসেম্বরের ১১ তারিখ রাতে আমাদের যাত্রা শুরু হলো। কলকাতার বিখ্যাত শিয়ালদহ স্টেশন থেকে পদাতিক এক্সপ্রেসে চেপে বসলাম, রাত ১১ টা ২০ তে ট্রেন ছাড়ল এবং পরের দিন সক্কাল সক্কাল আমরা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন এ পৌঁছে গেলাম। পাহাড়ের এতো কাছে হওয়া সত্ত্বেও শিলিগুড়ি শহরটায় দিনের বেলা বেশ গরম থাকে, কিন্তু আরেকটু পরেই গাড়িটা পাহাড়ে উঠতে শুরু করলে বেশ ঠান্ডা লাগবে এই ভেবে গরম জামাকাপড় কিছু বের করে নিয়ে বাকি ব্যাগ সব গাড়ির মাথায় তুলে দিয়ে আমরা শিলিগুড়ি থেকে সিকিমের ছোট্ট গ্রাম মাঙ্গান এর উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। মাঙ্গান কে একটা গ্রাম ও বলা যায় বা একটা আধা শহর ও বলা চলে। এই মাঙ্গান হলো উত্তর সিকিম এ দ্বার, এখান থেকেই অনেকে উত্তর সিকিমের বিভিন্ন প্রান্তের যাত্রা শুরু করে।

প্রায় ৭ ঘন্টার যাত্রা করে আমরা পৌঁছলাম আমাদের হোম স্টেতে, যার নাম সাকজারলি(Sakjaer Lee) হোমস্টে। এই জায়গাটা রিঙ্গিম বাজার ছাড়িয়ে প্রায় ২০ মিনিট উপরে গেলে একটা হেলিপ্যাড গ্রাউন্ডের সামনে। আমাদের যেহেতু পৌঁছতে অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল তাই আমরা এই জায়গাটার আসল মজা বুঝতে পারিনি, আর সত্য, যে কিনা আগে একবার এই হোমস্টে তে থেকে গেছে, সেও চুপ করে ছিল যাতে সারপ্রাইসটা পরে দিতে পারে। সিকিমের পাহাড়ি বাসিন্দাদের আন্তরিক ব্যবহারের পরিচয় আমি আগেই পেয়েছি, সেদিন নতুন করে আবার দেখলাম। সত্যকে পেয়ে ওরা যে কী খুশি হলো সেটা ভাষায় বোঝানো যাবেনা। বাড়ির সকলে এসে আমাদের সঙ্গে দেখা করলো এবং তারপরেই যেটা সবথেকে বেশি দরকার ছিল, এক কাপ গরম চা, এক প্লেট পকড়া সহযোগে আমাদের দেওয়া হলো। এরপর আমাদের খুব সুন্দর করে সাজানো দুটো ঘর দেওয়া হলো। পাহাড়ের রীতি অনুযায়ী রাতের খাওয়া একটু তাড়াতাড়ি খেয়ে নিলাম, গরম-গরম ভাত, ডাল, সবজি আর মুর্গির ঝোল। একদম বাড়ির রান্নার মতোই স্বাদ তার। সত্য সবাইকে বলে দিল যে সকালে অন্ধকার থাকতে উঠে পড়তে হবে, কারণ সেটাই সারপ্রাইস। আমরাও বাধ্য ছেলের মতো সেই রকম ভাবনা নিয়েই শুতে চলে গেলাম। অন্ধকার থাকতেই ঘুম থেকে উঠে আমরা সবাই হেলিপ্যাড গ্রাউন্ডে এসে দাঁড়ালাম। কনকনে ঠান্ডায় হাত পা অবশ হয়ে আসছিল। কিন্তু এরপরেই আমাদের চোখের সামনে ধীরে ধীরে কাঞ্চনজঙ্ঘা তার অসামান্য রুপের পসরা সাজিয়ে হাজির হলো। চোখের সামনে এই দৃশ্য দেখবো কল্পনাতেও ছিলনা। কাঞ্চনজঙ্ঘা কে আমি নানা জায়গা থেকে আগেও দেখেছি, কিন্তু মাঙ্গান থেকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন হাত বাড়ালেই একে ছুঁয়ে ফেলা যাবে। এরপর রোদ উঠল, আর আমরা হেলিপ্যাড গ্রাউন্ডে বসে ঠান্ডার মধ্যে কড়া রোদের আনন্দ নিতে থাকলাম। এক ফাঁকে রুটি আর সবজি দিয়ে সকালের জলখাবার সেরে নিলাম। হোমস্টেগুলোতে হোটেলের মতো খুব বাহারি খাবার পাওয়া যায়না, কিন্তু অল্পের মধ্যেও ওরা খুব আন্তরিক ভাবে ৪ বেলা খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়। এইসব হোমস্টেগুলোতে পয়সা নেওয়া হয় “পার ডে, পার হেড” সিস্টেমে। অর্থাৎ একেক জনের ৪ বেলা খাওয়া এবং থাকা হিসেবে। এখানে সেই হিসেবে আমাদের জনপ্রতি ১২০০ টাকা প্রতিদিন খরচা হয়েছিল। এইদিনটা আমাদের মাঙ্গানেই কেটে গেল, কারণ আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য একটা দিন দেওয়া উচিৎ বলেই আমাদের সত্য ঠিক করেছিল এবং নর্থ সিকিম যেতে গেলে বেশ কিছু সরকারি অনুমতি পত্র নিতে হয়, সেসবের জন্যও আমরা এই দিনটা রেখেছিলাম। কাগজপত্র যা করার, সেইসব হোমস্টের মালিক লপজং লেপচা করে দিলেন। এইদিনটা আমরা মাঙ্গানে গ্রামের পথে পথে ঘুরে বেড়িয়ে কাটিয়ে দিলাম আর প্রচুর ছবি তুললাম।

