শেষ বয়সের খুঁটি || দ্বিতীয় এবং শেষ পর্ব

in আমার বাংলা ব্লগlast year

1000024303.jpg
সোর্স

"হ্যালো",

আমার বাংলা ব্লগ বাসি, সবাই কেমন আছেন? আশা করছি সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। আমিও আপনাদের দোয়াই এবং আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। সবার সময় ভালো কাটুক এই কামনাই করছি।

গত দুইদিন আগে আমি একটি গল্প শেয়ার করেছিলাম আপনাদের সাথে। "শেষ বয়সের খুঁটি" আজকে সেই গল্পের দ্বিতীয় এবং শেষ পর্ব আপনাদের সাথে শেয়ার করব। প্রথম পর্বটি আপনারা সবাই অনেক পছন্দ করেছেন। আশা করছি শেষ পর্বটিও সবার ভালো লাগবে।তো চলুন শুরু করি।

কিন্তু আনিসুর রহমানের তিনটা মেয়েই খুবই মেধাবী ছিল। তাইতো তাদের মা কষ্ট করে সেলাইয়ের কাজ করে তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলো। দিন যেতে লাগলো বছর পেরোলো আনিসুর রহমানের দুই মেয়ে এখন পড়াশোনা শেষ করেছে। ছোট মেয়েটা ভার্সিটিতে পড়াশোনা করছে। বড় দুই মেয়ে দেখতে খুব একটা ভালো ছিল না কিন্তু তারা পড়াশুনায় ভালো ছিল তাই তাদের ভালো ঘরে বিয়ে হয়। আল্লাহর কি অশেষ রহমত বিয়ের পর দুই মেয়ে ভালো চাকরি পায়।এভাবে আরো কিছু বছর কেটে যায়। ছোট মেয়েরও চাকরি হয়েছে বিয়ে হয়েছে। আনিসুর রহমানের ছেলেও এখন পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকরি করছে।

আনিসুর রহমান এবং তার স্ত্রীর বয়স হয়ে গিয়েছে। মেয়েরা যার যার মতো করে সংসার করছে চাকরি করছে। আনিসুর রহমান অনেক ভেবেচিন্তে ছেলেকে বিয়ে করায় যাতে ছেলের বউ এসে তাদের সেবা যত্ন করে। মেয়েদের বিয়ে খুব ঘরোয়া ভাবে দিলেও ছেলের বিয়েতে আয়োজনের কোনো কমতি রাখেনি। এবার প্রথম প্রথম ছেলের বউ বেশ ভালোই যত্ন করতেন শ্বশুর-শাশুড়ির। কিন্তু কয়েক মাস পর তার ছেলের বউয়ের পুরো চেহারায় যেন পাল্টে যায়। তার ছেলের বউয়ের খারাপ ব্যবহারে যেন চিনতেই পারেন না তারা ছেলের বউকে। তারা ছেলের বউকে কোনো কাজের কথা বললেই তার কপালে বিরক্তির ভাজ দেখা যায়।

আনিসুর রহমান এবং তার স্ত্রী বুঝতে পারেন যে তাদের আর কোন মূল্য নেই এই সংসারে। তারা মনে মনে ভাবেন আমাদের ছেলের বউ আমাদের সাথে যেমন খারাপ ব্যবহার করে আমার মেয়েরাও কি তার শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে এমন টা করে। কিন্তু আমাদের কাছে তো কখনো কোনো অভিযোগ আসলো না তাদের শ্বশুরবাড়ি থেকে। সত্যি কথা বলতে আসবে কিভাবে কারণ তারা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে যদিও তাদের বাবা তাদেরকে দেখতে পারত না তারপরও নিজেদের চেষ্টায় তারা ভালো কিছু করতে পেরেছে এটা অনেক। এর পেছনে অবশ্য আনিসুর রহমানের স্ত্রীর অনেক হাত আছে কারণ তিনি তার মেয়েদেরকে খুবই সহযোগিতা করেছেন এবং আড়ালে থেকে ভালো শিক্ষা দিয়েছেন।

