সুখের মাপকাঠি এবং প্রাচুর্যের ব্যাকরণ! // ছবি ও জীবন। // ১০% বেনিফিশিয়ারি @shy-fox কে।
কিছুদিন আগে মা কে ঢাকায় এনেছিলাম, ডাক্তার দেখাতে। সেরকম বড় কিছু নয়, টুকটাক ব্যথা, ডায়াবেটিস; বয়স হলে যা হয় আর কি।
মাকে নিয়ে যখন আমাদের বাসার রাস্তায় মোড় নিচ্ছিলাম, মা দেখছিল চার পাশ; কিছুটা অবাক হয়ে।
কেন?
এইতো কিছুদিন আগেও, এই এলাকায় এত উচু উচু বিল্ডিং ছিলো না, আরো অনেক গাছ পালা সহ বেশ একটা গ্রাম গ্রাম ভাব ছিল। বছর খানেক এর ভেতর বদলে গেছে সব। মা আমাকে গাড়িতে (উবার রাইড) জিজ্ঞেস করছিল, আচ্ছারে, ঠিক কত টাকা থাকলে এই রকম এক একটা অট্টালিকা বানানো যায়?
আসলেই তো, সেভাবে ভেবে দেখি নি কখনো।
এই শহরে এক শতাংশ মাটি কেনার মত প্রাচুর্য ও আমার নেই। তাই আদার ব্যাপারী জাহাজের খবর কখনো নেই নি। কত টাকা? পঞ্চাশ, একশ কোটি বা তারও বেশি হয়ত। কি জানি! এই সব সুউচ্চ দালান কখনো মনকে টানে নি সেভাবে।
কিন্তু মায়ের সেই প্রশ্নের পর নিজেকে নিয়ে, জীবন নিয়েই ভাবছিলাম। এই শহরে থেকেও আমরা ঠিক এই শহরের বাসিন্দা হয়ে উঠতে পারি না কখনো। একটা কর্পোরেট চাকরি করেও দিন আনি দিন খাই অবস্থা। নিজের গাড়ি - বাড়ি সে তো বহুদূর।
কিন্তু সুখ?
নিজেকে কম সুখী ভাবতে আমি নারাজ। কি বা এমন পরিবর্তন হত যদি থাকত অমন একটা প্রাসাদ? সুখী হতাম কি দ্বিগুণ?
নাহ্। তার কোনো গ্যারান্টি নেই। আর সৎ পথে থেকে ওই রকম অট্টালিকা করাও তো আসলে কখনোই হয়ে উঠবে না। তাই ওসব নিয়ে অত ভাবি না।
তবে ওই যে...
মা'র কথাটার পর ভাবছিলাম, প্রাচুর্যের ব্যাখ্যা কি আসলে? আভিজাত্য? নাকি অন্য কিছু?
রাস্তার পাশে বসে থাকা কোনো অন্ধ ভিক্ষুক অথবা ছায়ায় দু দ্বন্দ্ব জিরিয়ে নেয়া কোনো রিকশাচালক; তাদেরও তো আমার সুখী মনে হয়। প্রতিদিন যাওয়া বা ফেরার পথে আমি খুব করে দেখি ওদের জীবন ছবি। কেউ হাসছে, কেউবা খোশ গল্প করছে। হঠাৎ কোনো রিক্সাওয়ালার মোবাইল যাত্রা পথে বেজে উঠলে আমি খুব করে শুনি কি বলে। বেশিরভাগ সময়ই সেটা ' বাড়ির ' ফোন। কিছু সপ্ন, বাড়িতে যাওয়ার কথা এইসব। আমি শুনি, আহা; জীবন। কত সাধের জীবন সবার।
বাইরে থেকে আমার জীবন আপনার কাছে বা আপনার জীবন আমার কাছে খুব তুচ্ছ, ছা-পোষা, অদরকারি মনে হবে হয়ত। রাস্তার বিকলাঙ্গ ভিক্ষুকের জীবনের কি কোনো মূল্য আছে বলে আমরা ভাবি? অথচ যার যার জীবন তার কাছে মূল্যবান, তার কাছে অসাধারণ।
প্রতিটা জীবনই কিছু যোগ করছে ব্যপোকার্থে আমাদের জীবনের সাথে। প্রতিটা জীবনের সাথেই এক একটা পরিবার, কত শত গল্প জড়িত। তাইতো সুখের মাপকাঠি টা আমরা আমাদের মত করে মেপে গেলে ভূল হয়ে যায়। জীবনের ব্যাকরণ টাও ভিন্ন জীবন ভেদে। খালি চোখে যা ভাবি 'অদরকারি', তাই হয়ত জীবনকে ঝুঁড়ছে কোনো না কোনো ভাবে।
তাই প্রাচুর্যের ব্যাখ্যা আর ব্যাকরণ ঠিক তেমন নয় যা আমরা জেনে এসেছি, হয়ত।
কপর্দকহীন মানুষটাও মনের দিক থেকে প্রাচুর্যময় হতে পারে। আর বিশাল অট্টালিকায় বসেও কেউ জীবনের হিসেব নিয়ে জটিল অংক কষে সময় নস্ট করতে পারে।
সুখের মাপকাঠি ও প্রাচুর্যের ব্যাকরণ; এসবের ধারণাটা বোধহয় এবার পাল্টানোর সময় হয়েছে।
ছবি: শাওমি নোট ৭ দিয়ে তোলা
স্থান: বনশ্রী, ঢাকা।
লোকেশন: লিঙ্ক
অনেক সুন্দর লিখেছেন।আপনার জন্য শুভকামনা রইলো ভাই।
সত্যি আপনার ভাবনা চিন্তা অনেক কোমল।একজন কোমল হৃদয়ের মানুষ ই রাস্তার পাশের ভিখারীর বেদনা বুঝতে পারে।
ধন্যবাদ এত সুন্দর করে বলার জন্য।
ভালো থাকবেন।
মন ছুয়ে গেলো ভাইয়া ব্লগটি। অনেক শুভ কামনা রইলো 😇।
অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর কমেন্টের জন্য।