আড়াই মন স্বপ্ন [১০% লাজুক খ্যাকের জন্য ❤️]
22-04-2022
৯ বৈশাখ ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন তাহলে! আশা করছি ভালোই আছেন সকলে। তো আবারো হাজির হয়েছি একটি নাটক নিয়ে। বর্তমান প্রেক্ষাপটের আলোকে নির্মিত নাটকটি বেশ ভালো লেগছে আমার কাছে। নাটকটির নাম হচ্ছে আড়াই মন স্বপ্ন। নাটকটির রিভিউ শেয়ার করবো আপনাদের সাথে। আশা করি রিভিউটি পড়ে ভালোই লাগবে আপনাদের। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
নাটকের কিছু তথ্য
নাম | আড়াই মন স্বপ্ন । |
---|---|
রচনা | আবু শায়েদ ইমন । |
পরিচালনা | আবু শায়েদ ইমন । |
প্রযোজক পরিচালক | মীর মোকাররম হোসেন । |
অভিনয়ে | ফজলুর রহমান বাবু, মৌটুসী বিশ্বাস, রওনক হাসান, দীপক সুমন, শোয়েব মনির, অশোক ব্যাপারীসহ আরও অনেকে । |
মিউজিক | ইমন চৌধুরী। |
দৈর্ঘ্য | ৩৫ মিনিট। |
ধরন | ড্রামা, সামাজিক,বাস্তবধর্মী । |
ভাষা | বাংলা। |
দেশ | বাংলাদেশ |
কাহিনী সারসংক্ষেপ
গল্পের শুরুতে দেখা যায় দিলদার ও রাবেয়া ঢাকা থাকে তার একমাত্র ছেলেকে নিয়ে। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে ঢাকার প্রায় সব কাজ বন্ধ। এজন্য নিরূপায় হয়ে তারা গ্রামে চলে আসে। তাদের গ্রাম পলাশপুরে। গ্রামের মানুষ বেশিরভাগই অজ্ঞ। অশিক্ষিত বলা চলে। দিলদারেরও তেমন লেখা পড়া নেই। গ্রামে অজ্ঞতার কারণে অনেকেই সরকারের বিভিন্ন রকমের সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। পলাশপুর গ্রামের মেম্বার চালের কার্ডের বিনিময়ে অনেক টাকা হাতিয়ে নেই গ্রামের সহজ সরল লোকদের কাছ থেকে। দিলদার ঢাকা থেকে গ্রামে এসেছে শান্তিতে বসবাসের জন্য।
কিন্তু গ্রামে এসে সে জানতে পারে সে মারা গেছে!! এ কথা শুনে সে রীতিমত অবাক হয়ে যায়। দিলদারের ভাই কবির বলে যে তার আইডি কার্ড আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এজন্য গ্রামে সে মৃত পরিচিতি লাভ পেয়েছে। কিন্তু কবির তাকে আরেকজনের আইডি কার্ড দিয়ে বলে যে কাল অচেনা লোকের কার্ড নিয়ে চাল নিয়ে আসতে। প্রথমে দিলদার রাজি হয়নি। কারণ আইডি কার্ড তো আর তার না। কবির বলে যে মাস্ক পড়া অবস্থায় তো আর কেউ চিনবেনা। তাই সমস্যাও হবেনা। কিন্তু চাল আনতে গিয়ে দেখে চালের সাথে ছবি তুলছে তবে চাল আর কাউকে দেয়া হচ্ছেনা। কিছুটা হতাশ হয়েই বাড়িতে চলে আসে দিলদার।