edit 2.jpg
সেই বিখ্যাত সারপ্রাইজ

edit 3.jpg
মাঙ্গান হেলিপ্যাড গ্রাউন্ড

edit 7.jpg
সত্য তার প্রিয় সঙ্গিকে খুঁজে নিয়েছে, পেছনে সাকজারলি হোমস্টে

edit 8.jpg
বাঁদিক থেকে, সত্য-শুভ-দেবজ্যোতি

পরের দিন খুব ভোরবেলা আমরা দুদিনের লাচুং-লাচেন ট্রিপের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। এই দুদিনে আমরা লাচুংএ থেকে ইউমথাং ভ্যালি আর জিরো পয়েন্ট দেখব আর দ্বিতীয় দিনে লাচেনে থেকে গুরুদংমার লেক দেখব।
সারা রাস্তা অসাধারণ প্রকৃতি দেখতে দেখতে আমরা দুপুর নাগাদ লাচুং এ পৌঁছলাম। এখানেও হোমস্টে, নাম “ওয়ান্ডার হিল ইন”। এক বাঙালি দম্পতি এই হোমস্টে টা চালান, খুবই আন্তরিক ব্যবহার এদেরও। গাড়িথেকে নেমেই একটা জিনিস দেখে আমাদের ফিউজ উড়ে গেল, দুপুর দেড়টার সময় তাপমাত্রা মাত্র -১ ডিগ্রি। আমি আগেও মাইনাস তাপমাত্রা দেখেছি, কিন্তু দুপুরবেলাতেই মাইনাস দেখিনি, রাতের বেলা না জানি কী ভয়ঙ্কর হবে, রাতে সেই তাপমাত্রা -৮ এ গিয়ে ঠেকল। আমাদের ইউমথাং যাত্রা পরের দিন ভোর বেলা থেকে, এদিন তাই সুর্য্য থাকতে থাকতে লাচুং এর আসপাসটা একটু ঘুরে নিলাম আর অবশ্যই ছবি তুললাম। রাতের বেলা তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়তে হবে কারণ ভোরবেলা বেরতে হবে।

ভোরবেলা বেরতে হলেও হোমস্টে থেকে ব্রেকফাস্ট তৈরি করে দিয়েছিল, লুচি আলুরদম। কিন্তু এখানেই একটা পরামর্শ, যতটা পারুন হাল্কা খান, কম খান জার্নি করার আগে, আর কিছুক্ষন অপেক্ষা করে যাত্রা শুরু করুন। মানে হলো, খেয়েই গাড়িতে উঠে পড়বেন না।

