অপরিচিত থেকে কাছের একজন হয়ে উঠার গল্প❤️
"হ্যালো",
সবাইকে আমার নতুন একটি ব্লগে স্বাগতম। আজকে আমি আমার খুব কাছের একজন মানুষকে নিয়ে লিখবো। আসলে যে কেউ চাইলেই মনের মত একজন হতে পারে না। আবার অনেক সময় না চাইতেও অপরিচিত একজন মনের মতো হয়।একজন অপরিচিত ব্যাক্তি কিভাবে আমার কাছের একজন হয়ে উঠেছিলো সেটাই শেয়ার করবো আজকে।
বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে যখন প্রথম প্রথম আসি তখন খুব একা লাগতো। শাশুড়ি স্কুলে চাকরি করে স্বামী তার চেম্বার নিয়ে ব্যস্ত। আমি সকালে রান্নাবান্না করার পর থেকে সেই একাকী সময় কাটতো। বিকেল বেলায় দেখতাম বাসার সামনে বেশ কিছু মহিলারা গল্পগুজব করত। আমি দরজা থেকে উঁকি মেরে দেখতাম কিন্তু কখনো তাদের সঙ্গে কথা বলতাম না। আমি শহরে থেকে পড়াশোনা করেছি আগে থেকে আমি জানি শহরের মানুষ কেউ কারো সঙ্গে খুব একটা মিশে না। তাই আমিও আগবাড়িয়ে তাদের সঙ্গে কখনো কথা বলতে যাইনি।
একদিন বিকেলবেলা দেখলাম বেশ কিছু ভাবীরা মিলে আমাকে দেখতে এসেছে তখন নতুন বউ ছিলাম কিনা তাই। তখন আমার স্বামী তাদেরকে বললেন আপনারা তো বিকেলে বাহিরে বের হন ওকে একটু আপনাদের সঙ্গে নেবেন। ও আসলে সব সময় একাকীত্ব বোধ করে। তখন ওনারা বলেন কোন সমস্যা নাই বিকেল করে ভাবি বাহিরে বের হবে আমাদের সঙ্গে মিলবে গল্প করবে ভালো লাগবে। তারপর থেকে মাঝেমধ্যেই বের হতাম তাদের সঙ্গে গল্প করতাম বেশ ভালই লাগত। আস্তে আস্তে আমার একাকীত্ব কেটে যাচ্ছিল।
অনেকগুলো ভাবির সঙ্গে প্রত্যেকদিন কথা বলতাম কিন্তু তার মধ্যে থেকে শিশির ভাবির সঙ্গে আমার অন্যরকম একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। ভাবি ও খানিকটা আমার বয়সই ছিল কিন্তু অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় ছোট্ট একটা মেয়ে ছিল। ওনার গ্রামের বাড়ি নওগাঁ। ওনার স্বামী এখানে কোম্পানিতে চাকরি করার সুবাদে ভাড়া বাসায় থাকত এবং আমার প্রতিবেশী ছিলেন। এরপর থেকে অন্য ভাবিদের সঙ্গে অনেকটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এরপর আমরা দুজন দুজনার বান্ধবীর মতো হয়ে গেলাম।সংসার সামলানোর পর রান্নাবান্না পর যেটুকু সময় পেতাম দুজনে বসে বেশ জমিয়ে আড্ডা দিতাম। আমাদের দুজনের মধ্যে যখন মিল হয়েছিল তখন ওনার মেয়ের বয়স ছিল ছয় মাস থেকে সাত মাস হবে।
এরপর থেকে দীর্ঘ সময় শিশির ভাবি আমার প্রতিবেশী হিসেবে ছিলেন এবং উনার মেয়ে বেশিরভাগ সময় আমার এবং আমার স্বামীর কাছেই থাকতেন। আমাদেরও খুব ভালো সময় কাটতো ছোট্ট মেয়েটার সঙ্গে। মেয়েটা দেখতে দেখতে আমার চোখের সামনে দুই বছরে পা রেখেছিলো।এরপরে চলে আসে বিদায়ের ঘন্টা। তার স্বামী বদলি হয়ে যায় অন্য একটি জেলায়। কথায় আছে "যেতে নাহি দিব হায়, তবু যেতে দিতে হয়। তবু চলে যায়।"
উনি চলে যাওয়ার পরেও আমাদের কখনো যোগাযোগ বন্ধ হয়নি। হয়তো প্রত্যেকদিন কথা বলতে পারতাম না কিন্তু সপ্তাহ অন্তর একদিন সময় বের করে আমরা দুজন কথা বলতাম ফোনে। কিছু কিছু সম্পর্কের রক্তের টান লাগে না মনের টানটাই যথেষ্ট। যাইহোক এভাবে একজন অপরিচিত মানুষ আমার কাছের একজন হয়ে উঠেছিল। জানিনা আজীবন ধরে রাখতে পারব কিনা তবে চেষ্টা করব সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার।
আজ এ পর্যন্তই। দেখা হবে পরবর্তীতে নতুন কোন বিষয় নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
আসলে অপরিচিত মানুষ গুলো একদিন আমাদের খুবই আপন হয়ে ওঠে। আর সেই সম্পর্ক গুলো সত্যি অনেক বেশি সুন্দর হয়। ওই ভাবিটার সাথে আপনার বেশ ভালো সম্পর্ক হয়েছিল এটা জেনে ভালো লাগলো। উনি চলে যাওয়ার পর আপনারা সপ্তাহে একবার হলেও ফোনে কথা বলার চেষ্টা করেন জেনে ভালো লাগলো। দোয়া করি যেন আপনাদের সম্পর্কটা সব সময় ভালো থাকে এবং সম্পর্ক টা টিকে থাকে।
ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
একদিন দুদিন করে আসা যাওয়া, গল্প করা এভাবেই একজন দূরের মানুষ কাছের মানুষ হয়ে ওঠে।অনেক মানুষের সাথে চলাফেরা করলেও মনের মানুষ কিন্তু সবাই হয় না।আপনার সাথে শিশির ভাবির মিলটা একটু বেশি তাই তার সাথে আমার সখ্যতা বেড়ে উঠেছে একটু বেশিই।যদিও আজ দুজন আলাদা জায়গায়। তবে এতো ব্যস্ততার মাঝেও সপ্তাহে একদিন হলেও ফোনে কথা বলেন জেনে ভালো লাগলো।আপনাদের বন্ধন অটুট থাকুক এমনটাই আশাকরি। ধন্যবাদ আপু অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য।