"একজন মায়াবতী" নাটক রিভিউ

05-06-2022

২২ জ্যৈষ্ঠ ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


কেমন আছেন সবাই? আশা করছি ভালোই আছেন। তবে সম্প্রতি সীতাকুণ্ডে একটি ক্যামিকেল ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগে অনেক মানুষ মানুষ নিহত হয়েছে। ফ্যাক্টরিতে ক্যামিকেল পদার্থ থাকায় সেখান থেকে পারঅক্সাইড এর মতো ভারী পদার্থ নির্গত হচ্ছে যা পরিবেশ ও মানুষের জন্য অনেক ক্ষতিকর। আবার সেখানে অনেক মানুষের শরীর ঝলসে যাওয়ার প্রচুর রক্তেরও প্রয়োজন হচ্ছে। আশা করি খুব শীঘ্রই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।

Screenshot_2022-06-05-15-48-51-71.jpg

ছবিঃইউটিউব থেকে নেয়া স্ক্রিনশট

কিছুদিন আগে একটি নাটক দেখেছিলাম। আপনাদের সাথে আমি এর আগেও বেশ কিছু নাটকের রিভিউ শেয়ার করেছি। আজকে চলে এলাম আরেকটি নাটকের রিভিউ শেয়ার করার জন্য। নাটকটি মূলত রোমান্টিক টাইপের। নাটকটির নাম হচ্ছে একজন মায়াবতী। আশা করি নাটকের রিভিউটি পড়লে নাটকের কাহিনী বুঝতে পারবেন। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।



নাটকের কিছু তথ্য


নামএকজন মায়াবতী ।
গল্পআনোয়ার হোসেন ।
প্রযোজক ও পরিচালকইমরাউল রাফাত ।
অভিনয়েফারহান আহমেদ জোভান, তানশিন তিশা, শিল্পী সরকার, নাফিস আহমেদ, সানি মিনাকসি রায়সহ আরও অনেকে ।
দৈর্ঘ্য৪৩ মিনিট ১০ সেকেন্ড ।
মুক্তির তারিখ১০ই ফেব্রুয়ারি , ২০২২ ইং
ধরনকাল্পনিক , রোমান্টিক ।
ভাষাবাংলা।
দেশবাংলাদেশ

মূল চরিত্রেঃ-

ইমন→ফারহান আহমেদ জোভান ।
নীলা→তানজিন তিশা ।


কাহিনী সারসংক্ষেপ


Screenshot_2022-06-05-16-00-36-00.jpg

নাটকের শুরুতে দেখা যায় ইমনকে বিয়ের দাওয়াত দিচ্ছে তার একমাত্র ভালো বন্ধু সজীব। আগামী ৭ই জানুয়ারী সজীবের বোন নীলার বিয়ে। হত পাচঁ বছরে সজীবের সাথে দেখা হয়নাই। চাকরি পেয়ে ইমন আরেক জায়গায় চলে গিয়েছিল। ইমন আর সজীব পাচঁ বছর একসাথে একই ভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছে। পড়াশোনা করার সুবাধে সজীবের সাথে ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে। ইমনেই বাবা মা বেচেঁ নেই। মা বাবা মারা যাওয়ার পর ইমন মায়ের আদর পেয়েছে সজীবের মায়ের কাছ থেকে। সজীবের মা ঈদের সময় হলেও দুজনের জন্য নতুন জামা কিনতো।

ইমন গাড়িতে বসে ভাবতে ভাবতে সজীবদের বাড়িতে যাচ্ছে। বাড়িতে গিয়ে দেখে সবাই বিয়ের আনন্দে মেতে উঠেছে। ইমনের চোখে পড়লো নীলাকে। ঠিক পাচঁ বছর আগে নীলাকে দেখেছিল ইমন। তখন নীলা ক্লাসে দশম শ্রেণীতে পড়তো। নীলা তখন থেকে ইমনকে ভালোবাসতো। কিন্তু ইমন বিষয়টা সিরিয়াসভাবে নেয়নি। একদিকে তার বন্ধুত্ব আর অন্যদিকে সজীবের মায়ের আদর। নীলা তখন ইমনের প্রতি আরও দূর্বল হয়ে পড়েছিল। তারপর ইমন বাধ্য হয়ে তাদের বাড়ি থেকে চলে যায়। অনেকটা বছর কেটে গেল মাঝে।

সজীবও ভার্সিটি শেষ করে গ্রামে চলে এসেছিল। তার বাবা মারা গিয়েছিল দশ বছর আগে। সংসারের দায়িত্ব তখন সজীবের কাধেঁ। গ্রামে এসে সে ফার্মেসি চালিয়ে সংসারের হাল ধরেছিল। আর সজীবও বিয়ে করে ফেলে গ্রামের মেয়েকে। এদিকে সজীবের মায়েরও শরীর দিনকে দিন দূর্বল হয়ে যাচ্ছে। যতই বয়স বাড়ছে ততই যেন বার্ধক্য হানা দিচ্ছে। এজন্য মেয়ের বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে নীলার। নীলার অবশ্য বিয়েতে মত নেই এ কথা তার মামাতো ভাই ইমনকে বলেছে। নীলার যারা সাথে বিয়ে হওয়ার কথা সে নাকি বিদেশে এক্সপোর্ট এর কাজ করে।

