আমার বাড়ি নাই
18-01-23
০৫ মাঘ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন সবাই? নিশ্চয় ভালো আছেন! শীতের শেষ সময়টা হয়তো উপভোগ করছেন। তবে অনেকেই কিন্তু শীতের এই সময়টা মোটেও উপভোগ করছে না! তাদের কাছে একেকটি রাত কাটে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে! আক্ষেপ! কবে শেষ হবে এই শীত! কবে? আপনার আশে পাশে একটু তাকালেই দেখবেন সমাজের এমন কিছু মানুষ আছে যারা শীতের সময়টাতে অনেক কষ্ট করে থাকে! টাকার অভাবে জামা-কাপড় কিনতে পারে না! শীতের জামা-কাপড় ছাড়া একটি মানুষ কি থাকতে পারে? জামা-কাপড় বলতে আমি কি বুঝাতে চেয়েছি সেটা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন।
কিছুদিন আগের কথা! দশতারিখের দিকে। রাতে ফেণী যাওয়ার প্লেন! বাসা থেকে সোজা চলে আসি ভৈরব স্টেশনে। এসে যা চোখে পড়লো রীতিমতো আমার ভাষা হারিয়ে ফেলছিলাম! ঠিক টিকেট কাউন্টারের সামনে! বেশ কিছু লোক জামা কাপড়, চাদর, বিছানা নিয়ে এসেছে! রাতটুকু এখানেই পারে করে দিবে। তাদের মুখে চিন্তার কোনো বালাই নেই! নেই ছিনতাইকারীদের হাতে লুট হওয়ার ভয়! বিছানা আর চাদর নিয়েই তৈরি করেছে থাকার জায়গা! তাদের বিছানা ফ্লোরের উপর! মশারি নেই! কোনো ভাবে রাত পার করতে পারলেই হলো। নিচের সিড়ির দিকে সিরিয়ালভাবে বিছানা করে যে যার মতো শুয়ে আছে। কিছু ভদ্রলোক সিগারেট টানতে টানতে হয়তো ভাবছিল, "বড্ড ভালো আছি। " কোনো চিন্তা যেখানে নেই সেখানে ভালো থাকারই কথা। কিন্তু হাসির আড়ালেও কিন্তু কষ্ট লুকায়িত থাকে! যেটা আপনি কারো গভীর মনে প্রবেশ না করলে বুঝতে পারবেন না!
ঠিক পাশে এক ভদ্রমহিলা বসে ছিল! বয়স সত্তরের উপরে হয়তো! গায়ে জোর নেই চলার মতো! হাতে সিগারেট! আমি কিছুটা অবাক হয়েছিলাম! সিগারেট খাই ছেলেরা আর এই বয়সে এসে ভদ্র মহিলা সিগারেট খাচ্ছে! কিছুটা অবাক হয়েই মহিলার সামনে গেলাম! আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কোনো কথা বলছে না। এক পর্যায়ে বলেই বসলো, "আগুন লাগবো! " সোজা উত্তর না! আমি সিগারেট খাইনা! মজার ব্যাপার হলো আমার এই কথা শুনে ভদ্র মহিলা রীতিমতো হাসছিল!
কোনো কারণ ছাড়াই! ভদ্রমহিলাকে চাচী হিসেবেই সম্বোধন করেছিলাম!
ভদ্রমহিলা সিগারেট টানছে আর আনমনে ধুয়া আকাশের দিকে উড়িয়ে দিচ্ছে। মনে হচ্ছিল যেন জীবনের সব কষ্ট ধুয়ার মতোই উড়িয়ে দিচ্ছে! চাচীর নাম কুলসুম। ভিক্ষাবৃত্তি পেশার সাথে জড়িত! পরিবারে দুই মেয়ে তিন ছেলে ছিল। পরিবারের কাছে যখন সে বুঝার পাত্র হয়ে গেল, ঘর ছাড়তে বাধ্য হলো তাকে! চাচীকে দেখে মনে হবে না যে দুঃখে আছে! খুব সুন্দরভাবে জীবন চলে যাচ্ছে। কোনো টেনশন নেই! মাথার উপর কোনো বোঝা নেই।
বাড়ি ছাড়ার দেড় বছর হয়ে গেল! রেল স্টেশনের পাশেই জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে। চাচীর কাছে কথা বলে জানতে পারলাম, ছেলে দুইজন প্রতিষ্ঠিত! ব্যাবসা করে! পড়ালেখা করেছে মোটামোটি! যখন বোঝা হয়ে গেল কিছু না বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছিল! চাচীর সিগারেট খাওয়ার রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে অনেক কথা জানতে পারলাম। তবে দিব্যি চলে যাচ্ছে জীবন। শেষ ঠিকানা এই রেলস্টেশন। পরিবারের কাছে যাওয়ার ইচ্ছে নেই।
রেলস্টেশনের পাশে শুয়ে থাকা মানুষগুলোর পেছনের গল্পটা হয়তো অনেকের এরকম বা অনেকের হয়তো না! তবে শেষ সম্বল হিসেবে রেল স্টেশনকে বেছে নিয়েছে! রাত হলেই কাটিয়ে দেয় একটি রাত! কোনো আক্ষেপ ছাড়াই! বাড়ি নাই, ঠিকানা নাই মানুষগুলোর জীবন রেল স্টেশনের পাশেই কেটে যায়! হয়তো খোজঁ-খবর নেয়ার কেউ নেই। কে জানে জীবনের শেষ সময়টা অনেকেই এই রেল স্টেশনের পাশে কাটিয়ে দেয়!
