আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা - ২০ || ""আমার জীবনের প্রথম প্রেমের অনুভূতি। "

11-07-2022

২৭ আষাঢ় ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভালো আছেন এবং ঈদ ভালোভাবেই উদযাপন করতে পেরেছেন। আমি আপনাদের দোয়াই ভালো আছি। শুরুতেই আমার বাংলা ব্লগের ফাউন্ডার অর্থাৎ আমাদের শ্রদ্ধেয় দাদাকে। যিনি অসাধারণ এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছেন। আমার বাংলা ব্লগ সবসময় চেষ্টা করে আমাদের সৃজনশীলতাকে জাগিয়ে তুলতে। তাইতো এবারের প্রতিযোগিতার বিষয় হচ্ছে, শেয়ার করো তোমার প্রথম প্রেমের অনুভূতি। আমরা মানুষ হিসেবে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত মনের ভিতরে হৃদয় দিয়েছে। আর সেখানেই মনের অজান্তে তৈরি হয় কারো প্রতি নতুন কোনো অনুভূতির। আমার জীবনেও এমন একজন আছে যে আমার জীবনে মনের অজান্তেই হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিল। চলে এলাম সেই অনুভূতির কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

সূত্রপাত

ছোটবেলা থেকেই আমি একটু লাজুক স্বভাবের ছিলাম। মেয়েদের সাথে কথা বলতে লজ্জা পেতাম খুব। তবে বন্ধুদের কল্যাণে অনেক মেয়ের সাথেই পরিচয় হয়েছিল। প্রাইমারী স্কুলের সময়টাতে অনেক মেয়ে ফ্রেন্ড ছিল। প্রাথমিক গন্ডি পেরিয়ে যখন মাধ্যমিকে পা রাখলাম তখন অনেক মেয়ে বন্ধুকেই হারিয়ে ফেললাম। যায়হোক,

people-2589047_1280.webp

copyright free image from pixabey

২০১৬ সালের দিককার কথা। আমি তখন নবম শ্রেণীতে পড়ি। এই সময়টাতে নাকি মনে আবেগ একটু বেশি থাকে। শীতের সকাল। সকালে খুব ভোরে উঠে শাহআলম স্যারের গণিত প্রাইভেট শুরু। একটু দেড়িতে গেলেই বাহিরে দাড়ঁ করিয়ে রেখে দিতো কনকনে শীতের মধ্যে। শাহআলম স্যারের প্রাইভেট এর জন্য সকালে উঠে যেতাম এলার্ম ছাড়াই। প্রযুক্তির ব্যবহারটা তখনও বুঝিনি আমি। আমি যেখানে প্রাইভেট পড়তাম সেখানে একটি মেয়েও প্রাইভেট পড়তো। নাম ছিল তার ঐশী। আমি তখনও ঐশীকে চিনতাম না। গণিতে খুব ভালো থাকার সুবাধে স্যারের কাছ থেকে জ্যামিতি বক্স,স্কেল পুরস্কার পেতাম। স্যারের প্রাইভেট এ এমসিকিউ পরীক্ষা দিলাম ৪০ মার্কসের। তখন আমাদের গণিতে ৪০ মার্কস শুধু সঠিকউত্তরের জন্য বরাদ্দ ছিল। স্যার গণিতের খুটিনাটি সব বই থেকে দিতো। আগে অবশ্য সাজেশন দিয়ে দিতো কি পড়তে হবে। এমসিকিউ পরীক্ষা দিলাম, ভালোই হয়েছিল তখন। আমি তখন ৩৬ পেয়েছিলাম এমসিকিউ এ আর ঠিক একই রিচাল্ট করেছিল ঐশী। আমরা দুজন যৌথভাবে প্রথম হয়।

আমি কিন্তু তখনও ঐশীকে চিনতাম না। স্যার আমাদের পুরস্কার হিসেবে একটি স্কেল দিবে। তবে শর্ত হচ্ছে ড্র এর মাধ্যমে দিবে। কারণ দুজনই সমান নাম্বার পেয়ে প্রথম হয়েছিলাম। আমি তখন স্বেচ্ছায় ঐশীকেই দিতে বললাম স্যারকে। ঐশী আমাদের পরের ব্যাচ টাইমে পড়তো। আমি ঐশীকে মনে মনে খুজঁতে লাগলাম। ঠিক পরেরদিন দেখতে পারি ঐশী আমার জন্য দাড়িঁয়ে আছে। আমাদের পরের ব্যাচ ছিল যেহেতু তখন সে প্রাইভেট ঠিক কোণার বারান্দাটায় দাড়িঁয়ে ছিল। আমি তখনও চিনতাম না ঐশীকে। বোরকা ব্যবহার করতো। শীতের জামা পরে এসেছিল। মাথায় ছিল হিজাব। আমি ঐশীকে দেখেই মনের ভিতরে একধরনের ভালো লাগা কাজ করে। আমি ঐশী ডেকে নিয়ে ধন্যবাদ দিলো। আমি তখনও বুঝলাম না ধন্যবাদ দেয়ার কারণটা কি? হঠাৎ একদিন ফোনে অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ। লেখা ছিল, "স্যার বাড়ির কাজ কি দিয়েছে তুমি জানো। " আমি রীতিমত অবাক হলাম যে কে হতে পারে! আমিও বোকার মতো মেসেজের রিপ্লাইয়ে বাড়ির কাজ কি দিয়েছে সব বলে দিলাম। আমি তখন বাটন ফোন ব্যবহার করতাম। বাটন ফোনটা আবার ছিল আমার বড় আপুর তবে সিম লাগানো ছিল আমার।