তারপর কবির বলে যে মেম্বারের সাথে দেখা করার জন্য। গ্রামের মেম্বারের কাছ থেকে একটা চারিত্রিক সনদপত্র আনার জন্য। কারণ দিলদার যে জীবিত তার প্রমাণ লাগবে। গ্রামের মেম্বারের কাছে গেলে দিলদারের কথা তেমন আমলে নেয়নি। তাকে মেম্বার বলে যে চাল আনতে হলে তো আইডি কার্ড লাগবে। এখন দিলদারের তো আইড কার্ড নেই। আবার তাকে মৃত বানানো হয়েছে। মেম্বার তাকে বলে চেয়াম্যানের কাছ থেকে চারিত্রিক সনদপত্র নিয়ে আসার জন্য। দিলদার তখন চেয়ারম্যান এর কাছে যায়। দিলদার চেয়ারম্যানকে বলে তাকে বলে জীবিত আছে সেটার প্রমাণ স্বরূপ একটি কার্ড দিতে। কিন্তু চেয়ারম্যানের কাজ হলো জন্মসনদ ও ডেথ সার্টিফিকেট দেয়া। দিলদার বলে যে একটা চারিত্রিক সনদপত্র দিতে আর নিচে যেন লিখে দেয় সে জীবিত আছে। তো চেয়াম্যান তাকে আর চারিত্রিক সনদপত্রও দেয়নি। টিভিতে অবশ্য নিউজ বের হয়েছে যে পলাশপুরের চেয়ারম্যান আর মেম্বার কার্ড করে দেয়ার নামে গ্রামের লোকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এদিকে দিলদার তার কার্ড করার জন্য মেম্বারের কাছে যায়। মেম্বার তখন তাকে বলে তার কার্ড না করে তার বউয়ের বিধবা কার্ড করার জন্য। কিন্তু দিলদার তো এখনো জীবিত! তার বউ বিধবা কিভাবে হবে? কিছুটা অবাক হয়ে যায় দিলদার। কিন্তু কি আর করার অভাবের তাড়নায় মানুষ কি না করতে পারে! তার বউ রাবেয়াকে বলে সে বিধবা কার্ডে সিগনেচার করার জন্য কিন্তু রাবেয়া প্রথমে রাজি হয়নি । পরে অবশ্য দিলদারের অনুরোধে রাজি হয়। বিধবা কার্ড পায় রাবেয়া। তখন সে চাল আনতে যায় এবং স্বামী কিভাবে মারা গেছে সে আসলে জানেনা। ত্রাণ বাড়িতে চলে আসে রাবেয়া। বিধবা পরিচয় দিতে রাবেয়ার কষ্ট হলেও কি আর করার আছে।
দিলদার আবার মেম্বারের কাছে যায় এবার মেম্বার তাকে বলে চোখ ট্যারা করার জন্য। তাকে প্রতিবন্ধী কার্ড দেয়া হবে। চোখ ট্যারা করেছে ঠিকই কিন্তু কার্ড সে পায়নি। আবার মেম্বার তাকে বয়স্ক কার্ড করে দিবে। তাই দিলদারকে বলে বয়স্কদের মতো হাটাঁচলা করতে কিন্তু এতেও যে লাভ হয়নি। এদিকে খবরে নিউজ আসে স্থানীয় প্রতিনিধিদের অপকর্মের জন্য ১১২ জনকে বরখাস্থ করা হয়েছে।
এদিকে দিলদার আর রাবেয়া প্লেন করে যে তাদের দুজনের দুটা কার্ড হবে। আর কার্ডের মাধ্যমে যে পরিমাণ চাল পাওয়া যাবে তা দিয়েই তাদের সংসার চলে যাবে। এদিকে তাদের ছেলে সজিবকেও পাশের সরকারী প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি করাবে। কিন্তু তাদের ছেলে হঠাৎ খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। সজীবকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ডাক্তারা তাকে মৃত ঘোষণা করে! সজীবের শরীরে করোনার সিনড্রোম পাওয়া গেছিল এজন্য ডাক্তাররা দিলদার আর রাবেয়াকে বলে মাস্ক পড়ে তাদের ছেলেকে স্পর্শ করার জন্য। কিন্তু আপনকেউ মারা গেলে মাস্কএর চিন্তায় কেউ থাকে! সজীবকে শেষ বিদায় দিয়ে যখন বাড়িতে আসে তখন দিলদার তার বাবাকে পায়। দিলদারের বাবা কয়েকবছর আগে নিখোঁজ ছিল। দিলদারের বাবা সজীবের জন্য একটি প্লেন কিনে আজও পথ চেয়ে বসে আছে তার নাতিকে দিবে বলে। শেষে আড়াই মন স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার মধ্যে দিয়েই নাটকটি শেষ হয়।