edit 4.jpg
জিরো পয়েন্ট, ইউমথাং ভ্যালি

edit 5.jpg
লাচুং এর দৃশ্য

আজকের যাত্রা পথ সুন্দর হলেও কম সবুজ, একটু রুক্ষ, সেই সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে আমরা ইউমথাং ভ্যালি গেলাম। এটা একটা বিশাল ভ্যালি যার পাস দিয়ে নদি বয়ে চলেছে। বরফ পড়ে থাকলে এই পুরো ভ্যালিটা সাদা গালিচায় মুড়ে যায়। কিছুক্ষন এখানে কাটিয়ে আর ছবি তুলে আমরা আমাদের এইদিনের শেষ গন্তব্য জিরো পয়েন্টের দিকে যাত্রা করলাম। জিরো পয়েন্টে সবাই যায় শুধু বরফ দেখতে, আর ভাগ্য ভাল থাকলে তুষারপাত ও পেতে পারেন। আমাদের ভাগ্য অতটা ভাল না হলেও প্রচুর বরফ দেখতে পেলাম আর সঙ্গে হাড়কাঁপানো ঠান্ডা। এইসব জায়গায় একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে এখানে অক্সিজেনের মাত্রা খুব কম, তাই নিজের শরীর বুঝে চলতে হবে, বরফ দেখে আনন্দে বেশী লাফালাফি করাটা একদমই উচিৎ কাজ নয়। প্রচুর আনন্দ করে আর ছবি তুলে আমরা আবার দুপুরবেলা নাগাদ লাচুং এ ঢুকে গেলাম। আজকেই এখান থেকে দুপুরের খাওয়া খেয়ে লাচেনের দিকে যাত্রা করবো। এই ওয়ান্ডার হিল ইন এ আমরা আমাদের দৈনিক ১২০০ টাকা জনপ্রতি থাকা খাওয়ার পয়সা দিলাম। হোমস্টের মালিক সৌরভ কে অনেক ধন্যবাদ জানালাম তার আতিথেয়তার জন্য। আগামি দিনে যদি কখনো যাই, অবশ্যই এখানেই উঠবো, কথা দিলাম। এবারের গন্তব্য লাচেন।

edit 9.jpg
যাত্রা পথে আমি

লাচেন ঢুকতে আমাদের প্রায় রাত হয়ে গেল। এখানের হোমস্টে আর তার ব্যবস্থা নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই। এখানে ইলেক্ট্রিসিটির অসুবিধা আছে, জেনারেটর চালানো হয় বারে বারে, তাছাড়া মোবাইল নেটওয়ার্ক ও পাওয়া যায়না ঠিকভাবে। ঠান্ডা এখানে আরও বেশি, বা ভয়ঙ্কর ঠান্ডা বলা চলে। ড্রাইভার সাহেব রাতের খাওয়ার পর বলে গেলেন যে সকাল ৫ টার মধ্যে বেরতেই হবে, নাহলে গুরুদংমার লেক ঢুকতে দেরি হয়ে যাবে আর সেখানে ১২ টার পর আর্মি আর থাকতে দেয়না।

edit 6.jpg
গুরুদংমার লেক

আমরা সকাল ৫টার নাগাদ যাত্রা শুরু করলাম গুরুদংমার লেকের দিকে। এই যাত্রাপথের পুরোটাই রুক্ষ দৃশ্য আর পুরো রাস্তাটাই আর্মির নিয়ন্ত্রণে কারন চায়না বর্ডারের খুব কাছে এই এলাকাটা। সারা রাস্তাতে একাধিক আর্মি ক্যাম্প। এইসব ক্যাম্পেই সাধারণ মানুষের জন্য সমস্ত ব্যবস্থা রয়েছে। হাল্কা জলখাবার, চা-কফি ইত্যাদি পাওয়া যায়। তাছাড়া যাত্রিরা অসুস্থ্য হলে এখানেই ব্যবস্থা রয়েছে চিকিৎসার। ৫৪২৫ মিটার বা ১৭৮০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত গুরুদংমার লেকে আমরা পোঁছলাম যখন, তখন জানলাম যে তাপমাত্রা দিনের বেলাতেই -১০ ডিগ্রির বেশি। ভয়ঙ্কর ঠান্ডার থেকেও বেশি কষ্ট হচ্ছে তখন অক্সিজেনের অভাবে, কিন্তু সবার পরামর্শ হলো, যতটা পারবেন মুখ বন্ধ করে শ্বাস নেবেন। আমাদের সঙ্গে অক্সিজেন ক্যান ছিল, কিছুক্ষন পর সেটা কাজেও লাগল। এখানকার দৃশ্য ভাষায় বর্ণনা করার নয়, কিছু ছবি তুলেছি, আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম, দেখুন। এখানে ১২টার সময় থেকেই নাকি ভয়ঙ্কর গতিতে হাওয়া বয়, তাই আর্মি সেই সময়ের আগেই সবাইকে এখান থেকে বের করে দেয়। আমরাও বেরিয়ে এলাম। আসার পথে আমাদের এক বন্ধু শ্বাসকষ্টে ভুগতে শুরু করে, তাকে একটা আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে গেলে সেখানে তাকে অক্সিজেন দেওয়ার ব্যাবস্থা করে আর্মির লোকেরা। তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমরা আমাদের সুস্থ্য বন্ধুকে নিয়ে আবার যাত্রা করলাম। সাধারনত লাচেনেই ফিরে যাওয়ার কথা আমাদের, যেহেতু জায়গাটা আমাদের খুব একটা ভাল লাগেনি, তাই আমরা ড্রাইভার সাহেব কে বললাম যে আপনি আমাদের মাঙ্গানেই নিয়ে চলুন, আমরা রাস্তায় কোন এক জায়গায় দুপুরের খাওয়াটা খেয়ে নেবো। সেই কথা অনুযায়ী মাঙ্গান চললাম আমরা।