Screenshot_2022-06-05-16-01-34-05.jpg

সজীব ইমনকে এসে বললো বাজারে গিয়ে বিয়ের কেনাকাটা করতে। কিন্তু ইমন বলে সে এখানে বিয়ে খেতে এসেছে বাজার করতে নয়। তারপর ইমনকে দায়িত্ব দেয়া হলো সজীবের বউ শায়লা আর নীলাকে মার্কেটে যেতে হবে। এতে ইমন রাজি হয়। তাদেরকে নিয়ে মার্কেটে যায় ইমন। মার্কেট করে শায়লা আর মামুন বাড়িতে চলে আসে। কিন্তু নীলার কিছু কেনাকাটা বাকি ছিল এজন্য ইমন অপেক্ষা করতে থাকে নীলার জন্য। কিছুক্ষণ পরেই নীলা চলে আসে। নীলাকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেয় ইমন। গাড়িতে বসে নীলা অনেক কিছু বলতে থাকে ইমনকে। নীলার ভালোবাসাটা এখনও সেই আগের মতোই আছে। কিন্তু কি আর করার আছে ইমন তা পারেনি।

Screenshot_2022-06-05-16-02-31-94.jpg

বাড়িতে এসে সবাই বলে এতো দেড়ী করে বাড়িতে এলে কেন। চোখের কোণে জল দেখা যাচ্ছিল এটা দেখে নীলার ভাবী শায়লা বলে এভাবে কাদঁতে নেই। আমার ননদী অনেক সুন্দর দেখতে। তখন ইমনও বলে নীলা অনেক সুন্দর। নীলার মামাতো ভাই মামুন বলে নীলা আপু তার থেকে বয়সে ছোট হলে তাকেই বিয়ে করে নিত! হাহাহা। যায়হোক, পরদিন গায়ে হলুদ এজন্য বাড়িতে গন্ধরাজ ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। নীলা জানতো ইমন ভাইয়ের বেলী ফুল পছন্দের। সময়ের সাথে সাথে মানুষের পছন্দেরও পরিবর্তন হয়। তো নীলার আবদার তাকে নিয়ে দূরে কোথাও ঘুরতে যেতে হবে। কি আর করার বাধ্য হয়ে ইমন নীলাকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। নীলার আবদার তাকে নিয়ে হান্ডর্ড মাইলস ঘুরে বেড়ানোর। গাড়িতে করে বসার সময় নীলা অনেক কিছুই বলে ইমনকে। কিন্তু ইমন নীলার কথা কোনোভাবেই কানে নেয়নি। সন্ধ্যার দিকে বাড়িতে চলে আসে নীলাকে নিয়ে। কিন্তু নীলার আবদার ছিল হান্ড্রেড মাইলস ঘুরানো তা আর হলোনা।

Screenshot_2022-06-05-16-03-58-42.jpg

এদিকে নীলা বলে দেয় যে সে এখন বিয়ে করবেনা। এটা তার ভাই সজীব শুনতে পায়। সজীব এসে ইমনকে বলে। ইমন এটা শুনে অবশ্য সজীবের উপর রাগ ঝারে। কারন হচ্ছে নীলার যার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা তার নাকি আরেকটি মেয়ের সাথে রিলেশন আছে। আর এই বিয়েটা নাকি ছেলেটা রাগে করছে। কিন্তু কি করবে এখন? সবকিছু ঠিক ছিল হঠাৎ করেই সব এলোমেলো হয়ে গেল। ইমন নীলাকে বুঝানোর চেষ্টা করে আসলে আমিও তোমাকে ভালোবাসতাম কিন্তু পরিস্থিতি আমাকে বাধ্য করেছে ভালো না বাসতে। ইমন চায়নি তার অগোছালো জীবনে কাউকে জায়গা দিতে।

Screenshot_2022-06-05-16-04-42-36.jpg

এদিকে যার সাথে বিয়ে ঠিক ছিল সেই ছেলেটি গতকাল আরেক মেয়েকে বিয়ে করে ফেলেছে। এই খবর শুনে সবাই ভেঙ্গে পড়ে। সজীব বলে পরিবারের মানসম্মান আর থাকবেনা। কিন্তু আশ্বাসের বাণী শুনায় ইমন। ইমন বলে নীলার বিয়ে হবে আর সেটা আজই হবে। এটা শুনে নীলা রীতিমত অনেক খুশি হয়। ফাইনালি একটি ভালোবাসার পূর্ণতার মধ্যে দিয়েই নাটকের সমাপ্তি ঘটে।

শিক্ষনীয় দিক

নাটকটি রোমান্টিক হলেও শিক্ষণীয় ছিল। কখনো কোনো পরিস্থিতিতে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত নয়। একটা সময় আবেগের বশে অনেক কিছুই করে ফেলে কিন্তু সেই আবেগকে প্রশ্রয় দিলে এটার পরিণতি অন্যরকমও হতে পারে। ইমন কখনো নীলাকে আবেগের বশে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। ইমনের কাছে বন্ধুত্বটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একজন ম্যাচিরিট সম্পন্ন মানুষ সবদিক বিবেচনা করেই সামনে আগাবে। ফাইনালি সাফল্য এসে ধরা দিবে।


