প্রতিযোগিতাঃ শেয়ার করো তোমার বৃষ্টির দিনের মজার কোন অনুভূতি|| আমার বৃষ্টি দিনের একটি গল্প
27-06-2022
১৩ আষাঢ় ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। যায়হোক, এবারের প্রতিযোগিতাটি খুব ইন্টারেস্টিং। আমার বাংলা ব্লগ সবসময় চেষ্টা করে ইউনিক কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য যা আমাদের সৃজনশীলতা বিকশিত করে। এবারের প্রতিযোগিতার বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে শেয়ার করো তোমার বৃষ্টির দিনের মজার কোনো অনুভূতি বা গল্প।
শুরুতেই বলি বৃষ্টি পছন্দ করেনা এমন মানুষ পাওয়া বিরল। গ্রীষ্মের তাপদাহের পর যখন বর্ষার আগমন ঘটে তখন প্রকৃতি যেন নতুনভাবে সাজে। আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস বর্ষাকাল হলেও এখন এর ব্যপ্তি আরও বেড়েছে। ষড়ঋতুর এই বাংলাদেশে শীতের পরে বর্ষার ব্যপ্তি যেন বেশি। বর্ষা আসলেই যেন খাল-বিল, নদী-নালা পানিতে ভরে যায়। বৃক্ষরাজিরা নতুনরূপে সাজে। জীবনে চলে আসে গতিময়তা। আকাশে বিজলী চমকায়, কালো মেঘে ঢেকে থাকে পুরো আকাশ। সারাদিন অবিরল ধারায় বৃষ্টি হতে থাকে। পুকুরে যখন বৃষ্টির ফোটা পড়তে থাকে তখন যেন শত শত রূপকথার জন্ম হয় । কেউ জানালার পাশে বসে বৃষ্টিকে উপভোগ করে কেউবা ছাদে বৃষ্টির ছোঁয়ায় নিজেকে ভেজায়। বৃষ্টির স্নিগ্ধ পরশে যেন হৃদয় শান্ত হয়ে যায়। বৃষ্টি মনে করিয়ে দেয় মানুষের ফেলে আসা অতীতকে। কত উপন্যাস লেখা হয়েছে বৃষ্টিকে নিয়ে। আনমনে ভাবতে শুরু করে অতীতের সুন্দর জীবনকে। বৃষ্টির দিনে কবি মনে দোলা দেয় নানা ধরনের কবিতা; তৈরি হয় নতুন কবিতা। এই বৃষ্টিকে নিয়েই অনেক কবিতা, উপন্যাস রচিত হয়েছে। কারো কাছে বৃষ্টি মানেই অন্যরকম ভালো লাগা ; কারো কাছে বৃষ্টি মানে অভিশাপ!
বর্তমানের কথা যদি বলি তাহলে বৃষ্টি হয়তো অনেক মানুষকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। হারিয়েছে চিরচেনা ঠিকানা। সম্প্রতি বন্যায় অনেক মানুষ হারিয়েছে তাদের বাসস্থান। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন একটার পর একটা লেগেই আছে। আপনারা হয়তো জানেন সিলেট এ অনেক মানুষ বন্যায়কবলিত হয়ে তাদের বাড়িঘর হারিয়েছে। হারিয়েছে তাদের প্রিয়জনকে। বৃষ্টি যেমন আমাদের মনে রোমান্টিকতার জন্ম দিতে পারে ঠিক তার উল্টো অন্য কারো হয়তো থাকার জায়গা হয়না। যায়হোক, আর ওদিকে যাবো না।
বৃষ্টির দিন নতুন কোনো গল্পের সৃষ্টি। বৃষ্টি মনে করিয়ে দেয় অতীতে ফেলে আসা কোনো গল্প। আমার জীবনে বৃষ্টির দিনে মজার কয়েকটি ঘটনা আছে। সবগুলো ঘটনায় ছোটবেলায় হয়েছিল। আপনাদের সাথে মজার একটি বৃষ্টিদিনের গল্প শেয়ার করবো।
সম্ভবত তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ি তখন। সেবার আমাদের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা চলছিল। প্রাইমারি স্কুলে তিন মাস পর পর পরীক্ষা হয়ে থাকে। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা জুনের মাঝামাঝিতে শুরু হয়। আর এই সময়টাতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। কারণ সময়টা তখন বর্ষাকাল থাকে। চারিদিকে কালো মেঘ জমে ঠিক কিছুক্ষণ পরেই মুশলধারে বৃষ্টি নামে। আমার পরীক্ষা দুপুর বারোটা থেকে। বাহিরে প্রবল বৃষ্টি। বাড়িতে ছাতাও নেই। গণিত পরীক্ষা ছিল তখন। আমার তখন ভালো লাগছিল খুব। বৃষ্টিতে ভিজতেও ইচ্ছে করছিল। কিন্তু মা তো দিতে চায়না। আমাদের বাড়ি থেকে প্রাইমারি স্কুল দূরে ছিল মোটামোটি। হেটেঁ গেল ৩০ মিনিটের মতো লাগে। ছোটবেলায় তখন হার্ডবোর্ড এর উপর রেখে পরীক্ষার খাতায় লিখা হতো। আমার হরলিকস একটি হার্ডবোর্ড ছিল। খুব