যাইহোক এভাবেই নিত্যদিন তাদের সংসারে অশান্তি লেগেই থাকতো। তাদের ছেলেও কোন প্রতিবাদ করত না। এখন অনেকের প্রশ্ন হতে পারে যে মেয়েরা কি বাবা মার খোঁজখবর নেয় না। হ্যাঁ প্রতিনিয়ত তারা বাবা-মার খোঁজখবর নেন এবং তাদের কাছে চলে যেতে বলতেন কিন্তু আনিসুর মিয়া লোক লজ্জার ভয়ে কিছুতেই যেতে চাইতেন না কারণ মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে থাকা কেমন একটা দেখায় এর জন্য। কিন্তু এদিকে ছেলের বউয়ের ব্যবহার ও আর সহ্য করার মতো নয়। তখন বাধ্য হয়ে তারা বড় মেয়ের বাড়িতে চলে যায়। বড় মেয়ের অবশ্য একার সংসার শ্বশুর-শাশুড়ি কেউ বেঁচে নেই। তাই বড় জামাইও অনেক খুশি হয় শশুর শাশুড়ি আসায়। এরপর বেশ সুখে শান্তিতে তাদের জীবন চলে।অন্য দুই মেয়ের বাড়িতেও যাওয়া আসা করেন মেয়েরাও বড় বোনের বাড়িতে এসে বা আমাকে দেখে যায় প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখেন যা কিছু প্রয়োজন এনে দেয়।আর ছেলে ছেলের বউ খুব একটা খোঁজখবর রাখেনা। ছেলে মাঝেমধ্যে খুব প্রয়োজন পড়লে তখন ফোন দিয়ে দু একটা কথা বলে। এর বেশি না।

আনিসুর রহমান বুঝতে পারে তার ভুলটা।সে আসলে একটি ছেলে সন্তানের জন্য তার মেয়েদের প্রতি কত অবহেলায় না করেছেন। আর আজ সেই মেয়ের বাড়িই তাদের শেষ ঠিকানা। ছেলে শেষ বয়সের খুঁটি হবে ভেবে ভালো খাবারদাবার পড়াশোনা সব কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিল আর মেয়েদের প্রতি করেছিল অবহেলা। আর সেই ছেলেই একটা খোঁজ খবর পর্যন্ত রাখে না যে বৃদ্ধ বাবা মার কি অবস্থা কখন কি প্রয়োজন।

আমার মতামত

সবশেষে একটা কথাই বলবো সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে হোক তাদের বড় কোন ডিগ্রী অর্জন করানোই লক্ষ্য না রেখে সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। যাতে করে তারা মানুষের মতো মানুষ হতে পারে এবং বাবা-মায়ের জন্য সত্যি সত্যি শেষ বয়সে খুঁটি হতে পারে। আনিসুর রহমান যদি চার সন্তানকে একই চোখে দেখতো তাহলে হয়তো আজকে তার এই আফসোসটা থাকত না। আমাদের উচিত ছেলে মেয়ের মধ্যে ভেদাভেদ না করে তাদের সমানভাবে ভালোবাসা, সুযোগ-সুবিধা দেওয়া।

যাইহোক এই ছিল আমার গল্পের শেষ পর্ব। আশা করছি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাদের সুন্দর মতামতের মাধ্যমে আমাকে জানাতে ভুলবেন না। আজ এ পর্যন্তই। দেখা হবে পরবর্তীতে নতুন কোন বিষয় নিয়ে।

সবাই ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।

1000006402.png

1000006403.gif

1000006401.gif

Sort:  
 last year 

আসলে বর্তমান সময়ে কিন্তু এই ঘটনাটাই বেশি ঘটছে। দেখুন আনিসুর রহমান প্রথমে ছেলে সন্তান চেয়েছিল আর মেয়ে সন্তানদেরকে অবহেলা করত কিন্তু শেষ বয়সে এসে কিন্তু মেয়েগুলোর কাছেই সুখের সন্ধান খুঁজে পেল কিন্তু ছেলে আর ছেলের বউ তাকে সেই ভালোবাসা দিতে পারেনি।