ব্যক্তিগত মতামত


ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে নাটকটি ভীষণ ভালো লেগেছে। নাটকটি রোমান্টিকতায় ভরপুর ছিল। জোভান আর তানজিন তিশা বরাবরই ভালো অভিনয় করে। জোভানের রোমান্টিক নাটকগুলো সবসময় ভালো হয়। বিশুদ্ধ ভালোবাসার সবসময় শেষটা সুন্দর। এমনটাই তুলে ধরেছেন পরিচালক নাকটটিতে।

ব্যক্তিগত রেটিং


৮.৫/১০


নাটকটির লিংক


সবগুলো ছবির স্ক্রিনশট এখান থেকে নেয়া


আশা করি নাটকটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে। নাটকটি দেখে না থাকলে লিংকে প্রবেশ করে দেখতে পারেন। সবাইকে ধন্যবাদ নাটকের রিভিউটি পড়ার জন্য। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।



10% beneficiary for @shyfox❤️



ধন্যবাদ

WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg



আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  
 2 years ago 
 2 years ago 

সজীব এবং ইমন একসাথে ভার্সিটিতে পাঁচটি বছর কাটিয়েছে। আসলে ইমনের মা-বাবা সকলেই মারা যায় সেই সুবাদে সজিবের মা ইমন এবং সজীবকে ছেলের মতোই দেখতো ।ঈদ আসলে দুজনের জন্যই জামাকাপড় কিনতো। পরিশেষে ইমন তার অগোছালো জীবনে কাউকে জায়গা দিতে চাইনি এমন একটি দৃশ্য প্রকাশ করেছেন নাটকটির রিভিউ এর মাধ্যমে। ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

বাহ! আপনি দেখছি বুঝেছেন ব্যাপারটা। আশা করি নাটকটি দেখবেন

 2 years ago 

জোভান অভিনীত নাটকগুলো আমার কাছে বেশ ভাল লাগে। তবে এখনও এই নাটকটি দেখা হয়নি। তবে আপনার রিভিউটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো। মনে হচ্ছে অনেক সুন্দর একটি নাটক।
ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

জি ভাইয়া নাটকটি ভালো ছিল। আপনিও দেখতে পারেন ভাললই লাগবে। ধন্যবাদ আপনাকে

 2 years ago 

একজন মায়াবতী নাটকের রিভিউ দেখতে পেরে অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া। আমার কাছে নাটকটি একদম নতুন লাগছে। এর আগে কখনো আমি এই নাটকটি দেখিনি। আপনার পুরো নাটকের কাহিনী পড়ে মনে হচ্ছে নাটকটি আসলেই শিক্ষনীয়। আমি অবশ্যই একবার দেখা চেষ্টা করব ভাইয়া। ধন্যবাদ

 2 years ago 

জি আপু একবার সময় করে দেখে নিবেন ভাল লাগবে।

 2 years ago 

সীতাকুণ্ডের নিউজগুলো যতই দেখছি ততই গা শিউরে উঠছে। কি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। দোয়া করি আল্লাহ যেন সবাইকে নিরাপদে রাখেন। আপনার নাটকের রিভিউ খুব চমৎকার হয়েছে। আপনি খুব সুন্দর ভাবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নাটকের কাহিনী উপস্থাপন করেছেন। যা পড়ে মনে হল যে আমি নিজেই নাটকটি দেখছি।

 2 years ago 

জি আপু সীতাকুণ্ড এর ভয়াবহতা দেখে আমারও অনেক খারাপ লাগছিল। আপনাকে ধন্যবাদ আপ

 2 years ago 

নাটক যদিও খুব বেশি একটা দেখা হয়না তবে মাঝেমধ্যে রিভিউগুলো পড়ার পর মনে হয় নাটকটা দেখা উচিত। তবে এই ডিপি হয়ে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে নাটকের শিক্ষণীয় দিকগুলো। আসলেই সব সময় ঠাণ্ডা মাথায় এবং ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বুদ্ধিমানের কাজ।

 2 years ago 

হুমম ভাই একদম ঠিক বলেছেন। মাঝে মাঝে দেখতে পারেন নাটক।

 2 years ago (edited)

খুবই চমৎকার একটি নাটক রিভিউ আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন ।যদিও নাটক যখন সময় ব্যবধানে তেমন একটা দেখা হয় না ।তবে আপনার এই সংক্ষিপ্ত বিবরণ এর মাধ্যমে নাটক কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছি । শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই মন্তব্যের জন্য

 2 years ago 

জোভান আর তিসার নাটক গুলো আমার ভালো লাগে খুব। একজন মায়াবতী নাটক টি এখনো আমি দেখিনি। তবে আপনার রিভিউ দেখে দেখতে মন চাচ্ছে। দেখে ফেলবো সামনে একদিন।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 60255.54
ETH 2640.76
USDT 1.00
SBD 2.55