for-you-2198772__480.webp

copyright free image from pixabey

তখনও ফেইসবুক সম্পর্কে এতো কিছু বুঝতাম না। তো পরেরদিন সকালে স্যারের প্রাইভেট শেষে যখন বেরিয়ে আসি তখন দেখি ঐশী আমার দিকে চেয়ে হাসছে। বোঝার বাকি রইলনা যে রাতে ফোনে মেসেজটা ঐশী দিয়েছে। তখন থেকেই ঐশীর প্রতি একটা অন্যরকম ফিলিংস কাজ করতো। আমি ঐশীকে মেসেজে বললাম, "আমাকে দেখে হাসতেছিলে কেন?" ঐশী তখন রিপ্লাই দিলো, "আমি বাড়ির কাজের কথা বললাম তুমি বুঝলে না তখন "। তখন থেকেই শুরু হলো আমাদের কথাবার্তা । প্রতিদিন ৫ টাকা দিয়ে ২১ টা এসএমএস কিনতাম জিপি সিমে। শুধুমাত্র ঐশীর সাথে কথা বলার জন্য। এভাবেই ঐশীর সাথে সম্পর্কটা সুদৃঢ় হতে থাকে। এরই মাঝে আমরা নিউ টেন এ পা রাখলাম। আমি তখনও ঐশীকে বলেনি যে আমি তাকে ভালোবাসি। ঐশী যে আমাকে ভালোবাসে সেটা খুব ভালো করেই উপলব্ধি করতে পারতাম। আমি ভালোবাসি কথাটা বলেই ফেলবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। এ ছাড়া কোনো উপায় নেই আমার কারণ ভীষণ অস্থিরতা অনুভব করছিলাম আমার মাঝে। রাতে ঠিক বারোটার পর আমি ঐশীকে মেসেজে বললাম, "আমি তোমাকে ভালোবাসি"। মেসেজের রিপ্লাইয়ের জন্য গভীর রাত অব্ধি অপেক্ষা করতেছিলাম। কিন্তু কোনো রিপ্লাই পাচ্ছিলাম না। আমি ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। পরদিন সকালে প্রাইভেটেও আসেনি! আমার চিন্তা কয়েকগুণ বেড়ে গেল।

hearts-1450300_1280.webp

copyright free image from pixabey

আমাদের বাড়ি থেকে ঐশীদের বাড়ি তেমন দূরেও ছিল না। ঐশীর সাথে চলাফেরা করতো শারমিন নামের একটি মেয়ে। সিদ্ধান্ত নিলাম তাকেই বলবো ঐশী প্রাইভেটে আসছেনা কেন? পরদিন আবার প্রাইভেটে গেলাম। প্রাইভেট থেকে বের হয়ে আবার হতাশ হলাম ঐশা তখনও আসেনি। ঐশীর বান্ধবী শারমিনকে বললাম, "ঐশী আসেনা কেন এখন প্রাইভেট এ?" শারমিনও তখন জানেনা যে ঐশী কেন আসেনা প্রাইভেট এ। ঠিক পাচঁ দিন পর রাতে হঠাৎ মেসেজ আসলো। ঐশী মেসেজে লিখেছিল, " তুমি যখন আমাকে মেসেজ দিয়েছিলে তখন ফোনটা আমার ভাইয়ার হাতে ছিল। আর আমার ভাইয়া এর পরে ফোন ধরতে দেয় না। আমি লুকিয়ে ফোন ধরেছি। ভাইয়া এখন আমাকে প্রাইভেট এ আসতে দেয় না।" আমি তখন অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম আসলে। আমার জন্য ঐশীর আজ এই অবস্থা হলো। পরে জানতে পেরেছিলাম ঐশীর জন্য বাসায় টিউটর রেখে গণিত পড়ানো হয়। তিনমাস আমাদের মাঝে কোনোরকম কথা হয়নি। মডেল টেস্ট পরীক্ষার শেষের দিনে ঐশীকে দূর থেকে আমি দেখছিলাম। ঠিক সেদিন রাতে ঐশীর কাছ থেকে শুনতে পারি, "আমি তোমাকে ভালোবাসি"। সেদিন এ কথাটা শুনে এতো খুশি হয়েছিলাম কি বলবো বুঝতে পারতেছিলাম।

ঐশী কিন্তু আমার মাঝ থেকে হারিয়ে যায়নি। এখনও আমার মাঝেই রয়ে গেছে বড্ড ভালোবাসি যে তাকে। এরই মাঝে কতো কঠিন পরিস্থিতি পার করতে হলো তা লেখে তো শেষ হবে না। এখন ঐশী ঢাকা থাকে আর আমি ফেনী থেকে পড়াশোনা করি। দুজনের মাঝে প্রবল বিশ্বাসের কারণে ভালোবাসাটা এতোদূর গড়িয়েছে। জীবনের শেষটা তার হাত ধরেই কাটাতে চায়। জানিনা বিধাতা কি লেখে রেখেছেন কপালে।

যায়হোক, আর বেশি কথা বাড়ালাম না। আজ এই পর্যন্তই থাক। আশা করি আপনাদের কাছে আমার প্রথম প্রেমের অনুভূতি গল্পটা পড়ে ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।



10% beneficary for @shyfox ❤️



ধন্যবাদ

WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg



আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  
 2 years ago 

ভেবেছিলাম সব গল্পের মতো এই গল্পটা হয়তো নিরাশা দিয়েই শেষ হবে কিন্তু খুবই খুশি হলাম, দোয়া করি আগামী দিনগুলো যেন সেই মানুষটার সাথে কাটাতে পারেন ।

 2 years ago 

জি ভাই দোয়া চাই ❤️😍

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 58085.08
ETH 2337.41
USDT 1.00
SBD 2.37