নাটকটি থেকে শিক্ষা
নাটকটি অনেক শিক্ষণীয় ছিল। কারণ আমাদের দেশে এখনও অনেক জনপ্রতিনিধি আছে যারা সাধারণ মানুষ জনের অধিকার হরণ করছে। গরিব বা হতদরিদ্র লোকদেরকে যে ত্রাণ দেয়ার কথা সেটা তারাই লুটে খাচ্ছে। একটি গ্রাম বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত তাদের অধিকার থেকে। রাবেয়া ও দিলদার যেন তারই উদাহরণ ছিল নাটকটিতে। সরকার কর্তৃক ত্রাণ তাদের হাতে পেলে হয়তো একটি প্রাণ বেচেঁ যেত। বেচেঁ যেত দিলদার ও রাবেয়াদের মতো হাজারো পরিবার।
ব্যক্তিগত মতামত
ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে নাটকটি খুবই ভালো লেগেছে। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে নির্মিত নাটকটি। ফজলুল রহমান বাবু স্যার বরাবরই সেরা। তাঁর অভিনয় আমার কাছে ভীষণ প্রিয়। যায়হোক সবমিলিয়ে নাটকটি অসাধারণ।
ব্যক্তিগত রেটিং
নাটকটির লিংক
আশা করি নাটকটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে। নাটকটি দেখে না থাকলে লিংকে প্রবেশ করে দেখতে পারেন। আমি চেষ্টা করেছি মূল কাহিনীটা শেয়ার করার জন্য। আশা করি বুঝেছেন। সকলের সু্স্থ্যতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Link
নাটকটি খুবই শিক্ষণীয় ছিল ভাই। আমি মনে করি নাটক টা সবার দেখা উচিত। আমাদের সমাজের জনপ্রতিনিধিরা সাধারণ মানুষের অধিকার গুলোর তেমন ভাবে দিচ্ছে না। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জনপ্রতিনিধিরা যাতে এমন না হয় সেই কামনাই করি। আপনি খুব সুন্দর ভাবে নাটকটার রিভিউ তুলে ধরেছেন। আমার ভাই।
আপনার রিভিউ করা নাটকটি আগে কখনো দেখিনি ভাই । তবে আপনার রিভিউটি পড়ে নাটকটি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম। আপনি অনেক সুন্দর ভাবে নাটকটি রিভিউ করে আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন।
আপনার জন্য শুভকামনা রইল
আপনাকেও ধন্যবাদ রিভিউটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য
আসলে কিছু খারাপ জনপ্রতিনিধির জন্য অনেক মানুষ কষ্ট পায়। আল্লাহ এদের বিচার করবেই।
চমৎকার রিভিউ এবং উপস্থাপনা ছিল।
শুভ কামনা রইল।
জি ভাইয়া ঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া ❤️
ফজলুর রহমান বাবুর নাটক গুলো আমার কাছে বেশ ভালো লাগে ।আমি তার বিভিন্ন নাটক দেখেছি। কিন্তু এই নাটকটি এখনো দেখা হয়নি ।তবে আপনার রিভিউ পড়ে নাটক সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারলাম ।দেখি সময় পেলে নাটকটা দেখে নিব।
ধন্যবাদ ভাইয়া। নাটকটি দেখলে উপভোগ করতে পারবেন