শক্ত উপরের পার্ট। ছাতাও নেই কি আর করার এদিকে পরীক্ষার সময়ও হয়ে গেছে। বৃষ্টির সাথে বাতাসও প্রবল বেগে বইছিল। ছোটবেলায় নরমালি হাফপ্যান্ট পড়ে স্কুলে যাওয়া হতো। হাফ হাতা শার্ট আর হাফপ্যান্ট ছিল স্কুলের ড্রেস। মা না করতেছিল পরীক্ষায় না যাওয়ার জন্য। কে শুনে কার কথা! আমার টার্গেট ছিল পরীক্ষা দেয়া। হার্ডবোর্ড মাথা দিয়েই বেরিয়ে পরলাম। রাস্তা অর্ধেক না যেতেই শরীর ভিজে গেল। কি আর করার এভবেই হাটঁতে লাগলাম। পকেটে অটো ভাড়া হিসেবে পাচঁ টাকার একটি আদলি যেটাকে বলে আমাদের দিকে। বৃষ্টির পানি পড়লেও যা ভিজবে না। বৃষ্টির দিন রাস্তায় গাড়িও পাওয়া যায়না। আমার ড্রেস আর প্যান্ট পুরো ভিজে গেছে। তবে কেন জানি আমার ভালো লাগতেছিল। আকাশে মেঘের গর্জন একপাশে আর প্রবল বৃষ্টি। তখন অটো ছিলনা মনে হয়। আমাদের দিকে টেম্পু চলতো। রাস্তা একদম ফাকাঁ। এদিকে পরীক্ষার সময়ও হয়ে যাচ্ছে। ড্রেসের নিচে ছিল নরমাল একটি সেন্টু গেঞ্জি। ড্রেস খুলে নিয়ে ভিজতে ভিজতে স্কুলে চলে এলাম। স্কুলে এসে দেখি সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে! ক্লাসে ম্যাডাম ছিল।
ম্যাডাম তখন আমাকে কাছে নিয়ে জিজ্ঞেস করে এভাবে ভিজে পরীক্ষা দিতে আসছি কেন? আমি তখন বললাম বাড়িতে ছাতাও ছিল না আর বৃষ্টিতে ভিজতেও ভালো লাগছিল। ম্যাডাম আমাকে পরীক্ষার শেষে বলে দেখা করার জন্য। আমি আমার সিটে গিয়ে বসে পড়ি। সারা শরীর ভিজে একাকার। শরীর কাগজ দিয়ে মুছে নিলাম। ম্যাডামের কাছ থেকে পরীক্ষার খাতা নিয়ে লিখতে শুরু করে দিলাম। ম্যাডামের নাম ছিল ফাতেমা ম্যাডাম। খুবই ভালো একজন ম্যাডাম আমার প্রিয় ছিল। বাহিরে তখনও বৃষ্টি হচ্ছিল। জানালার পাশেই পরীক্ষার সিটটি ছিল। বৃষ্টি দেখছি আর পরীক্ষার খাতায় লিখছি। আমি আবার গণিতে ভালো ছিলাম। যোগ-বিয়োগ,গুন-ভাগ ভালো করেই আয়ত্ত করেছিলাম। দুই ঘন্টা দশমিনিটের পরীক্ষা দুই ঘন্টার আগেই শেষ হয়ে গেল। পরীক্ষা শেষে ফাতেমা ম্যাডামের রুমে গেলাম। ম্যাডাম আমাকে একটি ছাতা দেয়। এটা দিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য। আমি অনেক খুশি হয়েছিলাম সেবার। পরীক্ষা শেষ করার পরও মুশলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। আমি ম্যাডামকে সালাম দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিয়ে দিছিলাম। বাড়িতে আসার পর মা অবশ্য বলতেছিল ছাতা পেলাম কই? আমি বললাম ম্যাডাম আমাকে দিয়েছে। সেদিনের পর ম্যাডাম আমাকে ছাতাটা ফেরত দিতেও বলেনি। অনেকটা বছর পেরিয়ে গেল ছাতাটা ফেরত দেয়া হলোনা। শুনেছি ম্যাডাম তিন বছর আগে আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছে। ম্যাডামের কাছ থেকে ছাতা নেয়ার কথা এখনও আমার চোখে ভেসে উঠে। দোয়া করি ম্যাডামকে আল্লাহ তায়ালা বেহেশত নসিব করুক।
ধন্যবাদ আমার বাংলা ব্লগকে এমন একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য। পুরনো সেই স্মৃতি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পেরে ভালো লাগছে। আশা করি গল্পটি আপনাদের কাছেও ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে কমেন্ট করে জানাবেন। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।
10% beneficiary for @shyfox❤️
ধন্যবাদ
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Link
বৃষ্টির দিন মানে সুন্দর সুন্দর অনুভূতি। আর এই অনুভূতিগুলো প্রকাশ করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে আমাদের এই কমিউনিটি। এর মাধ্যমে আজ আপনার এই অনুভূতিগুলো জানতে পারলাম। বৃষ্টির দিনের পরীক্ষা দেয়ার মত মনের ভিতরে ছিল ছোটবেলা থেকে আপনার যে উদ্যমতা ছিল এখন বুঝতে পারলাম। বেশ ভালো লাগলো আপনার অনুভুতি গুলো শুনে।