আমাকে এ বিষয়গুলো খুব ভাবচ্ছিল! কত ভালো আছি!! তবুও কত আক্ষেপ এ জীবন নিয়ে!! চাওয়ার তো শেষ নেই। আসলে এ দৃশ্যগুলো দেখার পরে আমি বিশ্বাস করি আপনার কিছুটা হলেও মানসিকতার পরিবর্তন হবে। এই যে এতো আক্ষেপ এ জীবন নিয়ে, কিছুটা হলেও বুঝতে পারবেন "আপনি ভালো আছেন! অনেক ভালো! " সৃষ্টিকর্তা আপনাকে আপনি যে জায়গায় উপযুক্ত ঠিক সেই জায়গাটাই রেখেছে। মনে হচ্ছিল, জীবন নিয়ে আক্ষেপ করতে নেই! চলুক না জীবনটা জীবনের মতো!
তবে রেল লাইনের পাশে শুয়ে থাকা মানুষগুলো ভালো থাকুক! ভালো থাকুক কুলসুম চাচীর মতো নারী। আপনার, আমার একটু সহমর্মিতা তাদেরকে আরেকবার স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করবে। আমরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করি। বিশেষ করে শীতের সময়টাতে তারা বেশি কষ্ট করে আমার মনে হয়! বর্ষাকাল তো আছেই। তবে গৃহহীণ এই মানুষগুলো যেন ভালো থাকে এমনটাই প্রত্যাশা করছি।।
আর বেশি কথা বাড়ালাম না! আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি। তবে যাওয়ার আগে একটি কথা, "মানুষ মানুষের জন্য! " আমরা বিশ্বাস করি। আমাদের প্রত্যয় হোক মানুষকে সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার। সবার সু্স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো। এখানেই বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ 🌼🦋
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
twitter share link
আপনার পোস্টটি পড়ে ভালো লাগলো, সত্যিই আমরা অনেক ভালো আছি। আসলে আমাদের উপর ওয়ালার উপর শুকরিয়া আদায় করা উচিত। রেল স্টেশনে অসংখ্য ছিন্নমূল মানুষ এভাবেই রাত কাটিয়ে দেয়। কুলসুম চাচীদের মতো এরকম অনেক ভাগ্যহীন মানুষ রয়েছেন, যাদের সবকিছু থাকতেও কিছুই নেই। যদি কোন তাদের কিছুটা সহযোগিতা করতে পারেন ইনশাআল্লাহ এগিয়ে যাবেন, সেটা হতে পারে নিজের পুরনো একটি শীতবস্ত্র দান করে।
জি ভাইয়া! আমার জায়গা থেকে সবসময় চেষ্টা করি যতটুকু সম্ভব এগিয়ে আসার। ধন্যবাদ ভাইয়া 🌼
প্রথমে টাইটেল পড়ে ভাবছিলাম আপনার বাড়ি নেই নাকি। কিন্তু আপনার কথাগুলো পরে ভীষণ খারাপ লাগলো। আসলে বর্তমানে শীতকালে অনেকেরই থাকার জায়গা নেই, এমনকি শীতের কাপড় নেই। আর রেললাইনের পাশে চাদর বিছিয়ে শুয়ে থাকা মানুষগুলোর কথা শুনে আরো বেশি খারাপ লাগলো। হয়তোবা আমরা বাড়িতে বসে এইসব মানুষগুলোর অবস্থা দেখতে পারি। আর কুলসুম চাচির কথাগুলো শুনে সত্যিই অবাক হলাম। এত বয়সে মহিলাটি সিগারেট খাচ্ছে। সেটা উদঘাটন করতে গিয়ে তার পেছনের গল্পটা জানতে পারলেন। সে দিক থেকে ভাবতে গেলে আমরা কতই না ভালো রয়েছি। কিন্তু এই মানুষগুলোর পেছনের গল্প খুবই কষ্টদায়ক।
হাহাহা! আপু আমার বাড়ি ঠিকই আছে কিন্তু অনেকের বাড়ি নেই, থাকার জায়গা নেই।
খুব সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন ভাই। আমরা আসলে কখনওই আমাদের চেয়ে নিচু মানুষগুলোর দিকে খেয়াল করি না। কতটা কষ্টে কাটে তাদের জীবন। প্রতিদিন রেল স্টেশনে কতশত মানুষ যে কষ্টে জীবন যাপন করে তা নিজ চোখে না দেখলেই নয়। তাইতো আমাদের উচিত নিজেদের কিছু ভোগ বিলাসিতা বাদ দিয়ে তাদের জন্য কিছু করা। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট করার জন্য।
আসলেই রেলস্টেশনে গেলেই এমন দৃশ্যগুলা চোখে পড়ে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু
আপনার এই পোস্টের মাধ্যমে কথাগুলো পড়ে খুবই খারাপ লেগেছে আমার কাছে। আসলে আমরা আমাদের চারপাশে তাকিয়ে দেখলে অনেক মানুষকে দেখতে পাবো যারা না খেতে পেয়ে এভাবে রাস্তার পাশে শুয়ে থাকে। হয়তো তারা উপরে হাসিখুশি কিন্তু তাদের মনে অনেক দুঃখ এবং কষ্ট জমে রয়েছে। যাদেরকে তাদের পরিবার বোঝা মনে করত। তাদেরই শেষ স্থান হলো রেল স্টেশনে। এই কথাগুলো মাথায় আসলে ভীষণ খারাপ লাগে। কুলসুম চাচির জীবনের সম্পর্কে যে কথাগুলো আপনাকে বলেছে তা আমাদের সাথে শেয়ার করলেন সত্যি খুবই খারাপ লেগেছে ওনার জন্য।
জি আপু! আমাদের শুধু খারাপই লাগে। আমাদের উচিত সমাজের এসকল মানুষের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া।