এই যাত্রার শেষ রাত, মাঙ্গান এই কাটাবো আমরা। যাওয়ার পথেই আমরা একজায়গায় দাঁড়িয়ে মোমো খেয়ে নিলাম, সঙ্গে সিকিমের বিখ্যাত ডল্লে লঙ্কার চাটনি। মাঙ্গান হেলিপ্যাড গ্রাউন্ডে পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে গেল। আজকের এই সময়টা আমরা সাকজার লি হোমস্টের পরিবারের লোকদের সঙ্গে আড্ডা মেরেই কাটালাম। ওই বাড়ির ছেলে সামতেন লেপচা ও ছিল সেদিন। সামতেন তো আমাদের সত্য কে দেখে খুব খুশি হয়ে আমাদের জন্য বন ফায়ারের ব্যবস্থা করে দিল। অন্ধকার নামার পর আগুনে মশলা মাখানো চিকেন পুড়িয়ে খেলাম আমরা খোলা আকাশের তলায়, সঙ্গে গান বাজনা। অসাধারণ একটা রাত কাটল। পরের দিন যথারীতি আমরা ভোর বেলা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে উঠলাম শেষবারের মতো, কারণ এটাই আমাদের শেষ দিন। আমরা সবাই ঘুরে ঘুরে এই হোমস্টের বাড়ি আর খামারটা ঘুরে দেখলাম। গরু, হাঁস পালন করে এরা, বিভিন্ন সবজি চাস করে এরা, সব আমরা ঘুরে দেখলাম। আসবার সময় সামতেন আমাদের প্রায় ১ কিলো ডল্লে লঙ্কা তুলে দিলো নিজেদের বাগান থেকে। ব্রেকফাস্ট করতে করতে মনে হচ্ছিল যে আরেকটা দিন যদি থাকতে পারতাম, কতো ভালই না হতো। কিন্তু জীবনে সবকিছুর সময়ই নির্ধারণ করা, আমাদের সেটা মেনে চলতেই হবে।

ভারাক্রান্ত মনে আমরা বিদায় নিলাম, যাওয়ার সময় ওনারা আমাদের গলায় খাদা(একটা সাদা সিল্কের কাপড়ের মাফ্লার) পরিয়ে আমাদের বিদায় জানালেন। এইটা বৌদ্ধদের একটা প্রথা, আজও সেই খাদা আমার বাড়িতে যত্নে রাখা আছে। গাড়ি করে এবার আমরা শিলিগুড়ির পথ ধরলাম। যথা সময়ে NJP স্টেশনে ঢুকে গেলাম রাতের পদাতিক এক্সপ্রেস ধরার জন্য।

একরাশ স্মৃতি, ভালবাসা আর ছবি নিয়ে পরের দিন শিয়ালদহ স্টেশনে নেমে যে যার বাড়ির দিকে চলে গেলাম। সঙ্গে থাকল অঙ্গিকার, আবার যাব, যেদিকে চোখ যায়।

ক্যামেরা পরিচয়
নিকন ডি ৭৫০ আর ভিভো মোবাইল।

Sort:  
 2 years ago 

সিকিম যাওয়ার ইচ্ছা আমার অনেক আগে থেকে। তবে এখনও যাওয়া হয় নাই।আপনি খুব সুন্দর করে বর্ণনা করেছেন।আমার কাছে ভালো লেগেছে।আপনার পোস্ট দেখে নিজের ইচ্ছা আরও বহু গুনে বেড়ে গেল।ধন্যবাদ আপনাকে এইরকম একটা পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

ট্রাভেল ব্লগ পড়তে আমার খুবই ভাললাগে। এই ধরনের পোস্টের জন্য আসলে অপেক্ষা করে থাকি। চমৎকারভাবে আপনার ভ্রমণ কাহিনী বর্ণনা করেছেন। লাচুং যাওয়ার খুব ইচ্ছা জেগেছে আপনার পোস্টটা পড়ার পরে। আপনার বিখ্যাত সারপ্রাইজটা দেখতে আসলেই অসাধারণ লাগছে। এমন একটা ভিউএর জন্য যে কোন কষ্টই সহ্য করা যায়। আপনার জন্য একটা পরামর্শ থাকবে। এরপর থেকে এই ধরনের পোস্টে w3w লোকেশন কোড ব্যবহার করবেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 56587.45
ETH 2991.05
USDT 1.00
SBD 2.15