আপনার কাছে ভালো লাগলো জেনে খুশি হলাম আপু। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
বৃষ্টির সময় আমার কাছে খুবই ভালো লাগে বিশেষ করে বন্ধুদের সাথে একসাথে মুড়ি পার্টি দেয়ার মজাই আলাদা। দেখে খুশি হলাম আপনি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
আসলেই ভাই বৃষ্টির দিনে মুড়ি পার্টি দিলেও ভালো লাগে সবাই একসাথে যখন থাকে।
আমার আবার অতিরিক্ত বৃষ্টি ভালই লাগে না😁।
আর আমিও এভাবে কত ভিজে পরীক্ষা দিতে গেলাম। ছাতা থাকা সত্বেও কত ভিজে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরলাম সেসব কথা এখন অতীত।এখন আর সেই সখ গুলো নেই।যাইহোক ম্যাডাম এর জন্য অনেক খারাপ লাগলো।আল্লাহ অনেক উত্তম কিছু ডান করুক,আমিন।
অতীতের কথাগুলো মনে পরে খুব ভাই। এখন আর বৃষ্টিতে ভেজাও হয়না। আপনাকে ধন্যবাদ
সেই হার্ডবোর্ড মাথায় দিয়ে স্কুলে যাওয়ার বিষয়টি আমার কাছে অন্য রূপে ধরা দেয় ।আমার হার্ড বোর্ড ছিল না ,তবে একটি ছোট হাত রুমাল মাথায় দিয়ে আমি স্কুলে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম বা গিয়েছিলাম ।সুন্দর অভিপ্রায় ব্যক্ত করার জন্য আপনাকে অশেষ অশেষ ধন্যবাদ।
হার্ডবোর্ড এর উপরে পরীক্ষা খাতায় লিখাটাকে এখন বড্ড মিস করি। আপনাকে ধন্যবাদ ❤️
আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
প্রকৃতি সতেজ হতে দেখতে আমার অনেক ভালো লাগে। বৃষ্টির কণাগুলো যখন আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে তখন তার শব্দের মূর্ছনা শুনতে অনেক বেশি ভালো লাগে। একটা সময় ছিল বৃষ্টি হলেই দৌড়ে ছাদে চলে যেতাম ভেজার জন্য। আপনি প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করেছেন দেখে অনেক ভালো লাগলো ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।
জি আপু বৃষ্টির দিন মানেই অন্যরকম অনুভূতি। আপনাকে ধন্যবাদ চমৎকার মন্তব্যের জন্য।
পৃথিবীতে কিছু ভালো মানুষ রয়েছে তাই পৃথিবী অনেক সুন্দর। আপনার ম্যাডাম আপনাকে ছাতাটি উপহার দিয়েছেন এবং আর কখনো ফেরত নেননি শুনে ভীষণ ভালো লাগলো। আর তিন বছর হয়েছে তিনি মারা গেছেন শুনে দুঃখ পেলাম। যাক উপর ওয়ালা তাকে বেহেশত নসিব করুন।
ভালো উপস্থাপনা ছিল আর প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করার জন্য ধন্যবাদ জানাই।
জি ভাইয়া ম্যাডামের কথা হঠাৎ মনে পড়ে গেল। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ চমৎকার একটি মন্তব্য করে উৎসাহ দেয়ার জন্য।
আপনি আপনার অনেক অল্প বয়সের মুহূর্তগুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আমার বাংলাব্লগের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি । আজকে আমি আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি আশা করি আমার গল্পটা আপনাদের মাঝে ফুটিয়ে তুলতে পারবো ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার গল্প পড়ার অপেক্ষায় রইলাম তাহলে। ধন্যবাদ আপনাকে
আপনি খুবই চমৎকারভাবে আমাদের মাঝে আপনার বৃষ্টির দিনের অভিজ্ঞতার গল্প শেয়ার করেছেন সেই সাথে কিছু অনুভূতি ও আমাদের মাঝে প্রকাশ করেছেন পরে খুবই ভালো লাগলো। বৃষ্টির দিন মানে যেন কোনরকম অনুভূতি এটা বলে বোঝানো যায় না।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই চমৎকার মন্তব্য করে আমাকে উৎসাহ দেয়ার জন্য ❤️
বৃষ্টির দিনে এত সুন্দর মজার অনুভতি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। এই কনটেস্ট এর মাধ্যমে আমরা অনেক মজার কাহিনী পড়তে পারলাম। আপনি সামনে এভাবে পোস্ট করবেন। ধন্যবাদ