 last year 

ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর একটি মন্তব্যের জন্য।

 last year 

মেয়েরা সু শিক্ষায় শিক্ষিত না হলেও বাবা মায়ের প্রতি অন্যরকম একটা টান রয়ে যায়। যা অনেক ছেলেদের ক্ষেত্রেই দেখা যায় না। তাছাড়া আনিসুর রহমানের মেয়েরা তো অনেক বেশি শিক্ষিত ছিল। অবশ্য তার মায়ের জন্য এগুলো সম্ভব হয়েছে। সেজন্যই তো তারা বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মাকে নিজের কাছে নিয়ে রেখেছে। আনিসুর রহমান অবশেষে বুঝতে পেরেছে যে শুধু ছেলেরাই বৃদ্ধ বয়সে লাঠি হয়না। মেয়েরা হতে পারে। খুবই শিক্ষনীয় একটি গল্প শেয়ার করেছেন আপু। ধন্যবাদ।

 last year 

এটা ঠিক বলেছেন আপু মেয়েরা বাবা মার প্রতি অন্যরকম একটা টান অনুভব করে। যা অনেক ছেলেরাই করেনা। সুন্দর একটি গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

 last year 

আপু একেবারে আমার মনের কথা বলেছেন। সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা উচিত। কি হবে যদি সুশিক্ষা না থাকে বড় ডিগ্রি দিয়ে। হাজার তো বড় ডিগ্রিধারী সন্তান আছে তারা কি সবাই তাদের পিতামাতার খোঁজখবর রাখে? আর এজন্যই আমি ভাবি, সন্তানের জন্য টাকা না জমিয়ে এবং সন্তানকে বড় কোন ডিগ্রিধারী না বানিয়ে। মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের দায়িত্ব।

 last year 

অসংখ্য ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

 last year 

আসলে আমি মনে করি ছেলে মেয়ে উভয় সমান। ছেলের জন্য মেয়ে সন্তানের প্রতি অবহেলা, অথবা মেয়ের জন্য ছেলে সন্তানের প্রতি অবহেলা করাটা একেবারেই উচিত না কোন বাবা-মায়ের। আনিসুর রহমান শেষ পর্যন্ত তার মেয়ের বাড়িতে গিয়ে উঠেছে। এবং সেখানে সুখে শান্তিতে থাকছে। যদিও ছেলেকে বিয়ে করানোর সময় দেখে শুনে বিয়ে করিয়েছিল যাতে তাদেরকে শেষ বয়সে যত্ন করে। কিন্তু কয়েক মাস পরে নিজেরাই নিজেদের বৌমার আসল চেহারা দেখেছিল। আসলে ছেলে মেয়েদের মধ্যে ভেদাভেদ না রেখে, তাদেরকে যদি সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে মানুষের মতো মানুষ করা যায় এতেই অনেক ভালো।

 last year 

আনিসুর রহমান আমি তার ছেলে আর ছেলের বউয়ের অবহেলার স্বিকার হয়ে বুঝতে পেরেছে সে মেয়েদের প্রতি কত অবহেলা করেছিল। ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি মন্তব্যের জন্য।

 last year 

এই গল্পের শেষ বয়সের খুঁটি তাহলে মেয়েগুলোই হয়েছে। যে ছেলের জন্য বাবা এত কিছু করেছে মেয়েদের খেয়াল রাখত না, সেই ছেলে বাবা মায়ের দেখাশোনা করেনি শেষ পর্যন্ত দেখছি। আসলে আমি শুরু থেকে এটাই ভেবেছিলাম এরকম কিছুই হতে চলেছে। আর শেষ পর্যন্ত এটাই হয়েছে দেখছি। আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের উচিত ছেলে মেয়েকে সমান চোখে দেখা। আর সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করলেই হয় আর কিছু লাগেনা। সন্তানের প্রতি যদি বাবা-মায়ের সাপোর্ট থাকে তাহলে সন্তান বড় হয়ে সুশিক্ষিত হবে। এবং তারা মানুষের মত মানুষ হবে। সবশেষে তাহলে বাবা তার ভুলটা বুঝতে পেরেছিল।

 last year 

এরকম বাস্তব ঘটনা এখনো আমাদের আশেপাশে অনেক রয়েছে ভাইয়া। যা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। ধন্যবাদ পুরো পোস্টটি পড়ে সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 58551.09
ETH 2617.32
USDT 1.00
SBD 2.44